ভ্যাঙ্কুভার, বি.সি
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জুলাই, ২০১৮, ০৮:৪১:০২ সকাল
একটানা ৭ ঘন্টা ড্রাইভ করে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া অঙ্গরাজ্যেে ভ্যাঙ্কুভারে আসলাম। এবার একটা দারুন স্বাশ্রয়ী প্লান করেছি। এই সময়ে হোটেল ভাড়া ৩গুন বেশী হয়ে যায়। তাই ভেবেছিলাম কোনো এপার্টমেন্ট ভাড়া নেব। নিজে রান্না করব খাব,ঘুরব,,,টাকা সেভ হবে; কিন্তু সে গুড়ে বালি।
অনলাইনে এপার্টমেন্ট সম্পর্কে যা জানলাম বাস্তবে তা পাওয়া গেলনা। বাড়ির মালিক মেইল করে জানিয়ে দিল দরজার পাশে বিশেষ বক্সে চাবি আছে। সেই বক্সের পাসওয়ার্ড দিল,সেটা খুলে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে বুঝলাম তেমনটা নয়, তবে চলে। ৩দিনের জন্যে ২৩০ ডলার ভাড়া নিয়েছে, কিন্তু ভেতরে আসবাবপত্র নতুন নয়,তবে পরিচ্ছন্ন। কিচেনে ও বাথরুমে খুব সস্তা পণ্য সামগ্রী রেখেছে। বাড়ির মালিক ভারতীয় পাঞ্জাবী, পয়সা বাচিয়েছে।
ওদিকে চুল কাটতে গিয়ে শালার নাপিত আমার মাথার উপরে এক খাবলা বেশী কেটে ফেলেছে, এখন হাফ টাক ! এমনিতেই মাথায় চুল আগের মত নেই, তার উপর শালার নাপিতে অমার্জনীয় ভুল, অবশ্য মাফ করে দিয়েছি। এই নাপিত অঅবার ৪৫ বছরের অভিজ্ঞ,,,এত অভিজ্ঞ যে এখন চোখে ভালো দেখেনা....। না জাতি এই দীর্ঘ সময়ে কত লোকের মাথায় খাবলা মেরেছে !
দুপুরে এক ভারতীয় মুসলিম রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। ভেড়ার বিরিয়ানী আর গরুর নেহারীর অর্ডার করলাম। বিরিয়ানী দেখে মনে হল নারকেলের ছোবড়া ছিড়ে এনেছে, ভেড়ার হাড়গোড় আর আকাটা চলা মার্কা ভাত। খানিক খেয়ে বললাম, এ জিনিসে গোস্ত নেই ক্যান ? তারা বলল-এটাই স্টান্ডার্ড, ,,,ভাবলাম দুপিছ গোস্ত দেবে, কিন্তু না....দিলনা। অগত্যা নেহারীর উপর নান রুটি নিয়ে হামলা চালালাম। বেচারা নেহারী ভয়ে কমতে শুরু করল, মরেই গেল....। অসলেই এটা অসাধারন !
এবার ফ্রেজার স্ট্রিটের অন্য গ্রোসারী দোকানগুলোতে গেলাম। দামের তুলনা করছিলাম। ২ বছর আগে এখানে এসেছিলাম, তখনকার চেয়ে দাম অন্তত ২০% বেশী পাচ্ছি। এটা সব্জী,ফলমূলের ভরা মৌসুম, অথচ দাম ব্যপক বেশী। এক গ্যালন(৩.৭৯লিটার) দুধের দাম ওরেগনে মাত্র আড়াই বা পৌনে ৩ ডলার, আর এখানে সেটা ৬ ডলার বা আরও বেশী। প্রত্যেকটা পণ্যের দাম দেখলাম অনেক বেশী। অথচ ভেবেছিলাম খাবারের খরচ কমাতে রান্না করে খাব, এখন দেখছি কষ্টও হবে আবার খরচও হবে। আগে জানলে সব খাবার কিনে আনতাম। পরেরবার অবশ্যই তাই করব ইনশাআল্লাহ।
তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল গাড়ির তেলের দাম। প্রতি লিটার আজকে দেখলাম ১.৫৬ ডলার, মানে ওরেগনের চাইতে ডাবল। সাধারণ জনগনের বেতন মোটেও বেশী না। আর ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা তো অনেক কম বেতনে কাজ করছে। কোনোভাবেই হিসেব মেলাতে পারলাম না, এরা কিভাবে বেচে থাকে ! সত্যি অমানবিক চিত্র। ছাগলের গোস্ত অনেক কিনব আবার সাথে নিয়ে যাব এমন পরিকল্পনা ছিলো। সে মোতাবেক বাংলাদেশী এক ছোট গ্রোসারী দোকানে প্রবেশ করলাম। দাড়ি ওয়ালা মুরব্বী সালাম দিলেন। দেশে কোথায় বাড়ি তাও জিজ্ঞেস করলেন। বেশ ভাব বিনিময় হল। বললাম ছাগলেল গোস্ত নেব। উনি খুব ফ্রেশ একটা ছাগল বের করলেন, মনে হল কেবল চামড়া ছাড়িয়েছে। কত কেজী দেবে জানতে চাইলো। আমি বললাম- দাম কত ? উনি বললেন- ১০ ডলার প্রতি পাউন্ড, মানে এক কেজীর দাম ২২ ডলার, এটা স্রেফ জুলুম। ওরেগনে মিংগালাতে আমি কিনি ৬ ডলার প্রতি পাউন্ড। এরমধ্যে আমার এক দেশী ভাই গোস্ত কিনতে উপস্থিত। উনিও পরিচিত হলেন আমার সাথে। এরপর উনি অর্ডার করলেন ১০ পাউন্ড গোস্ত,,,,,অবস্থা দেখে মনে হল কিছুটা দেখানোর চেষ্টা করছে। অবস্থা এমন যে বের হতে চেয়েও পারলাম না, অগত্যা কলকাতার দাদাদের মত ২ পাউন্ড কিনে নিলাম। গরম মশলা সাথে করে এনেছিলাম। প্রচুর ফলমূল কিনলাম আর চাল,ডাল,আলু.....।
বাসায় ফিরে অল্প কিছুক্ষন থেকেই বের হয়ে পড়লাম ঘুরতে। বাউন্ডারী রোডের এক স্থানে এসে দেখী বিশাল মসজিদ,,,উত্তেজিত হতেই বুঝলাম ওটা আসলে চার্চ, একেবারে মসজিদের মত দেখতে। তবে এই ভ্যাঙ্কুভারে বহু মসজিদ রয়েছে। তো এই গীর্জার পাশেই দেখী সার্বিয়ান এক পরিবার তাদের পারিবারিক বাগানের ফলমূল বিক্রী করছে। গেলাম সেখানে। দেখী তরতাজা চেরী,এপ্রিকোট,আপেল,পিচসহ নানান ফল। স্যাম্পল হিসেবে এপ্রিকোট খেলাম,, এটাই জীবনে প্রথম খাচ্ছি। অসাধারন স্বাদ। আর চেরীর তো জুড়ি নেই। আসলে সরাসরি গাছের ফলের স্বাদ অসাধারণ হয়। একই জিনিস স্টোর থেকে কিনে খেলে মজা থাকেনা। কিনলাম আজান দিয়ে। খাচ্ছি চরম।
ভ্যাঙ্কুভার সিটিটা সাগরের কিনারে। এর কয়েকটা ভাগ রয়েছে। একপাশ থেকে আরেকপাশে যাবার চমৎকার ব্রিজ রয়েছে। শহরের একপাশ পুরো পর্বতময়। এখানে রাস্তাঘাট কম প্রশস্ত। আসলে গত দশ বছরে এখানে বাইরের দেশসমূহ থেকে প্রচুর মানুষ প্রবেশ করেছে। চারিদিকে চায়নিজদের রাজত্ব। রাস্তায় হাজারে হাজারে গাড়ি পার্ক করা। এখানে বাড়িগুলোও ছোটছোট, দাম বেশী। রাস্তায় খুব বেশী গাড়িঘোড়া। একস্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে বেশ বিরক্তিকর সময় পার করতে হয়। একটু এদিক সেদিক হলেই এক্সিডেন্ট অনিবার্য। তবে যেসব পার্ক বা ট্যুরিস্ট প্লেস তৈরী করেছে, তা অতি অসাধারণ।
গতকাল সি টু স্কাই গন্ডোলাতে গিয়ে বেশ দারুন এক অভিজ্ঞতা হল। এখানে টিকেট মূল্য ট্যাক্সসহ প্রায় ৪৪ ডলার, কিন্তু শনিবার বিকেল ৫টার পর ৫০% মূল্যহ্রাস। আমি সেখানে পৌছলাম ঠিক ৫টার সময়, আবার শনিবারে, ফলে হাফ ডিসকাউন্ট পেলাম। ভাবলাম বেচে যাওয়া পয়সায় টানব। তকদীরের ব্যাপারটা আসলেই এরকম,,,কেউ জানেনা আবার তা ঘটবেই.....আল্লাহ আমাদের তকদীরকে সুন্দর করুক !
রাতে ছাগলেল গোস্ত রাস্তা করলাম,কিন্তু তেমন জমেনি, কারন কিছু মশলা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। তারপরও ব্যপক খেলাম। রাতে খুব ক্লান্ত ছিলাম, ঘুমালাম মরা লাশের মত। ফজরের পর আরেক চালান ঘুম। সকাল ৯টায় কাপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। এটাই মূল এট্রাকশন ছিলো এবারকার ভ্রমনের।......
বিষয়: বিবিধ
১০৩১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন