মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকৃতি ও পরিণতি।

লিখেছেন লিখেছেন মাজহার১৩ ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০১:১০:৩৪ দুপুর

বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বৈষম্যমূলক আচরনের মাধ্যমে শোষন ও অবজ্ঞা করত। ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গন অভ্যূথান ও পাকিস্তানী অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরুংকুশ ভাবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী করে। বাংলাদেশের মানুষ একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে মানুষ মনে করত এমন একটি ভূখন্ড তথা রাষ্ট্র যেখানে থাকবে শোষন ও বৈষম্যহীন সমাজব্যাবস্থা, বাকস্বাধীনতা, ভোটের অধিকার , অর্থনৈতিক মুক্তি এবং আত্মমর্যাদা রক্ষার্তে সার্বভোমত্ব।

কিন্তু ৭১ পরবর্তী শাষকগোষ্টী যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যাবহার শুরু করে তখনই রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়। মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাকে বিকৃত করে যখন অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের স্বাভাবিক ধ্যান ধারনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তখনই অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে যা মানুষের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে। ফলশ্রুতিতে অপরাজনীতির ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের মত ঘটনা ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত হওয়ায় মানুষ দিদ্বাবিভক্ত হয়ে পড়ে যা ভারতের কূটকৌশলের দ্বিতীয় সাফল্য।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সময়ের দাবী। কালের পরিক্রমায় সামরিক অভুথান বা সিপাহী জনতার বিপ্লবের তাগিদে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসীন হোন। “পাকিস্থান থেকে স্বাধীন হয়েছি ভারতের গোলামীর জন্য নয়” জনগনের এই দাবী ও শেখ মুজিবের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কর্মকান্ডে যে গনরোষ সৃষ্টি হয়েছিল তা আঁচ করতে পেরেছিলেন মেধাবী জিয়া।সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বহুদলীয় গনতন্ত্র ও সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের পালস বুঝে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে দ্বিধাবিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে অনেকাংশে সফল হোন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখনই ভারতীয় এজেন্ট ও বাম কুচক্রীরা জিয়ার হত্যার মাধ্যমে উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করে জাতিকে আবার বিভক্ত করার প্রয়াশ পায়।

জিয়াউর রহমান এদেশের বেশিরভাগ মানুষের চেতনাকে লালন করতে পেরেছেন বলেই রাজনীতি্র অভিজ্ঞতায় আওয়ামীলীগের তুলনায় শিশু বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক হিসেবে ১৯৯১ সালে জিতে ভারতের দালাল ও ৭২-৭৫ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকৃতকারী কুচক্রি মহলের মুখে চপেটাঘাত করে। বলে রাখা ভাল, আওয়ামী লীগ যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত অথবা বাড়াবাড়ি না করত এবং ৭১ পরবর্তী বেশিরভাগ জনগনের মনোভাব বুঝে পদক্ষেপ নিত তাহলে ক্ষমতায় থাকার জন্য বাকশাল কায়েম করা লাগত না স্বাভাবিকভাবেই যুগ যুগ ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারত মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দলটি। জাতি আজ দ্বিধাবিভক্ত হতো না।

ভারত ও আন্তজার্তিকচক্রের প্ররোচনায় বাম কুচক্রীরা প্রোপাগাণ্ডার মাধ্যমে যেভাবে জাতিকে বিভক্ত করেছে তেমনিভাবে মুজিব ও জিয়াকে হত্যা করে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করেছে। রাজনৈতিক ভাবে ব্যর্থ হয়ে তারা বারবার সামরিক সরকারকে আমন্ত্রন জানায়। সবারই জানার কথা এরশাদের শাষনামলে বাম দলগুলোর যে দৌদন্ডপ্রতাপ ছিল গনতান্ত্রিক শাষনামলে তাদের অবস্থা জানতে জাদুঘরে যেতে হবে।

নিয়মতান্ত্রিক গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে ব্যর্থ হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল বাম ও ভারতের এজেন্টরা বিভিন্ন দলে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করার চেষ্টায় মত্ত।আদর্শিক মিল থাকায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগের উপর বেশি সওয়ার করেছে। ইসরাইলী কায়দায় গনমাধ্যমগুলোতে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টা করেছে, এমনকি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর নিমিত্ত্বে বিদেশী পৃষ্টপোষকতায় ব্লগার সৃষ্টিকরন এবং কুরুচিপূর্ণ লেখা প্রকাশ করছে। যেসব গনমাধ্যমে নিয়ন্ত্রন নিতে ব্যর্থ সেগুলো বন্ধ করে নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ করেছে।

আওয়ামীলীগের উপর ভর করে যুদ্ধাপরাধের প্রশ্নবিদ্ধ বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইস্যুতে জাতিকে চুড়ান্তভাবে দ্বিধাবিভক্ত করতে সমর্থ হয়েছে। নিয়ন্ত্রনাধীন গনমাধ্যম ও পোষ্য সাংস্কৃতিক কর্মীদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকৃত ও ভুল তথ্য পরিবেশন করে অসাম্প্রদায়িকতার আড়ালে ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে প্রতিষ্টা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে কৃত্রিম অথবা মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত চেতনার সৃষ্টির লক্ষ্যে গনজাগরনমঞ্চ নামক নাটক মঞ্চস্থ করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য পেলেও পরবর্তীতে বিতর্কিত হয় ও তাদের জন্ম নিয়ে সন্দেহ হয়। পাকিস্থান কাদের মোল্লার ফাঁসি জন্য পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব করায় গনজাগরনীরা দূতাবাস ঘেরাওসহ জুতা নিক্ষেপ, কুশপুত্তলিকা দাহ এবং পতাকায় আগুন দিয়ে প্রতিবাদ করছে কিন্তু ফেলানীকে হত্যা করে কাটা তারে ঝুলালে, সীমান্তে হত্যা, দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করলে এই তথাকথিত জাগরনীরা মুখে কুলুপ ও হাত পা অবশ করে বসে থাকে। এ থেকেই বোঝা যায় এরা কাদের স্বার্থরক্ষায় সৃষ্ট। কালের পরিক্রমায় এই কৃত্রিম মঞ্চটিও হারিয়ে যাবে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।

বিষয়: বিবিধ

২০৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File