মা-বাবার প্রতি সন্তানের আচরণ কেমন হওয়া উচিত।
লিখেছেন লিখেছেন বাংলার দামাল সন্তান ১২ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:০৬:১৭ দুপুর
বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁদের অধিকার রক্ষা সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)'র প্রত্যক্ষ বা বাস্তব দিকনির্দেশনার ঘটনা ও এ সংক্রান্ত তাঁর অন্যান্য বাণী নিয়ে আলোচনা করবো৷ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)'র সময়কার কথা৷ সে সময় মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় এমন এক যুবক মদীনায় বাস করতো৷ যুবকটির এ আচরণে তার মা মর্মাহত হয়েছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও যুবক সন্তানটির প্রতি মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসা বিন্দুমাত্রও কমেনি৷ কারণ, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা এমন এক ভালোবাসা যাতে জোয়ার ভাটার অস্তিত্ব নেই৷ সন্তানের হাসিমুখ মায়ের জন্যে অপার্থিব আনন্দের অফ‚রন্ত উৎস৷ সন্তানের একটু বিষন্নতা মায়ের মনে একেঁ দেয় গভীর শঙ্কার রেখাপাত৷ তাই এ যুবকটির মাও ছেলের সাথে শান্ত ও মাতৃসূলভ স্নেহসিক্ত ভাষায় কথা বলা অব্যাহত রাখে৷ তার আশা, ছেলে একদিন সুপথ পাবে৷ কিন্তু আগের মতোই মায়ের প্রতি সেই যুবক রুক্ষ্ম আচরণ অব্যাহত রাখে৷ একদিন যুবকটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লো৷ তার অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হতে লাগলো৷ ডাক্তাররা বললেন, তার অসুখ নিরাময়যোগ্য নয়৷ এ অবস্থায় সেই বেচারা মা-ই ছেলের যতড়ব নিচিছল, যদিও ছেলের দূর্ব্যবহারের কথা মনে পড়লে তার মনটা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতো৷ এদিকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো যে যুবকটি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত্রে পৌঁছে গেছে৷ এ অবস্থায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সেই অসুস্থ যুবকটির কথা বলা হলো ও তাঁর জন্যে দোয়া করতেও বলা হলো৷ তিনি সেই যুবকটিকে দেখতে আসলেন এবং তিনি তাঁর প্রশান্তিদায়ক পবিত্র হাত যুবকটির উত্তপ্ত কপালে রাখলেন৷ এরপর বললেন, হে যুবক, তৌহিদের বাণী বা কলেমা উচচারণ কর, বল, আমি সাক্ষ্য দিচিছ আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই৷ যুবকটি তার চোখ খুললো এবং বিশ্বনবী (সাঃ)'র নূরানী বা জ্যোতির্ময় চেহারা দেখলো৷ সে কলেমা বা তৌহিদের বাণী উচচারণের জন্য বেশ চেষ্টা করলো, কিন্তু পারলো না৷ মহানবী জানতে চাইলেন, যুবকটির মা কি এখানে আছেন? ক্রন্দনরত অবস্থায় যুবকটির মা এগিয়ে আসলো৷ মহানবী বললেন, আপনি কি আপনার সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট? চোখের পানি মুছে মা বললেন, হে আল্লাহর নবী! সে অনেক দিন থেকে আমার সাথে কথাই বলে না৷ আমি যতই তাকে স্নেহ এবং আদর যতড়ব করি না কেন সে অশ্রদ্ধা ও রুক্ষ্মতার মাধ্যমে তার জবাব দেয়৷ রাসূল বললেন, তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হন৷ মা শীর্ণকায় ও দূর্বল হয়ে পড়া সন্তানের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ঠিক আছে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ওয়াস্তে তাকে ক্ষমা করলাম৷ আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট হোক৷ মহানবী আরো একবার সে যুবকের দিকে তাকালেন৷ তাকে পড়তে বললেন কলেমা তৌহিদের বাণী৷ এবার সে যুবকটি কলেমা তৌহিদের বাণী উচচারণ করতে সক্ষম হলো৷ দয়ার নবী তার জন্যে একটি দোয়া পড়তে লাগলেন এবং সাথে সাথে অসুস্থ যুবকটিও সে দোয়া আবৃত্তি করতে লাগলোঃ রাসূল বলছিলেন, হে আল্লাহ তুমি খুব ক্ষুদ্র ভালো কাজও গ্রহণ করে থাকো এবং অনেক বড় পাপও ক্ষমা করে থাকো, আমার ভালো কাজ কবুল করো এবং আমায় ক্ষমা কর৷ আপনি দয়াময় এবং মেহেরবান৷এই দোয়া পড়ার পরই সেই যুবকের মুখে হাসি ফুটে উঠলো এবং এ অবস্থায় তাঁর আত্মা শান্তিপূর্ণভাবে দেহ ত্যাগ করলো৷ ইসলাম ধর্ম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পর বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং তাদের অধিকার রক্ষাকে মানুষের জন্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে মনে করে৷ পবিত্র কোরানের সূরা লোকমানের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, আমি মানুষকে তার পিতা মাতার প্রতি ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়েছি, জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়াতে লাগে দু বছর৷ তাই, আমার প্রতি ও তোমার পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও৷এখানে মহান আল্লাহ তাঁর প্রতি দায়িত্ব পালনের পরই বাবা মায়ের প্রতি মানুষের দায়িত্ব পালনের কথা বলেছেন৷ একবার এক ব্যক্তি বিশ্বনবী (সাঃ)'র কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর নবী! আমি জীবনে অনেক অপরাধ বা পাপ করেছি৷ এর প্রায়শ্চিত্ত বা তওবার কোনো পথ কি খোলা আছে? এবং আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন? রাসূল বললেন, আপনার বাবা মায়ের মধ্যে কেউ কি জীবীত আছেন? লোকটি বললো, হ্যাঁ, আমার বাবা এখনও জীবীত আছেন৷ যাও তাঁর সাথে ভালো আচরণ করো বা তার সেবা যতড়ব করো, এজন্যে আল্লাহ তোমাকেক্ষমাকরবেন৷ বিশ্বনবী তাঁর এক বিখ্যাত দোয়ায় বলেছেন, হে আল্লাহ, আপনি সেইসব শিশু বা সন্তানকে রহম বা অনুগ্রহ করুন, যারা বাবা মায়ের সেবা করে বা তাদের সাথে ভালো আচরণ করে৷ এভাবে ইসলাম ধর্ম বাবা মাকে শ্রদ্ধা করতে বলেছে এবং তাদের সাথে কর্কশ বা রুক্ষ্ম আচরণ করতে নিষেধ করেছে৷ বাবা মায়ের যখন সেবার প্রয়োজন হয় তখন তাদের সেবায় এগিয়ে আসাটা সন্তানদের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ অনেক বাবা মা নিজ সন্তানের জন্যে আরাম আয়েশ ও সুখ বিসর্জন করেন৷ সন্তানের যতড়ব নেয়ার জন্যে মায়েরা জীবনের বহু রাত নিদ্রাহীন থাকেন৷ ইসলামের দৃষ্টিতে মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহও সন্তুষ্ট হন৷ অন্যদিকে তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন৷ মায়ের সেবা করে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রঃ) জগত বিখ্যাত দরবেশ বা আরেফ হতে পেরেছিলেন৷ বিশ্বনবীর হাদীসে এসেছেঃ "যে ব্যক্তি সহজ ও ভয়হীন মৃত্যু চায়, সে যেন অবশ্যই বাবা মায়ের সেবা যতড়ব করে৷ বাবা মায়ের সেবা মৃত্যুকে মধুর করা ছাড়াও মানুষকে দারিদ্র থেকেও দূরে রাখে৷
বিষয়: বিবিধ
৩০৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন