|| নেহা ও তামিমের কথা: ||
লিখেছেন লিখেছেন এম এইচ রাসেল ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৪:৪৮ রাত
অনেকক্ষণ ধরে নেহার স্যার তামিম, নেহার দিকে কটমট
করে তাকিয়ে আছে নেহা তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না.
একমনে নিজের নখ খুটে যাচ্ছে. স্যার এর স্বভাবটাই এমন. বড্ড
আনরোমান্টিক আর খাড়ুস টাইপের. নেহা অনেক কষ্টে নখগুলো বড়
করেছে আর আজ তাতে লাইট পিঙ্ক নেইলপলিস লাগিয়েছে. প্রশংসা যে স্যার করবেনা সেটা সে ভালো করেই জানে তবু
একটু তাকাতে তো পারে. নেহার এই ফর্সা নরম আর সুন্দর
হাতটা দেখলে যেকোনো ছেলের একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হবে আর
স্যার? হুহ !! একবার বই দিতে গিয়ে স্যার এর হাতের
সাথে হাত লেগে যাওয়ায় এমন লুক দিসিলো মনে হল যেন তার
মান ইজ্জত সব আমি লুটে নিছি. এরপর থেকে আমার হাত থেকে সরাসরি আর কিছু নেয়না আতেলটা, আগে টেবিল এর উপর
রাখতে হবে তারপর নিবে. স্যার এর কন্ঠে চমক
ভাঙ্গলো নেহার, গলাটাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কর্কশ করে বলল,
কি ব্যাপার নেহা তোমারে দুই ঘন্টা আগে একটা মডেল টেস্ট
করতে দিছি আর তুমি বসে বসে আঙুল কামড়াচ্ছ? মনটাই খারাপ
হয়ে গেল নেহার. সে নাকি আঙ্গুল কামড়াচ্ছে...মন খারাপটা মেজাজ খারাপে রূপ নিতে বেশি সময় লাগলনা. সেও
দ্বিগুন ঝাঝের সাথে বলল, আসছেন তো মাত্র পনের মিনিট এর
মধ্যে ২ ঘন্টা হয়ে গেল নাকি?
আমারে পড়াইতে আসলে বুঝি আপনার টাইম দৌড়াইতে থাকে?
কথাটা বলে ফেলে খারাপ লাগে নেহার. কারণ বর্তমান
জামানায় কোন টিচারই ৪ দিনের বেশি পড়ায়না, তামিম ওকে ৫ দিন পড়ায় তাছাড়া সপ্তাহের বাকি ২ দিনের মধ্যেও
নেহা নানা বাহানা করে ওকে বাসায়
নিয়ে আসতে চেস্টা করে. স্যার আজকে ক্লাসে কিছু বুঝি নাই/
কালকে exam আর বাসায় আসলে আজকে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছেনা/
আসেন গল্প করি এসব তো আছেই . তামিম ওর সব অত্যাচার সহ্য
করে একনিষ্ট ভাবে ওকে পড়িয়ে যাচ্ছে আজ এক বছর হল প্রায়. ছোটবেলা থেকে অনেক টিচার এর কাছে পড়েছে নেহা কিন্তু এত
অনেস্ট আর হার্ড ওয়ার্কিং টিচার একটাও পায়নি ও. নেহার
বাবা মাও এজন্য তামিম কে অনেক পছন্দ করেন. নেহার কি দোষ
নেহা যে অনেক আগেই এই পাঁচ ফুট দশের সহজ সরল
লম্বুটাকে ভালবেসে ফেলেছে.
তামিমের কথা:
নেহার কথা শুনে অবাক হয় তামিম. এই মেয়েটাকে সে যথেষ্ট
সময় নিয়ে আন্তরিকভাবে পড়ায়. বুদ্ধিদীপ্ত আর স্মার্ট এই
মেয়েটাকে ভালো ছাত্রী বলেই মনে হয় তামিমের কাছে কিন্তু
পড়াশুনায় একেবারেই মনোযোগ কম. বাসায় আসলেই অদ্ভুত অদ্ভুত
কথা বলে আর আড় চোখে তাকায়. তামিম যে একেবারে বুদ্ধুরাম তানা, কিন্তু ও এসব পাত্তা দিতে চায়না. গ্রাম থেকে অনেক
কষ্টে ওর বাবা মা ওকে পড়তে পাঠিয়েছে. এই সব বড়লোক
বাবার আল্লাদী মেয়ের খেয়াল বুঝতে গেলে ওর ভবিষ্যত
অন্ধকার হয়ে যেতে পারে তা ভালোই বোঝে তামিম. কিন্তু
মাঝে মাঝে একটা সমস্যা হয় তামিমের. তামিম যখন
বকাঝকা করে খুব কড়া কিছু কথা শোনায় তখন বড়বড় চোখ দুটো ভাসিয়ে প্লাবন নামে. ঠিক তখনই বুকের ভেতর
কি জানি ওলটপালট হয়ে যায় তামিমের. মনে হয় এই ফুলের মত
নিস্পাপ মেয়েটিকে কষ্ট দিয়ে খুব ভয়ংকর অন্যায়
করে ফেলেছে সে. এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার
হারিয়ে ফেলেছে সে. এই এক মহা যন্ত্রণা. এই মেয়ের
ফ্যামিলিটা ভালো না হলে ও এই টিউশনিটা ছেড়েই দিত সম্ভবত.
অত:পর একদিন:
এমনিভাবে চলছিল দিনগুলো. হঠাত করে একটা পাগলা ঝড়
এসে সব ওলটপালট করে দিল. বিনা নোটিশে হার্ট এটাক
করে মারা গেলেন নেহার বাবা. নেহার চাচাত ভাই ফোন
করে খবরটা জানিয়েছিলো. কাপুরুষের
মতো পালিয়ে বেড়িয়েছে তামিম . যে মেয়ের একফোটা চোখের জল তামিম সহ্য করতে পারেনা তার এই চরম অসহায়ত্ত দেখার
সাহস হয়নি তামিমের. এর মধ্যে তামিমের ফাইনাল
পরীক্ষা চলে আসে তামিমের. ও বাসায় গিয়ে একদিন আন্টির
সাথে কথা বলে আসে যে ও আগামি দেড় মাস
নেহাকে পড়াতে পারবেনা. আন্টি শুধু তামিমের
দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন কিছুই বলেননি. আন্টি বেরিয়ে যাবার পর নেহা রুমে ঢোকে. নেহার
দিকে তাকিয়ে তামিমের পাজোড় ভেঙে কান্না আসে. এ
কি অবস্থা মেয়েটার!! শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে মেয়েটা.
কন্ঠার হাড় বেরিয়ে গেছে. চোখ দুটো কোটরাগত. না,
দ্বিতীয়বার আর ওর দিকে তাকানোর সাহস হয়নি তামিমের .
কোনমতে দুটো সান্তনার কথা বলে বেরিয়ে আসে ও. অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়. সামনে ওর পরীক্ষা. ওর বাবামার সব
স্বপ্ন যে ওকে ঘিরে. তাই সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তামিম
পরীক্ষা দিতে থাকে. এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নেহার কাছ
থেকে কোন কল পায়না তামিম. ও নিজেও কল দেয়না. তামিমের
ঠিক শেষ পরীক্ষার আগের রাতে ফোন দেয় নেহা.
: স্যার আপনার সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল. : কেমন আছ নেহা?
: স্যার কথাগুলো খুব বেশি জরুরী.
: হ্যা বলো
: স্যার....স্যার
: বলো নেহা শুনছি
: স্যার আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে. একটা ধাক্কার মত খেলো তামিম. কোনো মতে বলল,
: সেকি ! তুমি তো এখনো পড়াশুনা শেষ করনি....
: সে সব কথা থাক, আমি এখন কি করব বলেন. ইঙ্গিতটা স্পষ্ট.
কিন্তু তামিম কিবা বলতে পারে.
: ছেলে কি করে?
: সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, ইউএসএ তে থাকে, বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে.
তামিমের দুনিয়া ঘুরপাক খায়. তামিম ওর বাবামায়ের
একমাত্র অবলম্বন. সামনে ওর অনেক কাজ.
: কি হল স্যার চুপ আছেন কেন? একটা কিছু বলেন কি করব আমি?
তামিম নিজেকে শক্ত করে নেয় একটু কঠিন করেই বলে : তোমার
অভিভাবকরা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তোমার মঙ্গলের জন্যই. তুমি যেটা ভালো বোঝো সেটাই করো. ঐপাশটা কিছুক্ষণ
চুপচাপ.
: এটাই আপনার শেষ কথা?
: হ্যা. বলতে গিয়ে গলাটা কেঁপে উঠলো তামিমের.
: বেশ. একটা দীর্ঘশাস ফেলে লাইনটা কেটে দিলো নেহা.
শেষের কবিতা:
এরপর তিনতিনটা দিন প্রচন্ড অস্থিরতায় কেটে গেল
তামিমের. হঠাত করেই জীবনটা অতন্ত যন্ত্রনাময়
মনে হতে লাগলো. খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নেহার কথা.
মনে হচ্ছে বড় ভুল হয়ে গেছে. ৪ দিন পর সংবাদ পেল তামিম
নেহা হাসপাতালে. ঘুমের অনেকগুলো ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে নেহা. অবস্থা বেশি ভালোনা. নেহার এক
বান্ধবি জানালো খবরটা. ঠিক কিভাবে তামিম ওই
হাসপাতালে পৌছালো তা নিজেও ভালো বলতে পারবেনা সে, শুধু
এতটুকুই জানে হাসপাতালে গিয়ে নেহাকে জীবিত না পেলে ও
আর বেঁচে থাকবেনা. তামিম নেহার বেডের পাশে বসে আছে. নিজেকে পশু মনে হচ্ছে.
কেমন করে এই বাচ্চা মেয়েটাকে ও এত কষ্ট
দিলো ভেবে পাচ্ছেনা. জ্ঞান ফিরল নেহার.
তাকিয়ে আছে তামিমের দিকে বিস্ময়ভরা চোখে. কিছুক্ষন পর
বিস্ময়ের জায়গায় স্থান করে নিলো অভিমান.
: রাগ করেছ নেহা? অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে, : হুম.
: পাগলি রে তুই কিভাবে আমাকে এত কষ্ট দিলি? কিভাবে?
: আর তুমি যে আমারে আরো অনেক অনেক কষ্ট দিলা তারবেলা?
তোমারে এখন শাস্তি দিব.
তামিমের ইচ্ছা করে পুচকিটারে কলিজার মধ্যে ধরে রাখে. ও
একটু হেসে বলে, : দাও.
: আমার হাতটা শক্ত করে ধরো. তামিম নেহার হাতটা নিজের
হাতের মধ্যে নিল.
: এই হাত আর জীবনেও ছাড়তে পারবনা, এটাই তোমার শাস্তি.
তামিমের চোখটা ভিজে ওঠে. কে জানত শাস্তি এত মধুর হয়.
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন