মিগনানা মারিউস
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ জুলাই, ২০১৪, ১০:১১:১২ রাত
রোম উপসাগরে চরমভাবে পরাস্ত হয়ে,শক্তিশালী গোয়েন্দাবৃত্তির মাধ্যমে মুসলিম বাহিনীতে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হয়ে এবং সালাহউদ্দীন ও আলী বিন সুফিয়ানকে হত্যা প্রচেষ্টায় বহুবার ব্যর্থ হয়ে সম্রাট আগাষ্টাস,সম্রাট রেমন্ড,রাজা সপ্তম লুই এর ভাই রবার্ট,সম্রাট ফ্রাংকো,এম্লার্ক এক বাক্যে স্বীকার করে নেন যে,‘সুলতান সালাহ্উদ্দীনকে আমরা যতটা শক্তিশালী ও চতুর ভাবতাম তিনি তার চাইতেও বেশী কিছু।’
এবার তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সমগ্র ইউরোপকে এক করার পরিকল্পনা করে এবং তাদের বাহিনীতে যোগদানকারী সকল কয়েদী,পাদ্রী,তরুন,যুবক,বৃদ্ধ সকলে ক্রুশ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় মুসলিমদেরকে নিশ্চিহ্ন করতে। কিন্তু এর আগে তারা একটি কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করতে চায়, যা হবে সর্বাপেক্ষা নিখুঁত। এ কাজে এমন একজন দক্ষ,দুর্ধর্ষ লোককে নিয়োগ করা হয় যার উপর খ্রিষ্টান কমান্ডাররা আস্তা রাখেন শতভাগ। তার নাম মিগনানা মরিউস। সে ছিল একজন কয়েদী ,তবে তার যোগ্যতার ব্যাপারে সকলে ছিল নিঃসন্দেহ। সে মুসলিমের নাম শুনেই থুথু ফেলত। ইসলামকে সে খুবই ঘৃণ্য ধর্ম মনে করত এবং মুসলিমকে নিশ্চিহ্ন করার স্বপ্ন দেখত। মুসলিমদেরকে সে মদ্যপ,নারীলোলুপ,নরখাদক এবং জঘন্য প্রাণী মনে করত(মুলতঃখ্রিষ্টান পাদ্রীরা মানুষকে এ জাতীয় ধারণা দিত)। দস্যুবৃত্তির জন্য হওয়া তার ৩০ বছরের সাজা মওকুফ করা হয় এবং বিপুল পরিমান পুরষ্কারের প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়। সাথে থাকে পোপ কর্তৃক পাপ মুক্তির নিশচয়তা। তাকে বলা হয় যতগুলো মুসলিম কমান্ডার হত্যা করবে তার দশ গুণ পাপ মাফ হবে আর সালাহ্উদ্দীনকে হত্যা করলে সারাজীবনের পাপ মাফ হবে এবং যিশুখ্রিষ্ট নিশ্চিত জান্নাত দান করবেন। তিনিসহ সকলকে ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং তারা ক্রুশ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। ...
সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবীর হাতে খ্রিষ্টানদের উঁচু স্তরের প্রশিক্ষিত ৭ জন নারী ও ৫ জন শ্রেষ্ঠ পুরুষ গোয়েন্দা আটক রয়েছে। কিছু দিন পর তাদেরকে কায়রোর উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মিগনানা মারিউসকে উক্ত গুপ্তচরদেরকে উদ্ধার করতেই হবে। মিগনানা মরিউসসহ চার জন কমান্ডার ক্ষুদ্র একটি বাহিনী নিয়ে মিসর অভিমুখে জাহাজে রওনা হয়।
বেলা দ্বিপ্রহর। সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবীর হেড কোয়ার্টারের সামনে ক্লান্ত,শ্রান্ত,বিধ্বস্ত এক ঘোড় সওয়ার এসে দাড়ায়। ঘোড়াটির গায়ের ঘাম তার পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ প্রচন্ড ঝাকুনি দিয়ে ঘোড়াটি পড়ে যায় এবং মারা যায়। বোঝাই যাচ্ছে অবিশ্রান্তভাবে সে বহু পথ পাড়ি দিয়েছে। ক্ষুধার্ত,পিপাসার্ত আরোহীকে পানি পান করাতে গেলে সে বাঁধা দিয়ে সুলতানকে ডাকতে বলেন। সুলতান আসলে সে বলতে শুরু করে-কিভাবে তাদের হাত থেকে উক্ত নারী,পুরুষরা পালিয়ে গেছে। আকশ্মিক হামলায় তারা পর্যুদস্ত হয়েছিল.....তাদের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে...।
২০জন দ্রুতগামী আশ্বারোহীসহ আলী বিন সুফিয়ান রওনা হয়েছেন। একটানা কয়েকদিন চলার পর তারা সমুদ্র উপকূলে উপস্থিত হন। তারা দেখতে পায় নারীসহ অন্য সৈন্যরা জাহাজে রওনা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আকশ্মিক আক্রমনে তাদেরকে পরাস্ত করা হয় এবং প্রত্যেকে মৃত্যুবরণ করে। তবে এর আগেই মিগনানা মারিউস ‘মুবী’ নামক একজন প্রশিক্ষিত,বিচক্ষন,অসম্ভব সুন্দরী নারী গোয়েন্দাকে নিয়ে সুলতান সালাহ্উদ্দীনকে কৌশলে হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।...
মিগনানা মুখে লম্বা দাড়ি রেখে চমকপ্রদ কাহিনী ফেঁদে সুলতানের সান্নিধ্য লাভ করে। কিন্তু সুলতানের এক চমৎকার কৌশলে তারা ধরা পড়ে যায়।
মিগনানাকে সুলতান কিছু অস্ত্র-শস্ত্র দেখিয়ে বলেন-‘এগুলো তোমরাই বহন করে এনেছিলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কিন্তু আল্লাহ তা আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তোমরা কি কখনও একথা বলতে পারবে যে,আমি মজলুমের উপর কখনও অত্যাচার করেছি,কারো উপর যুলুম করেছি ? তোমাদের সাথে কৃত চুক্তির প্রতি কি আমরা সর্বদা সম্মান প্রদর্শন করিনি ? বলতে পারবে, আমাদের ভূখন্ডে কোনো খ্রিষ্টানের উপর কখনও অত্যাচার করা হয়েছে ? অসংখ্যবার তোমরা নারীদেরকে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়েছো,আমাকে বহুবার হত্যার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছো, কারণ আমার আল্লাহ এটাই চেয়েছিলেন। তিনি যাকে বাঁচাতে চান তাকে কেউ হত্যা করতে পারে না। তিঁনি কাউকে মারতে চাইলে কেউ তাকে বাঁচাতে পারে না। তোমরা যদি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারো-আমাকে হত্যা করলেই মানবতা মুক্তি পাবে,অন্যায় দূর হবে,হানা-হানি দূর হবে,সত্য আর ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে তাহলে এই নাও খঞ্জর,হত্যা করো আমাকে !’
মিগনানা হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে, তারপর বলে-‘আমার মস্তক দেহ থেকে আলাদা করার পূর্বে আমাকে একটু কথা বলার সুযোগ দিন যাতে আমি আমার জীবনের কাহিনীগুলো আপনাকে শোনাতে পারি।’ ক্রন্দনরত অবস্থায় মিগনানা তার দরিদ্র পরিবারের কথা বলল,কিভাবে তার ছোট বোনকে অপহরণ করে সরাইখানার পতিতা বানানো হলো তা বলল,তার স্ত্রী, পিতা-মাতার উপর চলা অত্যাচার,সন্তানদের ক্ষুধার কষ্টে মৃত্যুবরণ, তার উপর ঘটিত সমাজের অবিচারের কথাও বলল,নীচু স্তরের মানুষের সাথে পাদ্রীদের আচরনের কথা বলল এবং জেল খানায় চলা অবর্ণনীয় অত্যাচারের কাহিনীও শোনালো। সুলতান কেন জানি মিগনানার সাথে উত্তম আচরণ করতে শুরু করলেন। বন্দী মিগনানাকে তিনি ইসলামের শিক্ষা দিতেন। বন্দী মিগনানার সাথে সুআচরণ করা হয়। কিছুদিন পর সুলতান আইয়ুবী মিগনানাকে ডাকেন,তাকে কাপড়ে ঢাকা একটি লাশ দেখানো হয়। কাপড় সরাতেই মিগনানা চমকে ওঠে বলে-‘এ তো মুবীর লাশ !’
সুলতান বললেন-‘তাকে আমি ক্ষমা করতে পারিনি। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন !’ আবেগাপ্লুত কন্ঠে মিগনানা বলল-‘আমাকে ক্ষমা করলেন কেন সুলতান ?’ আইয়ুবী বললেন-‘তুমি এসেছিলে আমাকে হত্যা করতে, কিন্তু সে এসেছিল আমার জাতিকে ধ্বংস করতে।’
এরপর মিগনানা মারিউস ইসলাম গ্রহন করে এবং তার নাম দেওয়া হয়-‘সায়ফুল্লাহ।’ সে তার নামের মর্যাদা রেখেছিল। সে হয়েছিল একজন বিশ্বস্ত ঈমানদার বীর যোদ্ধা। সে ছিল সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবীর বিশ্বস্ত দেহরক্ষী। ইসলামের জন্য সে ছিল উৎসর্গীত। সুলতান সালাহউদ্দীনকে সে প্রানের চেয়ে বেশী ভাল বাসত। তাই সালাহ্উদ্দীনের মৃত্যুর পর সে মানুষিক ভারসাম্য হারায় এবং তার কবরের পার্শ্বে সে দীর্ঘ ১৭টি বছর অতিবাহিত করে মৃত্যুবরণ করে।
পরের পর্ব : ফিলিস্থিন বিজয়
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ মুবীরা মিগনানাদের চেয়ে ভয়ংকর ।
পোস্ট পড়ে ভাল লাগলো ।
হঠাত কি মনে করে ইসলামের বিজয় নিয়ে সিরিয়াল লিখছেন তাও আবার ক্রুসেডারদের(খৃস্টানদের) দেশে বসে ? ওরা কি জানে আপনার লেখা ওদের এগেইন্সটেই যাচ্ছে ?
আমেরিকানরা কিন্তু এসব জিনিস খুব নজরদারিতে রাখে - এটা আমার চেয়ে আপনারই বেশী বোঝার + জানার কথা। সবসময় চোখ-কান খোলা রাখবেন ।
Be careful
আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন - আমিন ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রয়লাম
সুলতান বললেন-‘তাকে আমি ক্ষমা করতে পারিনি। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন !’ আবেগাপ্লুত কন্ঠে মিগনানা বলল-‘আমাকে ক্ষমা করলেন কেন সুলতান ?’ আইয়ুবী বললেন-‘তুমি এসেছিলে আমাকে হত্যা করতে, কিন্তু সে এসেছিল আমার জাতিকে ধ্বংস করতে।’
এরপর মিগনানা মারিউস ইসলাম গ্রহন করে এবং তার নাম দেওয়া হয়-‘সায়ফুল্লাহ।’ সে তার নামের মর্যাদা রেখেছিল। সে হয়েছিল একজন বিশ্বস্ত ঈমানদার বীর যোদ্ধা। সে ছিল সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবীর বিশ্বস্ত দেহরক্ষী। ইসলামের জন্য সে ছিল উৎসর্গীত। সুলতান সালাহউদ্দীনকে সে প্রানের চেয়ে বেশী ভাল বাসত। তাই সালাহ্উদ্দীনের মৃত্যুর পর সে মানুষিক ভারসাম্য হারায় এবং তার কবরের পার্শ্বে সে দীর্ঘ ১৭টি বছর অতিবাহিত করে মৃত্যুবরণ করে
subahesadiq.wordpress.com
iman-dipto dastan
-writer anayetullah Altamas
সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির জিবনথেক শিক্ষনিয় অনেক কিছুই আছে। কিন্ত আমরা তাকে স্মরন করতে ভুলে গিয়েছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন