মানুষের কর্মকান্ড পশুর চেয়েও বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২২ মে, ২০১৪, ০৮:১৫:৫২ সকাল
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব । শুধু মানুষ নিজেই নিজেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে দাবী করে না বরং মহান আল্লাহ তা‘য়ালা স্বয়ং তার সৃষ্টি কূলের মধ্যে মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলূকাত’ বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব বলে ঘোষণা দিয়েছেন । অন্যান্য জীবের যেমন চৈতন্য আছে মানুষেরও তেমনি চেতনা বা প্রাণ আছে তবে মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো, একমাত্র মানুষের বুদ্ধি বৃত্তি আছে যা মানুষ ব্যতীত অন্যকোন জীবকে দান করা হয় নি । ধরনীতে যে জীব সবার সেরা তার কর্মকান্ডও হবে তেমন উচ্চ পর্যায়ের । অন্যান্য ইতর প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে মানুষের থাকবে কতগুলো বৈশিষ্ট্য । এসকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দয়া, করুনা, ক্ষমা, অন্যকে নিরাপত্তা প্রদান, প্রেম-ভালোবাসা, বিশ্বাস, পরমত সহিষ্ণুতাসহ এমন কতগুলো গুন মানুষের থাকবে যা তাকে অন্যান্য জীব থেকে পৃথক করবে । সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে একজন মানুষ অন্য মানুষকে শুধু ভালবাসাই দিবে না বরং অন্য মানুষের অকল্যান রয়েছে এমন কোন কাজও সে করবে না । সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত এতগুলো মহৎ গুনের অধিকারীরা যখন হিংস্র জানোয়ারের মত আচরণ বা কার্যকলাপ করে তখন জানোয়ারেরাও বোধহয় মানুষের এমন কর্মকান্ড দেখে নিভৃতে হাসে । অথচ মানুষ এতসব জঘন্য আচরণ করার পরেও তার মধ্যে কোন প্রকার অনুশোচনা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করার মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়না । বরং অন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করে বুক ফুলিয়ে বীর দর্পে জমিনে চলাচল করে । মানুষের এমন অন্যায় কর্মকান্ড শুধু তাদের নিজেদেরকেই ক্ষতিগ্রস্থ কিংবা বিপদের সম্মূখীন করে না বরং সমাজের সকল মানুষকে অপরিনামী ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড় করায় । সমাজের কিংবা রাষ্ট্রের অসংখ্য মানুষের মধ্য থেকে হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মানুষের অনৈতিক কর্মকান্ডে গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে অস্থির এবং হুমকীর সামনে দাঁড় করায় ।
গত ২০শে মে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মী স্টাইলে রাস্তার উপর মাইক্রোবাসের ভিতরে থাকা অবস্থায় প্রথমে ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে, গুলি করে আহত করে গাড়ীর ভিতরেই পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষটিকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলে । দেশে পূর্বে ঘটিত সকল হত্যাযজ্ঞকে একরামুল হকের হত্যার চিত্র মলিন করে দেয় । সারা দেশবাসী স্তম্ভিত হয়ে যায় । কি নামে কোন ভাষায় বর্ননা করা যায় এরকম ঘটনাকে ? বর্বরতা, নৃশংসতা, পৈশাচিকতা, অমানবিকতা- এরকম কোন শব্দই যেন এ বর্বরতাকে ঠিকমত বুঝাতে সক্ষম নয় । অথচ এর চেয়ে কঠিন কোন শব্দ অভিধানেও নেই । বিদেশে সংঘঠিত কোন ঘটনায় এমন শব্দগুচ্ছ যদি একত্রে ব্যবহৃত হত তবে তারা স্তব্ধ হয়ে যেত । আমাদের দেশের একরামুল হককে খুন করার ঘটনাটি যে ভাবে মিডিয়ায় এসেছে তাতে এ ঘটনাকে বিধৃত করার মত শব্দ সৃষ্টি নিয়ে ভাষাবিদদের আবারও ভাবতে হবে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাঙালীদের জন্য না হোক অন্তত বাংলাদেশে বসবাসরত বাঙালীদের জন্য এমন কতগুলো শব্দ সৃষ্টি করা দরকার যা দিয়ে বাংলাদেশের চলমান ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় । ছোট্ট জীবনের পরিসরে বহুমানুষের বহুভাবে মৃত্যুর কথা শুনেছি কিংবা দেখেছি কিন্তু একরামুল হকের মৃত্যু সত্যিই আমার মনের গহীনে আঘাত করেছে । আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি ।
হিংস্র জানোয়ারদের মধ্যে সিংহ এবং বাঘের নাম সবার প্রথমে আসে । বাংলাদেশীরা এ দু’টো প্রানীর হিংস্রতা সম্পর্কে অবহিত । স্রষ্টা যাদেরকে সৃষ্টিই করেছে হিংস্রতা করার জন্য সেই হিংস্র জানোয়ারগুলো যখন সমগোত্রীয় কোন জানোয়ারকে আক্রমন করে তখন তার পায়ের বিষাক্ত নখগুলোকে গুটিয়ে রাখে যাতে তার দ্বারা তার গোত্রের কোন প্রাণীর ক্ষতি না হয় । অথচ এ সকল শ্রেণীর জানোয়ারদের ব্যতিক্রম হওয়া উচিত ছিল। শক্তিমান কর্তৃক শক্তিহীনদের মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল । বাস্তবে তা হচ্ছে না । বন্য হিংস্রদের স্বভাব ভর করেছে মানুষের উপর । দয়াহীনভাবে মানুষ মানুষকে হত্যা করছে । কি করুন ও হৃদয়বিদারক সে সকল দৃশ্য । অথচ হিংস্র মানুষগুলো নির্বিকার । তারা তাদের পশুত্বকে দিনের পর দিন প্রমান করে যাচ্ছে । কখনো টাকার বিনিময়ে আবার কখনো ক্ষমতার মোহে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে দ্বিধা করছে না । মানুষের বিবেক জাগ্রত না হয়ে এরকম অমানুষিকতা চলতে থাকলে অচিরেই মানবতা হুমকির মূখে পড়বে যা বুদ্ধিবাদী সম্প্রদায়ের কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট । অথচ মানুষের তাদের কল্যান, সমাজের এবং রাষ্ট্রের মঙ্গলের কথা মোটেই ভাবছে না । যে কারনে অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছে, মানুষের কর্মকান্ড দিনের পর দিন পশুর থেকে নির্মম এবং বর্বর হচ্ছে । যতদিন মানুষ এ পথ থেকে ফিরে না আসবে ততদিন রাষ্ট্রের কেউ যেমন নিরাপদ নয় তেমনি রাষ্ট্রের শান্তি নামক বস্তুটিরও সাক্ষাৎ লাভ করাও সম্ভব হবে না ।
দেশের একজন ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবে দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য কল্যান কামনা করছি এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি । তিনি কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে একরামুল হকের খুনীদেরকে যে কোন মূল্যে গ্রেফতার করার জন্য আদেশ দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অবিলম্বে সোনগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হকের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছে । দেশবাসীও মনেপ্রানে কামনা করে একরামুল হকের খুনীরা গ্রেফতার হোক এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক । একরামুল হকের হত্যাকারীদের নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি । আওয়ামীলীগ বিএনপিকে দোষারোপ করছে আবার বিএনপি আওয়ামীলীগেকে দোষারোপ করছে । কেউ কেউ স্থানীয় সাংসদের দিকেও আঙুল তুলছেন। দোষারোপের এ রাজনীতি কবে বন্ধ হবে তা স্বয়ং স্রষ্টা জানেন তবে আমরা আশা করি অচিরেই এ সংস্কৃতি থেকে আমরা মুক্তি পাব এবং প্রতিটি কার্যের যথাযথ কারন দেশবাসীর সামনে উম্মোচিত হবে । দল মতের উর্ধ্বে অবস্থান করেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা প্রতিটি অন্যায়-অপাধের সাথে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে বিচারের মুখোমূখি করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি । জনতার এ বিশ্বাসের মর্যাদা সরকার অবশ্যই রাখবেন বলে আশা রাখি । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন একরামূল হকের খুনীদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তাদেরকে বিচারের স্বপ্ন দেশবাসীকে দেখিয়েছেন তেমনি দেশের প্রতিটি হত্যার নেপথ্যের হোতাদেরকে গ্রেফতার এবং তাদেরকেও শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তা দেশনেত্রীকেই দিতে হবে । দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিল তারাও বোধ হয় মানুষকে একরামুল হককে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তেমনিভাবে হত্যা করে নি । কাজেই বর্তমান সময়ের এরকম নরপিচাশ অপরাধীদেরকেও আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের মত কোন ট্রাইবুন্যাল গঠন করে অবিলম্বে দ্রুতগতিতে তাদেরকেও শাস্তি প্রদান করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা এবং দেশবাসীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় সরকারের কাছে জোর আরজি জানাই ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
১০০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন