যৌন হয়রানী ও ধর্ষণ

লিখেছেন লিখেছেন ইসহাক মাসুদ ০৯ জুন, ২০১৩, ০২:৫৩:৪৩ দুপুর

বাংলাদেশ তথা বিশ্বে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ের প্রাদুর্ভাব ঘটে। যেমন এক সময় ইভটিজিং বহুল আলোচিত বিষয় ছিল, অর্থাৎ এক সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিং হচ্ছে বলে পত্রিকার পাতা ভরপুর ছিল, মানুষের মুখে মুখে ছিল। বৃদ্ধিজীবিদের আলোচনা সমালোচনার খোরাক ছিল। কথনো আসলো দূর্নীতি, কখনো গন হত্যা আবার এর পরে নাস্তিক নাস্তিক, বর্তমানে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ। দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষত কর্তৃক ছাত্রী ধর্ষণ, কথাও বাসে ও ট্রেইনে যাত্রী ধর্ষণ, শিশু থেকে মধ্য বয়সী মহিলারা পর্যন্ত যৌন হযরানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ভারতে ধর্ষনের মাত্রা এতই ভেড়েছে যে, বিদেশী পর্যটকও রেহাই পাচ্ছে না।

মনে হচ্ছে হঠাৎ পুরুষে যৌন চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই সবখানে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মহোৎসব চলছে। বাস্তবে কি তাই? নাকি মিডিয়ার ফলোআপ? বাস্তবে এটি একটি মিডিয়ার ফলোআপ। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি সব সময় ছিল। হঠাৎ শুরু হয়েছে আগে ছিল না তা কিন্তু নয়। মিডিয়া তখন ফলোআপ করেনি। তাই এটি নিয়ে তেমন মাতামাতি হয়নি।

যেহেতু ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্য তাই এটাকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভার প্রতিহত করতে হবে।

সম্প্রতি রাস্তাঘাট বা যানবাহনে চলাফেরার সময় যৌন হয়রানি থেকে বাঁচতে নারীদের স্বল্প বসন বিশেষ করে মিনি স্কার্ট ও উত্তেজক প্যান্ট পরার ক্ষেত্রে সতর্ক করে দিয়েছে বেইজিং পুলিশ। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, চীনে গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি করার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বেইজিং পুলিশ নারীদের পোশাক পরিধানের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘চায়না ডেইলি’তে প্রকাশিত বেইজিং পুলিশ ও গণপরিবহন কর্তৃপক্ষের এই সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নারীদের মিনি স্কার্ট ও উত্তেজক প্যান্ট পরা উচিত নয়। আর যদি তাঁরা যৌন হয়রানির শিকার হন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পুলিশকে জানানো উচিত।’ আরও বলা হয়, ‘মুঠোফোনে কেউ ছবি তুলে নেওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বাসের উঁচু আসনে না বসে নারীদের নিচের ধাপের আসনে বসা উচিত। তা ছাড়া বাসের ভেতর নারীদের ব্যাগ, ম্যাগাজিন বা সংবাদপত্র দিয়ে শরীর অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখা উচিত।’ এ ধরনের ঘটনা যে কেউ ঘটাক না কেন, ধরা পড়লে তাঁকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

পুলিশ কর্মকর্তা জিং উই বলেন, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নারীদের সচেতনতা বাড়াতেই এই সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাস্তা বা বাসে ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও যৌন হয়রানি করা হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া খুবই কঠিন একটি ব্যাপার। এ ছাড়া, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ট্রেন বা গণপরিবহনের কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের পক্ষে এগিয়ে আসাটাও খুব জটিল একটি ব্যাপার।’

চীনে বর্তমানে এসব ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তার পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটালে আইন অনুযায়ী তত্ক্ষণাত্ দোষী ব্যক্তিকে জরিমানাসহ ১৫ দিন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ওয়াং জিয়ানশেং বলেন, বাসের ভেতর নারীদের রক্ষা করার জন্য কন্ডাক্টর নারীদের মনে করিয়ে দেবেন। অন্যথায় বাসে একটি নোটিশ বা কিছু নিয়মকানুন চালু রাখা যেতে পারে। এতে ভালো কাজ হবে।

নতুন এই বিধান সম্পর্কে জিয়ামিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ও নারী-অধিকার বিশেষজ্ঞ জিয়াং ইয়ু বলেন, পুলিশের এই সতর্কবার্তা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।

জিয়াং বলেন, ‘বাসে বা গণপরিবহনে সতর্কবার্তা লাগানো জরুরি, এটা সহজও। আর যাত্রীরা টাকার বিনিময়ে গণপরিবহনে ওঠে। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গণপরিবহন কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।’

আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলছে। প্রকাশিন প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, শুধু সমাজে পুরুষতান্ত্রীক দৃষ্টিভঙ্গীই নারীর উপর যৌন হায়রানির প্রধানতম কারন নয়। বরং নারীকে পন্য করে বাজারে তোলার যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে তাও নারীর উপর যৌন হয়রানি উস্কে দিতে বড় ভূমিকা রাকছে। পন্যের বিজ্ঞাপনে নারী ব্যবহারের প্রভাব, ইন্টারনেট ও গনমাধ্যমে যৌন আবেদনময়ী ভঙ্গীতে উপস্থাপনও নারীর উপর বেড়ে চলা যৌন হায়রানির পেছনে দায়ী ।

সম্প্রতি সোয়াজিল্যান্ডও মিনিস্কার্ট, টপস ও শর্ট জিন্সসহ নারীদের জন্য সব ধরনের আটসাঁট ও খোলামেলা পোশাক নিষিদ্ধ করেছে সোয়াজিল্যান্ড সরকার। যৌন আবেদনময়ী এসব পোশাক নিষিদ্ধে ছয় মাসের শাস্তির বিধান করা হয়েছে।সম্প্রতি সোয়াজিল্যান্ডের নারীরা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে সরকার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সোয়াজিল্যান্ড পুলিশের মুখপাত্র ওয়েন্ডা হেলেটা বলেন, নারীরা পেটের নিম্নভাগ বের হয়ে থাকে এমন কোনো পোশাক পরলে নৈতিকতা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং অপরাধ আইন-১৮৮৯ অনুযায়ী ছয় মাসের জেল দেয়া হবে।

‘ধর্ষণরোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারণ, আটসাঁট ও খোলামেলা পোশাক নারীদের যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের জন্য বেশি দায়ী। এ ধরনের যৌন আবেদনময়ী পোশাক নিষিদ্ধ করা হলে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি অনেকাংশ কমে যাবে’ যোগ করেন তিনি।

হেলেটা বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে নানা ধরনের পোস্ট ও স্টাটাস পড়েছি। তাতে দেখা যায়, পুরুষ বা নারীদের এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে- যে তারা চাহনীর মাধ্যমে নিজেদেরকে খোলামেলাভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করে। আর আটসাঁট ও খোলামেলা পোশাক পরলে এ কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়।’তবে সোয়াজিল্যান্ডের প্রথাগত বা সামাজিক পোশাক এই নিষিদ্ধের আওতায় পড়বে না।উল্লেখ্য, সোয়াজিল্যান্ডের রাজা নিজের জন্য স্ত্রী পছন্দ করতে প্রতি বছর ‘রিড ড্যান্স’ নামের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে দেশটির যুবতী নারীরা এমন এক ধরনের স্কার্ট পরিধান করে যাতে স্তন অর্ধনগ্ন থাকে ও পিঠের পুরো অংশ খোলা থাকে। এছাড়া এসময় নারীরা কোনো বিকিনিও পরে না। অবশ্য দেশটির বর্তমান রাজার এখনো ১৩ জন স্ত্রী রয়েছে।

আমাদের দেশে যদিও মিনি স্কাট পরা নারীর সংখ্য উল্লেখ যোগ্য নয়, লিঙ্গ বৈষম্যের কারনে, ও অধুনা আধুনিক হওয়া নারীরা ডিস কালচারের প্রভাবে পশ্চিমা ও ভারতীয় চ্যানেলের বদৌলতে আটসাট পোষাক ও স্কাট পরা শুরু করেছে। দেশি বিদেশী ফ্যাশন শো,উৎকট প্রেমবুহুল ফ্লিম ও নাটক এবং নিয়ন্ত্রীহীন ইন্টারনেট ও ফেসবুকের ও যত্রতত্র মোবাইলে গান ও ভিডিও লোডের দোকানের কারনে ছেলেদের মনে কুপ্রবৃত্তির জন্ম নেয়। অন্যদিকে আমাদের দেশের সদ্য আধুনিক হওয়া মেয়েদের দেখে তাদের কৃপ্রবৃত্তি আরো বেড়ে যায়। ফলে বিপত্তি ঘটে।

যদি মেয়েরা শালিন-মার্জিত পোষক ও ধর্মীয় পোষাক পরে রাস্তায় বের হয় এবং সরকার উৎকট আধা ঢাকা আধা নাঙ্গা পোষাক নিষিদ্ধ করে আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের হার একেবারেই কমে যাবে বলে আমরা মনে করি।

বিষয়: বিবিধ

১৭৯১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File