রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঈদ

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৯:২১:৫০ সকাল



অচেনা পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটাই প্রবাস জীবন। নিজের আশপাশের ঘটে যাওয়া অনেক কিছুকেই এড়িয়ে চলার অভ্যাস করার মন মানসিকতা তৈরি করা হচ্ছে একজন প্রবাসীর প্রথম সফলতা। দ্বিতীয় সফলতা হচ্ছে সুন্দর একটি স্বপ্নকে চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে তৃপ্তি পাওয়া এবং সপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। সকল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্প্রিট হচ্ছে প্রবাসীর চলার গতিবেগ। বিপদ-আপদে কিংবা দুঃখ - কষ্টে থমকে যাওয়ার মধ্যে প্রবাসীর পরিচয় ফুটে উঠেনা বরং এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই প্রবাসীর পরিচয় ফুটে উঠে। শুধু প্রবাসী কেন যে কারো থমকে যাওয়া উচিৎ নয়। বিশেষ করে যুবকদের সকল বাঁধাকে ধৈর্য এবং সাহসের সাথে মুকাবিলা করে জীবন যুদ্ধে বিজয়ের নেশায় এগিয়ে যেতে হবে।

ঈদ মানে খুশি ঈদ মানে আনন্দ। দুনিয়ার মুসলমানের জন্য দুই ঈদ অনেক আনন্দের। ঈদ উল ফিতর এবং ঈদুল আযহার সাথে মুসলমানের ঐক্যের নমুনা জড়িত। ঈদের দিনে গরিব -ধনি, ছোট -বড় সবাই আনন্দ করে। এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সাথে হাসি খুশি ভাগাভাগি করে। পবিত্র রমজানে মহান রাব্বুল আলামিনের হুকুম মুতাবেক সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ উল ফিতর ।এবং জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফার মাঠে ফরজ হজ্জের বিদায়ি খুতবার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক হজ্জ শেষে ১০ জিলহজ্জ ইদুল আযহা। বিশ্ব মুসলিম আনন্দের সাথে পালন করে এই দুই ঈদ ।তবে যারা নিজ দেশ থেকে বহু দূরে মানে প্রবাসে তাদের বেলায় ঈদ যেন অন্যরকম। বিশেষ করে যারা জীবনের চলার পথ সুন্দর ও সচ্ছল করতে প্রবাসে পারি জমান তাদের বেলায় ঈদের আনন্দ ও পরিবেশ ভিন্ন আমেজের । তারপরও ঈদ বলে কথা শত কষ্ট এবং ব্যস্ততার মধ্যে ঈদের খুশি টাচ করে প্রবাসীদের অন্তরে। হতে পারে খুশির পরিমান একটু কম। তবে এটা বাস্তব ঈদের আনন্দে প্রবাসীরা নিজেদের শামিল করেন নিজেদের করে। কেউ কর্মস্থলেই ঈদের জামায়াত আদায় করেন। আবার কেউ ঈদের জামায়াত আদায় করে কর্মস্থলে গিয়ে কাজে মিছে ঈদের আনন্দ খুঁজেন। নয়তো নামাজ আদায় করে বাসায় গিয়ে মোবাইল কানে লাগিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে মুখে হাসি সচল রেখে দেশে মা - বাবা, ভাই, বোন কিংবা প্রিয়জনের সাথে কথা বলে ঈদের আনন্দ খুঁজেন।

বাংলাদেশ থেকে অনেক দূর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত যেখানে প্রায় ১০০ ভাগের জনসংখ্যার ৮ ভাগই বাংলাদেশী । আমরা যারা এখানে আছি আমাদেরও ঈদ পালন করা হয় তবে তা এক ভিন্ন মাত্রা আনন্দের ,মানে -কিছু কষ্ট ,কিছু আনন্দ ,কিছু গ্লানি , কিছু তৃপ্তি , কিছু অতৃপ্তি, ত্যাগের মাধ্যমে আমাদেরকে ঈদ উদযাপন করতে হয় ।তার সবচেয়ে বড় কারণ পাশে নেই মা বাবা আত্বীয় স্বজন নেই বাড়ির পাশের ঈদগাহ। অবস্য বাড়ির পাশের ঈদগাহ থেকে আরো বড় ও মধুর কন্ঠের নামাজের সুর রয়েছে তারপরও যেন অতৃপ্তি ।নেই মায়ের হাত দিয়ে মুখে টেলিয়ে দেওয়া সেমাই কিংবা অন্য কিছু ।নেই বাড়ির আনন্দে মাতহারা শিশুদের চিকন কন্ঠের চিৎকার । নেই বিবাহিতদের স্ত্রীর নরম হাতের গরম সন্দেশ ।আমিরাতে অনেক উন্নত মানের মিষ্টি খেলেও ওই তৃপ্তি পান না বলে বিবাহিত প্রবাসীরা বলেন । অনুপস্থিত থাকে সেলামি দেওয়া নেওয়ার বিষয়। নেই নতুন জামা ক্রয়ের উৎসাহ তারপরও ক্রয় করতে হয় দেশ থেকে মা -বাবা বা দাদা - দাদির কিংবা স্ত্রীর অনুরোধে ।কিন্তু এই ঈদ পোশাকে যে মজা কতটুকু লাগে তা টের পাওয়া যায় ঈদের দিন গায়ে দেওয়ার সময় ।

ঈদের দু চার ঘন্টা আগ মুহুর্তে চাকরি থেকে এসে গোসল শেষে দু একজন বন্ধুদের সাথে বা একা ঈদের নামাজে যাওয়া আর দেশে বাবার সাথে, চাচার সাথে ,ভাইদের সাথে কিংবা সন্তানের হাতে ধরে যাওয়া এক নয় এক হতে পারে না । নামাজ শেষে কোলাকুলি রীতি সকল দেশে রয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদের নামাজ শেষে এই কোলাকুলি বা আরবদের চুমু খাওয়া অনেক তৃপ্তির ও ভাতৃত্বের এক সনদ ও বটে ।নামাজ শেষে দেশে ফোন যখন করা হয় তখন অনেক প্রবাসীরা চোখের পানি সামলাতে পারেনা। আবার অনেকে চোখের পানি সামলে নেয় কিন্তু মনের ভেতর যে কষ্টের বন্যা চলে তা থামাবে কে ?

বিকেল বেলা কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে নানান শহর থেকে আসা পরিচিত আত্বীয় স্বজনের সাথে দেখা করা হলো একজন প্রবাসীর সবচেয়ে বড় ঈদের আনন্দ । ঈদ বলে কথা তাই শত কষ্টের মধ্যে দুই ঈদে প্রবাসীরা নিজ জায়গায় থেকে অনেক আনন্দ করে তবে আনন্দের মাত্রা দেশ থেকে অনেকাংশ কম। ঈদে উপলক্ষে অনেকের ছুটি থাকে। আবার অনেকের ঈদের দিন বিকেলেই কাজে যেতে হয়। এই ছুটির মধ্যেই প্রবাসীদের ঈদের আমেজ পরিমাপ করা যায় । সংস্কৃতি ও পরিবেশের পার্থক্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীরা নিজেকে সামাল দিতে পারেন না আবার অনেকে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নেন। প্রবাস জীবনে এই মানিয়ে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে প্রবাসে বসবাসের নিজের অবস্থান।

ঈদের আনন্দোৎসব কিন্তু মুখ্য নয়। ঈদের পবিত্রত রক্ষা করা হচ্ছে ঈমানী দাবি। প্রবাসে নিজেদের দেখবাল করতে হয় নিজেই অর্থাৎ নফছ হচ্ছে প্রবাসীর প্রশাসন। সঠিক পথে সঠিক মতে প্রবাসের আইন মুতাবেক জীবন যাপন করার মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা উন্নত মানসিকতার কাজ।

আমরা প্রবাসীরা তখন দুশ্চিন্তাহীন থাকতে পারি যখন শুনি আমার আত্মীয় সজন এবং প্রিয় জন্মভূমির মানুষ নিরাপদে আছে। প্রবাসীদের মুখে হাসি ফুটে তখন যখন টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে শান্তির বার্তা শুনা যায়। যখন পরিবার থেকে বলা হয় আমরা খুব ভালো আছি, যখন বলা হয় তোমার উপার্জিত টাকা পেয়ে আমরা সচ্ছলতার সহিত চলছি। প্রবাসীরা তখন কষ্ট পায় যখন শুনে দেশে গুম - খুন, ডাকাতি, জুলুম - নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কষ্ট ঈদে ছুটি না পাওয়ার কষ্ট থেকে বহুগুণ বেশি। এই কষ্ট ঈদে আপনজন কাছে না পাওয়ার চেয়ে বেশি। প্রবাসীরা নিরাপদ জনপদের বাংলাদেশ চায়। প্রবাসীরা সুন্দর সংস্কৃতির প্রিয় জন্মভূমি চায়। দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত দেখতে চায়। প্রবাসীরা স্বপ্নের বাংলাদেশ চাইতে পারে কারণ প্রবাসীরা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রিয় জন্মভূমিকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377463
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : প্রবাসিরা তাদের কষ্টের মধ্যেও ঈদ আসুক।
377464
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০২:০১
সামছুল লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।
377465
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৪২
হতভাগা লিখেছেন : তাড়া তাড়া নোট কামাচ্ছেন ম্যান ! পুরাই অস্থির !

আপনজন বিহনের যে দুঃখ তা লাঘবে এর চেয়ে বড় মওকা আর কি হতে পারে ।

তবুও ভাই , আপনাদের এই পরিশ্রমের টাকা আপনজনদের জন্য বিশাল ব্যাপার । কারণ আপনারা টাকা পাঠাচ্ছেন দেশে আপনজনদের কাছেই । যারা নিজেদের কষ্টকে ঠেলে দিয়ে আপনাদেরকে পাঠিয়েছে এই বিদেশ বিভূঁয়ে আপনার ও তাদের নিজেদের উজ্জল ভবিষ্যতের আশায় ।

সেটা যেন ব্যর্থ না হয়ে যায় । এতেই আপনাদের পরিশ্রমের স্বার্থকতা।
377474
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৫
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : প্রবাসীরা নিরাপদ জনপদের বাংলাদেশ চায়। প্রবাসীরা সুন্দর সংস্কৃতির প্রিয় জন্মভূমি চায়। দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত দেখতে চায়। Thumbs Up
377484
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০২:০৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

উপসংহারটা খুব সুন্দর হয়েছে!
কেউ কেউ খুব হা-হুতাশ করে পোস্ট দিচ্ছেন, সেটা ঠিক মনে করিনা- যদিও অনেকের সমস্যা আছে তাঁদের কোম্পানী বা কফিলের সাথে!
তাছাড়া তাঁরা শুধু প্রবাসীদের কষ্টই দেখলেন!! দেশেও তো ইমার্জেন্সী সার্ভিসের অসংখ্য ভাই-বোনের জীবনে প্রতিবছর ঈদ আসেনা!!

আল্লাহতায়ালা যার জন্য যেখানে রিজক রেখেছেন তাকে সেখান থেকেই সেটা সংগ্রহ করতে হবে! এতো হা-হুতাশ করা ঠিক নয়!!

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
377502
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৪৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam n eid Mubarak. Very beautiful realisation. Jajakallahu khair.
377507
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:০৬
কাহাফ লিখেছেন : ঈদ মোবারক!ঈদ মোবারক!!ঈদ মোবারক!!!

সুন্দর ও নান্দনিক উপস্হাপনা ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিল যেন!
উপসংহারের দরদী আকুলতায় স হমত জানিয়ে জাযাকুমুল্লাহ !!!
377509
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:০৯
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের ঈদ নিয়ে|
377796
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০১:৪৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ঈদের দু চার ঘন্টা আগ মুহুর্তে চাকরি থেকে এসে গোসল শেষে দু একজন বন্ধুদের সাথে বা একা ঈদের নামাজে যাওয়া আর দেশে বাবার সাথে, চাচার সাথে ,ভাইদের সাথে কিংবা সন্তানের হাতে ধরে যাওয়া এক নয় এক হতে পারে না । নামাজ শেষে কোলাকুলি রীতি সকল দেশে রয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ঈদের নামাজ শেষে এই কোলাকুলি বা আরবদের চুমু খাওয়া অনেক তৃপ্তির ও ভাতৃত্বের এক সনদ ও বটে ।নামাজ শেষে দেশে ফোন যখন করা হয় তখন অনেক প্রবাসীরা চোখের পানি সামলাতে পারেনা। আবার অনেকে চোখের পানি সামলে নেয় কিন্তু মনের ভেতর যে কষ্টের বন্যা চলে তা থামাবে কে ?


মনের কথাই বলছেন, ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File