একটি স্বপ্নের জন্মকথা
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২০ এপ্রিল, ২০১৫, ০১:৪৪:৫৭ দুপুর
একটি স্বপ্নের জন্মকথা 
ভূঞাপুর তখন যমুনার কোল ঘেষা একটি গ্রাম। একটু সন্ধ্যা নামলেই শেয়াল ডাকে। যমুনার পানি বাড়লেই প্লাবিত হয় তার বুক। সেইখানেই একটি কলেজ দেয়ার কথা ভাবলেন ইবব্রহিীম খাঁ। বাড়ি বাড়ি যান , হাত পাতেন মানুষের দারে দারে। কেউ চাল, কেউ ডাল , কেউবা দেয় লাউ। রাস্তায় এক ভিক্ষুকের সাথে দেখা । কিতাপ উদ্দিন স্যার তাঁর কাছে গিয়ে হাতা পাতেন। ভিক্ষুক তার সারা দিনের উর্পাজনের সমস্তটাই দিয়ে দেন স্যারের হাতে। তখন নাকি ইব্রাহীম খাঁ বলেছিলেন এইবার আমাদের কলেজ হবেই। এই ভাবেই সকলের সাহায্যে কালে কালে গড়ে উঠে ইব্রাহীম খাঁ বিশ্বাবিদ্যালয় কলেজ। কিছুদিন আগে তার সরকারী করণ হলো।
আজ আমরাও চাচ্ছি আমাদের গ্রামে একটা কলেজ হোক। রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির শতবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্খাপিত হয় আমাদের এই কলেজ। নভেম্বর থেকে শুরু হয় এই কলেজের কাজ। ডিসেম্বরের ২২ তারিখে উদ্ভোধন করা হয় এই কলেজের। ১৯০১ সালের এই দিনে পথচলা শুরু করে শান্তিনিকেতন। তাই ২২ ডিসেম্বরকে উদ্ভোধনের তারিখ হিসেবে বেছে নেই আমরাও। এই কলেজটি হবে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের একটি প্রতিষ্ঠান।
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন :
প্রতি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনে অঙ্গিকারাব্দ একটি প্রতিষ্ঠান; যারা কাজ করবে গ্রামে গ্রামে।শিক্ষা স্বাস্থ্য অবকাঠামো ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে কাজ করবে তারা। অর্থ্যৎ আমাদের গ্রাম সাজাবো আমরা। নিজেদের শ্রমে , ঘামে অর্থে আমরা গড়ে তুলবো আমাদের গ্রাম। এরকমই ভাবনা নিয়ে শুরু হয় গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন। সারা দেশের গ্রামগুলোতে পাঠাগার দিয়ে দিযে একটা নেটওযার্ক গড়ে তুলা হবে। যাতে একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসতে পারে দ্রুত । যে কেউ যুক্ত হতে পারে আমাদের এ আন্দোলনের সাথে। ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই। কেউ তার গ্রামে একটি পাঠাগার দিতে চাইলেই আমরা বাড়িয়ে দিবো আমাদের হাত ।
কলেজের শিক্ষা দর্শন
রবীন্দ্রনাখের তপোবন দর্শন : রবীন্দ্রনাখের মতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করবে প্রকৃতি থেকে। তাই কলেজটি হবে প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে। কলেজে থাকবে নানা ধরণের ভেষজ, ফলজ, বনজ বৃক্ষ।তা ছাড়া প্রস্তাবিত কলেজ থেকে
আধা কিলো পশ্চিমে আছে যমুনা নদী। আর পূর্বে আছে তেরিল্লা ও বর্ষারা বিল।প্রকৃতির এই সমস্ত পরিবেশ থেকেই সে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
প্রকৃতি থেকেই শিক্ষার্থী চারপাশের সমস্ত বস্তু জগতের সাথে নিজের আত্মীয়তা অনুভব করবে। সে যে এই বস্তু জগতেরই একটা অংশ সেটা বুঝতে শিখবে। বুহুদিনের ভুয়ো দর্শন তার ভিতরে যে একটা অহং বোধের জন্ম দিয়েছে তার বিলুপ্তি ঘটবে। অতি ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার যে বেচেঁ থাকার প্রয়োজনীয়তা আছে তা স্বীকার করার মানসিকতা জেগে উঠবে।মোট কথা নিজেকে এই সবের থেকে শ্রেষ্ঠ বা এই সব সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পাবে।
গান্ধীর নঈ তালিম দর্শন : একজন ব্যক্তি মানুষের দৈন্দিন জীবনে যে সমস্ত কাজ জানা থাকা দরকার তা তাকে শিক্ষা দেয়া হবে যাতে নিজেদের কাজ নিজেরাই করতে পারে। টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল, ঘড়ের বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি কাজ।যাতে সে নিজেকে একজন কর্মক্ষম মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীর মনে হীনমন্যতা বোধের জ্ন্ম দেয়। নতুন কিছু চিন্তা করা, আবিষ্কার করা ইত্যাদি সবই সাদা চামড়াদের কর্ম। আমাদের কাজ কেরানিগিরী।চিন্তা করার স্বাধীনতাকে খর্ব করে মুখস্ত করা তোতা পাখি বানানো হয় আমাদের শিক্ষার্থীদের।মুখস্ত করা বিদ্যাকে পরীক্ষার হলে গিয়ে উদগিরণ করে তারা একটা সার্টিফিকেট পান কে কতো বড় নকলনবিশ হবেন তার জন্য।তার উপর আবার বিদেশের নানা ব্যর্থ্য শিক্ষাপদ্ধতীর গিনিপিগ হতে হয় আমাদের শিক্ষার্থীদের।
এই শিক্ষা দর্শন শিক্ষার্থীদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।সমাজের জন্য তাঁর যে একটা প্রয়োজনীয়তা আছে সেটা সে উপলব্দি করতে শিখবে। এই দুই শিক্ষা দর্শনের মিলনে তৈরি হবে সহজ মানুষ। যারা একই সাথে নিজেকেপ্রকৃতির সন্তান এবং সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলা চলনক্ষম একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে।
সমাজের সাথে তার সেতু বন্ধন : সাধারণত সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে শিক্ষা কার্যক্রম। বাকি সময় এই অবকাঠামো অব্যবহৃত অবস্থায় থাকে। যেহেতু কলেজটি গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের একটি প্রতিষ্ঠান তাই গ্রাম উন্নয়নের নানা ভাবনার সাথে এই কলেজ যুক্ত থাকবে। যেমন ধরুন কৃষকেরা কী ধরণের ফসল রোপণ করেন।এই ফসলের ঝুকিঁ কী, সীমীত সম্পদ ব্যবহার করে কীভাবে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যেতে পারে, কোন ফসলে ঝুকি কম, বিকল্প কী ফসল চাষ করা যেতে পারে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কৃষকের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করবে। প্রযুক্তির সাথে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলার জন্য আয়োজন করবে বিভিন্ন কর্মশালার।গ্রামের তরুণদের দক্ষ জনসম্পদে পরীণত করার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়দিী কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি নানা বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এই কলেজ।
এইসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয়দের সাথে কলেজের একটা সম্পর্ক স্থাপন হবে।ফলে স্থানীয়রাই এই কলেজ পরিচলনার জন্য নানা ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করে থকবে। সকলের সহযোগিতাই সম্ভব এই বিশাল প্রকল্পের বাস্তবায়ন।তাই আমরা সকলের বুদ্ধি ,পরামর্শ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কামনা করছি।
৩১ জানুয়ারি থেকে চালু হচ্ছে ১০টি কম্পিউটার সমৃদ্ধ একটি ল্যাব। এতে ওয়াই ফাই কানেকশন থাকবে। এখানে গ্রামে তরুণদের তথ্য প্রযুক্তিতে যোগ্য করে গড়ে তুলা হবে।
আমরা দিবো জমি : টাঙ্গাইলের একটি গ্রাম অজুর্না। সেই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বাড়ি হাজী বাড়ি।ইসমাইল খাঁ যখন হজ করতে যান তখন আশে-পাশের গ্রামের কোন হাজী ছিলেন না। সৎ ও ভালোলোক হিসেবে হাজীসাবের সুনাম ছিলো বেশ। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে প্রথম দুই ভাই চিলেন চিরকুমার। ছোট ৩ ভাই ছিলেন সংসারি। তাদের সমস্ত সহায়সমপ্তি এই তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দিলেও ৭৭ শতাংশ জমি রেখে দেন সামাজিক সেবা মূলক কাজের জন্য। সেই হাজী সাহেবও নেই আর তার ভাইয়েরা গত হয়েছেন অনেক বছর হলো। এখন তার নাতিপুতিদের হাতে সংসারের হাল। একটি কলেজ দেয়া হবে শুনে এই জমি দিয়ে দেয় তারা। হাজী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধাসরুপ এই কলেজের নাম রাখা হয় হাজী ইসমাইল খাঁ কলেজ।
এগিয়ে আসে সবাই : অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারের সদস্যরা এগিয়ে আসে স্বতঃস্ফর্ত ভাবে। এগিয়ে আসে গ্রামর তরুণেরাও। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাত পাতে মানুষের দ্বারে। কেউ ১০, টাকা কেউ ২০ টাকা কেউবা দেয় ৫০০ টাকা।কলেজের মাটি কাটে গ্রামের তরুণেরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাশঁ নিয়ে আসা হয়। এগিয়ে আসে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনরে সমর্থকরাও। কেউ টাকা দিয়ে কেউ ঋণ দিয়ে, কেউ বুদ্ধি দিয়ে সহযোগিতা করতে থাকে আমাদের। বিশেষ করে পড়শি ফাউন্ডেশন কলেজের জন্য ১০টি কম্পিউটার সমৃদ্ধ একটি ল্যব করে দেন আমাদের। এবং কলেজের প্রাথমিক কাজের জন্য ৪০,০০০টাকা আমাদের বিনা সুদে লোন দেন।
তবু একলা চলোরে : সারা দেশের মতো আমাদের গ্রামও দ্বি-দলীয় নোংরা রাজনীতীর বাইরে নয়। বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করতে মাঠে নামে তারা। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে নানা অপপ্রচার চালাতে থাকে আমাদের বিরুদ্ধে।লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা আনছি আমরা, আমাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে, শিক্ষ দর্শন কেন ২জন হিন্দু লোকের নামে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি । অনেকবার তাদের ডাকার পরেও তারা যখন আসেন না তখন আমাদের তরুণদের ঐক্য হয়েছে আরো কঠিন।
বন্ধু তুমি পাশে থেকো : আগামী জুন-জুলাই থেকে শুরু হবে কলেজের শিক্ষাদান কার্যক্রম্ । দরকার উপযুক্ত শিক্ষক্। বসার জন্য চেয়ার টেবিল বেঞ্চ। শিক্ষকদের বেতন, ভৌত কাঠামো, বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার, ব্যায়ামাগারসহ আরো নানা জিনেসের। দরকার সকলের সহযোগিতা, পরামর্শ। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় হয়ত একদিন এই প্রতিষ্ঠানই হবে আমাদের শান্তিনিকেতন।
>> ফেসবুকেঃ গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন
https://www.facebook.com/GramPathagarAndolan
বিষয়: বিবিধ
১২৭০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন