মা তুমিই তো শিখিয়েছিলে
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ১০ জুলাই, ২০১৩, ০২:৪১:২৫ দুপুর
ভীষণ অসুস্থ ছেলেটা। ডাক্তার এর
কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার
রক্ত পরীক্ষা করাতে বললেন। সিরিন্জ
দিয়ে রক্ত নেয়া হচ্ছে।
পাশে দাড়িয়ে আছেন বাবা। সন্তানের
রক্ত নিজ
চোখে দেখে দাড়িয়ে থাকতে পারলেন
না তিনি।
অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
ছেলেকে রেখে তখন ছেলের
বাবাকে নিয়ে টানাটানি অবস্থা।
কেউ বাতাস করে কেউ মাথায়
পানি ঢালে। সে এক হৈ হৈ অবস্থা।
জ্ঞান ফেরার পর
ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না বাবার।
বড়ই আদরের ছেলে সে। বাবা মায়ের
একমাত্র সন্তান। এর
আগে দুইটা বাচ্চা হওয়ার পরপরই
মারা গেছে। তাই তো তার জন্য
বাবা মায়ের ভালবাসার পরিমাণ একটু
বেশি।
এভাবেই বলছিলেন স্বয়ং মা। কন্ঠ
বিষন্নতায় ভরা। রাজ্যের সব
শূন্যতা যেন ভর করেছে চোখ দুটোতে।
অপলক চোখে তাকিয়ে আছেন আকাশের
দিকে।
ব্যাথার একটা বিশাল পাহাড় যেন
চেপে বসেছে বুকের মধ্যে। কিন্তু
অবাক হয়ে লক্ষ করলাম চোখে কোন
পানি নাই। হয়ত কেদে কেদে চোখের
সব
পানি শুকিয়ে গেছে নাহলে অতি শোকে
হয়ে গেছেন।
মা বাড়িতে ছিলেন না।
বাবাকে বললে যেতে দিবেন না। তাই
কাউকে না বলে চুপিচুপি সেদিন
মিছিলে গেছিল ছেলেটা। আল্লাহ
তাকে কবুল করে নিলেন শহীদ হিসেবে।
দুপুরে ডেকে ইকরাম ভাই যখন বললেন
একজন শহীদ ভাইয়ের মা এসেছেন
ওনাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। তখনই
গায়ের লোম দাড়া হয়ে গেল।
নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হল এ রকম
একটা দায়িত্ব পেয়ে।
কিন্তু একটা সান্ত্বনা বাণী উচ্চারণ
করতে পারি নাই।
সত্যি বলছি একটা সান্ত্বনা বাণীও
উচ্চারণ করতে পারি নাই।
অনেক কষ্টের পর পাওয়া নিজের
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে একজন
চল্লিশোর্ধ্ব মা যখন ডাক্তারের
কাছে আসেন আবার গর্ভ ধারণ করবেন
বলে তখন
তাকে কি বলে সান্ত্বনা দিতে হয়
আমার জানা নাই।
যে বাবা ছেলের একটু রক্ত
দেখে অজ্ঞান হয়ে যান
তিনি কিভাবে নিজের ছেলের লাশ
কাধে বয়ে নিয়ে গেছেন জানি না।
এমন বাবাকেও সান্ত্বনা দেয়ার
ভাষা আমার জানা নাই।
শুধু
মনে মনে বলেছি তুমি তো মা শিখিয়েছি
শহীদেরা মরে না।
অনুমতি না নেওয়ায় নাম ঠিকানা প্রকাশ করলাম না।
বিষয়: বিবিধ
১১৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন