ভালবাসা দিবসে অভাবনীয় এক ভালবাসার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:১২:৫৪ রাত

মিসেস আমিনা বেগম ছেলের

ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন।

ছেলে তমাল আজ সারাদিন যা কিছু

করেছে সবগুলোর ছবি তুলে এনেছে।

একটা একটা করে মাকে দেখাচ্ছে।

মা মন্ত্রমুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন

ছবিগুলোর দিকে। আর ভাবছেন

গতকালের কথা।

হঠাৎ কোথা থেকে এসে তমাল

একটা আবদার করল -

তমাল : মা, আমার কিছু টাকা লাগবে।

মা : কত?

তমাল : পাঁচ হাজার।

মা : ( আঁতকে উঠে) কি ! এত

টাকা দিয়ে তুই কি করবি ?

তমাল : দরকার আছে। পরে সব বলব।

এখন তারাতারি টাকা দাও।

আমিনা বেগম আর কথা বাড়ালেন না।

টাকা দিয়ে দিলেন।

অগাধ বিশ্বাস আছে তার ছেলের

প্রতি। টাকা যে বাজে কাজে ব্যায়

হবে না তা খুব ভাল করেই জানেন

তিনি।

এইতো গত বছরের ঘটনা। ছেলের

হাতে পঞ্চাশ টাকা গুজে দিয়ে বললেন

- আজকে বাসায় নাস্তা হবে না।

বাজারে গিয়ে হোটেলে বসে নাস্তা কর

ছেলে দশ মিনিট ঘোড়াঘুড়ি করে আবার

বাসায় হাজির। মা জিজ্ঞেস করেন

- কিরে নাস্তা করেছিস।

- না।

- কেন.?

- লজ্জা করে।

- কিসের লজ্জা।

- এত বড় বড় মানুষের

সাথে বসে নাস্তা করতে কেমন

জানি লাগে।

- তুই কি ছোট নাকি। কলেজে পড়িস।

এখনো হোটেলে বসে নাস্তা করতে পারি

না।

- না পারিনা।

- গাধা কোথাকার। আমি জানি তুই

পারবি না।

ডাইনিং টেবিলে নাস্তা দেয়া আছে,

খেয়ে নে।

তমাল অবাক হয়।

মায়েরা কিভাবে জানি আগে থেকেই

সবকিছু বুঝতে পারে।

....................................

এরকম ছেলের

হাতে টাকা তুলে দিতে মিসেস

আমিনা বেগম দুইবার ভাবলেন না।

তিনি খুব ভাল করেই জানেন

বিনা প্রয়োজনে তার ছেলে এক টাকাও

অপচয় করবে না।

তবে ইদানিং তমালের মধ্যে কিছু

পরিবর্তন লক্ষ করছেন তিনি।

প্রতি মাসে গুনে গুনে তিনদিন বাড়ির

বাইরে যায় সে। প্রথম দিন আবার

সাথে করে একশ টাকা নিয়ে যায়।

কোথায় যায়, কি করে কিছুই পরিস্কার

করে বলে না। আমিনা বেগমও

বেশী জেরা করেন না ছেলেকে। শুধু

অনুভব করেন ছেলেটা কিসের ছোয়ায়

জানি ভাল থেকে আরো ভাল

হয়ে যাচ্ছে।

.,.........................................

রাস্তা দিয়ে হাটছে তমাল।

হাতে একটা ব্যাগ।

সেখানে পনেরো বিশটার মত গোলাপ

ফুল। আজকে বিশ্ব ভালবাসা দিবস।

তার মত একটা যুবক ছেলের

হাতে গোলাপ থাকা খুব স্বাভাবিক।

কিন্তু তাই বলে এতগুলো।

এতগুলো গোলাপ দিয়ে কি করবে সে?

ব্যাগভর্তি গোলাপ নিয়ে সোজা টাউন

হলে চলে আসে তমাল।

সেখানে আগে থেকেই পনেরো জন

ছেলে অপেক্ষা করছিল তার জন্যে।

সবার বয়স বার তের হবে। জীর্ণ -

শীর্ণ চেহারা। মলিন মুখ। ভদ্র

সমাজের ভাষায় এরা পথ শিশু

কিংবা টোকাই নামে পরিচিত।

অনেক

বলে কয়ে বিশজনকে আসতে রাজি করিয়ে

তমাল। পাঁচ জন আসেনি। এরা মনে হয়

বিশ্বাস করতে পারে নি।

কিংবা কাজের

চাপে আটকা পড়ে গেছে।

এদেরকে নিয়েই

আজকে ভালবাসা দিবস উদযাপন

করবে তমাল।

তিনটা অটোরিক্সা ভাড়া করে নেয়।

উদ্দেশ্য ঘাঘট নদীর তীর।

সেখানে সকালের নাস্তাটা সেরে নেয়

তারা। মেন্যু মৌবনের বিখ্যাত

ভুনা খিচুড়ি আর গ্রান্ড হোটেল মোড়ের

চা। নাস্তা খাওয়ার পর নদীর

পানিতে জলকেলি খেলে ।

তারপর শহরের ভিতর

ঢুকে সুরভী উদ্যান, শিরিন পার্ক,

চিড়িয়াখানা এসব জায়গা ইচ্ছেমত

ঘোরা।

ইতিমধ্যে দুপুর হয়ে যায়। দুপুরের

খাওয়াটা হয় জাহাজ কোম্পানি মোড়ের

মিতালি হোটেলে। রংপুরের

ঐতিহ্যবাহী হোটেল এটা।

ঘরোয়া পরিবেশে গরুর মাংস

দিয়ে সাদা ভাত পেট পুরে খায় সবাই

মিলে।

এরপরের গন্তব্য তাজহাট জমিদার

বাড়ি। সেখানে ঘোরাঘুরির পর শুরু হয়

প্রধান আকর্ষণ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এই ছেলেগুলোর মাঝে যে এত

প্রতিভা লুকিয়ে ছিল ভাবতেই অবাক

হয়ে যায় তমাল। নাচ, গান, অভিনয়,

কৌতুক কি পারে না তারা ?

দেখতে দেখতে হঠাৎ করে যেন

চলে আসে গোধূলি লগ্ন।

ফিরে এসে মেডিকেল মোড়ের

বৈশাখী হোটেলে সন্ধার

নাস্তা করে তারা।

এরপর ঘরে ফেরার পালা। পরস্পরের

কাছে বিদায় নিয়ে যে যার মত

চলে যায়। হয়তো অনেকেই এখন নিজ

নিজ কাজে যোগ দিবে।

দুর্দান্ত একটা দিন কাটে সবার।

ফেরার সময়ও রহস্যজনকভাবে সবার

হাতের গোলাপ ফুল গুলো কেন

জানি তাজাই রয়ে যায়।

..........................................

ল্যাপটপে ছবি গুলো দেখতে দেখতে কখন

যেন আনমনা হয়ে যান মিসেস

আমিনা বেগম। সম্বিত ফিরে পান

ছেলের ডাকে। তার কাছে মনে হচ্ছিল

যেন তিনিও ছিলেন এই ভ্রমণে।

এইমাত্র বাসায় ফিরলেন।

" নাই কাজ তো খই ভাজ "

বলে ছেলেকে বকা দিয়ে তারাতারি ঘর

থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। উদ্দেশ্য

ছেলের কাছে নিজের চোখের জল গোপন

করা।

"এরকম ছেলে জন্ম

দিতে পেরে সত্যি ধন

বিষয়: বিবিধ

১৫৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

176815
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:২৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো
176816
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:০৮
অয়েজ কুরুনী আল বিরুনী লিখেছেন : সত্যি সুন্দর
176883
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৮:৫০
তরিকুল হাসান লিখেছেন : ভাল লাগল ।
176908
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : বেশ সুন্দল৷ ভাল লাগল৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File