আতশবাজির রাত
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:২৭:৩৭ রাত
আজ ৩১ ডিসেম্বর। পৃথিবীর অনেক স্থানে এখন রাত এবং ইংরেজী নববর্ষ উজ্জাপনের আয়োজন চলছে। এটা বাঙ্গালীদের কোনো উৎসব নয়,মুসলিমদেরও নয়। এমনকি আরবী নববর্ষও মুসলিমদের কাছে কোনো তাৎপর্য বহন করেনা। বরং একটি বছর তার জীবন থেকে হারিয়ে গেল, এই বছরটিতে সে নিজেকে সুধরে নিতে পেরেছে কিনা,সেটা নিয়ে ভাবে। গত একটি বছর সে যেসব কাজ করেছে তার সমালোচনা করে। নিজেকে অধিকতর ভালোর দিকে পরিচালিত করার প্রচেষ্টায় নতুন দিনের আগমনের অপেক্ষায় থাকে। কারন জীবনের লক্ষ্য তার কাছে পরিষ্কার।
তার মানে কি এই যে, একজন মুসলিমের মনে কোনো আনন্দ নেই ! সম্ভবত আলেমগন এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সুসংবাদ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত: মুসলিমের আনন্দ কোনো দীবস কেন্দ্রীক নয়। একজন মুসলিমের আনন্দ প্রতিটা দিন এবং প্রতিটা মুহুর্তে। এটা সম্ভব এ কারনে যে,একজন মুসলিম তার সমস্ত বিষয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পন করে। সে ভালো এবং মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারে। অন্যের জন্যে আত্মত্যাগের কল্যান উপলব্ধী করতে পারে। সকল কিছুর মালিকানা তার নয়,বরং আল্লাহর,সে কেবল কিছু সময়ের জন্যে সত্ত্বাধিকারী বা রক্ষনাবেক্ষনকারী। তাই তার হারানোর কিছু নেই। আল্লাহ তাকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট আরোপ করেন না। তিনিই সুখ প্রদান করেন আবার দু:খও প্রদান করেন। আর তিনিই বান্দাকে দেখেন উভয় অবস্থায় সে সন্তষ্ট কিনা। যেহেতু আল্লাহ অন্তর দেখেন,তাই বান্দা সর্ব অবস্থায়,সর্ব সময়ে আল্লাহ যা প্রদান করেছেন,যে অবস্থায় রেখেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকবে। কেমন আছে জানতে চাইলে -'আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি' বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলবে না(যার অর্থ আল্লাহ কেন যে আমাকে কষ্টে রাখল !) বরং নিজেকে সকল অবস্থায় সুখী রাখবে। দু:খের সময় সেই লোকটির দিকে তাকাবে,যার অবস্থা আরও করুন। সুখের সময় বেশী বেশী আল্লাহকে শ্মরণ করবে। অন্যের উপকার করবে,এটাই কৃতজ্ঞতা। আর আল্লাহ আল কুরআনে বলেন-নিশ্চয় কষ্টের পরে আছে স্বস্তি,অবশ্যই কষ্টের পরে আছে স্বস্তি।
একজন মুসলিম সর্বাবস্থায় সন্তুষ্ট থাকে,সুখী থাকে। ভাবতে থাকে নিশ্চয়ই আল্লাহ দেখছেন আমার অবস্থা,আর প্রতিদানে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ এই কৃতজ্ঞ বান্দার অভিভাবকত্ব গ্রহন করেন। আর ঘোষনা করেন তার কোনো দু:খ নেই ,চিন্তা করারও প্রয়োজন নেই। আল্লাহই তার জন্যে যথেষ্ট। ...এক নির্ধারিত কাল অতিক্রান্ত হলে তার জন্যে অনন্ত কালের অকল্পনীয় সুখ রয়েছে। এই চিন্তা ও বিশ্বাস একজন মুসলিমকে পৃথিবীতেই জান্নাতি সুখে রাখতে পারে। আর যেহেতু এই সুখ'টি তার অন্তরের উপলব্ধী,তাই সে অন্তর থেকেই সুখী,এটাই প্রকৃত সুখ যা বিশ্বাসের উপর নির্বরশীল। এটিই ব্যক্তির সবথেকে নিবিড় অবস্থা। প্রকৃত সুখ হল অন্তরের উপলব্ধী,আর তা বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। ইসলামে এই বিশ্বাসটি খুবই যৌক্তিক ও বাস্তব। ফলে একজন মুসলিম তার চিন্তায়,বিশ্বাসে সুখী। আর তার সুখও অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
অপরদিকে পৃথিবীর অন্য জাতি গোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশই মানুষিকভাবে হতাশ। এর অনেক কারনের একটি হল জীবন সম্পর্কে ভাসমান কনসেপ্ট। যেমন বিশাল খ্রিষ্ট সমাজের কনসেপ্ট হল যীশু তাদের পাপের বোঝা বহন করছে। তাদের আর কোনো পাপা নেই। যখন কোনো মানুষ চিন্তা করে তার কোনো সমস্যা হবেনা আখিরাতে অথবা যখন বিশ্বাস করে আখিরাত নেই,তখন তার মধ্যে এই ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তার সবকিছু লৌকিক হয়ে ওঠে। তার মৃত্যুপরবর্তী জীবন সম্পর্কে নিশ্চিন্ততা সমস্ত কাজকেই পৃথিবী কেন্দ্রীক করে ফেলে। সে নগদ প্রাপ্তীতেই বিশ্বাসী হয়। ওপারে গেলেই জান্নাত,এমন চিন্তা তাকে জান্নাত উপার্জন বিমুখ করে। এরপর অন্তরে স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম হয়। এখান থেকে আত্মতুষ্টি যদি আসে,তা অত্যন্ত ক্ষনস্থায়ী এবং অলিক।
মজার ব্যাপার হল বাইবেলে অথবা তাওরাতের কোথাও বলা হয়নি যে কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করতে পারে। বরং স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রত্যেকেই নিজের পাপের বোঝা বহন করবে। আর যীশুও(ঈশা আঃ) একই কথা বলেছেন। মূলত: সেইন্ট পল নামক একজন সাধু খিষ্টানদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে যীশু তাদের পাপ মাথায় তুলে নিয়েছেন,যদিও বাইবেল অনুযায়ী এটি ভুল চিন্তা। তাদের বেশীরভাগ লোকই বাইবেল পড়ে দেখেনি।
যাইহোক যারা আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তাশূণ্য এবং যারা আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তাযুক্ত, তাদের আচরণ সমান হতে পারে না। যারা বিদগ্ধ জীবনে একখন্ড অবকাশ চায়, তারা কিছু দীবসের ভেতর কিছুটা আনন্দ খুজে নিতে চায়। মুসলিমদেরও কিছু দীবস রয়েছে কিন্তু মূলত প্রত্যেকটা দিনই মুসলিমদের কাছে বিশেষ দিন। প্রত্যেকটা দিনই আনন্দের। তবে সেটা উজ্জাপনের পদ্ধতি ভিন্ন,যেহেতু তার আকিদা বা বিশ্বাস ভিন্ন।
এবার আসি আমাদের দেশী বাঙ্গালীদের দিকে। আমরা প্রচন্ড মাত্রায় অনুকরন প্রিয়। অবস্থা এখন এমন আকার ধারন করেছে যে নতুন প্রজন্ম নামক এক প্রজন্ম তারা মাথা ছাড়াই চিন্তা করা শুরু করেছে। পুরো চিন্তাটাই ইন্সটিংক্ট দ্বারা করছে। এটা হল আমাদের ভেতরের আবেগ অনুভূতি। এটাকে নফস বলা যেতে পারে। শয়তান নফসের খায়েশ মেটানোকে হৃদয়ের পরিপূর্ণতা হিসেবে আখ্যায়িত করে,যেটা ইউরোপ আমেরিকাসহ আরও বহু জনপদের মানুষ গ্রহন করেছে। কিন্তু বহু মুসলিমও তাদের চাকচিক্য দেখে একই ধোকায় পতিত। আর বাঙ্গালী এমনিতেই আবেগী,আচরন দেখলে মনে হয় তারা সম্ভবত ওদের চাইতেও এক কাঠি উপরে।
শিক্ষা ব্যবস্থায় নিজের বিশ্বাসের ছাপ না থাকায় এর চর্চায় এমনিতেই যুব সমাজ উদ্ভ্রান্ত। তার উপর সামাজিক রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও পতিষ্ঠানের অযোগ্যতা ভর করেছে। সব মিলে ভাসমান যুব সমাজ। নিয়ন্ত্রনহীন চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি। ফলে ভালো মন্দের সংজ্ঞা হয়েছে নিজের নফস ভিত্তিক। যার কাছে যেটা মজার,তার কাছে সেটাই বৈধ।
=================
==========================
===================================
শীতের প্রোকোপ বাড়ছে। আমেরিকার অনেক স্থানে আজ রাতে আতশবাজি পোড়ানো হবে। যারা সেটা দেখবে,তাদের বেশীরভাগই শুধু আতশবাজি পোড়ানো উপভোগ করবে। শান্তচিত্তে আনন্দ প্রকাশ করবে। কিছু স্থানে কিছু মানুষ অবশ্য আনন্দে উম্মাতাল হবে। পার্টিতে অংশ নিবে। এটা তাদের জীবনের অংশ। কিন্তু বাঙ্গালী মুসলিমরা যখন একই আচরণ করে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের থেকে বেশী মাতামাতি করে তখন বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যায়। কোনো লোক মদ খায় অাবার খাওয়ার সময় চিন্তা করে,এটা খাওয়া হারাম। এর বিশ্বাস ও আচরনে বিশাল ব্যবধান থাকায় মজাটা পুরো উপভোগ করতে পারেনা। এরকম ছন্নছাড়া মানুষের জাতি মানব সমাজে নেতৃত্ব দেওয়া দূরে থাক,নিজেরা কখনও শক্ত মেরুদন্ড তৈরী করতে পারেনা। যে জাতির মানুষের চিন্তা ,বিশ্বাস ও আচরনে গড়বড় তারা পরগাছা হয়েই বাচতে চাইবে,এটাই স্বাভাবিক।
==================
==========================
নিকটস্থ বহু স্থানে আজ রাতে আতশবাজি পোড়ানো হবে। এটা দেখতে আমার ভালো লাগে। অন্ধকার আকাশের বুকে আলোচ্ছটা। আজ তাপমাত্রা -৫। আবহাওয়া ভালো থাকলে পার্কে গিয়ে আতশবাজি পোড়ানো দেখব। আগেরবারও দেখেছি। একটা বড় পার্কে অনেক মানুষ জড় হয়। তারপর প্রায় ১৫ মিনিট আতশবাজি পোড়ানো হয়। এদের বেশীরভাগই নিরবে সেটা প্রত্যক্ষ করে। উশৃঙ্খলতা নেই। আর যেহেতু অনেক বাড়ির লোকেরা নিজস্বভাবে আতশবাজি পোড়াবে তাই রাস্তায় বের হলেও প্রচুর আতশবাজি দেখা যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৩ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখা ভাল লেগেছে হুজুর ধন্যবাদ ।
আল্লাহ কি হাস্যকর
আহমাদ ইবনে ইউনুস(রঃ)...আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী ﷺ হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কেয়ামত কায়েম হবেনা যতক্ষণনা আমার উম্মাত পূর্বযুগীয়দের আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে হাতে হাতে গ্রহণ না করবে। জিঙ্গাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! পারস্য ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেন, লোকদের মধ্যে আর কারা? এরাই তো। (বুখারী:৬৮২০ অধ্যায় ফিৎনা ও কিয়ামতের আলামত/৮১ ইফাবা)
মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল আযীয (রঃ).. আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, নবী ﷺ বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে বিঘতে বিঘতে হাতে হাতে গ্রহণ অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুঁইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনুসরণ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইহুদি-নাসারা?তিনি বললেন, আর কারা?(বুখারী:৬৮২১, ইফাবা:১০ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫০৬-৫০৭ মান সহীহ)
যে জাতি অন্য কোনও বেজাতির অনুসরণ করবে সে তাদের দল ভুক্ত হবে। হাশর হবে তাদের সাথে ।
গুছানো লিখাটি পড়ে ভালো লাগলো!
মানুষ দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছে বলেই আতশবাজি নিয়ে মজা করার উৎসব খুঁজে আনন্দ করে। তথাকথিত মুসলিমরাও অন্ধের মতো এর অনুরসরণ করছে।
ফেবুকে, মেসেজে সবাই হ্যাপি নিউ ইয়ার বলাকে আধুনিকতা ভাবছে, স্মার্টনেস ভাবছে! কষ্ট লাগলো !
শুকরিয়া আপনাকে।
আপনি তো দেখছি -- বাইজির নাচ দেখা হারাম কিন্তু বাইজির নাচ দেখতে মন চাওয়া ফতোয়াবাজদের মত ---
জেরে কাসেন ভাইজান নিজের খোলোস থেকে বের হয়ে একটা পক্ষে দাঁড়ান --- বিবার্নিতর মাধ্যমে নিজেকে ভাল প্রকাশের মানে নাই ---- ভাইজান
মন্তব্য করতে লগইন করুন