একজন সম্মানিতার পূর্বাভাস - তামিম বারগুছী
লিখেছেন লিখেছেন মির্জা ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ০৮:১৪:৫৩ সকাল
আমাদের গ্রাম দাইরে গাসসানায়,
যা ফিলিস্তিনের রামাল্লার বনী যায়েদে,
সেখানে লোকমুখে এক গল্প শোনা যায়ঃ
আশির দশকের শুরুতে বৃষ্টিমুখর এক রাতে
দখলদার বাহিনী আমাদের এক সম্ভ্রান্ত মহিলার ঘরে হামলা করে বসে।
তার চার সন্তানের দুজনকে গ্রেফতারের দায়িত্বে থাকা
ইসরাইলী সেনা অফিসারটি তাঁকে বলেছিলো,
“ছেলেদের ভালো পোশাক পরিয়ে দাও,
আজকের পর তো আর দেখবে না তাদের।”
ছেলে দুটো ছিলো সবে প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র।
মহিলাটির জবাব ছিলোঃ
“আমি তাদের আবার দেখতে পাবো! তারা দুজনই বেড়ে উঠবে!
বিয়ে করবে আর রেখে যাবে উত্তরসূরীও!
আর তাদের বাবা-মায়ের অভিশাপে মারা পড়বে তুমি!
আমি তাদেরকে আলবৎ আবার দেখবো, বড় হবে তারা,
বিয়ে করবে ও রিযিক হিসেবে পাবে সন্তানাদি।
আর তাদের বাবা-মায়ের অভিশাপে মারা পড়বে তুমিই”
মাসখানেক পর সেই ইসরাইলী অফিসারকে পাঠানো হয় লেবাননে
দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর সদস্য হিসেবে
সেখানেই যুদ্ধে মারা পড়ে সে।
সম্মানিতা সে মহিলাটিই কাহিনীটি আমাকে শুনিয়েছে
সে ঘটনা ঘটার বিশ বছর পর তাঁর ঘরে,
তাঁর সন্তানরা ছিল তখন তাঁর চারপাশে
আর নাতি-নাতনীরাও খেলছিলো বাড়ির উঠোনে।
গ্রামবাসী কাহিনীটি অদ্ভুত দৈবঘটনা হিসেবে বর্ণনা করলেও,
ঘটনাটি ইসরাইলী অফিসারকে দেয়া মহিলার জবাবেই শেষ হতে পারতো
তাঁর জবাবটিই অফিসারকে পরাজিত করে দিয়েছিল, যদি সে না মরতো তবুও
যদি তাঁর ভবিষ্যতবাণী না ফলতো এরপরও;
ফলাফল যা ই হত, জবাবটিই অফিসারকে হারিয়ে দিয়েছিলো;
কারণ, শক্তিমান তো শক্তিমান হয়ে ওঠে কেবল দুর্বলের কল্পনায়,
অথবা তার কল্পনায় যে নিজেকে দুর্বল মনে করে।
দুর্বলতা থেকে মুক্তির প্রথম ধাপ
নিজেকে দুর্বল হিসেবে না দেখা,
না শক্তিমানকে শক্তিমান হিসেবে।
যে বলে দখলদারিত্বের সাথে সহযোগিতা ও ভদ্র আচরণ
আমাদের পথ হওয়া উচিত কারণ আমরা দুর্বল,
সে তো আমাদের জন্য সীমাবদ্ধতা বয়ে আনা দুর্বলতার কারণ।
দখলদারিত্ব মাকড়সার ঘর থেকেও দুর্বল – এ বিশ্বাস রেখে
যে একে প্রতিরোধ করতে শেখে,
তাকে তার প্রতিরোধ শক্তিশালী করে তোলে অনেকটা সেই কুস্তিগীরের মত
নিজের সাথে লড়াই করা যার প্রথম প্রশিক্ষণ ছিলো।
ইউনিভার্সিটিগুলোতে স্ট্র্যাটেজি সাইন্সের অন্যতম রেফারেন্স বই,
যা আমরা নিজেরা পড়েছি এবং পড়িয়েছিও
কার্ল ভন ক্লসউইৎজ লিখিত,
যিনি ছিলেন প্রুশিয়ান জেনারেল এবং নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে
লড়েছিলেন বেশ কয়েকটি যুদ্ধ।
তাঁর লড়া সবচেয়ে বড় ও শেষ যুদ্ধ ছিল ওয়াটার লুতে।
বইটির নাম খুবই সাদাসিধে এবং সোজাসাপ্টা
‘ভম ক্রিগ’ মানে ‘যুদ্ধের ব্যাপারে’।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিগ্রহের ওপর জগদ্বিখ্যাত সব বাণীগুলো
এ বই থেকেই নেয়া,
যেমনঃ ‘যুদ্ধ হচ্ছে অন্য কায়দায় রাজনীতির চর্চা।’
কিংবা ‘কিছু পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ হঠকারিতাই সর্বোচ্চ প্রজ্ঞার লক্ষণ’
অথবা খুব বিখ্যাত যেটিঃ
‘হানাদার বাহিনী সবসময়ই শান্তিপ্রেমী কারণ
তাদেরও ইচ্ছে বিনা বাধায় আমাদের দেশ দখল করা।’
কিন্তু আমাদের জন্য এখানে প্রাসঙ্গিক তাঁর যে বাণীটিঃ
‘কোন যুদ্ধকে ততক্ষণ সমাপ্ত গণ্য করা যায় না
যতক্ষণ না পরাজিত পক্ষ ও তার মিত্রদের উপর এমন শান্তিচুক্তি চাপিয়ে দেয়া হয়
যা তাদের সংকল্পকে ভেঙ্গে দেয় ও নিশ্চিত করে বশ্যতা।
এমনকি সরকারগুলোর মাঝে শান্তিচুক্তি হওয়ার পরও
যদি জনগণের সংকল্পে পরিবর্তন না আসে,
তবে যুদ্ধকে ধরে নিতে হবে চলমান এবং এর ফলকে অনিশ্চিত।’
এর মানে পরাজিত ততক্ষণ পরাজিত হয় না
যতক্ষণ না
সে নিজেকে পরাজিত স্বীকার করে নিচ্ছে।
যদি সে তা স্বীকার করে না নেয়-
যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না, যা হয় তা কেবল এর সাময়িক প্রশমন।
রূপকার্থে যে ইসরাইলী সেনাঅফিসারটি
অনেক সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি করে বসে আছে,
সেই সম্ভ্রান্ত মহিলাটির সাথে এমন কোন চুক্তি সে করে নি,
যার ছেলেদের গ্রেফতার করতে সে এসেছিল;
তার নেতারা জানে তাদের জুলুমের শেষের সূচনা
এ সম্ভ্রান্ত মহিলা ও তাঁর মত অন্যদের হাত ধরেই হবে
তাই কখনো ভুলে যেও না্
তুমি, আমি ও আমরা - মানুষ যাদের পরাজিত বলে
আর আমাদের ওপর চেপে বসা হানাদার জালেমদের বলে বিজয়ী,
আমরা আর পরাজিত হই নি,
কখনো হবোও না
যতক্ষণ না আমরা নিজেদের পরাজিত ভেবে নিচ্ছি;
সবকিছুর পরেও আমরা আমাদের কল্পনারও বেশী বলীয়ান।
তামিম বারগুছীর ‘نبوءة سيدة’ থেকে অনুদিত।
বিষয়: বিবিধ
৭৬৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন