নপুংশক বিএনপির বীরত্ব !!! ও আমার মত নাদানের এক বুক জ্বালা.........
লিখেছেন লিখেছেন এম আর সুমন ০৭ মে, ২০১৩, ০৬:৫৬:০৭ সন্ধ্যা
সামুতে আমার একটি লেখা প্রায় ১০০০ ফেবু শেয়ার পায়। তার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সামু আমাকে ব্যান করে দিয়েছিলো। দেশের মিডিয়াগুলোর অবস্থা যে কি তা তো সবাই দেখছেন। তাই প্রথমেই একটি কথা খুব স্পষ্ট বলে নিই, আজকাল আমার আর লিখতে ইচ্ছে করে না। তারপরেও আজ আর বসে থাকতে পারলাম না।
প্রাইমারীর বয়সে, এই ৯৪/৯৫ সালের দিকে, আমি গ্রামে থাকতাম। আমার সেই গ্রাম যাকে বলে একেবারে অজ পাঁড়াগা বলতে যা বোঝায় তাই। তারপরেও আব্বু কিভাবে যেন পোষ্টের মাধ্যমে নিয়মিত পত্রিকা পেতেন। যেদিনের পত্রিকা তার একদিন পরে আমরা পেতাম।
সেই পত্রিকায় তখনকার দিনে মায়ানমারে মুসলমানদের উপরে যে হত্যাযজ্ঞ চলতো তার সচিত্র বিবরন আসতো। আমার খুব ভাল মনে নেই, তবে আরো কয়েকটি দেশে, সম্ভবত বসনিয়া , চেচনিয়ায়ও তখন মুসলমানরা খুব নির্যাতনের স্বীকার হতেন। আর প্যালেষ্টাইনের নির্যাতন তো ছিলই।
আমার পত্রিকার পড়ার খুব একটা আগ্রহ তখনও হয় নি। শুধু ছবিগুলো দেখতাম, আর আম্মু ক্যাপশন পড়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন তাই পড়তাম।
সেইসব ছবিতে দেখতাম দাঁড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা মানুষগুলোকে কিভাবে বিদেশী সেনারা মেরে ফেলছে। তখনকার দিনে চেচনিয়ায় নারী, শিশু কাউকেই রেহাই দিত না। তরতাজা ছেলের লাশ নিয়ে মিছিল করছে মজলুম জনগণ, আর তার বোরখা পড়া অভাগি মার কান্নার দৃশ্য !!
ওইটুকু বয়সেই দৃশ্যগুলো দেখে আমার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠতো। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগতো সবকিছু। মাঝে মাঝে কেঁদে ফেলতাম। আম্মু তখন আমার মাথায় হাত দিয়ে বোঝাতেন। এরা হচ্ছে শহীদ। এভাবে যারা মারা যায় তারা বেহেশত বাসী হন। আমি সরল মনে প্রশ্ন করতাম, তাহলে তার মা কাঁদে কেন? আমার আম্মুরও তখন চোখ ভারী হয়ে আসতো।
আমার ছোট্র বুকটা রাগে ফুলে উঠতো। চিন্তা করতাম , আমি তো ছোট। বড় হয়ে একদিন এসবের শোধ নিব। ওইসব মায়ের কান্না ঘুচিয়ে দিব। কিন্তু একটু বড় হয়ে বুঝতে শিখলাম যে ওগুলো আসলে আমাদের দেশের কোনো ঘটনা না। বুঝতে পারলাম যে চাইলেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়া যায় না।
আমার আম্মু আমাকে যুদ্ধের গল্প শোনাতেন। এখন বুঝি যে সেগুলো আসলে মুক্তিযুদ্ধের গল্প না, সেগুলো ছিলো রক্ষিবাহীনির গল্প। সম্ভবত ৭৪/৭৫ এ আম্মু তৃতীয় শ্রেনীতে পড়তেন। তখনকার দিনে তার চেয়ারম্যান বাবাকে কিভাবে রক্ষীবাহিনী ধরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিভাবে তারা সবাই পালিয়ে বাঁচেন, কিভাবে বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে বট গাছে বেধে একটা মানুষকে প্রকাশ্যে চামড়া খুলে লবন দেয়া হয়, ইত্যাদি কত কত গল্প।
আর একটু বড় হলে আব্বুর মুখে শুনেছি পাকিস্তানীদের বর্বর নির্যাতনের কথাও। তবে ছোট থাকায় আব্বুরও তা খুব একটা ভাল মনে নেই। তারও মনে আছে রক্ষীবাহিনীর কথা।
রক্ষিবাহীনির অফিসের সামনে দিয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে হাঁটার অপরাধে আমার আব্বুকে কান ধরিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার গল্প এখন পর্যন্ত মনে হয় ২০০০ বার শোনা হয়েছে।
পরবর্তীতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম রক্ষীবাহিনী কি জিনিস। বাকশাল কাকে বলে। সংবাদপত্রগুলো স্বাধীন ছিল না সেই সময়ে। মাত্র চারটি পত্রিকায় যে লেখালেখি হয় সেখানেও সরকারের নিয়ন্ত্রন ছিলো।
শেষের ঘটনাগুলো যখন আমি বুঝতে পেরেছি , তখন আমার বয়স হবে ১৩ কি ১৪। চিন্তা করতাম , আমি বড় হওয়ার পরে, আর একবার এদেশে রক্ষী বাহিনী আসলে বা আমার নানাকে ধরে নিতে চাইলে আমি ওদেরকে দেখিয়ে দিতাম। ভাবতাম যুদ্ধ তো একবারই হয়। সেই যুদ্ধ তো আব্বু আম্মু দেখেছে। সুতরাং আমার আর দেখার সুযোগ নেই।
আমি এখন বড় হয়েছি। ছোটবেলার সেই কল্পনার ফানুস এখন আর ধারন করি কিনা জানি না। তবে প্রত্যেকটি চিন্তাই অন্তরে গেঁথে থাকে।
আজ এতদিন পরে আমরা সত্যিই সেই বাকশাল পেয়েছি। চোখের সামনে দেখছি কিভাবে একের পর এক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যায়!!
কিভাবে আমাদের দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রন করে সরকার। আমি নিজেই একজন সংবাদকর্মী এখন। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। হয়তো ছোটবেলার সেই হিরোরিজম বা সেই বীরত্বের চিন্তা চেতনা এতদিনে উধাও হয়েছে। তারপরেও অনেক রকম রিস্ক নিয়ে একটু আধটু ফেবুতে স্টাটাস দেই। দু এক কলম ব্লগে লিখি। আর পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে যতটুকু পারি ভূমিকা রাখি। এটুকুই সান্তনা।
একই ভাবে রক্ষীবাহিনীর আদলে গড়া কিছু বাহিনী ও তাদের কর্মকান্ডও দেখছি। দেখছি কিভাবে সেই দাঁড়ি টুপিওয়ালারা মার খায়। কিভাবে তাদের লাশ নিয়ে মিছিল হয়। কিভাবে একের পর এক মায়ের বুক খালি হয়।
মনে মনে ২৫ মার্চ কালরাত্রীর বর্বরতাকে ঘৃনা করতাম। ভাবিনি সেই রকমই এক রাতের মুখোমুখি আমরাও হবো। ভাবিনি আমাদের দেশেও হবে তিয়েনমেন স্কয়ার, আমাদের দেশেও হবে আরেক জালিয়ানওয়ালাবাগ।
কিন্তু আমরা তা দেখলাম। আমরা দেখলাম দাঁড়ি টুপিওয়ালাদের শত লাশ। অবিকল ছোট বেলায় দেখা বসনিয়া আর চেচনিয়ার সেই দৃশ্যগুলি। আবারো দেখলাম কিভাবে সেই লাশগুলি নিয়ে আমার দেশের শাড়ি পড়া গৃহবধুরা কাঁদে। বুক চাপড়িয়ে মায়ের কান্নার আহাজারি দেখলাম।
এইবার আর দুইদিন পরে বাই পোষ্টে পাওয়া দৈনিক বাংলার বানীর ছবি না। এইবার টিভিতে চকচকে ছবি দেখা গেলো। দেখতে দেখতেই একসময় বন্ধ হয়ে গেল চ্যানেলগুলো।
আমি এখন সর্বোচ্চ প্রতিবাদটা করছি। মনে প্রানে ঘৃনা করছি এই গনহত্যাকারী বাকশালীদের। আমার ক্ষমতা এইটুকুই। নজরুলের মত আবৃত্তি করতে চাইছে মন,
হাসিনা আর কি দেখাও ভয়?
হাত বাঁধিবে , পা বাঁধিবে, ধরে নাহয় জেলে দিবে, মনকে তুমি বাঁধতে পারো এমন শক্তি নয়!!!
আমি মনে প্রানে যদি কোনো গনহত্যার কুশিলবদের মুখ ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে একাত্তর টিভিতে তার বৈধতা দেয়া নরপশুদের ঘৃনা করি, তাতে বাঁধা দিবে এমন সাধ্য কার!!
ব্যক্তি আমি হয়তো এটুকুই করতে পারছি। কিন্তু এদেশের প্রধান বিরোধী দল কি করছে? তাদের তো বিশাল জন সমর্থন আছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতি তারা বিশ্বাস করছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ২৫০০ নিরস্র মানুষকে। যদি এটা তারা বিশ্বাস না করতেন তবে আমার কিছু বলার ছিলো না। কিন্তু তারা যদি বিশ্বাসই করেন যে ঘটনাটি জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের চেয়েও ভয়াবহ, তবে তারা কি পদক্ষেপ নিলেন?
শিবিরের সভাপতি গ্রেফতার হলে এদেশে দিনের পর দিন হরতাল হয়। মির্জা ফখরুল জেলে গেলে ৩ দিন হরতাল হয়। আর হেফাজতের উপরে এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের জন্যও তারা থেকে থেমে দুইদিন হরতাল ডেকেছে। আর হেফাজতে ইসলাম আগামী রোববার হরতাল ডেকেছে। কি বীরত্ব !!
সেই হরতালে হয়তো আরো কিছু নিরস্ত্র মানুষ পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে গিয়ে বেঘোরে প্রান হারাবে। আবারো হয়তো দেখবো সন্তান হারা মায়ের দল বুকে চাপড় দিয়ে কাঁদছে। আমাদের নপুংশক প্রধান বিরোধী দল আর তাদের সাগরেদরা কথন গন বিস্ফোরন হয় সেই আশায় গালে হাত দিয়ে বসে থাকবেন।
আর সরকারের বড় বড় পাগলরা ও তাদের জ্ঞানপাপী সুবিধাভোগী সাগরেদরা মৃত হেফাজত কর্মীরা যে কতবড় জঙ্গি তা প্রমানে ব্যস্ত হয়ে উঠবেন। হয়তো তাদের কোটি কোটি টাকার স্বার্থ জড়িত থাকায় হেফাজতিদের হাতের ইটগুলো যে পরমানু অস্র তা প্রমান করতেই হবে তাদের।
আর আমার মত নিরীহরা শুধু দেখবো। আবারো ইতিহাস মনে পড়বে। বসনিয়া - চেচনিয়া ... আর গোফে হাত বোলাতে বোলাতে মুরগীর রান চিবুচ্ছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট !!!
বিষয়: বিবিধ
২০০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন