আমরা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি?
লিখেছেন লিখেছেন রিদওয়ান কবির সবুজ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০২:০২:০৯ রাত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সুষ্পষ্ট ভাবে বলেছেনে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলি যত চেষ্টাই করুক রাশিয়া তার সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি বাড়াতে সচেষ্ট থাকবে। ইতোমধ্যেই ক্রিমিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া রাশিয়া তাদের হারান সোভিয়েট প্রভাব ফিরে পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। পুতিন সুষ্পষ্ট ভাবেই বলেছেন যে আসছে বছর রাশিয়ার জনগণকে অনেক সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। অনেকে এর অর্থ করছেন বর্তমান ইউক্রেন সহ সাবেক ইউরোপীয় সোভিয়েট অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে রাশিয়া সচেষ্ট। ইউক্রেন প্রশ্নে ইতোমধ্যে যে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে রাশিয়া তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেনা। পূর্বে জাপানকে বিশেষ ভয় এর কারণ নাই এবং কোরিয়াতে অবস্থানকারি মার্কিন বাহিনীও হুমকি হবে বলে মনে হয়না। কারণ নিজেদের আচরণের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতেই তারা বিশেষভাবে অজনপ্রিয়। সাবেক মধ্য এশিয়ার মুসলিম রাষ্ট্রগুলিও কোন সমস্যা নয় কারণ সেগুলি সবই সাবেক সোভিয়েট সুবিধাভোগি একনায়ক দ্বারা শাসিত। চীন নিজের অর্থনীতি সংহত করছে কিন্তু তারাও রাশিয়ান সীমান্ত ব্যাপি প্রধানত মুসলিম অঞ্চলগুলিতে চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ককেশাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণও রাশিয়ার হাতে যেখানে এখনও তেলের একটি বড় ভান্ডার রয়ে গিয়েছে। পুতিনের ভাষণের একটু আগেই চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে এক খন্ড যুদ্ধে নিহত হয়েছেন দশজন স্বাধীনতাকামী কিংবা সন্ত্রাসী! সব মিলিয়ে রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি এটা পরিস্কার করে বলেছেন যে তারা সকল অর্থনৈতিক চাপের মুখেও তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়িয়ে যাবেন।
অন্যদিকে একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে আরেক ঘটনা। কয়েকদিন আগে দক্ষিণের মিসিসিপি রাজ্যের ফার্গুসন এর এক কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরকে হত্যার অভিযোগ থেকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশকে মুক্তি দেওয়ার ফলে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার সপ্তাহ না পার হতেই পৃথিবীর সবচেয়ে কসমোপলিটন শহর। জাতিসংঘের সদর দফতর ছাড়াও নানা কারণে যে শহরকে বলা হয় পৃথিবীর সকল জাতি ও ভাষার কোন মানুষ যে শহরে আছে সেই শহরেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। এটিও একই অভিযোগ। গত জুলাই মাসে একজন কৃষ্ণাঙ্গকে গ্রেফতারের সময় শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারদের অত্যধিক বল প্রয়োগে সেই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটির মৃত্যু হয়। এরিক গারনার নামে ৪৩ বছর বয়স্ক সেই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি খোলা সিগারেট বিক্রয় করছিলেন যা নিউইয়র্ক এ বেআইনি। গ্রেফতারের সময় কয়েকজন পুলিশ অফিসার তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং বুক ও অন্যান্য অঙ্গে আঘাত এর ফলে তার মৃত্যু হয়ে বলে পোষ্ট মর্টেমে বলা হয়। এই ঘটনাটির একটি ক্লোজ ভিডিওও করা হয় যা তখনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। কিন্তু নিউইয়র্ক শহরের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড বরোর গ্র্যান্ড জুরি সংশ্লিষ্ট পুলিশদের এই অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়। উল্লেখ্য মার্কিন আইনে গ্র্যান্ড জুরি কোন বিচারিক আদালত নয়। এটি একটি বিশেষ আদালত যা কোন বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বা অভিযোগ আনা যাবে কিনা নির্ধারণ করে। পরিস্কার ভিডিও থাকা সত্বেও এই গ্র্যান্ডজুরি পুলিশ অফিসারদের অব্যাহতি দিয়েছে অভিযোগ থেকে। এর ফলে গতকাল থেকেই নিউইয়র্ক শহরে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং দাঙ্গার আশংকাও হচ্ছে। তবে নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্ল্যাসিও বিষয়টি পুর্নবিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিখ্যাত এনওয়াইপিডি বা নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট সরাসরি মেয়র সহ নির্বাচিত নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ফেডারেল হস্তক্ষেপের কথা বিবেচনা করছেন বলে বলেছেন। কিন্তু তবুও এই বিক্ষোভ কোন দিকে মোড় নেয় সেটা সময় হলেই দেখা যাবে। কারণ নিউইয়র্কের পুলিশের মুখপাত্র পুলিশকে নিরপরাধ দাবি করেছেন।
বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলিও নয় এখন শান্ত। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ পার হয়ে শান্তির সন্ধানে থাকা আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলি বেশিরভাগই এখন ইবোলা নামক এক নতুন ভাইরাসের আক্রমনে পর্যদুস্ত। ইরাক ও সিরিয়াকে কেন্দ্র করে চলতে থাকা যুদ্ধ আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গতকালই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে পেশমুর্গা নামের কুর্দি বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য প্রচুর অর্থের অনুমোদনের প্রস্তাব রেখেছেন যেখানে এই কুর্দিদের বিরুদ্ধেও প্রচুর অভিযোগ আছে। ভুঁইফোর আইসিস আর কুর্দি উভয়ের বিরোধী নতুন করে বিশ্বের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা তুরুস্ক। অন্যদিকে মিশরে সামরিক বাহিনী বুট আর ট্যাংকের তলায় মিটিয়ে দিতে চাইছে মানুষের অধিকারকে। সেই কাজে গণতন্ত্রের ধ্বজ্জাধারী পশ্চিমারা পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
পুরা বিশ্বই যেন উত্তেজিত। সকলেই যেন কোন উত্তেজক পানীয় পান করে পরস্পর এর বিরুদ্ধে উদ্যত। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় মুসলিম বিশ্ব। যারা মুসলিম নামধারি শাসকদের হাতেই বেশি অত্যাচারিত। আমরা কি মুখোমুখি হচ্ছি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের??? নাকি দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের সময় কাছিয়ে আসার নিদর্শনগুলি এখন প্রকাশিত হচ্ছে???
এই প্রশ্নের উত্তর কেবল আল্লাহই জানেন।
বিষয়: বিবিধ
২৪৪৪ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
বিশ্বের বর্তমান অবস্থা একটি দুর্বহ ভবিষ্যত এর ইঙ্গিত।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
খুব চাইছিলাম যে এদের মধ্যে একটা যুদ্ধ হোক ।
শালারা পিছলা , মিছকা । ঠিকই আরেকজনকে পিছন থেকে সাহায্য করে , তবে নিজেরা সরাসরি সামনা সামনি লাগে না ।
শীতল যুদ্ধ স্নায়ুযুদ্ধের নামে কি সব মাইন্ড গেম খেলে । সেটা কি কখনও সামনাসামনি লড়াইয়ের বিকল্প হতে পারে ?
ওবামাও যুদ্ধ বাজ আর পুতিনও মনে হয় রাশিয়ার সন্মান ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত । দুইজনকেই ঘাঢ় ত্যাড়া মনে হয় । চেচনিয়া - সিরিয়া নিয়ে এই লাগলো , লেগে গেছে মনে হলেও গত ২-৩ বছরে সেই আশায় গুড়ে বালিই পড়ে গেছে ।
দেখবেন শালারা আবারও পিছলাবে । আর আমার মত শত কোটি বিশ্ববাসীদেরকে দুর্দান্ত একটা যুদ্ধ দেখার সুযোগ থেকে আবারও বন্চিত করবে ।
রাজায়রাজায় যুদ্ধ হলেও উলুখাগড়ার প্রান যায়!
ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
পৃথিবীতে যে আধুনিক সভ্যতা বর্তমান তার নেতৃত্বে আছে আমেরিকা,হান্টার বলেছিনেল এই সভ্যতার পতন অসম্ভব, তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে জেগে ওঠা মুসলমানরা এই সভ্যতার জন্য কিছুটা বিপদ হতে পারে।
আমি অনেক আগে পড়েছিলাম, প্রায় ভুলে গেছি। আমার মনে হয় পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে আর সেটা অন্যান্য সব জাতির সাথে মুসলমানদের মনে হয়।
বর্তমানে আমেরিকাতে যে সামাজিক অবস্থা চলছে তাতে হান্টার এর কথা অনেকটাই ভুল প্রমানিত। আমার মনে হয় আরেকটা পুর্নাঙ্গ বিশ্বযুদ্ধ না হলেও খন্ড যুদ্ধ হবে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
সেই নেতাদের থেকে ভাল কিছু আশা করাই ভুল।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই কিন্তু আভ্যন্তরিন গোলযোগ বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
আমরা পৃথিবির বাইরে নই। কিন্তু আমাদের সরকারের আচরন দেখে মনে হচ্ছে তারা যেন মনে হয় কিছুই জানেন না!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন