'নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে' -----বিশ্ব নন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী...(পর্ব-১)

লিখেছেন লিখেছেন রাফসান ২২ মে, ২০১৪, ০৩:০৯:০৪ দুপুর

বিশ্ব নন্দিত মুফাসসির আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর, কারাগার থেকে রচিত 'নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে' সম্পূর্ণ বইটি স্বল্প পরিসরে একসাথে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।তাই পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। আজ ১ম পর্বে বইটিতে আল্লামা সাঈদীর দেওয়া ভূমিকা উল্লেখ করলাম......

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়াবারাকাতু।

যাবতীয় প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের যিনি সমগ্র মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি করে সন্মানিত করেছেন। দরুদ ও সালাম মানবকূলের শ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সঃ) এর প্রতি যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ 'ইসলাম' নামক এক অভ্রান্ত জীবন ব্যবস্থা দান করে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 'সহজ,সরল পথ প্রদর্শন আল্লাহরই দায়িত্ব,যেখানে রয়েছে কিছু বাঁকা পথ-সূরা আন নাহলঃ ৯ । সূরা আত ত্বীনের ৪-৫ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, 'অবশ্যই আমি মানুষকে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছি, তারপর (তার অকৃজ্ঞতার কারণে) আমি তাকে সর্বনিম্ন স্বরে নিক্ষেপ করবো'। মানুষ সৃষ্টি করে আল্লাহ তা'য়ালা তাদেরকে উদ্দেশ্য বিহীন পথে ছেড়ে দেননি, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট একটি পথে চলার জন্য অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের দায়িত্বই ছিলো মানব গোষ্ঠীকে আল্লাহ তা'য়ালার দাসত্বের প্রতি আহব্বান জানানো এবং আল্লাহর দেওয়া পূণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ইসলামী আদর্শে ব্যক্তি পরিবার , সমাজ ও রাষ্ট্রগঠন। যেহেতু ইসলাম গতানুগতিক কোনো ধর্মের নাম নয়, এতে রয়েছে জীবন পরিচালনার সকল নীতিমালা। যতদিন মুসলিম উম্মাহ পবিত্র কোরআন উপস্থাপিত নীতিমালাসমূহকে একমাত্র আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করেছে ততদিন পর্যন্ত তারাই ছিলো বিশ্বের নেতৃত্বের আসনে আসীন এবং নন্দিত জাতি। যতদিন ইসলাম প্রদর্শিত পথে তারা ব্যক্তি থেকে শুরু করে পারিবারিক নীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, নারীনীতি, শ্রমনীতি, সভ্যতা-সাংস্কৃতিক নীতিমালাসমূহ পরিচালনা করেছে, ততদিন পর্যন্ত তাদের মধ্যে ছিলো না হিংসা-বিদ্বেষ, বিভেদ, স্বার্থপরতা, স্বজনপ্রীতি,দুর্নীতি ইত্যাদি।বরং জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, মায়া-মমতা ও পরোপকারিতার মাধ্যমে রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলো মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বর্ণালী অধ্যায়ের। সন্মান, মর্যাদার সুউচ্চ সোপান থেকে নন্দিত এ জাতির পতন ঘটলো তখনই যখন কোরআন প্রদর্শিত সহজ,সরল পথ বর্জন করে তারা মানব রচিত বাঁকা পথ অবলম্বন করে নিন্দিত পথের যাত্রী হলো।নন্দিত এ জাতি যাত্রী ছিলো পবিত্র মক্কা-মদিনার, কিন্তু এরা আরোহী হলো দিল্লী, পিকিং, মস্কো ও ওয়াশিংটনের গাড়ীর। এ জাতি হতভাগ্য নেতৃবৃন্দ ইসলাম সম্পর্কে অবলীলাক্রমে বলা শুরু করলো, সাম্প্রদায়িক, পশ্চাত্পদ, সেকেলে, মৌলবাদ ও মধ্যযূগীয় এবং এসব কারণে আধুনিক ডিজিটাল যূগে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম চলতে পারেনা। ইসলাম থাকবে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও মাযারে। এর বাইরে ইসলামের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। মুসলিম নামধারী অর্বাচীন নেতৃবৃন্দ ইসলামের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কাফির, মুশরিক, নাস্তিক ও মুরতাদদের আবিষ্কৃত ইসলাম বিদ্বেষী ঘৃণিত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, সমাজতন্ত্র, পাশ্চাত্যের ভোগবাদী গণতন্ত্র, সাম্যবাদ ও সংকীর্ণ জাতীয়বাদকে আকড়ে ধরলো। পরিণতিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নন্দিত জাতি ঘৃণা ও লাঞ্ছনার অতল গহরে নিক্ষিপ্ত হয়ে নিন্দিত জাতিতে পরিণত হলো। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় হ্যামিলনের সেই বংশীবাদকের কথা। অনুরুপ স্বয়ং ইবলিশ ঐসব মানব রচিত মতবাদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাঁর্শী বাজিয়ে চলছে আর সে বাশীঁর ঐন্দ্রজালিক সূরের মূছনায় উন্মাদের ন্যায় বিবস্ত্র হয়ে ছুটে চলেছে মুসলিম নামধারী জড়বাদ আর বস্তবাদী চেতনা তাড়িত একশ্রেণীর আত্মমর্যাদাহীন মাসোহারাপ্রাপ্ত সেবকের দল। তারা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, চিন্তা, চেতনা, দূরদর্শিতা, বিদ্যা-বুদ্ধি, বিবেক, বুদ্ধি ও সৃজনশীলতা নিবেদন করেছে ভোগবাদ, বস্তবাদ ও নাস্তিক্যবাদের পদ্যপাদ্যে। এরা নিজেদের জীবন উত্সর্গ করেছে মানব রচিত মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ইসলামের নাম শুনলে এদের গাত্রদাহ শুরু হয়। ইসলাম প্রতিষ্ঠার নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলো এদের কাছে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, প্রাণের দুশমন এবং কোরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্যসমূহ এদের কাছে জঙ্গী বই। মুসলিম হিসেবে যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুই মহান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নং আয়াতটি দেখুন। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 'জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুই গ্রহন করা হবেনা, বরং আখিরাতের আদালতে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে।' জাতির চালকের আসনে আসীন হয়ে যারা ইসলামের প্রতি অসহিঞ্চু এবং বিদ্বেষ পোষণ করছেন, তাদের কাছে আমি বিনয়ের সাথে আবেদন করছি, ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার অর্থই হলো মহান আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে বিদ্রোহ করা। ধ্বংসের এ পথ পরিহার করুন, যদি না করেন তাহলে আখিরাতের আদালতে কঠিন মূল্য দিতে হবে এবং জাহান্নামের জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডই হবে শেষ ঠিকানা। মৃত্যুর পূর্বে তা বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, এটাই অটল বাস্তবতা ও মহাসত্য। আমরা আপনাদের শত্রু নই বরং অধিক কল্যাণকামী। আপনারা ধ্বংসের পথে চলছেন দেখে আপনাদের জন্য আমাদের হ্রদয়ে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। আপনারা মানব রচিত মতবাদ পরিহার করে ফিরে আসুন মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) প্রদর্শিত পথে। আমাদের বন্ধুত্ব ও শত্রুতা সবটাই মহান আল্লাহর জন্য । নবী করীম (সঃ) বলেছেন, 'বন্ধুত্বও আল্লাহর জন্য আর শত্রুতাও আল্লাহর জন্য'। আপনারা মহান আল্লাহর পথে ফিরে আসুন আমরা আপনাদেরকে বন্ধু হিসেবে বুকে জড়িয়ে ধরবো। আর যদি শয়তানের পথই অনুসরণ করতে থাকেন তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের ও আমাদের মাঝে শত্রুতা বিরাজ করবে। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন তো, আদর্শিক ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাড়িত হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার জন্য আপনারা কিভাবে মিথ্যাচার করছেন,কত মায়ের বুক শূণ্য করেছেন, কত সন্তানকে ইয়াতিম বানাচ্ছেন, কত সম্পদ ধ্বংস করছেন, কিভাবে দম্ভ অহংকার প্রদর্শন করছেন, প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করার জন্য দিনরাত বৈঠক করে কত কল্পনা করছেন। এ সকল অপকর্মের জবাব কি মহান আল্লাহর কাছে দিতে হবেনা? এসব নিষ্ঠুর কর্মের কি কোনোই অশুভ পরিণতি নেই? আপনারা আমাদের দুনিয়া ধ্বংস করছেন, এ কারণে আপনাদের আখিরাত ধ্বংস হচ্ছে। মহান মালিক আল্লাহ ও তার রাসূল এবং আখিরাতের আদালতের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস থাকলে নিজেদের পরিণতি সম্পর্কে ধির ও স্থির মস্তিস্কে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন। বিগত কয়েক দশকব্যাপী নন্দিত জাতি মুসলিম মিল্লাতের চরম অধঃপতন দেখে আমার হ্রদয়ে যে যন্ত্রণা আর্তনাদ করে ফিরছিলো, আমি সে যন্ত্রণাগুলোই জাতির সামনে 'নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে' শিরোনাম দিয়ে পেশ করলাম। আমার উদ্দেশ্য একটাই অবহেলিত, নির্যাতিত ও লাঞ্চিত মুসলিম মিল্লাতের পথহারা উদভ্রান্তের একজনও যদি ফিরে আসে মহান আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ) প্রদর্শিত মহামুক্তির পথে, তাহলে আমি আমার শ্রম স্বার্থক বলে মনে করবো। মহা দুর্যোগ পরিবেষ্টিত অবস্থা থেকে আত্মরক্ষার জন্য আমি এ গ্রন্থের চতুর্থ ও পঞ্চম অধ্যায়ে পবিত্র কোরআন ও হাদিস থেকে সাধ্যনুযায়ী দিক নির্দেশনা দিয়েছি। পাঠক-পাঠিকাদের কষ্ট হবে জানি, তবুও আমি সকলকে অনুরোধ করছি ধর্য্য সহকারে এ গ্রন্থের সবটুকু মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। আল্লাহ চাহেন তো হতে পারে এ গন্থ আপনার দৃষ্টির সম্মুখের পর্দা অপসারিত করবে এবং আপনি ঘৃণিত ও নিন্দিত পথ থেকে সরে এসে নন্দিত পথের সেই সৌভাগ্যবান যাত্রী হবেন। এ গন্থ রচনায় যে সব বিজ্ঞ গবেষক, লেখক ও চিন্তাবিদদের রচিত গ্রন্থ থেকে সাহায্যে গ্রহন করা হয়েছে, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং এ গন্থটি প্রকাশে যিনি যেভাবে যতটুকু সহযোগিতা করেছেন মহান আল্লাহ তাঁদের দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম বিনিময় দান করুন ! নির্যাতিত, নিপিড়ীত ও হতাশাগ্রস্ত মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে বিশ্ব কবি, কবি সম্রাট ড. আল্লামা ইকবাল (রহঃ) এর একটি কবিতার মাধ্যমে শেষ করছি আমার এ গ্রন্থের ভূমিকা। কবিতাটির বাংলা অনুবাদ- অশ্রু ফেলোনা হেরিয়া, হে মালী! দৈন্য তোমার মালঞ্চের, ফুটিবে কুঁড়িরা তারার মতন, নব বসন্ত আসিবে ফের। সব রিক্ততা অবসান হবে নব পল্লব গৌরবে , শহীদি রক্তের রং মেখে ফের ফুটিবে গোলাপ সৌরভে,, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। """ বন্ধুরা আল্লামা সাঈদীর উপরিক্ত ভূমিকাকে সংক্ষিপ্তরুপ দিয়ে আমি 'নন্দিত জাতি' পেজের এডমিন ছন্দ আকারে বলিঃ "' আল্লাহর রচিত বিধান ছেড়ে, মানব রচিত বিধানে জীবন গড়ে, হারাতে বসেছে শ্রেষ্ঠ জাতি আজ তাদের ঈমান,, পথহারা এই জাতি এখন, পথের খোজে করছে ভ্রমণ, চায়ছে তারা মানুষের কাছে মুক্তিরই সন্ধান,, নিন্দিত গন্তব্যে আজ নন্দিত সেই মুসলমান,, কারণ যে আর কিছুই নয় ছেড়েছে আল কোরআন।"'

বিষয়: বিবিধ

৩৪০৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

224647
২২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:১৭
নোমান২৯ লিখেছেন :






ভালো লাগলো । ধন্যবাদ ভাইয়া । Good Luck Good Luck
224650
২২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:১৯
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : পড়ে ভাল লাগলো ভাই। অনেক ধন্যবাদ
224655
২২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:২৪
ভিশু লিখেছেন : খুব ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck
224657
২২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:২৮
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : আল্লামা সাইদীর মুক্তি চাই
224660
২২ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:৪১
224677
২২ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:০৬
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : আল্লামা সাইদীর মুক্তি চাই
224694
২২ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ,,আমি পড়তে চাই
224711
২২ মে ২০১৪ বিকাল ০৫:০২
পুস্পিতা লিখেছেন : বইটি কি প্রকাশিত হয়েছে? কোথায় পাওয়া যায়?
২৩ মে ২০১৪ রাত ০১:১৪
172108
রাফসান লিখেছেন : এই বইটি বড় বড় ইসলামিক লাইব্রেরীগুলোতে পাবেন
224753
২২ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৮
বুঝিনা লিখেছেন : আল্লামা সাইদীর মুক্তি চাই
১০
224838
২২ মে ২০১৪ রাত ১০:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভাই।
বইটি নিয়ে একটি আলোচনা করলে ভাল হয়।
১১
233948
১১ জুন ২০১৪ রাত ১০:২০
ব১কলম লিখেছেন : বইটি সম্পর্কে সাইদী সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে পত্রিকায়একটা প্রতিবাদ পাঠানো হয়েছিল, বিস্তারিত জানালে বাধিত হব

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File