ইতিহাস খ্যাত রাজশাহী

লিখেছেন লিখেছেন আহ্বান ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৬:২৭:৪৭ সন্ধ্যা

ইতিহাসখ্যাত রাজশাহীর ঐতিহ্য

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী এক ইতিহাসখ্যাত নগরী। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ রাজশাহীর জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল, ইংরেজরা এ অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। এ অঞ্চলে রাজারাজড়াদের অবাসস্থলকে কেন্দ্র করে নাম হয়েছে রাজশাহী। পঞ্চদশ শতকে ভাতুরিয়া দিনাজপুরের জমিদার রাজা কংস বা গনেশ এ অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। তিনি রাজা শাহ নামে পরিচিতি ছিলেন। মনে করা হয় ‘রাজা’ আর ‘শাহ’ মিলে রাজশাহী নামকরণ হয়েছে। এ শহরের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে একদা প্রমত্তা পদ্মার প্রাণলীলা। শহরের দক্ষিণে পদ্মার বিশালতা হাতছানি দেয়। শহরের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর আম্রকানন দিয়ে পরিবেষ্টিত।

১৭৭২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রাজশাহী জেলা সৃষ্টি হয়। তখন রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ ছাড়াও বগুড়া ও পাবনা এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার বৃহদাংশ ছিল এ জেলার অন্তôর্গত। ১৮৭৬ সালে রাজশাহী পৌরসভা সৃষ্টি হয় এবং ১৯৮৭ সালে এটি পৌর কর্পোরেশনের মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে একটি সিটি কর্পোরেশন, ১২টি পৌরসভা, ৯টি উপজেলা, ৭১টি ইউনিয়ন এবং ১৮৫৮টি গ্রাম নিয়ে রাজশাহী জেলা গঠিত।

রাজশাহী শিক্ষানগরী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এখানে দেশের প্রায় সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, ক্যাডেট কলেজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, সার্ভে ইন্সটিটিউট, পিটিআই, নার্সিং ইন্সটিটিউট, ভোকেশনাল টেঙ্টাইল ইন্সটিটিউট, পুলিশ একাডেমী, পোস্টাল একাডেমী, রেশম গবেষণা কেন্দ্র, আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হোমিওপ্যাথি কলেজ, ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি। জেলায় ৩৬৭টি মাদ্রাসা, ১১০টি কলেজ, ৩৯৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৯৮৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমী ও পোস্টাল একাডেমী এ জেলাতে অবস্থিত।

এ শহরের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে একদা প্রমত্তা পদ্মার প্রাণলীলা। শহরের দক্ষিণে পদ্মার বিশালতা হাতছানি দেয়। শহরের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর আম্রকানন দিয়ে পরিবেষ্টিত। এখানকার জনগোষ্ঠীর প্রধান পেশা কৃষি। রাজশাহী রেশম সুতা ও রেশমবস্ত্র তৈরির জন্য বিখ্যাত। ১৯৭৭ সালে রাজশাহীতে রেশম বোর্ড স্থাপিত হয়। অন্যান্য কুটিরশিল্পের মধ্যে তাঁত, বাঁশ ও বেত, স্বর্ণকার, কামার, কুমার, কাঠের কাজ, কাঁসা, সেলাই, বিড়ি উলেস্নখযোগ্য।

শিল্প, সাহিত্য, সংস্ড়্গৃতি বিকাশে রাজশাহী উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। ভাওয়াইয়া, গম্্‌ভীরা এ অঞ্চলের সংস্ড়্গৃতির বিশেষ দিক। জেলা শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশে অবদান রাখছে। উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী রাজশাহীর অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ সাংস্ড়্গৃতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৫ সালে স্থাপিত মনোরম পরিবেশে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানটি উপজাতীয় সংগীত, বাদ্য, নাটক ও নৃত্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কখনো শিড়্গা নগরী আর কখনো রেশম নগরী হিসেবেও এর খ্যাতি রয়েছে।

বর্তমান রাজশাহী মহানগরীর পত্তন হয় মূলত পর্তুগীজ বণিকদের হাতে সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে। এরপর আসে ইংরেজ বণিকরা। রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাহেবগঞ্জ ও সাহেব বাজার তাদের হাতেই উঠে দাঁড়ায়। তারও আগে এই জনপদ গড়ে ওঠে পদ্মা নদীর চরকে কেন্দ্র করে। এতে ছিল বিছিন্ন জঙ্গল ও কাঁটা ঝোঁপ। তৎকালীন ক্ষুদ্র রাজাদের আধিপত্যও সৃষ্টি হয় এই জনপদে। সে সময় রাজার শাসনাধীন এলাকা ‘মহাকালগড়’ নামে উলিস্নখিত হতো। নগরীর উপকণ্ঠে রামপুর ছিল এর আদি কেন্দ্র। অতঃপর পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রঐধঢ়ঢ়ু-র আগমন, অত্যাচারী মহাকালগড় রাজার সঙ্গে যুদ্ধে বিজয় অর্জন এবং তাঁর মাজার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রামপুরের পাশের এলাকার নাম হয় বোয়ালিয়া বা বু-আউলিয়া। যার অর্থ আওলিয়ার সুগন্ধ। সেই থেকে রাজশাহী নামকরণের আগে এই জনপদ রামপুর-বোয়ালিয়া যৌথ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এই মাজারকে কেন্দ্র করেই বলা যায় এখানে শাসকদের স্থানীয় প্রতিনিধি ও জনসাধারণের গমনাগমন বেড়ে যায় এবং একটি উলেস্নখযোগ্য জনপদ হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। বাংলার নবাবী আমলে মুর্শিদ কুলী খান তাঁর শাসনাধীন এলাকাকে কয়েকটি চাকলায় বিভক্ত করেন। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও নাটোরের মধ্যবর্তী অংশকে ‘চাকলা রাজশাহী’ হিসেবে চিহ্নিত করেন বলে মনে করা হয়। হিন্দুদের ‘রাজা’ ও মুসলমানের ‘শাহী’ শব্দদ্বয় যুক্ত হয়ে কোন এক সময় এই ‘রাজশাহী’ নামকরণের উদ্‌ভব হয়ে থাকতে পারে।

একটি এৗতিহ্যবাহী জনপদ হিসেবে রাজশাহী নগরী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে বেশকিছু পর্যটক-আকর্ষক স্পট। এর মধ্যে রয়েছে হযরত শাহ্‌ মখদুম রূপোশ (রঐধঢ়ঢ়ু-এর মাজার, ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক কেন্দ্রীয় কুঠি ‘বড়কুঠি’, এশিয়ার বিখ্যাত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, রেশম শিল্প ও রেশম বোর্ড, পদ্মা নদীকেন্দ্রিক শহর রক্ষা বাঁধ, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও খাপড়া ওয়ার্ড, ভদ্রার মোড়ের স্মৃতি অম্স্নান, রাজশাহী পোষ্টাল একাডেমী, কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক মতিহারের সবুজ চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও বধ্যভূমি, শতাব্দী প্রাচীন রাজশাহী কলেজ, আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন, জিয়া পার্ক প্রভৃতি।

শাহ্‌ মখদুম রূপোশ (রঐধঢ়ঢ়ু-এর মাজার

রাজশাহীর আদি রূপের পরিবর্তন ঘটে মূলতঃ হযরত শাহ মখদুম (রঐধঢ়ঢ়ু-এর আগমনকে কেন্দ্র করে। আর আধুনিক নগরীর উত্থান ঘটে পর্তুগীজ-বৃটিশের বাণিজ্য কার্যক্রমের প্রভাবে। হযরত শাহ্‌ মখদুম রূপোশ (রহঐধঢ়ঢ়ু এর প্রকৃত নাম সৈয়দ আব্দুল কুদ্দুস। তিনি ৬১৫ হিজরীর ২রা রজব বাগদাদ শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। রূপোশ তাঁর উপাধি। এর অর্থ হলো মুখ আবরণকারী ব্যক্তি। ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, হযরত শাহ্‌ মখদুম রূপোশ (রঐধঢ়ঢ়ু বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঐধঢ়ঢ়ু এর পুত্র আজালস্না শাহে্‌র দ্বিতীয় পুত্র। ৬৮৭ হিজরী মোতাবেক ১২৮৭ খ্রিঃ রাজশাহীতে আরেক দরবেশ হযরত তুরকান শাহ্‌ শহীদ (রহঐধঢ়ঢ়ু মুসলিম বিদ্বেষী তৎকালীন হিন্দুরাজা অংশুদেও চান্দভন্ডী গুর্জ্জভোজ এর হাতে শহীদ হন। হযরত শাহ্‌ মখদুম রূপোশ (রহঐধঢ়ঢ়ু একই বছর বাগদাদ থেকে রাজশাহীতে ধর্মপ্রচারের জন্য আসেন। তবে প্রথমে তিনি বাঘা নামক স্থানে এসে উপস্থিত হন এবং পদ্মানদীর তীরে একটি কেলস্না নির্মাণ করেন। যা মখদুমনগর নামে খ্যাত হয়। বর্তমানে এটি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার বাঘা শরীফ বা ‘কসবে বাঘা’ নামে পরিচিত। রাজশাহী নগরীর দরগাপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষে শাহ মখদুমের মাজার অবস্থিত। এই মাজারে আছে একটি প্রাচীন মসজিদ, শাহ মখদুমের কবর, পীরের দরগাহ, দেওরাজের মন্দিরে মানুষ বলি দেওয়ার জন্য নির্মিত পাথরের পাটাতন প্রভৃতি। এর পেছনে রয়েছে হযরত তুরকান শাহের মাজার। দরগাপাড়া থেকে পদ্মার নৈসর্গিক দৃশ্যও উপভোগ করা যায়।

বড়কুঠি

আধুনিক রাজশাহী নগরীর গোড়া পত্তনে গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রাখে এখানকার বড়কুঠি ভবন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, অষ্টাদশ শতকের প্রথমভাগে ওলন্দাজদের এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক কেন্দ্রীয় কুঠি হিসেবে ব্যবহৃত হতো নগরীর সাহেব বাজারের দক্ষিণ পাশে পদ্মার কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই বড়কুঠি। মূল কুঠির দৈর্ঘ ৮২ ফুট, প্রস্থ ৬৭ ফুট। একটি সভাকক্ষসহ উপরে ৬টি কামরা আছে। ইংরেজ আমলে এটি সম্প্রসারিত করা হয়। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এর ব্যাপক ক্ষতি হয়। কুটির নীচের কামরাগুলো রেশম গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৮৩৩ সালে এই কুঠি ওলন্দাজরা পরিত্যাগ করলে তা ইংরেজ কোম্পানীর কুটিতে পরিণত হয়। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহকালে এটি সাময়িকভাবে বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। ১৯৫১ সালে তৎকালীন সরকার এটি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে এই ভবনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্বাবধানে রয়েছে।

বরেন্দ্র জাদুঘর

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রত্মতাত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র জাদুঘর। রাজশাহী নগরীর হাতেম খাঁ এলাকায় ১৯১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদার কুমার শরৎ কুমার রায় তৎকালে রাজশাহীতে অবস্থানরত খ্যাতনামা আইনজীবী ও ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলিজিয়েট স্ড়্গুরের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দের প্রচেষ্টায় এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। যার রয়েছে ঐতিহাসিক ও যুগান্তôকারী প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশের প্রথম ও দক্ষিণ এশিয়ার সুসমৃদ্ধ সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর শত গত বছর পূর্ণ কওে তার একশত বছর। নগরীর সদর হাসপাতালের সামনে এই প্রাচীন সংগ্রহশালার ভবনও একটি দর্শনীয় স্থাপত্য। এর নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয় ১৯১০ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৩ সালে। আর একই বছরের ১৩ নভেম্বর উদ্বোধন করেন বাংলার তৎকালীন গর্ভনর মি· লর্ড কারমাইকেল। মাত্র ৩২টি দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল। বর্তমানে এই জাদুঘরের সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার।

বরেন্দ্র জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর এর অগ্রগতি ছিল খুবই সীমিত। এটি রক্ষা ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে ১৯৬৪ সালে এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তôান্তôর করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কার্যতঃ জাদুঘরের উন্নয়ন কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে জাদুঘরের জন্য একটি আধুনিক ল্যাবরেটরী স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রচীন পান্ডুলিপি যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ক্যাটালগ তৈরি, গাইড বুক রচনা, জার্নাল প্রকাশনা, ফটোগ্রাফি শাখা ও আধুনিক বিদুøতায়ন ব্যবস্থা সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে এই জাদুঘরের সংগ্রহের পরিমাণ ১৫ হাজারের বেশী। এরমধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ প্রাচীন মুদ্রা ৬ হাজারের বেশী এবং দুর্লভ ও প্রাচীন পান্ডুলিপি ৫ হাজারের বেশী। এছাড়া রয়েছে প্রায় ১২’শ প্রস্তôর ও ধাতব মুর্তি, ৬১টি প্রাচীন লেখচিত্র, সহস্রাধিক পোড়ামাটির ভাস্ড়্গর্য, পত্র ও ফলক, অস্ত্র, আরবী, ফারসী দলিল প্রভৃতি। এই জাদুঘরে বরেন্দ্র অঞ্চলের পাল, সেন, মৌর্য ও গুপ্ত আমলসহ হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রাখা আছে গবেষক ও সাধারণ দর্শকের পরিদর্শনের জন্য। সর্বসম্প্রতিক এখানে মুসলিম ঐতিহ্য ও নিদর্শনসমুহ সংরক্ষণের জন্য একটি মুসলিম গ্যালারিও স্থাপন করা হয়েছে। বরেন্দ্র জাদুঘরের কোন প্রবেশমূল্য নেই। ডানের কক্ষটি থেকে শুরম্ন হয় প্রদর্শণী কক্ষ। মহেনজোদারো এবং সিন্ধু সভ্যতা থেকে সংগৃহীত অসংখ্য প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ও হাজারো পাথরের মুর্তি। এখানে আছে একাদশ শতকে নির্মিত নানাবিধ মূর্তি। বামের কক্ষ থেকে শুরম্ন হয় শিলালিপি, প্রাচীন মুদ্রা এবং পঁুথির বিশাল ভান্ডারের প্রদর্শণ। প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহের দিক দিয়ে এই জাদুঘর অনেক বেশী সমৃদ্ধ। এখানে বাগদাদের খলীফা হারম্নণ অর রশিদের মুদ্রা, মোঘল আমলের রৌপ্য মুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগ্রপ্তের গোলাকার র্স্বণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্য মুদ্রা প্রভৃতি সংরক্ষিত আছে। এছাড়া, উঠানের মতো খালি জায়গার চার পাশজুড়ে আছে বিভিন্ন মূর্তি আর ভাষ্ড়্গর্য। তাছাড়া আছে প্রজ্ঞা পারমিতা পঁুথিচিত্র থেকে মোঘলযুগের বিভিন্ন মিনিয়েচার এবং সম্রাজ্ঞী নূরজাহানের পিতা ইমাদ উদদ্দৌলার অলংকৃত চিত্র। জাদুঘরে পঁুথির সংগ্রহ ৫ হাজারের বেশী। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬ শ’ ৪৬টি সংস্ড়্গৃত, বাকিগুলো বাংলা। আরো আছে পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পর্যন্তô অঙ্কিত চিত্র। সব মিলিয়ে মৌর্য, সেন, গুপ্ত, পাল, মুসলিম, বৃটিশসহ প্রাচীন ও মধ্যযুগের নানাবিধ মূল্যবান সংগ্রহে এক সমৃদ্ধ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে এই জাদুঘর। জাদুঘরের নিজস্ব একটি লাইব্রেরী এবং সমৃদ্ধ প্রকাশনা আছে।

রেশম শিল্প

রেশম এক বিস্ময়কর জীবনচক্রভিত্তিক শিল্প। পৃথিবীব্যাপি এই শিল্পের কদর আছে। এই গৌরবময় শিল্পের জন্য রাজশাহীও গৌরবান্বিত হয়েছে। ১৯৮০-৯০ দশকে বাংলাদেশে রেশমের ছিল স্বর্ণযুগ। যা রাজশাহীকে রেশম নগরীতে পরিণত করে। বৃহত্তর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকায় রেশমগুটি উৎপাদন, তুত চাষ, পাতা উঠানো, বিক্রি, প্রিন্টিং সেলিং, উইভিংসহ বিভিন্ন কাছে প্রায় এক লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে জড়িত।

দেশের রেশম শিল্পের সম্্‌ভাবনাময় দিক বিবেচনা করে এ শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে বলে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড সৃষ্টি হয়। বোর্ড ১৯৭৮ সালের ফেব্রম্নয়ারি হতে রাজশাহীতে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। এর তত্বাবধানে একটি গবেষণাগার রয়েছে, যেখানে রেশমের বিভিন্ন পর্যায় দেখানো হয়। এছাড়া, বিসিক শিল্প এলাকায় সপুরা সিল্কসহ বিভিন্ন রেশম কারখানায় সিল্কের নানা প্রক্রিয়া দেখা যায়। অনেকেই এই জীবনচক্র ও শিল্পের প্রক্রিয়া দেখতে আসেন।

শহর রক্ষা বাঁধ

বিভাগীয় শহর রাজশাহীকে পদ্মার ভাংঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ১৮৫৫ সালে প্রথম কোর্ট এলাকায় একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ ছিল ১ হাজার ৭শ’২৯ ফুট। ১৮২৬ সালে বর্ষার সময় বন্যায় সময় পদ্মা শহরের কয়েকটি স্থানে পানি ঢুকে পড়ে। এর ফলে সরকারী উদ্যেগে ১৮৯৫ সালে বড়কুঠির পশ্চিমে কসাইপাড়া থেকে বুলনপুর পর্যন্তô ১৪ হাজার ১৮০ফুট, সাহেব বাজার থেকে পূর্বদিকে ৮ হাজার ২২৪ ফুট এবং জজ কোর্টের নিকট থেকে গোদাগাড়ী সড়কের পাশে ১২ হাজার ৩৫০ ফুট বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৪ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে ১০ হাজার ফুট দীর্ঘ সোনাইকান্দী বাঁধ ও ৩ হাজার ৭৬০ ফুট দীর্ঘ কাজলা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বাঁধের দৈর্ঘ ২০ কিলোমিটার। বাঁধের উপর পানির চাপ কমানোর জন্য ২০টি স্স্নুইস গেট, ৬টি গ্রোয়েন ও ৬টি ব্রিকস্পার নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বাঁধের তত্বাবধায়নে রয়েছে। বাঁধের শ্রীরামপুরের টি-গ্রোয়েনে প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্য পর্যটক মনকে বেশ আকৃষ্ট করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই স্থান পরিভ্রমণ করে থাকে।

কেন্দ্রীয় কারাগার

উত্তরাঞ্চলের একমাত্র বিভাগীয় কারাগার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার। রাজশাহী নগরীর সিপাইপাড়ায় পদ্মা নদীর কোল ঘেঁসে ৪০ একর জমির উপর এই কারাগার অবস্থিত। সুউচ্চ প্রাচীর বেশিষ্টত কারাগারটি বৃটিশ আমল তথা ১৯১৪ সাল থেকে বিভাগীয় কারাগারের মর্যাদা লাভ করে। উত্তর-দক্ষিণের দৈর্ঘ ১১শ’ ২ ৫ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে ৭শ’ ৪২ ফুট আয়তনের এই কারাগারটির মধ্যভাগে কারা হাসপাতাল, ুড়্গল, বাগান, কর্মচারীদের বাসস্থান, খেলার মাঠসহ ফসলী জমি রয়েছে। কারাঅভ্যন্তôরের উত্তর দিকে অবস্থিত পূর্ব-পশ্চিমে একতলা কয়েকটি ব্যারাক আছে। গবেষকদের মতে, এই ব্যারাক গুলোতে এক সময় ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনারা থাকত। ১৮২৫ সালে নাটোরের রাজবাড়ী থেকে কারাগারটি রাজশাহী নগরীতে স্থানান্তôর করা হয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩টি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, শিল্প বিভাগ ও বিভাগীয় পরিদপ্তর বিভাগ। সাধারণ প্রশাসন বিভাগ কয়েদী-কর্মচারীদের মাঝে শৃংখলা বজায় রাখে, শিল্প বিভাগ বিভিন্ন দ্রবাদি উৎপাদন ও বিভাগীয় পরিদপ্তর সংশিস্নষ্ট বিভাগের প্রশাসন পরিচালনা করে থাকে। কারাগারে রয়েছে একটি প্রাচীন পাঠাগার। এখানকার খাপড়া ওয়ার্ড আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের জন্য একটি ইতিহাস হয়ে রয়েছে।

স্মৃতি অম্স্নান

মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে নির্মিত ‘স্মৃতি অম্স্নান’ একটি দর্শনীয় মনুমেন্ট। রাজশাহী নগরীর ভদ্রার মোড়ে এটি অবস্থিত। নগরবাসীর সহযোগিতায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এটি স্থাপন করে। ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম ঠান্ডুর পিতা আজিজুর রহমান সরকার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। মূল পরিকল্পনায় ছিলেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুর রব পিএসসি। এর স্থপতি হচ্ছেন রাজিউদ্দিন আহম্মেদ। স্মৃতি অম্স্নান ভূমি হতে স্মৃতিস্তôম্্‌েভর সর্বমোট উচ্চতা ২৪ মিটার বা ৮০ফুট। ভূমি হতে গোলকের নিচ পর্যন্তô স্তôম্্‌েভর উচ্চতা ২১·৬৪ মিটার বা ৭১ ফুট। গোলকের ব্যস ৩ মিটার বা ১০ফুট। বেদীর উচ্চতা ১·০৬ মিটার বা ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। বেদীর ব্যাস ১৩·৭০মিটার বা ৪৫ ফুট। বেদীতলে মূল স্তôম্্‌েভর ব্যস ৯·৬৫ মিটার বা ৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি। শীর্ষতলে মূল স্তôম্্‌েভর ব্যস ২·৮০ মিটার বা ৯ ফুট ২ ইঞ্চি। মূল স্তôম্্‌ভটিকে পাদদেশে বক্রাকারে নির্মাণ করা হয়েছে। এ রকম তিনটি স্তôম্্‌ভ পাশাপাশি রয়েছে। ক্রমান্বয়ে সোজা হয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। প্রতিটি স্তôম্্‌েভর হেলানো পাশে ২৪টি করে ধাপ রয়েছে। প্রতিটিতে ১০টি করে মোট ৩০টি ছিদ্র রয়েছে। স্তôম্্‌েভর শীর্ষে একটি গোলক রয়েছে। গোলকতল থেকে ভূমি পর্যন্তô স্তôম্্‌েভর উচ্চতা ২১·৬৪ মিটার বা ৭১ ফুট। মূল স্তôম্্‌ভ তিনটিতে সদ্য উন্মোচিত পাতা ও হৃদয় আকৃতির বক্রতাকে বিবেচনায় আনা হয়েছে। ‘স্মৃতি অম্স্নান’ এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন।

আন্তôর্জাতিক পোস্টাল একাডেমী

রাজশাহী বিমান বন্দরের পাশে নওদাপাড়ায় এক সুরম্য ভবনে অবস্থিত এই আন্তôর্জাতিক পোস্টাল একাডেমী। ১৯৮০ সালের পরিকল্পনা মোতাবেক ২১একর জমির উপর এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। ডাক বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে এর ব্যয় হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির আকারে ৪৮ হাজার ডলার সাহায্য দিয়েছে। ২৩ জানুয়ারী ১৯৮৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এরশাদ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ডাক বিষয়ে উর্ধতন প্রশিড়্গণ গ্রহণের ডাক বিভাগীয় কর্মকর্তারা অবস্থান করে থাকেন। এর একটি সুদৃশ্য ক্যাম্পাস রয়েছে।

কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

১৯৭৩ সালে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মার পাড়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান স্থাপন করা হয়। পরে ১৯৮৩ সালে এই উদ্যানে ক্ষুদ্রাকার এ্যানিমেল পার্ক গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীকালে তা পূর্ণাঙ্গ আকারে চিড়িয়াখানায় রূপান্তôরিত হয়। নানাবিধ সমস্যা থাকার পরেও ৩৩ একর আয়তনের এই চড়িয়াখানাটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। উলেস্নখ্য, ব্রিটিশ আমলে এই চিড়িয়াখানার মাঠটি রেসকোর্স মাঠ ছিল। রাজশাহী চিড়িয়াখানাটি প্রথমে উদ্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে কিছু দুর্লভ গাছ আর বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির গাছসহ ফলবান, ভেষজ সহ অন্যান্য উন্নত জাতের গাছ রয়েছে।

ইতিমধ্যেই অব্যাবস্থাপনা আর অবহেলার কারণে বিপন্ন দুর্লভ কিছূ প্রাণীর অস্তিôত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে এখান থেকে। বিলুপ্ত হওয়া প্রাণী গুলোর মধ্যে রয়েছে রেডপান্ডা, গন্ধগোকুল, গাউর, কুমির, গোখরা সাপ, কালেম পাখি, তিতির, ডাহুক, সিল্কি ফাউল, গোল্ডেন ফেজেন্ট, ক্রেষ্টেড পলিশ ফাউল, ব্যান্টম ফাউল, জাভা স্প্যারো, ত্রিশুল, ওয়াক, সোনা গুইসাপ, শেয়াল, বাজরিগর, উট, বিরল প্রজাতির মুরগী সহ আরও অন্যান্য প্রাণী। তবুও একটি উদ্যান ও চিড়িয়াখানা হিসেবে দর্শককে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে।

রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার

নগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় ১৮৮৪ সালে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রতিষ্ঠিায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেন কাশিমপুরের জমিদার রায়বাহদুর কেদারনাথ লাহিড়ী ও দীঘাপতিয়ার জমিদার রাজা প্রমোদনাথ এবং নাটোরের জমিদার রাজা চন্দ্রনাথ রায় বাহদুর। এসময় বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিপুল পরিমান বই দেয়া হতো। এসময় এই লাইব্রেরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে মাঝে মধ্যে বহু গুণী ব্যক্তিত এখানে আসতেন। এদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলেন, মহাত্মা গান্ধী, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ, আচার্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়, সুভাষ চন্দ্র বোস, রমা প্রসাদ মুখাজী প্রমুখ। পরিদর্শন বইয়ে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুলস্নাহ মন্তôব্য করেন ‘বাংলায় এই ধরণের আর একটিও গ্রন্থাগার নেই।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উত্তরবঙ্গের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রই নয়-এর সুবিশাল মতিহার ক্যাম্পাস নানা কারণে পর্যটক মনকে আকৃষ্ট করে। ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তôান প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশনে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৫৩’ পাশ হয়। ৬ জুলাই ১৯৫৩ সালে উপাচার্য নিযুক্ত করা হয় এবং অফিসের কাজ শুরম্ন হয়। রাবির প্রথম উপাচার্য ড· ইসরাত হোসেন জুবেরী ও প্রখ্যাত আইনজীবী আইন পরিষদ সদস্য মাদার বকস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনার খসড়া রচনা করেন। রাবির প্রথম ক্লাস শুরম্ন হয় ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম শিড়্গাভবন রাজশাহী কলেজে। পদ্মাতীরে বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশমকুঠীর উপরতলায় উপাচার্য়ের বাসভবন ও নীচতলায় উপাচার্য দপ্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৬১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্তô বিভাগ ও অফিস বর্তমান মতিহার কাজলা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। ৭৪৩ একর জমির উপর অস্ট্রেলীয় ইঞ্জিনিয়ার ডঃ সোয়ানী টমাস- এর মনোরম স্থাপত্য পরিকল্পনায় গড়ে উঠে বহু সংখ্যক ভবন। ১৬১ জন ছাত্র ছাত্রী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরম্ন হয়।

মতিহার ক্যাম্পাসের আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, একাত্তরের বধ্যভূমি ও স্মৃতি স্তôম্্‌ভ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, প্যারিস রোড প্রভৃতি।

এদিকে, বিশালতা, সৌন্দর্য ও শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। ১৯৭০ সালের ১৩ এপ্রিল তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর ড· সাজ্জাদ হোসাইন এর ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের কাজ শেষ হয় ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয় ৮ লাখ টাকা। মসজিদের মূল ভবন ৫২’-০’’/৫২’-০’’। এর মূল কড়্গের মুসুলস্নী ধারণ ক্ষমতা ৫শ’ এবং ছাদযুক্ত বারান্দায় মুসুলস্নী ধারণ ক্ষমতা এক হাজার। এছাড়া মুক্ত বারান্দাসহ এই সমজিদে মোট মুসলস্নী ধারণ ক্ষমতা ৩ হাজার। মূল ভবনের পশ্চিম কোণে রয়েছে ১০০ ফুট উচঁু মিনার।

রাজশাহী কলেজ

শত বর্ষের ঐতিহ্যবাহী এবং বৃটিশ শাসিত বাংলাদেশে কলকাতার প্রখ্যাত রেসিডেন্সী কলেজের পরই সর্ব পর্যায়ে স্বীকৃত লাভ করে গৌরবোজ্জল কীর্তির অধিকারী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী কলেজ। এককালে অভিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম এই কলেজ ছিল পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বিহার, পূর্ণিয়া এবং আসামের অধিবাসীদের উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। ১৮৭৩ সালে ১জন মুসলমান সহ মোট ৬জন ছাত্র নিয়ে রাজশাহী জেলা স্ড়্গুলে (বর্তমান কলিজিয়েট স্ড়্গুল) রাজশাহী কলেজের এফ·এ ক্লাস শুরম্ন হয়। ১৮৮৪ সালে সরকারী এই কলেজের দৃষ্টিনন্দন মূল ভবন নির্মিত হয়। ১৮৭৮ সালে বিএ কোর্স চালু হয়। ১৯৩৩ সালে এখানে সহশিক্ষা চালু হয়।

রাজশাহী নগরীর আরো যে সকল স্থান বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, নবনির্মিত রেলওয়ে স্টেশন, নওদাপাড়া আম চত্বর, শহর রড়্গা বাঁধের টি-গ্রোয়েন, নগর ভবনের গ্রীণ পস্নাজা প্রভৃতি।

রাজশাহী পর্যটন মোটেল

নগরীর শ্রীরামপুরে আবদুল মজিদ রোডে অবস্থিত রাজশাহী পর্যটন মোটেল বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান। এর এসি সিঙ্গল রম্নমের ভাড়া ১৩শ’ টাকা, নন সিঙ্গল এসি ৭শ’ টাকা, টুইন রম্নম এসি ১৫শ’ টাকা, টুইন নন এসি ১ হাজার টাকা, সুøট এসি ২৫শ’ টাকা, সুøট নন এসি ১৩শ’ টাকা এবং ভিআইপি সুøট ৩ হাজার ৫শ’ টাকা। ফোনঃ (০৭২১)৭৭০২৪৭, (০৭২১)৭৭৫২৩৭। এই মোটেলে একটি চাইনীজ রেস্টুরেন্টও আছে।

রাজশাহী নগরীতে যাতায়াতের জন্য দেশের সব রম্নটে চলাচলকারী মানসম্পন্ন বাস এবং একাধিক এপ্রেস ট্রেন আছে। একটি বিমান বন্দর থাকলেও তা এখন বন্ধ রয়েছে। তবে বিমান বন্দরে বেসরকারী বিমান ও হেলিকপ্টার উঠানামা করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

২৭২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File