দ্বিতীয় সালাহউদ্দীন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৬ জুলাই, ২০১৪, ১০:৫৭:০৩ রাত
“কিসে তোমাকে সংগ্রাম করা থেকে বিরত রেখেছে ? যখন অসহায় নারী শিশু আকাশের দিকে দুহাত তুলে বলছে - ‘ওগো আল্লাহ ! আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও’ , (আল্লাহ যেন এভাবেই বলছেন-) ওই সব আর্তপীড়িত,নির্যাতিত মানুষের চিৎকার কেন তোমার কানে ঢুকেনা ??? ”(আল-কুরআন,৪ঃ৭৫)
একজন প্রকৃত মুমীন ইসলামকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠে। যেখান থেকে মজলুমের আর্ত চিৎকার ভেসে আসে সেখান থেকে সে নির্যাতিত জনতাকে উদ্ধারে সর্বোশক্তি নিয়োগ করে। ইসলামী খিলাফত অসংখ্য হিরো জন্ম দিয়েছিল। আপনারা জানেন খলিফা আল-মনসুরের সময় সেনাপতি সাইফুউদ্দীন কুদ্স(কুতুয) ১২৬০ সালে আইন জালুতের ভয়াবহ যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য মঙ্গলদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধেই আর এক সেনাপতি অপূর্ব বীরত্ব প্রদর্শন করে ইতিহাসে তার অবস্থান করে নিয়েছেন। তিনি হলেন নাসিরুদ্দীন বাইবার্স। ইসলামী খিলাফতকে তিনি অনেকবার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন। তিনি ছিলেন একজন তুর্কী ক্রিতদাস। তার যোগ্যতার কারনে তিনি আলেপ্পোর সুলতান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার অসাধারন রণ নৈপূণ্যে খিলাফত দূর্ধর্ষ বার্বার ,মঙ্গল,ক্রুসেডারদের হাত থেকে নিরাপদ হয় পরবর্তী আড়াই শত বছর পর্যন্ত। বাইবার্স ১২৬৩-১২৭১ সাল পর্যন্ত শুধু ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে ২১টি যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং প্রত্যেকটি যুদ্ধেই তিনি বিজয় লাভ করেন। তার হাতেই ক্রুসেডারদের দর্প চীরতরে চুর্ণ হয় এবং তিনি কারা,সেসারিয়া,জাফা,সাফাত,এন্টিওক প্রভৃতি এলাকা বিজয় করেন।
সুলতান সালাহউদ্দীন এর সময় যে গুপ্ত ঘাতক সম্প্রদায় ইসলামী খিলাফতের ভেতর চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে নিয়োজিত হয়, বাইবার্স তাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন। এই গুপ্ত ঘাতক দল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে,তারা সিরিয়ার মারকাব ও হামাহ এর মধ্যবর্তী আনসারিয়া পার্বত্যাঞ্চলে ৯ টি সুরুক্ষিত দূর্গ তৈরী করে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ঘোষণা করে। ১২৭০-১২৭৩ সালের মধ্যে বাইবার্স ৯টি দূর্গই দখল করে উক্ত অঞ্চলসমূহকে খিলাফতভূক্ত করে নেন।
১২৭৩ সালে তিনি পূণরায় মঙ্গলদেরকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। ১২৭৫ সালে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী খিলাফতের উপর চড়াও হয়। বাইবার্স আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে মিস ও আয়াস নামক প্রধান শক্তিশালী দূর্গ দখল করে নেন,আর্মেনিয়া ঠান্ডা হয়ে যায় এরপর তিনি সিলিসিয়া বিজয় করেন। এ সময় সূদানের শাসক ‘দাউদ’ মিসর সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বহু মুসলিম নর-নারীকে বন্দী করে আসওয়ান ও আইযাব অঞ্চলে নিয়ে যায়। এ খবর যখন বাইবার্সের কাছে পৌঁছে তখন তার জীবন উৎসর্গকারী সৈন্যরা ক্ষিপ্র গতিতে সূদানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। সূদানে তিনি দাউদকে গুড়িয়ে দেন এবং সিকান্দারকে সেখানকার শাসক নির্বাচিত করেন,নির্যাতিত জনতাকে উদ্ধার করেন। এ পর্যায়ে তিনি বার্বারদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে তাদের উপর কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং নুবিয়া অধিকার করেন।
এরপর তিনি উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং তা বিজয় করেন। ১২৭৭ সালে তিনি মঙ্গলদেরকে পরাজিত করে কায়সারিয়া অধিকার করেন। ঐতিহাসিকরা বলেন-বাইবার্সের জন্ম না হলে মিসর ধ্বংস হত। ঐতিহাসিক পি.কে হিট্টি বলেন-‘যদি মঙ্গলরা কায়রো দখল করত তাহলে তারা সেখানকার সভ্যতা ধ্বংস করত।’ বাইবার্স ছিলেন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আপোষহীন। একইসাথে তাকে দূর্ধর্ষ মঙ্গল বাহিনী,বার্বার,গুপ্ত ঘাতক সম্প্রদায়,ক্রুসেডার এবং অন্যান্য বাহিনীর সাথে বহু যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় এবং তিনি প্রত্যেকটি যুদ্ধে জয়লাভ করে ইসলামী খিলাফতকে সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। শাসন ক্ষমতা প্রাপ্ত হবার পর থেকে দীর্ঘ ১৭বছর পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একটি মুহুর্তও যুদ্ধহীন ছিলেন না। ভেতরে বাইরে তাকে অসংখ্য ধরনের,মাত্রার যুদ্ধে তাকে অবতীর্ণ হতে হয়। মুসলিম উম্মার নিরাপত্তা, ইজ্জত রক্ষার্থে তিনি ছিলেন উৎসর্গীত। তিনি যালিমকে,মিথ্যাকে মাথানত করতে বাধ্য করেছিলেন। সত্য আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১লা জুলাই,১২৭৭ তারিখে তিনি মৃত্যু বরণ করেন কিন্তু মুসলিম উম্মার স্মৃতিতে তিনি অমর। তাকে দ্বিতীয় সালাহউদ্দীন বলা হয়।
-
রসূলুল্লাহ(সাঃ) ক্কাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন- ও ক্কাবা ! তুমি কত পবিত্র !! কিন্তু মনে রেখ, তুমি এবং তোমাকে ঘিরে যেসকল পবিত্র কর্মকান্ড সংঘটিত হয়, তার চাইতেও অধিক পবিত্র- মুসলিমের এক ফোটা রক্ত !
মুসলিম উম্মাহ’র রক্ত আজ ফোঁটায় ফোঁটায় নয়; বন্যার পানির মত প্রবাহিত হচ্ছে। শহিদ হামজা,খালিদ বিন ওয়ালিদ,ওমর,আলী,সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবী,বাইবার্স যেন কবর থেকে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে-‘ও আল্লাহ ! মাত্র একটি বার আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠাও ! তোমার সত্ত্বার কসম ! তোমার শত্রুদেরকে নিশ্চিহ্ন করবই !!! ’ মুসলিম উম্মাহ্কে আজ খালিদ বিন ওয়ালিদ,বাইবার্সদের জন্ম দিতে হবে ! মুসলিম নারী যেন তার গর্ভ নিয়ে গর্ব করতে পারে !!!
বিষয়: বিবিধ
১৭০৩ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিম উম্মাহ’র রক্ত আজ ফোঁটায় ফোঁটায় নয়; বন্যার পানির মত প্রবাহিত হচ্ছে। শহিদ হামজা,খালিদ বিন ওয়ালিদ,ওমর,আলী,সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবী,বাইবার্স যেন কবর থেকে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছে-‘ও আল্লাহ ! মাত্র একটি বার আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠাও ! তোমার সত্ত্বার কসম ! তোমার শত্রুদেরকে নিশ্চিহ্ন করবই !!! ’ মুসলিম উম্মাহ্কে আজ খালিদ বিন ওয়ালিদ,বাইবার্সদের জন্ম দিতে হবে ! মুসলিম নারী যেন তার গর্ভ নিয়ে গর্ব করতে পারে।
পড়ে ভালো লাগলো। জাযাকাল্লাহ খায়ের।
শোন দিয়ে মন,
তোমরা হলে বীরের জাতি
অহংকারের ধন।
থেকো না আর নিলয় বসে
করো না আর হেলা,
এখনিতো জেগে ওঠার
তোমার আসল বেলা।
May Allah make us aware about it.
মন্তব্য করতে লগইন করুন