মা! আসলেই কি মধুর ডাক!
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:২৪:০৬ রাত
সেই ছোটকাল থেকে শুনে এসেছি আবদুল কাদের জিলানি (র) এর মাতৃসেবার গল্প। স্কুলে পড়েছি হৃদয় আলোড়িত করা ”মা কথাটি ছোট্ট অতি,কিন্তু জেন ভাই। ইহার চেয়ে নাম যে মধুর এই ভুবনে নাই”। মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে সকল ওয়াজ মাহফিল এ শুনেছি অনেক বক্তৃতা। কুরআন-হাদিস এর নির্দেশ। নিজের জিবনে এবং অন্যের জিবনে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছি তা। কিন্তু কখনও কখনও কিছু ঘটনার মুখোমুখি হয়ে কিংবা কারো অভিজ্ঞতার কথা শুনে মনে হয়েছে বাস্তব জিবন কি এতই নির্মম যে মা তার সন্তান কে বঞ্চিত করতে পারে এভাবে। বিভূতিভুষন এর লিখা থেকে সত্যজিত রায় এর চলচ্চিত্র ”অপরাজিত” তে দেখানো হয়েছিল মায়ের মৃত্যুতে অপুর শোকের মাঝেও এক অদ্ভুত শৃঙ্খল থেকে মুক্তির উল্লাস। সেই জন্য প্রচুর সমালোচিত হতে হয়েছিল পরিচালককে। মায়ের মৃত্যুতে কেউই উল্লসিত হতে পারেনা এই আমাদের চিরন্তন বিশ্বাস। কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেঙ্গে যেতে পারে এমন দুটি ঘটনা চোখের সামনেই দেখলাম।
দুই ভাই। বড়ভাই এখন অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। ছোটজন আগে যথেষ্ট সচ্ছল হলেও এখন অসুস্থ হয়ে জমা টাকার উপর নির্ভরশিল। যতদিন তার টাকা ছিল ততদিন মা যথেষ্ট স্নেহ করতেন। কিন্তু মা এখন সহজে তার সাথে কথাও বলেন না। অসুস্থ হয়ে নিজের ঘরে পরে থাকে ছেলেটি। মা তাকে সময়মতো খাবারও দেন না। অন্যদিকে মা এর উপর ও বেশি খবরদারি করেন তার বড় ভাই এর স্ত্রী। মা-ভাই কেউ তার ভয়ে তাকে ওষুধ ও এনে দেননা। ভাগ্য ভাল এই যুগে মোবাইল ফোন বলে একটা বস্তু আছে। কয়েকজন আত্মিয় ও বন্ধুর সহায়তায় ছেলেটি এখনও বেচে আছে। দির্ঘমেয়াদি লিভার সমস্যায় আক্রান্ত ছেলেটির প্রধান খাদ্য হোটেল বা দোকান থেকে আনিয়ে খেতে হয়। এখন শুনছি তার বন্ধুদের আসা নিয়ে মা ও ভাবির ভিষন আপত্তি। ছলছল চোখে সে জিজ্ঞেস করে আমার বাবার বাড়িতে কি আমার একটুও অধিকার নাই যে বেঁচে থাকি। মা কোনভাবেই আর্থিক দিক দিয়ে বড়ছেলে বা ছেলের বউ এর উপর নির্ভরশিল নন। কিন্তু আয় করে বলে স্নেহান্ধ তার প্রতি। ছোট ছেলেটি নির্জনে শুধু আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে।
দ্বিতিয় ঘটনাটি আরো মর্মস্পর্শি। বিরাট পরিবারে ছয়ভাই বোন এর মধ্যে চতুর্থ ছেলেটি। পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা করার পর মোটামুটি ভাল চাকরি করত। তখনও তার বড় ভাই বোন দের পড়াশুনা শেষ হয়নি। এমন সময় তার পিতা মারা যায়। সংসারে একমাত্র আয়কারি হয়ে যায় সে। সংসারে একটু সচ্ছলতার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে পারি দেয়। দির্ঘদিন অনেক কষ্টে থেকে একটি ভাল স্থায়ি চাকরি যোগাড় করতে সমর্থ হয় সে। তার পাঠানো টাকায় ভাই-বোন দের লেখাপড়া হয়েছে। ভাড়া ঘর থেকে জমি কিনে নিজেদের ফ্ল্যাট হয়েছে। বড়ভাই এখন বেসরকারি কলেজ এর শিক্ষক। তার পরের ভাই ব্যাংক এর চাকুরিজিবি। ছোট বোন ছাড়া বাকিদের বিয়ে হয়েছে তারই পাঠানো টাকায়। ৩-৪ বছর পরপর দেশে আসে সে। এই করতে করতে তার বয়স ৩৫ হয়ে গেছে। একাধিক বার বিয়ের চেষ্টা করেও মা এর আপত্তি তে বিয়ে করেনি। সম্প্রতি দেশে এসে বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মায়ের প্রবল আপত্তিতে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। মায়ের আপত্তির কারন নাকি মেয়ের বাড়ির কোন সন্মান নেই। যদিও মেয়েটি মাস্টার্স ডিগ্রিধারি এবং হাইস্কুল শিক্ষিকা। এই মেয়েকে বিয়ে করালে তিনি যে পরিবারের কন্যা সেখানে অপমানিত হবেন! ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন মেয়ে পছন্দ করার সময় ছিলনা। যাওয়ার আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু কে ডাকল এক রেষ্টুরেন্ট এ। সজল চোখে বলল আর আসবেনা সে। তার মা এর কাছে সে এখন স্রেফ এক টাকার মেশিন। সে আরো বলল তার মা জানে যে বিয়ে করার পর স্থায়ি চাকরি করায় সহজেই বউ কে সাথে নিয়ে যেতে পারবে সে। শুধু সেই ভয়ে এই নাটক! নিজের জিবনের সব আয় দিয়ে পরিবার কে প্রতিষ্ঠিত করেও এখন তার মা এর কাছে সে শুধুই একটা আয় এর উপায়। ভালবাসাহীন এই পরিবারে সে আর ফিরে আসতে রাজি নয়।
ঘটনাগুলি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। একজন মা ও কি তবে মাতৃত্ব থেকে সন্তান এর আর্থিক অবস্থা ও প্রয়োজন কেই বেশি মনে করেন? আয় করলেও সমস্যা না করলেও সমস্যা! যে মা সন্তান কে কেবল তার প্রয়োজন দেখেই বিচার করেন সেই মা এর জন্য কি দুয়া করা যায়?
বলবেন কি কেউ?
বিষয়: বিবিধ
১৩০৪ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার বন্ধুর উচিৎ, মায়ের অজান্তে বিয়ে করে সংসার শুরু করা। সামান্য হায়াতে আর কত অপেক্ষা..........
জান্নাতের বাবা আমার ভাইয়া তো বলেছে ,এমন মায়ের জন্য শুধু হেদায়েতের দোয়া করা দরকার। আল্লাহ তায়ালা এমন মা'দেরকে সঠিক বুঝ দান করুক।
ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ধন্যবাদ আপনাকে
সামনের দিন গুলোতে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
তবে এই কথা অবশ্য ই সত্য ,
গর্ভে নিলে এবং জন্ম দিলে ই মা হউয়া যায় না ।
অভিবাবক ছাড়া বিয়ে করলে মেয়েদের বিয়ে ইসলাম বাতিল করলে ও,
ছেলেদের বেলায় তা বলা হয়নি ,তাই উনি বিয়ে করে নিতে পারেন .
মন্তব্য করতে লগইন করুন