আমাদের পূর্ব পুরুষদের শত্রু-মিত্র পর্ব ৩২
লিখেছেন লিখেছেন আনিসুর রহমান ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৯:০৭:২৮ সকাল
পূর্বে আমরা যুক্তি প্রমান উপস্থিত করে দেখিয়ে ছিলাম যে বাংলার শাসক আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ একজন মুসলিম শাসক হওয়া সত্বেও শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বৈষ্ণব মুভমেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ভুমিকা পালন করে। কিন্তু কেন? বুঝার সুভিদার জন্য এর উত্তর আমরা সরাসরি না দিয়ে ঘটনার পরমপরা তা খুঁজতে চেষ্টা করব। প্রথমেই আমরা দেখব শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুকে হোসেন শাহ্ কীভাবে সস্মান করত? তার সাথে তার ব্যাক্তিগত কোন সম্পক ছিল কী না? থাকলে তা কেমন ছিল?
জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রয়াত আমীর জনাব আব্বাস আলী খান তার ‘বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস গ্রন্থের ৪১ পৃষ্ঠায় বাংলার শাসক আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ এর সহিত বৈষ্ণব মুভমেন্টের প্রধান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর এই সম্পর্কে বলেন, “ সুলতান হোসেন শাহ্ ও শ্রী চৈতন্য ছিলেন সমসাময়িক এবং চৈতন্যের সাথে হোসেনের গভীর সম্পর্ক এক ঐতিহাসিক সত্য।”
মাওলানা আকরাম খাঁ তার ‘মুসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস গ্রন্থের ৯৮ পৃষ্ঠায়, বাংলার শাসক আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ এর সহিত বৈষ্ণব মুভমেন্টের প্রধান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর এই সম্পর্ক সম্পর্কে বলেন, “ ------ তিনি (হোসেন শাহ্) রাজকীয় ঝামেলা হইতে মুক্ত হইয়া খুব সম্ভব সর্ব প্রথমে চৈতন্যদেবের খেদমতে উপস্থিত হইলেন এবং তাহার ভক্ত শ্রেনীভুক্ত হইয়া গেলেন। ‘চৈতন্য চরিতামৃতে’ লিখিত আছে যে, ইনি (হোসেন শাহ্) শ্রী চৈতন্যের একজন ভক্ত হইয়া ছিলেন।”
এই সম্পর্ক সম্পর্কে স্যার যদুনাথ সরকার বৈষ্ণব লেখকদের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, শ্রী চৈতন্য যে আবতার(ঈশ্বরের মানুষরূপে এই ধারা পৃষ্ঠে আগমন) ছিলেন, হোসেন শাহ্ তা মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন। চৈতন্য গৌড় নগরে আগমন করলে হোসেন তার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং রাজকর্মচারীগনের প্রতি ফরমান জারী করেন যেন প্রভু চৈতন্যকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ও তার ইচ্ছামত যত্রতত্র ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। (বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, পৃঃ৪১, আব্বাস আলী খান)।
উপরে উল্লেখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলা কোন ভাবেই ভুল হবে না যে, হোসেন শাহ্ শ্রী চৈতন্য ও তার বৈষ্ণব মুভমেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে ভুমিকা পালন। তিনিই এই মুভমেন্টের প্রসারের জন্য ভিতরে বসে কলকাঠি নেড়েছেন। আবার যেহেতু শ্রী চৈতন্য যে আবতার ছিলেন, হোসেন শাহ্ তা মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন, তাই তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ মতবাদে বিশ্বাসীদের মানদন্ডে একজন গোঁড়ামি মুক্ত খাটী মুসলমান হলে হতে পারেন কিংবা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞদের মানদন্ডে তিনি একজন সর্ব ধর্মে বিশ্বাসী বা অর্ধেক অর্ধেক মুসলমান হতে পারেন কিন্ত কুরআন সুন্নার মানদন্ডে তিনি মুসলমান ছিলেন না। ইসলামে শিরক এবং তাওহিত বিষয়টি এতটাই পরিষ্কার যে, একজন শিরককারী নিজেকে যতই মুসলমান দাবী করুক না কেন শরিয়ার দৃস্টিতে তিনি কখনই মুসলমান নন এবং এ বিষয়ে ওলেমাকেরামগণের মাঝে কোন দ্বিমত নেই।
উপরের উল্লেখিত তথ্যগুলকে সত্য বলে মেনে নিলে যে প্রশ্নটি আবেশ্যিক ভাবে চলে আসবে তা হ’ল, তৎকালে বাংলায় হোসেন শাহ্ একজন স্বাধীন সুলতান ছিলেন। একজন প্ররাক্রমশালী সুলতান হিসাবে সে প্রকাশ্যেই শ্রী চৈতন্য ও তার বৈষ্ণব মুভমেন্টের বিরোধীতাকারীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারতেন কিন্ত তিনি তা না করে কেন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের জানতে হবে সেই সময়কার বাংলা তথা ভারত উপমহাদেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস।
চলবে------------
বিষয়: বিবিধ
৯৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন