বাজেটে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গ শেয়ার বাজার

লিখেছেন লিখেছেন সিকদারমোহাম্মদ ০৮ জুন, ২০১৩, ০৫:২৬:৩৮ বিকাল

বাজেট আসে বাজেট যায়, জনগণের আশা বাড়ায়, বিশেষ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে এক অজানা আশা দোল খেয়ে যায় ।বিগত কয়েক বছর যাবৎ এ প্রবনতার মাত্রা বেড়ে গিয়ে এবার আশার বৃহস্পতি তুঙ্গে অবস্হান করছে ।কারনটা পুঁজিবাজার সংস্লিষ্ট সকলের জানা ।হাল আমলে জানা শুনার এ গন্ডি কেবল আর বাজারে নয়, সাধারণের মাঝেও বিস্তৃতি লাভ করেছে ।ফলে, যে অর্থমন্ত্রীকে পুঁজিবাজার বিষয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ‘রাবিশ’‘রাবিশ’‘ফটকাবাজার’ সহ ইত্যকার শব্দ বানে জর্জরিত করে ফেলতেন, ঠিক তিনিই তার, এবারের ঘোষিত বাজেটে শেয়ার বাজারের বিষয় গরু মেরে জুতা দান করেছেন ।কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁর অসময়ের দশ ফোঁর । বাস্তবতা হচে্ছ বড়ই অসময়ে জুতা দেয়া হলো ।এখন তা কতটা কাজে দেয় তাই দেখার বিষয় ।

অর্থমন্ত্রী দেশের পুঁজিবাজারের চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনতে বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছেন । বৃহষ্পতিবার বাজেট ঘোষণায় এসব প্রণোদনা দেয়া হয়। প্রণোদনায় রয়েছে-আয়ের ৩০ শতাংশ বিনিয়োগ করলে এখন থেকে আয় বা করপোরেট করের ওপর ১৫ শতাংশ কর রেয়াত পাওয়া যাবে। পুঁজিবাজারসহ সকল খাতের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। এই প্রনোদনার ফলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে ।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের ওপর ১৫ শতাংশ কর রেয়াত দেয়া এবং করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগে কর রেয়াত সুবিধার ফলে এ খাত চাঙ্গা হবে, কারসাজি কারক মহল থেকে সতর্কদৃষ্টিতে বিনিয়োগে থাকাই হবে সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ ।

ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগের ওপর কর রেয়াত ২০ শতাংশ খেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আর ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা এক কোটি থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করা হয়েছে।ব্যক্তিশ্রেনীরকর রেয়াত সুবিধা নির্ভর করবে বাজারের উর্দ্ধমূখী প্রবনতার উপর, বাজার ভাল না হলে সাধারনত এ ধরনের বিনিয়োগকারী বাজারমূখী হননা ।

পূর্ববর্তি বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও অপ্রদর্শিত অর্থ ১০শতাংশ হারে কর প্রদান সাপেক্ষে বিনিয়োগের সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে ।এতে বাজারে নতুন মূলধনের যোগান কিছুটা হলেও বাড়বে ।

শেয়ারের অভিহিত মূল্যের প্রিমিয়ামের ওপর বিদ্যমান ৩ শতাংশ কর এবং বন্ড বিক্রির সময় উৎসে আয়কর বিলোপ করা হয়েছে। এর ফলে নতুন নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে । এবং শেয়ার যোগানের দিকটা ঠিক থাকবে ।

সার্বিক পর্যবেক্ষণে বাজেটে পুঁজিবাজার বিষয় নেতিবাচক কিছু নেই বলেই বাজার সংস্লিষ্টরা সহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করছেন ।ব্যতিক্রম শুধু অর্থমন্ত্রী স্বভাবসুলভ অতিবচন ,বাজেট বক্তৃতায়ও তার ব্যতয় না ‍ঘটিয়ে বলেন, “মনে রাখা ভালো, পুঁজিবাজার সারা পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ।” কথা সত্য ।কিন্তু সবস্হানে নিশ্চই বুদ্ধিমানেরা সব কথা বলেননা, এ কথা ছোট বেলা থেকেই শুনে এসেছি আর আমাদের অর্থমন্ত্রী মহোদয় শুনে থাকবেননা তা ভাবতেই কষ্ট হয় ।এখন তারই বলে দেয়া উচিৎ কোন বাজার বা ব্যবসা ঝুঁকিমুক্ত । তাহলে অন্তত মানুষের বিনিয়োগ নিরাপদে থাকতো ।

বাজেট বক্তৃতার এক স্হানে মন্ত্রী বলেন,‘আমার মনে হয় এখন পুঁজিবাজারে কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা এসেছে। একটি বিষয় সম্পর্কে বলতেই হয় আমরা যে উদ্দেশ্যে পুঁজিবাজারকে সংস্কার এবং সংহত করার চেষ্টা করেছি, তা সফলতার মুখ দেখেছে।” একটি দেশের অর্থনীতির ব্যবস্হাপক ‘মনে হয়’ তত্বের উপর দ্বার হয়ে যখন প্রকাশ্যে নীতিনির্ধারনি বক্তব্য প্রদান করেন তখন মনে হয় দেশে সরকারী বেসরকারী কোন ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকার দরকার নেই ।অবশ্য একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীকে প্রশ্ন করলেই জানা যাবে সফলতার মুখ আসলে কতদূর ।

বিদায় বেলা এসে শেষ বাজেট দিতে গিয়ে শেয়ার বাজারের মহত্ব ঘোষণা করে বলেন,“বস্ত্রখাতে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে যে ব্যাপক অগ্রগতি হচ্ছে তার অন্যতম উপাদান হচ্ছে পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি উত্তোলন।” অথচ তাকেই বলতে শুনা যেত পুঁজিবাজার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কোন খাতনা ।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী, দেশের পুঁজিবাজারকে সংস্কার ও সংহত করার চেষ্টা সফল হয়েছে বলে আত্মতুষ্টি উপভোগ করতেও ভুলেননি। কিন্তু বাজারে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, অন্য সরকারের আমলে সব কিছু ঠিকঠাক চললেও শেয়ার বাজারের যত সমস্যা আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই কেন উদ্ভব হয় ? সমস্যা সৃষ্টি করে, তার সম্মানজনক সমাধানে না পৌছেঁই আত্মতুষ্টি উপভোগ লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীর সাথে তামাসা বৈকি!

পরিশেষে একটি গল্প অবতারনার লোভ সংবরণ করতে পারছি না বলে দুঃখ প্রকাশ করে শেষ করছি । গল্পটা হল, রাতের বেলা বাড়ি ফিরছিলেন একব্যক্তি। রাস্তায় একটা ঢাকনা ছাড়া ম্যানহোল ছিল। অন্ধকারে দেখতে না পাওয়ায় লোকটি সেইম্যানহোলে পড়ে গেল। তারপর বেশ অনেকক্ষণ চেষ্টা করে লোকটি নোংরা ময়লা মাখা গায়ে উপরে উঠে এলো। উপরে এসে নিজেই নিজেকে বলল , ভাগ্যিস, ঢাকনাটা খোলা ছিল বলে উপরে উঠতে পারলাম। তা নাহলে তো সারারাতই ম্যানহোলের ভেতরে কাটাতে হতো !!!

সংযুক্ত থাকুন নিয়মিত শেয়ার সংবাদের জন্য http://www.a1news24.com/details.php?a1news=MzA5Mg==

বিষয়: বিবিধ

১১৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File