ছোটগল্প : অবদান।

লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ২২ জুন, ২০১৪, ০২:১৫:৫২ দুপুর

অনেক দিন পর আবার রূপপুর গ্রামে আসলেন ডাঃ রাইহান কবীর ।

অসাধারণ একটি গ্রাম। ছবির মত সুন্দর। গ্রামের ভিতর দিয়ে একটা ছোট রাস্তা সোজা চলে গেছে উত্তর দিকে। এই রাস্তা দিয়েই জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে লোকজন।

রাস্তার দুইধারে বড় বড় গাছের সারি। এখানে সেখানে অনেক গুলো বাঁশঝাড় আর মাঝারি আকৃতির কয়েকটা পুকুর। সবকিছু মিলে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ। পুকুরে যখন শাপলা ফোটে, হাঁসের বাচ্চাগুলো প্যাকপ্যাক করতে করতে জল কেটে এগিয়ে চলে অবাক চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকতেন ডাঃ কবির।

সেটা প্রায় দশ বছর আগের কথা। সবেমাত্র বিসিএস হয়েছে ডাঃ কবিরের। পোস্টিং হয়েছে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে। অনেক দুশ্চিন্তা হয়েছিল সেদিন। সারাজীবন শহরে বাস করেছেন। এখন গ্রামের লোকদের সাথে কিভাবে মিশবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।

তবে বেশিদিন তাকে কষ্ট করতে হয়নি। তার সদা হাস্যজ্জ্বল চেহারা আর গ্রামের মানুষের আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যাবহার, উভয় মিলে মুহুর্তেই আপন হয়ে গিয়েছিল এলাকাটি।

খুব বেশিদিন ছিলেন না সেখানে। মাত্র দুই বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই নিজের মত করে সাজিয়ে ফেলেছিলেন গ্রামটিকে। রাস্তা নির্মাণ, স্বাস্থসম্মত পায়খানা তৈরী, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান সবকিছু নিজ উদ্যোগে করেছিলেন।

তবে বলার মত যে কাজটি করেছিলেন তা হল মসজিদ নির্মাণ। গ্রামের লোকদের সহায়তায় টিনের চাল আর কিছু ইট দিয়ে মোটামুটি আধাপাকা ধরনের একটা। পাশাপাশি মসজিদের ভিতরে একটা পাঠাগার। কুরআন শরীফ, বেশ কিছু তাফসীর গ্রন্থ, হাদীস গ্রন্থ, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনী, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস ইত্যাদি প্রায় পাঁচশো রকমের বই সংবলিত পাঠাগার।

গ্রামের লোকজন তাকে সম্মান করত অনেক। তিনিও তাদেরকে ভালোবাসতেন অকৃত্রিমভাবে। হয়তো এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল এত কম সময়ের মধ্যে এত কিছু করা।

একদিনের ঘটনা মনে পড়ছে তার। নতুন তৈরী মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। পাশে ছোট্ট একটা ছেলে তাকে অনুকরণ করছিল। নামাজ শেষে তাকে জিজ্ঞেস করলেন :

- কোন ক্লাসে পড় বাবু ?

- ক্লাস ওয়ান।

- ভেরি গুড। তো বিড়বিড় করে নামাজে কি কি সুরা বললে একটু বলতো শুনি।

- কই আমি তো কোন সুরা পড়িনি।

- তাহলে ঠোঁট নাড়াচ্ছিলে যে।

- আপনি ঠোঁট নাড়াচ্ছিলেন, তাই আমিও নাড়াচ্ছিলাম।

ছেলেটার মিষ্টি ও শান্ত কন্ঠে কথাটা শুনে বুকটা জুড়িয়ে যায় ডাঃ কবিরের।জিজ্ঞেস করেন :

- তোমার নাম কি বাবা ?

- জি আমার নাম আব্দুল মালেক।

.......................................

গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই চতুর্দিকে লোকজন ঘিরে ধরে ডাঃ কবিরের। বোঝা যায় এ এলাকায় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

সবাইকে সাথে নিয়ে এলাকাটা দেখতে থাকেন তিনি। অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাঁচা রাস্তাটা পাকা হয়ে গেছে। এলাকায় শিক্ষার হার বেড়েছে। বেশ কিছু দালান কোঠা গড়ে উঠেছে। তার তৈরী করা আধাপাকা মসজিদটা পুরোপুরি পাকা হয়ে গেছে। পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা পাঁচশো থেকে বেড়ে এখন প্রায় দুই হাজারের মতো।

সবকিছু দেখে শুনে অত্যন্ত খুশি হন তিনি। মসজিদের ভিতর ঢুকে দেখেন সেখানে মুসল্লিদের সংখ্যাও বেড়েছে। এক তরুণ ছেলে সবার সামনে বয়ান দিচ্ছে। রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বয়ান।

"হে ঈমানদারগন তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হল, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার।

পবিত্র কুরআনে তাক্বওয়া শব্দটি তিনটি অর্থ ব্যাবহার করা হয়েছে। প্রথম অর্থ ভীতি, দ্বিতীয় অর্থ আনুগত্য আর তৃতীয় অর্থ হল পাপ মোচন। মহান আল্লাহর প্রতি ভয় রেখে তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়া এবং যাবতীয় পাপ বর্জন করার নামই তাক্বওয়া।

রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, প্রত্যেক নেক কাজের সওয়াব দশ হইতে সাতশ গুণ পর্যন্ত প্রদান করা হবে। কিন্তু রোযা কেবল আমারই উদ্দেশ্যে রাখা হয় বলিয়া উহার প্রতিদান আমি স্বয়ং দিব। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রোযাদারদের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময় এবং অন্যটি তার মালিক, মনিব আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়।"

বয়ান চলতেই থাকে। ডাঃ কবির মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতেই থাকেন। এতটুকু একটা ছেলে এত সুন্দর করে বয়ান করছে অবাক হয়ে ভাবেন তিনি। কোথায় শিখল এত কিছু।

শেষ হলে ছেলেটিকে কাছে ডাকলেন। বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন :

- নাম কি তোমার বাবা ?

- জি, আমার নাম আব্দুল মালেক।

হচকচিয়ে যান তিনি। সেদিনের ছোট্ট ছেলেটা এত বড় হয়ে গেছে। আর এত কিছু শিখে ফেলেছে। চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে তার। জিজ্ঞেস করেন :

- কোথায় শিখলে বাবা এত কিছু ?

- সব আল্লাহর রহমত। আর আপনারই তো অবদান। আপনার পাঠাগারের বইগুলো পড়েই।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

237516
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৩৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
237522
২২ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৫৪
জাকির হোসাইন লিখেছেন : অসাধারণ লিখা! ছোট লেখাটিতে অত্যন্ত সুন্দর ও সফলভাবে আপনি একটা চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন! দেশে ঠিক এরকম সুস্থ ও সুন্দর সাহিত্যসৃষ্টিকারী লেখক দরকার যেই সাহিত্য ছিল আগেকার কিশোর কন্ঠ বইগুলোতে! অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্যে! এরকম আরোও লিখছেন ও লিখবেন আশা করি!
237576
২২ জুন ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৮
হতভাগা লিখেছেন : চমতকার ! এটা কি সদকায়ে জারিয়াহ ?
237580
২২ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : সুন্দর সুন্দর চমৎকার লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগলো তবে আপনাকে ব্লগে তেমন দেখিই না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File