লাঠি মারা শিখুন

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ১১ জুন, ২০১৩, ১১:২৮:০৮ সকাল



জালেমদের ক্ষমতার উৎস যখন বন্দুকের নল,তখন তো সাদামাটা বাঁশের লাঠিই মজলুমদের একমাত্র ভরসা। বুলেটের জোরে যখন অত্যাচারী শাসক পাখির মত মানুষ মারে, তখন তো আপনার লাঠির ব্যবহার জানা ছাড়া কোন উপায় নেই। এই বাঁশের লাঠিই হচ্ছে জালেমের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমদের প্রতিবাদের প্রতীক। হাজার বছর আগে থেকেই নিরিহ নিরস্ত্র জনতার প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে লাঠিই ব্যবহৃত হয়েছে। সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার এই লাঠিকে তাই আপনি কোন মতেই অবহেলা করতে পারেন না।

সাম্রাজ্যবাদী শোষক বৃটিশ ঘাতকদের বাংলার মাটি থেকে তাড়িয়ে সোনার বাংলা স্বাধীন করার যে লড়াই শুরু করেছিলেন তীতুমীর, সেখানেও বাঁশের লাঠিই ছিল গর্জে ওঠার হাতিয়ার। লাঠি দিয়েই তিনি বুলেটের মোকাবেলা করেছিলেন। বৃটিশের এদেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্রের মারপ্যাঁচে না পড়লে লাঠি দিয়েই তিনি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে সক্ষম হতেন।

ডিজিটাল যুগে লাঠি কেন ?

অনেকেই বলতে পারেন একুশ শতকের এই ডিজিটাল সময়ে লাঠির ওপর ভরসা করা নেহায়েত পাগলামো ছাড়া আর কিছু নয়। তাদেরকে আমি একটু পেছনে দৃষ্টি ফেরাতে বলবো । আজকে যে দিনবদলের যুগে আপনি বাস করছেন, সেই দিন বদল কীভাবে হয়েছে তাতো নিজের চোখেই দেখেছেন। লগি বৈঠার মাধ্যমে দিন বদলের ডাক দেয়া হলেও জাতি দেখেছে যে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের সামনে রাজপথে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য করা হয়েছে। আপনি নিশ্চয় সে দৃশ্য ভোলেন নি? আপনি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, এই মাত্র ৬ বছর আগে সেই ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার নামে লাঠি দিয়ে মানুষ মেরেই কিন্তু আজকের দিনবদল করা হয়েছে। সে সময় নিশ্চয় বন্দুকের গুলিতে দিন বদল হয়নি ?

এ ঘটনার কথা খেয়াল করে আপনার চোখের সামনে যে দৃশ্য ভেসে উঠছে সেখানে আপনি কী দেখতে পাচ্ছেন? নিশ্চয় লাঠি ছাড়া অন্যকিছু নয়। তাহলে এখন তো আপনার বিশ্বাস করা উচিত যে লাঠি দিয়ে জালেমের দু:শাসন খতম করা সম্ভব।

লাঠি মারা একটি নান্দনিক শিল্প

তবে হ্যাঁ,তার আগে আপনাকে ভালোভাবে লাঠির ব্যবহার জানতে হবে। লাঠি মারা রীতিমত একটা শিল্প। এই শিল্প এমনি এমনি আপনার দখলে আসবে না। এজন্য প্রয়োজন চেষ্টা সাধনা এবং নিয়মিত প্রশিক্ষনের।

কী ভাবে প্রশিক্ষন নিবেন ?

হয়তো ভাবছেন কী ভাবে লাঠি মারার প্রশিক্ষন নিবেন? কোন চিন্তা নেই। সারাদেশ জুড়েই লাঠি মারার প্রশিক্ষনের সুযোগ রয়েছে আপনার জন্য। বছরের প্রায় সব সময়ই দেশের কোথাও না কোথাও লাঠি খেলা হচ্ছে। লাঠি খেলার আয়োজনের জন্য গ্রামবাংলায় রীতিমত মেলা বসছে। এসব মেলায় লাঠি খেলার প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বিজয়ী লাঠিয়ালকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে । হাজার হাজার নারী পুরুষ সমবেত হয়ে এসব লাঠি খেলা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এসব মেলা এবং উৎসবে যারা লাঠি খেলা দেখাচ্ছেন তারা একেক জন রীতিমত দক্ষ প্রশিক্ষক।

লাঠিয়ালরা বৃদ্ধ কেন?

কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন যে এইসব লাঠিয়ালরা প্রায় সবাই বৃদ্ধ। যুবক লাঠিয়ালদের দেখাই পাওয়া যায়না। এটাই আমাদের মত অসহায় মজলুমদের শংকার কারন। বৃদ্ধদের লাঠি খেলা দেখে তারুণ্যদীপ্ত যুবক কিশোররা হাততালি দিচ্ছে এটা কেমন কথা বলেন?

কী ভাবে এলো লাঠি খেলা

আজরে যুবকরা ভাবছে এটা একটা প্রাচীন খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা জানছে না যে জালেমদের তাড়ানোর জন্যই একসময় গ্রামে গ্রামে লাঠিয়ালদের এভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরী করা হত। জমিদাররা লাঠিয়াল বাহিনী রাখতো। বিভিন্ন চর দখলের জন্যও এই লাঠিয়াল বাহিনীই ছিল একমাত্র ভরসা। সেই রেওয়াজ থেকেই চলে এসেছে এই লাঠিয়ালদের প্রতিযোগিতা বা লাঠি খেলা।

লাঠি শুধু খেলা নয়,শাশ্বত লড়াইয়ের মহড়া

কালের বিবর্তনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মজলুমদের বিপ্লবী প্রতিবাদের অস্ত্র সেই লাঠিয়ালদের চর্চাকে এখন আমরা লাঠি খেলা বানিয়েছি। সেই লাঠিয়ালদের খেলা দেখে আমরা মজা পাচ্ছি। অথচ এই লাঠিয়ালরাই একসময় ক্ষমতার দম্ভ দাপটের বিরুদ্ধে লড়েছেন লাঠি নিয়েই। বহু শক্তিধর জালেম শাসককে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন এই লাঠিয়ালরাই।

কাজে লেগে যান

আসল কথায় আসি। এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাঠি খেলা প্রতিযোগীতার বর্নাঢ্য আয়োজন হচ্ছে। এই রেওয়াজটাকেই যদি টিকিয়ে রাখা যায় তাহলেও তো প্রতিবাদের প্রতীক লাঠি যেকোন সময় গর্জে উঠতে পারে। ধুলিষ্মাৎ করতে পারে জালেম শাসকের দম্ভ। খতম করতে পারে সকল জুলুম অত্যাচার।

যা প্রয়োজন

এজন্য যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে বৃদ্ধদের এই লাঠিখেলা দেখিয়ে তরুনদের চেতনা শানিত করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে যে, এটা আসলে মজা পাওয়ার মত কোন খেলা নয়। এটাই হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় যুদ্ধের শাশ্বত মহড়া।

কারা অংশ নিবে?

এই মহড়ায় অংশ নিতে হবে উদ্যোমী কিশোর সংগ্রামী তরুনদেরও। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে তুলতে হবে তরুন লাঠিয়াল বাহিনী। গ্রামে গ্রামে আয়োজন করতে হবে নবীন লাঠিয়ালদের প্রতিযোগীতার আসর। তাহলে দেখবেন এমন এক সময় আসবে, যখন এই লাঠিই গর্জে উঠবে সকল অন্যায় অত্যাচার জুলুমের বিরুদ্ধে। খতম হবে সকল বন্দুকবাজ স্বৈরাচারের।

চলুন শুরু করি

তাহলে আজ থেকে শুরু হোক লাঠিচর্চা। বাঁশের তো অভাব নেই। দেশ বঁচানোর লড়াই সংগ্রামে হাতে লাঠি তুলে নেয়ার মত চেতনা দীপ্ত তারুন্যেরও অভাব নেই। আসলে অভাব শুধু উদ্যোগের। সেই উদ্যোগটা না হয় আমরাই নিই।

তাহলে এখন থেকে লাঠিখেলা প্রতিযোগিতাকে আমরা বলি জালেমের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা মজলুমের মহড়া।

আপনি আছেন তো ?

আর যেসব বৃদ্ধ এখন পর্যন্ত প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য এই মহড়া টিকিয়ে রেখেছেন তাদের কাজের মুল্যায়ন স্বরুপ শ্রেষ্ঠ লাঠিয়াল পদক দেয়া উচিত। তাকেরকে লাঠিয়াল ক্যাম্পের কোচ এবং প্রশিক্ষক বানানো উচিত। তবে এই কাজটা তো আর সরকার করবে না। অপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। আপনি আছেন তো ?

বিষয়: বিবিধ

২০৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File