ইসলামে কি নারী নেতৃত্ব হারাম? পড়ুন মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি আলী গমার ফাতওয়াঃ
লিখেছেন লিখেছেন উসামা ইউসুফ ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০২:৩৫:৪৬ দুপুর
এটা আমার কোন মত না, তবুও শেয়ার করলাম কেননা এটা চিন্তার উদ্রেককারী বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।
ইসলাম কখনোই সমাজের কোন কোন ব্যাপারে মেয়েদের ভূমিকাকে অন্যদের তুলনায় সীমিত করেনি। সর্বপ্রথম যে ব্যাক্তিটি নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দাওয়াত কবুল করে ইসলাম ধর্ম কবুল করেছিলেন তিনি ছিলেন একজন নারী। ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন একজন নারী, ঠিক তেমনি প্রথম মুহাজির ও ছিলেন একজন নারী। শত শত বছর ধরে নারীরা উচ্চ উচ্চ পদে দায়িত্তপালন করেছেন, তারা ছিলেন শাসক, বিচারক, যোদ্ধা, শিক্ষক, মুফতি, ইত্যাদি। ইসলামের ইতিহাসের যে কোন সৎ ছাত্রই এই সাক্ষী দেবে।
রাষ্ট্রের প্রধানের ব্যাপারে একটি হাদিস আছে যা পরোক্ষভাবে নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করেছে, হাদিসে বলা হয়েছে, যেসব লোক কোন নারীকে তাদের নেতা নিয়োগ করে তারা উন্নতি করতে পারবে না( দেখুন টীকা-১) । অবশ্য, ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে পঞ্চাশেরও বেশি নারী শাসক দেখা যায়, যেমন মিশরের সিত আল-মুলক, সিনায় রানী আসমা ও আরওয়া, আল-আন্দালুসে জায়নাব আল-নাফযাভিয়া, দিল্লিতে সুলতানা রাজিয়া, মিশরে শাজারাত আল-দুর ইত্যাদি। বিভিন্ন সামাজিক জীবনে, যুদ্ধে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পুলিশে ( হিসবা), এবং বাজারে নারীদের অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে রসুলুল্লাহর সম্মতির ব্যাপারে কোন বিতর্ক নাই।
উপরে উল্লেখিত হাদিসের কারনে, অনেক ইসলামিক স্কলাররা নারীদের রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে নিষিদ্ধ বলে মনে করেন। হানাফি মাজহাবে কিছুটা সীমিত পরিসরে নারীদের বিচারক হওয়াকে জায়েজ বলে মনে করা হয়। অবশ্য , নারীদের বিচারক ও রাষ্ট্র প্রধান হওয়াকে সম্পূর্ণ ভাবে জায়েজ বলে মত দিয়েছেন কেউ কেউ, যেমন ইবনে জারির আল-তাবারি, ইবনে হাজম আল-যাহিরি, আবু আল ফাতহ ইবনে তারার, ইবনে আল-কাসিম, ইত্যাদি।
এটা মনে রাখা খুবই গুরুত্ত পূর্ণ যে এই হাদিসটি একটি বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে ও অবস্থায় রসুলুল্লাহর উক্তি, যখন কিনা পারস্যবাসীরা শেষ উপায় ( কিসরা, ও তার ছেলের নিহত হওয়ার পর) হিসাবে একজন নারীকে (কিসরার কন্যাকে) তাদের প্রধান নিয়োগ করেছিলেন। নবীর এই হাদিসটি নির্দেশনা হিসাবে গ্রহন করা যাবে না, বরং ইহা পারস্যদের পতনের একটি ইঙ্গিত। আইনশাস্ত্রের মুলনীতিতে এটি পরিস্কার যে একটি বিশেষ ঘটনা (খাস) সর্ব অবস্থায় (আম) প্রয়োগ করা যায় না। অধিকন্তু, আল্লাহ্ নিজেই বিলকিস, শেবার রানী, এর যোগ্যতা ও বিচক্ষণতার প্রশংসা করেছেন কুর’আনে।
ইসলামে খলিফার উচ্চস্থান এবং সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের মধ্যে যে বিশেষ পার্থক্য আছে সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। খলিফা একটি ধর্মীয় পদ, যার অনেকগুলি দায়িত্তের একটি যা বর্তমান শাসকদের করতে হয়না তা হল মুসলিমদের নামাজের ইমামতি করা, এই শর্তটির ব্যাপারে সকল স্কলাররাই একমত। অন্যদিকে, সমসাময়িক রাষ্ট্রের প্রধানের পদটি একটি সরকারি পদ যেখানে সকল মুসলিম উম্মার প্রধান হওয়ার বিষয়টি নেই। সুতরাং, এই পদটিতে আসীন হওয়ার সকল অধিকার নারীদের আছে।
টীকা-১, এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আবু বাকরাহ ( খলিফা আবু বকর (রাঃ) না) যিনি একটি ব্যাভিচারের বিচারে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়াতে হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে ৮০ বেত্রাঘাত করেন। আল্লাহ্ বলেছেন
আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক। (সূরা নূর, আয়াতঃ ৪)
তাহলে এই ব্যাক্তির বর্ণিত হাদিস গ্রহন করার সুযোগ কতটুকু? যদিও হাদিসটি বুখারী শরীফের অন্তর্ভুক্ত, তথাপি, ইবনে হাজম ও নাসির উদ্দিন আলবানী এই হাদিসটিকে গ্রহন করেন নি কেবল রাবীর কারনে। উল্লেখ্য, ইমান ইবনে বুখারী(রহঃ) একজন মানুষ ছিলেন তাই উনার ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
[ প্রকৃত সত্যা আল্লাহ্ই ভাল জানেন]
[ উপরে উল্লেখিত ফাতওয়াটি সম্পূর্ণ রুপে মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি আলী গমা এর মত, এক্ষেত্রে Islam, the solution of humanity এর কোন মতামত নেই। উল্লেখ্য, অনেক ইসলামিক স্কলারদের মতে নারী একটি রাষ্ট্রের প্রধান হতে পারবে না।]
বিষয়: বিবিধ
৫৬৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন