কারাগার থেকে মায়ের জন্য লিখা এক ভাইয়ের চিঠি...
লিখেছেন লিখেছেন উম্মে হাবিব ২১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৩১:১১ রাত
কারাগার থেকে মায়ের জন্য লিখা এক ভাইয়ের চিঠি...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় আম্মু,
আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অশেষ রহমতে সবাইকে নিয়ে ভালো আছো। আমিও তোমাদের দোয়া ও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মেহেরবানিতে ভালো আছি।
পরসমাচার, কারাগারে আলহামদুলিল্লাহ আমরা জামায়াত-শিবিরের কয়েকশত নেতা কর্মী মিলেমিশে ভালো ভাবেই বসবাস করছি। সংগঠনের ভাইয়েরা আমাদের থাকা-খাওয়ার যাবতীয় সুব্যবস্থা করেছেন, যা তোমরা নিশ্চয়ই অবগত আছো। আমাদের পোশাক, শীতের কাপড়, প্রসাধনী ও পিসিতে টাকা প্রদানসহ যাবতীয় সামগ্রী তারা যথাযথভাবে আনজাম দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া কারাগারেও জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলবৃন্দ আছেন। যারা আমাদের সুযোগ-সুবিধার সকল দিকগুলোর দেখভাল করছেন।
আমি কারাগারে ভোর ৪:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠার মাধ্যমে আমার দিন শুরু করি। ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাত ও ফজরের সালাত আদায় করি। তারপর আসামীদের গণনা হয়। এ সময় কিছু বিস্কুট খেয়ে হালকা নাস্তা করে নেই। ৬:৩০-০৭:০০ টার মধ্যে রুমের দরজার তালা খুলে দেয়া হয়। তখন হাউজপারে গিয়ে গোসল করে নিই। তারপর কিছুক্ষন হাটাহাটি করি। কাশিমপুর কারাগারের প্রাকৃতিক দৃশ্য নয়নাভিরাম। না দেখলে বিশ্বাস করার মত নয়। এখানে আম-কাঁঠালের মত যেমন ফলজ গাছ আছে তেমনি আছে বিভিন্ন ঔষধী গাছ। এছাড়াও গ্রামীন পরিবেশের মত রয়েছে ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লালশ্বাক, বেগুন, মরিচ, পেয়াজের ক্ষেত। এছাড়াও রয়েছে ফুলের বাগান। সবমিলিয়ে মনে হয় যেন আমরা একটা পিকনিক স্পটে কয়েকদিনের জন্য পিকনিক করতে এসেছি। তারপর সকাল ৮:৩০-০৯:০০ টার মধ্যে সকালের নাস্তা করে নিই। তারপর কিছুক্ষন পড়াশুনা করি। দুপুর ১২ টার সময় আবার গণনা হয়। তারপর জোহরের সালাতের প্রস্তুতি নিই ও আদায় করি। দুপুর ১:০০-২:০০ টার মধ্যে দুপুরের খাবার গ্রহন করি। খাবার খাওয়ার পর বিশ্রাম বা হাটাহাটি ও গল্প করি। ৩:৪৫-৪:০০ টার মধ্যে আছরের সালাত আদায় করি। তারপর বিকাল ৪:৩০ পর্যন্ত বাহিরে থাকার সুযোগ পাই। বিকাল ৪:৩০ মিনিটে শেষবারের মত হাজতী ও কয়েদীদের গণনা হয়ে রুমের তালা বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর বিকালের নাস্তার আয়োজন করা হয়। ৫:৩০-৫:৪৫ এর মধ্যে মাগরিবের সালাত আদায় করে নিই। তারপর কিছুক্ষন লেখাপড়া ও কুরআন-হাদীস অধ্যায়ন করি। ৭:০০-৭:৩০ এর মধ্যে এশার সালাত আদায় করি। ৭:৩০-৮:০০ এর মধ্যে রাতের খাবার গ্রহন করি। রাত ১০:০০ টার মধ্যে সবার ঘুমিয়ে পড়া জেল কোডের নিয়মের অন্তরভূক্ত। তাই ১০:০০ টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়তে হয়। এভাবেই কারাগারে আমার দিনাতিপাত হয়।
প্রিয় মা,
আমি ভালো আছি। আমাকে নিয়ে তোমরা কোন দুঃচিন্তা করোনা। দীর্ঘদিন যাবত কারাভোগ করতে করতে একপ্রকার সয়ে গেছে। সবার সাথে হাসি-আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে থাকতে থাকতে জেল খানার প্রতি এক অপ্রত্যাশিত মায়া জন্মে গেছে। মনে হচ্ছে আরো কিছুদিন জেল খাটলেও খুব বেশী কষ্ট হবেনা। তাই আমি আমাকে নিয়ে এখন আর খুব বেশি চিন্তা করিনা। আমি চিন্তা করছি আমার কর্মীদের নিয়ে। তাই যদি আইনজীবিদের সাথে আলাপ হলে বলবে তারা যেন বাকী ৯ জনের জামিন আগে করেন এবং জেল থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। সবার শেষে আমার জামিন করেন। আমার কোন কর্মী কারাগারের ভিতরে থাকতে আমি কারাগার থেকে বের হতে চাইনা।
সর্বশেষ আমার জন্য সবাইকে দোয়া রাখার আহবান জানিয়ে ও সবাইকে সালাম জানিয়ে আজকের মত এখানেই রাখছি.......
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন