একটু অন্যরকম ফান !
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৫ আগস্ট, ২০১৩, ০১:৫৫:৩৪ দুপুর
বিকেলে সালাহউদ্দীন ভায়ের বাসায় গেলাম। সজিব নীচে আসল স্ত্রীসহ। আমরা ক্যান্টনমেন্টের লেকে গেলাম। ওরা স্বস্ত্রীক নৌকা ভ্রমন করল। ওর স্ত্রী সাতার জানেনা। আমি কিনার ধরে চলতে বললাম। সে শুনল না। নিজে ভাল নৌকা চালাতে পারেনা। শখের বসে এই কান্ড। আমি আর সালাহউদ্দীন মাগরীবের নামাজ পড়লাম ঘাসের ওপর। শার্ট থেকে টাইটা খুলে রাখলাম। আমার মনে হচ্ছিল এই আনাড়ী জুটি অথৈ পানিতে পড়লে বিপদ হবে এবং আমাকেই সাতার দিতে হবে। আমি একটু হালকা হয়ে প্রস্তুতি নিলাম। কিন্তু ওরা বেশ নিরাপদেই নৌকা ভ্রমন করল। ওদেরকে ফিরতে বললাম।
এবার আমরা দুজন নৌকা চালালাম। সারা লেক ঘুরে বেড়ালাম। মাথার ওপর দিয়ে কিছুক্ষন পরপর প্লেন উড়ে যেতে লাগল।লেকটা রানওয়ের শেষ প্রান্তে।এটা খুব দারুন অভিজ্ঞতা। অন্ধকারে নৌকা চালাচ্ছি। আবছা আলোয় ঢেকে আছি। নিস্তব্ধ রাত মৌনতা নিয়ে হাজির হলেও আমরা গল্পে লিপ্ত। খানিক পরপর সজিব উচ্চস্বরে হাক ছাড়ছে আমাদের অস্তিত্ব বোঝার জন্যে। হটাৎ একটা মাছ লাফিয়ে উঠল নৌকায় । বেশ মজা পেলাম। কাছে এসে জানাতেই সজীবের স্ত্রী আনন্দে লাফিয়ে উঠল। আমি মাছ ধরায় পটু নই। ধরতে গেলেই ফসকে যায়। এর শরীর পিচ্ছল। দুহাত দিয়ে কষ্টে ধরে ছুড়ে দিলাম ওদের দিকে। তারা আনন্দ পেল। আমরা আরও নৌকা চালালাম।
উঠে আসলাম। পথ চলার সময় সজিবের স্ত্রী কর্দমাক্ত একটা রাস্তায় ঢুকে পড়ল অন্ধকারে এবং দু-পা তলিয়ে গেল। সজিবেরও একই অবস্থা। মনে পড়ছে,পূর্বে আমরা যখন এখানে এসেছিলাম বিকেলে। সজিব উত্তম পোষাকে পাড় থেকে একটা শুক্ন ভূমির ওপর লাভ মেরেছিল। কিন্তু সেখানে তার বুক পর্যন্ত তলিয়ে গিয়েছিল। ওটা ছিল শুক্ন কুচরীপনার নীচে বিরাট পচাকাদা সমৃদ্ধ পানি।
আজ বৌ-ভাত। হাটতে হাটতে আমরা মামুনদের বাড়িরে পাশে আসলাম। আশপাশের কয়েকটা রোডসহ প্যান্ডেল বানানো হয়েছে। দেখলাম সে সুপার একটা স্যুট পরেছে। আজ তাকে দারুন লাগছে। এটার দাম শুনে কেনার চিন্তা বাদ। পুরোনো এক বড় ভায়ের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। আসাদের ছেলেটা চরম ছটফটে এবং চালাক। ওর বয়স যখন সাড়ে তিন তখন আসাদকে ফোন দেওয়ার পর বিজি পেলাম একদিন। খানিক পর ফিরতি কল পেলাম এবং ওর ছেলে বলল,বাবা নামাজ পড়ছে,,,,,,, সেসময় থেকে ও কম্পিউটারে গেম খেলে। দেখেছি মনিটর ঠিকমত দেখতে পায়না কিন্তু মাউস দিয়ে এখানে ওখানে ক্লিক করে বিভিন্ন প্রগ্রাম ওপেন করছে এবং বিজ্ঞের মত কাজ করছে।
আজ এরা সঠিক সময়ে খাবার দিচ্ছে। মামুন বলল উপহার সামগ্রীর ওখানে একটু বসেন। এসব কাজে আমি থাকিনা। এখানে উপহার হিসেবে অনেকে প্রচুর টাকা দিয়েছে। অন্তত একশত সাগরেদ নিয়ে এক নেতা হাজির হল। এমন আরও নেতা এসেছে। এরা একা নিরাপদবোধ করেনা। এদের ধারনা জনগনকে এরা এমন সার্ভিস দিয়েছে যে তারা হয়ত ভালবেসে এদেরকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে।
আমরা খেতে বসলাম। টানলাম ভালই। স্বাদও লাগল ভাল। গরুর মোটা হাড় নিলাম যার ভেতর মজ্জা থাকে। এটা খেতে আমার দারুন লাগে। আমি ছোটছোট মাংস খন্ড পছন্দ করি,কারন এগুলো তুলতুলে নরম। খাওয়ার পর দেখলাম পেছনের প্যান্ডেলের ওপাশে একদল গরিব শিশু। একজন পর্দা একটু ফাক করে বলল, একটু মাংস দেননা !
আমি তখন চিন্তা করলাম যারা দাওয়াতে আসতে চায়,তারা আসতে পারেনা আর যারা আসতে চায়না,তাদেরকেই নিয়ে আসা হয়। আমি উঠে পড়লাম। পর্দা ফাক করলাম, তাদের হাতে খাবার দিতে খাকলাম চামুচে করে। জর্দাভাত দিলাম। তারা ওপাশে মারামারি করতে থাকল খাওয়ার জন্যে। আমি কোল্ড ড্রিংকস না খেয়ে সেটার স্ট্র পর্দার ফাক গলিয়ে বাইরে রাখলাম ওরা একে একে চুসে খেল। এবার সালাহউদ্দীন ভাই টেবিলের সবগুলো কোক এবং অন্য স্থান থেকে কোক নিয়ে হাজির হল এবং সেও ফাক দিয়ে খাওয়াতে লাগল। একটু কোক পেয়ে ওরা যেভাবে খুশী হয়ে উঠল তাতে নিজের কলিজা কেটে খাওয়াতে ইচ্ছে করে। আমি স্ট্র ছেড়ে ওদের মুখে ঢেলে দিতে থাকলাম। ছিদ্রটা বড় করে কোক গ্লাসে ঢেলে ওপাশের প্রায় সবাইকে খাওয়ালাম। আমরা অতিথি তাই অনেক কিছু করতে পারিনা।
খুব খারাপ লাগল। কারন ওরা ১২মাসই বোধহয় অভূক্ত থাকে অথবা এসব খাবার কখনই খেতে পায়না। আর আমরা এটা তাদের পাশে থেকেই বিভাবে নির্লজ্জতায় খেয়ে যাচ্ছি। মনে হতে লাগল এতক্ষন যেন গু খাচ্ছিলাম। নিজেকে ধিক্কার দিলাম। আমি তাদেরকে কতটা নিকৃষ্টভাবে খাইয়েছি এবং কতটা অসহায় আমি যে ওদের পাশে থাকতে পারিনা। একই স্থানে বসবাস করা সত্ত্বেও আমাদের মাঝে উচু পাহাড় । চরম বৈষম্যের দেওয়াল তুলে আমরা নির্বিঘ্নে বিচরণ করি।
এসব ধনীদের সাথে আর ভাল লাগল না। ওদেরকে গার্ডরা এপাশে ঢুকতেই দিবেনা। নেতারা তাদের সামনেই তৃপ্তীর ঢেকুর তুলবে আর ওদের জন্যে থাকবে নসিয়ত। কাঠি দিয়ে দাত খোচাতে খোচাতে নেতারা বের হয়ে গেল। ধনী অতিথীরা খোশগল্পে লিপ্ত। কে কত দামী গাড়ী নিয়ে এখানে এসেছে তার প্রতিযোগীতা। খাবার কেমন লাগল তার প্রশংসা। টাকা কত উঠল তার হিসাব। কে কেমন উপহার দিল তার বয়ান। আমরা মুসলিম অথচ অসুস্থতা চর্চা করছি। সুন্নাহ থেকে দূরে গিয়ে সুন্নাহ চর্চা করছি।
হ্যা ফান করেছি। যখন বাচ্চাদেরকে ওভাবে খাওয়াচ্ছিলাম খুব মজা লাগছিল। কিন্তু পরক্ষনেই বিষাদে মনটা ঢেকে গেল,কারন কতটা নিকৃষ্ট উপাযে কাজটি করেছি !
বিষয়: বিবিধ
২০৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন