বোরকাঃ বন্দীত্বের প্রতীক ???
লিখেছেন লিখেছেন মারুফ_রুসাফি ১৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:২১:০৬ রাত
এদেশের সুধী সমাজের কিছু এলার্জি আছে। এই এলার্জির জন্ম মূলত বিদেশে, নিজেদের এই এলার্জি তারা এদেশের মুসলিমদের
মধ্যে সংক্রমিত করতে চান। সর্বশেষ ৪ঠা নভেম্বর, প্রথম আলোর জন্মদিনে, সুধী সমাজের জাফর ইকবাল স্যার যে এই এলার্জিতে প্রবলভাবে আক্রান্ত তা ধরা পড়েছে। এই এলার্জির উপসর্গ হচ্ছে চুলকানি, ইসলাম নিয়ে চুলকানি। পশ্চিমা উদার আদর্শের সাথে যখনই ইসলামের কোন বিষয়ের পার্থক্য ঘটে, এই চুলকানি তখন প্রবলভাবে ধরা দেয়। নারী ইস্যুতে এই চুলকানি প্রবল। বিকিনি পরা সেমিন্যাংটা মেয়ে দেখে অভ্যস্ত কিনা, বোরকা পরা মেয়ে দেখলে চুলকানিতে তাদের রক্তশূণ্য হবার যোগাড় ! বোরকা নিয়ে তাদের চুলকানির কারণ হল, এই বোরকা নাকি বন্দীত্বের প্রতীক। মুক্তির প্রতীক কি ? মুক্তির প্রতীক হল, জিন্স-ফতুয়া এইসব। এই কথা তারা সরাসরি না বললেও বুঝা যায়। শরীর ঢেকে রাখা মানেই বন্দী করাসেমিচা হুমায়ুন বলেন, “যাহাই সুন্দর তাহাই প্রদর্শনের বিষয়”। যেহেতু নারীদেহ সুন্দর, এই সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হই কি করে ?
তাই, “খোল কাপড় খোল !” বন্দীত্বের দোহাই দিয়ে যারা মেয়েদেরকে আসলে কাপড় খোলাতে চান, তারা জানেন না যে প্রকৃতপক্ষে মেয়েদেরকে আরও বেশি বন্দী করেন। এইদেশে ছেলে মেয়ে উভয়ের কাপড় চোপড়ে যে ব্যাপক বিবর্তন হয়েছে তা অজানা নয়। এইদেশে ১৯৯৯ সালে কোন মেয়ে মাজাক্কালি পরার শখ হয় নাই, হয়েছে হিন্দী সিনেমা দেখার পর। এইদেশে ১৯৫২ সালে লেগিংস পরে কোন মেয়ে মাঠে নেমেছে দেখা যায় না, এটা দেখা যায় ২০১১ সালে। চিপা জিন্স দূরে থাক, আজ থেকে ১০ বছর আগে জিন্স পরতেও কোন মেয়েকে দেখা যায় নাই, আজকে অলিতে গলিতে। আপনি কি কখনও চিন্তা করেছেন কারা ঠিক
করে মেয়েরা কি পরবে ? কাদের হাতের ডিজাইনের জামা ফলো করছি আমরা ? একটা মেয়ে কি কাপড় পরে সেটা ঠিক করে তার কালচার, ফ্যাশন হাউজ আর কিছু মডেল, সেটা সেই মেয়ে ঠিক
করে না। বরং সে মার্কেটে যায়, সিনেমা দেখে, ম্যাগাজিন ঘাটে,
সেখানে যেসব ড্রেসের বিজ্ঞাপন করা হয় সেগুলোই তারা পরে।
আজকে যেটাতে স্মার্ট লাগছে, কালকে সেটা ক্ষ্যাত, কে বলেছে ? শখ আর সারিকা বলেছে। কাদেরকে দিয়ে ঠিক করানো হয় কোনটা পরতে হবে আর কোনটা খুলে ফেলতে হবে? এটা ঠিক করানো হয় এই মম-বিন্দু-ইশানাদের কে দিয়ে। বছরখানেক আগে লাক্সচ্যানেল আইয়ে এইদেশের মেয়েদেরকে শেখানো হল পার্টিতে গেলে হাটুর উপর কাপড় তুলতে হয়। নকশা শেখায় দিল ওড়নার জায়গা বুকে নয়, হাতে, না পরলেও চলবে। হিন্দী সিরিয়াল আর সিনেমাগুলো শেখায় শাড়ির ফাঁকে নাভি না দেখিয়ে চাম্মাক চালো হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমার প্রশ্ন তথাকথিত “স্মার্ট”,”উচ্ছল” এবং “মুক্ত” মেয়েরা যখন এইসব কাপড় পরে তখন কি তারা সেগুলো নিজে থেকে পরে নাকি তাদেকে এইসব ড্রেস পরানোর সেগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ঘোষণা করে সাইকোলজিক্যালি তাদেরকে প্রেসার দেয়া হয় ? এটা হল একধরণের দখলদারিত্ব, কোন বৈদেশিক দখলদারিত্ব নয়,সাইকোলজিক্যাল দখলদারিত্ব। মেয়েদেরকে বুঝানো, তুমি এটা পরলে স্মার্ট, আর ঐটা পরলে ক্ষ্যাত। শরীর দেখালে আধুনিকা, ঢেকে রাখলে ব্যাকডেটেড। (কে চায় ক্ষ্যাত হতে?) তাদের মাথায় এই ফ্যাশন হাউজগুলো যা ঢুকাচ্ছে তাই তারা নিচ্ছে, ব্রেইনওয়াশ করছে, এখানে মুক্তির আছেটা কি ? এটা কি choice নাকি compulsion ??? এটা compulsion, ছেলে হোক, মেয়ে হোক,আমাদের পোষাকের
চয়েসটা সম্ভাব্য কি হবে সেটা আমাদের সমাজ থেকে ঠিক করে দেয়ায় হয়, মোর স্পেসিফিক্যালি বললে, ফ্যাশন হাউজগুলো। আমরা যাই কিছু চয়েস করি না কেন তা আসে আমাদের প্রবৃত্তির থেকে, কালচার থেকে, মিডিয়া থেকে, রোল মডেলদের কাছে থেকে-আমরা আসলে এইসবেরই দাস, এদের কাছেই বন্দী। আর ইসলাম থেকে কিছু আসলেই জাফরদের আপত্তি, অন্য কিছুতে নয়।
এই ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো যে চয়েস নামক ব্যাপারটা ধর্ষণ করে তা নয়, সাথে আছে তার ছোট ভাই কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রি আর পার্লারগুলো। সুন্দরী বলতেই আমাদের চোখে ভেসে আসে লম্বা, ছিপছিপে, উজ্জ্বল রঙের তরূণী, যে ইমেজটা নকশা সেটা করে দিয়েছে! বিউটিশিয়ানদের হাতে নির্ধারিত জিরো ফিগার অর্জন করতে তাই দিনরাত পরিশ্রম, ডায়েটিং আর ব্যায়াম ! ৩৬-২৪-৩৬
হতে না পারলে ইজ্জত নষ্ট! আমি জানতে চাই, এই জিরো ফিগার,
এই ৩৬-২৪-৩৬ কে সেট করে দিয়েছে ? তাদের হাতে কেন বন্দী হয়ে আছে আমার বোনেরা ? একজন সত্যিকারের যিনি মুসলিমাহ,
তিনি অবশ্যই বোরকা পরবেন এবং এজন্য তিনি বন্দী নন। তিনিই
সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, কারণ তিনি সেই কাপড়টা পরেন না যেটা তাকে yellow পরতে বলে, তিনি সেই কাপড়টাও খোলেন না যেটা তাকে নকশা খুলতে বলে। তিনি নিজের প্রবৃত্তির পূজারী নন, তিনি এমনও নন যিনি কালচার নামক abstract এবং relative কিছু সেট অফ কনসেপ্টকে বিনা বাক্য ব্যায়ে গ্রহণ করেন। একজন মুসলিমাহ হচ্ছেন চিন্তাশীল নারী, যিনি জানেন তিনি কোথা থেকে এসেছেন এবং কার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি সচেতন কারণ তিনি জানেন দাসত্ব করতে হয় এক আল্লাহর, ফ্যাশন হাউজের, যুবকের
ক্ষুধার্ত চোখ কিংবা জাফরের নয়। তিনিই মুক্ত কারণ তার লাইফের রোল মডেল শরীরসর্বস্ব কোন মডেল বা সিনেমার নায়িকার নয় যে অর্থের বিনিময়ে তার ধোকাঁবাজিময় বিজ্ঞাপন করে সৌন্দর্য নিয়ে ব্যবসা করে। একজন মুসলিমাহ তার পোষাকটা কেমন হওয়া উচিত
সেটা জেনে নেন সর্বজ্ঞানী থেকে , কোন স্বার্থপর মুনাফাভোগী ডিজাইনারের কাছ থেকে নয়। তার মূল্য তার তাকওয়ায়, সমাজের তথাকথিত স্মার্টনেসের ডেফিনিশনে নয়। বন্দী হল তারা যারা স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে ভেসে চলে, বন্দী হল তারা freedom এর মিথ্যা ধারণায় ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছে। বন্দী এই মানুষগুলোকে মুক্ত করবার দায়িত্ব কিন্তু আমার আর আপনার,
আল্লাহর ইচ্ছায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পোস্ট গুলোর লেখাগুলো এরকম রক্তাক্ত হয়ে গেল কেন ?
সহিহ্ বোখারি ভলুম ৭ বই ৬২ হাদিস ১৩৭: আবু সাইদ আল খুদরি বর্ণনা করলেন: এক জিহাদে আমরা শত্রুপক্ষের নারী বন্দি পেলাম। তারা আমাদের হাতে আসলে আমরা তাদের সাথে আজল করে সহবাস করলাম। এরপর আমরা রসুলুল্লাহকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন: তাই নাকি! তোমরা কি এরূপ করে থাক?” রসুলুল্লাহ তিনবার এই প্রশ্ন করলেন এবং বললেন: আখেরাত পর্যন্ত যত লোক সৃষ্টি হবে তাদের প্রত্যেকটি অবশ্য জন্মলাভ করবে।
মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২.২৩.৯০: ইয়াহিয়া—মালিক—নাফি থেকে। ইয়াহিয়া বললেন যে আবদুল্লাহ ইবনে উমরের ক্রীতদাসীরা তাঁর পা ধৌত করতো এবং তাঁর কাছে খেজুর পাতার তৈরি এক মাদুর নিয়ে আসত। সে সময় তারা ঋতুমতী ছিল। মালিককে জিজ্ঞাসা করা হল কোন এক ব্যক্তি গোসল করার আগেই কি তার সব ক্রীতদাসীদের সাথে যুগপৎ সহবাস করতে পারবে? তিনি (অর্থাৎ মালিক) উত্তর দিলেন যে গোসল ছাড়াই পরপর দুইজন ক্রীতদাসীর সাথে সহবাসে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু যখন কোন স্বাধীন স্ত্রীর সাথে সহবাসের দিন থাকবে সেদিন অন্য আর এক স্বাধীন স্ত্রীর সাথে যৌন সঙ্গম করা যাবে না। কিন্তু এক ক্রীতদাসীর সাথে যৌন সঙ্গমের পর সাথে সাথে অন্য ক্রীতদাসীর সাথে সহবাস করা আপত্তিকর নয়—যদিও তখন লোকটি জুনুব (সহবাসের পর তার কাপড়ে অথবা দেহে বীর্য ও অন্যান্য কিছু লেগে থাকা)।
মন্তব্য করতে লগইন করুন