সীরাত......২
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ জুন, ২০১৪, ১১:১২:২৫ রাত
প্রথম অধ্যায়
আল-কুরআনে(সূরা যারিয়াত: ৫৬) মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানিয়েছেন,তিনি মানুষ এবং জ্বিনকে একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। যদিও তিনি কারো ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন,বরং সকল সৃষ্টি তার মুখাপেক্ষী,কিন্তু মানব সৃষ্টি ছিল তার একটি ইচ্ছা। তিনি এটি চেয়েছিলেন। আর তিনি যখন কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করেন,তখন শুধু বলেন “হও”, আর তা সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায়। প্রথম মানুষ হযরত আদম(আঃ)কে সৃষ্টি করে,তার(আঃ) থেকে প্রথম মানবী মা হাওয়াকে সৃষ্টি করে তিনি পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। এটি ছিল বসবাসের উপযোগী একটি নতুন স্থান।
পৃথিবীতে কিভাবে চলতে হবে, মহান আল্লাহ তাদেরকে তা শেখালেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে সত্য-মিথ্যা,ভাল-মন্দ,ন্যায়-অন্যায়,হালাল-হারামসহ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা দিলেন(হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেই আল্লাহ তায়ালা তাকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং বিশেষ জ্ঞানের ক্ষেত্রে জিন ও ফেরেশতাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছিলেন)। কোনটা করলে কি পরিণতী হবে তা জানালেন। জীবনোপকরণ দিলেন,তার ব্যবহার শিক্ষা দিলেন। সন্তান সন্ততি দিলেন এবং তাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনার শিক্ষা দিলেন। একটি নির্দিষ্ট সময় এবং রিজিক দান করলেন। সুস্পষ্ট প্রজ্ঞা,দিক নির্দেশনা দান করলেন এবং এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকল।
সে-সময়ে আল্লাহ তায়ালা আদমকে(আঃ) অধিক সন্তান দান করেন। প্রতিবার গর্ভধারনে মা হাওয়াকে একেক জোড়া সন্তান(ছেলে-মেয়ে) দান করা হত। এক গর্ভের সন্তানের জন্যে অপর সময়ের গর্ভের সন্তানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে হালাল করা হয়।-(সূত্র দরকার) পরবর্তীতে তার সন্তানগণ বসতি স্থাপনের নিমিত্তে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন বর্ণের,রূপের সন্তান দান করতে থাকেন।
আদম(আঃ) জীবিত থাকা অবস্থায় আল্লাহর ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান দ্বারা তার সন্তানদেরকে পরিচালিত করতেন,বিচার-ফয়সালা করতেন,শিক্ষা দিতেন। হযরত আদম(আঃ)এর ওফাতের পর,তার(আঃ) সন্তানদের মধ্যথেকে আল্লাহ তায়ালা কাওকে কাওকে পছন্দ করলেন তাদের এলাকার মানুষ এবং নিজ সন্তানদেরকে,সম্প্রদায়কে পরিচালনা করার জন্যে। এভাবে হযরত আদমের(আঃ) সন্তানদের বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকল এবং পৃথিবীর বুকে তারা ছড়িয়ে পড়তে থাকল। তবে যেখানেই তারা থাকুক না কেন,তাদের কাছে মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে প্রতিনিধি বা সতর্ককারী বা নবী-রসূল পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেনঃ-
“ আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই,যাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেনি”
(আল-কুরআন,সূরা ফাতির: ২৪)
“আর প্রত্যেক জাতির কাছেই পথ প্রদর্শক প্রেরিত হয়েছে।”(আল-কুরআন,সূরা রা’আদ: ৭)
তবে পূর্বের নবীদের বিধি-বিধান ছিল তাদের নিজেদের সম্প্রদায়ের জন্যে নির্দিষ্ট এবং সেগুলো ছিল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। সময় অতিবাহিত হলে আল্লাহ তায়ালা নতুন নবী প্রেরণ করতেন। নতুন নবীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা পূর্বের নবীগনের শরীয়াহ পরিবর্তন,পরিবর্ধন করতেন। আল্লাহ তায়ালা কোনো কোনো নবীকে আসমানী কিতাব দান করেছেন, তারা সে কিতাব মোতাবেক নিজেরা চলতেন এবং নিজ সম্প্রদায়কে পরিচালনা করতেন। যেসব নবীগণ কিতাব প্রাপ্ত হননি, তারা আল্লাহর নির্দেশে পূর্ববর্তী নবীগনের কিতাব অনুযায়ী উম্মতদেরকে পরিচালনা করতেন। তবে অধিকাংশ মানুষই নবীদেরকে অনুসরণ করেনি। আল্লাহ তায়ালা বলেন-“হে নবী ! এরা যদি আপনাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তবে উদ্বেগের কারণ নেই,এর পূর্বে তারা নূহ এর জাতি,আদ ও সামুদের লোকেরাও(তাদের নবীদেরকে)মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল। ইব্রাহিমের জাতি এবং লুতের জাতিও তাই করেছিল। মাদায়েনের অধিবাসীরাও (মুসাকে(আ মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছিল)....”(আল-কুরআন,২২: ৪২,৪৩,৪৪)। সর্বদা কম সংখ্যক মানুষই নবীদের ডাকে সাড়া দিয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন তার নিজস্ব বিচার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহ প্রদর্শিত পথে চলার জন্যে। কিন্তু মানুষ সে স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারীতার পরিচয় দিয়েছে। জীবনোপকরণ,সময় এবং স্বাধীন জ্ঞানের অধিকার প্রাপ্ত হয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করেছে। নিজেদের ইচ্ছাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। তারা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবীদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছে, নির্যাতন করেছে এমনকি অনেককে হত্যাও করেছে (সূরা আল ইমরানের ২১ নং আয়াতে আল্লাাহ তায়ালা বলছেন- “যারা আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, যারা অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে এবং মানব জাতিকে যারা ন্যায় ও ইনসাফ মেনে চলার আদেশ দেয় তাদেরকেও হত্যা করে, এদেরকে আপনি এক কঠোর শাস্তির সুসংবাদ দিন”)। কোনো নবীর মৃত্যুর পর তার উম্মতরা আবারও বিভ্রান্ত হয়েছে। সর্বদা তাদের অনুসারীর সংখ্যা নগন্য হওয়ার কারনে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে। হত্যাও করা হয়েছে। এরপর নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী চলতে পারার সুবিধার্তে নবীদের প্রচলিত শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেকে সেটার সাথে কৌশলে আরও কিছু বিষয় সংযুক্ত এবং কিছু বিষয় বিযুক্ত করে নতুন বিধানের জন্ম দিয়ে মানুষকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছে। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেছেন-“....তাদের নিজেদের ধর্ম বিশ্বাসের মাঝে নিজেদের মনগড়া ধারণাই তাদেরকে প্রতারিত করে রেখেছে।”-(আল-কুরআন:৩:২৫)
এভাবে বহু সময় অতিবাহিত হবার পর এবং অনেক নবীর আগমনের পর হযরত নূহ(আঃ) আসলেন.............(“নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠীকে ধবংস করে দিয়েছি ! ” ....আল-কুরআন,১৭ঃ১৭) আরও অনেক সময় অতিবাহিত হবার পর হযরত ইব্রাহিম (আঃ), ইসমাইল(আঃ), ইসহাক(আঃ), ইয়াকুব(আঃ), ইউসুফ(আঃ).......আরও পরে মুসা(আঃ) প্রেরিত হন। তিনি তাওরাত কিতাব নিয়ে আসেন। বেশীরভাগ মানুষই তাকে প্রত্যাখ্যান করে,তার ওপর নানামুখী অত্যাচার নির্যাতন করে। তাঁর(আ ওফাতের পর আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব ‘তাওরাত’ বিকৃত করা হয়। তাকে(আ অধিকাংশ মানুষ পরিত্যাগ করার পরও তিনি বনী ইসরাইলের নেতা ছিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটিত বহু সংখ্যক মুযিযা ও গজবের কারনে ভেতরে ঈমান না থাকা সত্ত্বেও অনেকে তাকে ভয়, সম্মানের চোখে দেখেছে। আবার কিছু অনুসারী তাকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করেছে। তাঁর(আ সম্প্রদায় সরাসরি আল্লাহর গজবের ভয়ে অনেক নিয়ম কানুন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁর(আ ওফাত পরবর্তী সময়ে তাঁর উম্মতের বুদ্ধিমান প্রতারক শ্রেণী জনতার কাছে সম্মান মর্যাদা পাবার আশায় সুকৌশলে আসমানী কিতাবের বিকৃতি সাধন করেছে। যেহেতু কিছু লোক স্বতস্ফূর্তভাবে ভালবেসে এবং অনেকে ভয়ে অনুসরণ করত তাই অনুসারীদেরকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত করার মানষে সমাজের অভিজাত সেসব বুদ্ধিমান শ্রেণী কিতাব সংশোধন করতে থাকে। তারপরও আজও পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের কিছু অংশ অবিকৃত রয়েছে। তবে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রনের কারনে এবং সত্য কতটুকু সে সম্পর্কে আমাদের কাছে সঠিক তথ্য না থাকার কারনে, আমরা তা নি:শঙ্কচিত্তে গ্রহণ করতে পারিনা। আর সর্বশেষে আল্লাহর মনোনিত কিতাব আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারনে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের অনুসরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
(রসূল (সা বলেন- “তোমরা তাওরাত ও ইঞ্জিলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন কর, কিন্তু আমলের জন্যে আল-কুরআনই যথেষ্ট”-মুসনাদে ইবনে হাতেম,তাফসীর ইবনে কাসীর)
চলমান............
বিষয়: বিবিধ
১৩৯৮ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
অবশ্যই ইমান এনেছি তবে এই কিতাবগুলো(কুরআন বাদে) বাকিগুলো এখন বিকৃত।
আমরা অবশ্য আনওয়ার আল আওলাকী রহ. এর সীরাতের আলোচনা বই আকারে বের করার কাজ করছি।
আপনার 'স্রষ্টার অস্তিত্ব অত:পর' বইটিও নেক্সট প্রিন্টিংয়ের তালিকায় আছে।
দু'আ প্রার্থী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন