আমার ফেসবুক মুভি
লিখেছেন লিখেছেন রেহনুমা বিনত আনিস ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:২৮:৫৮ সকাল
ক’দিন আগে শুনলাম ফেসবুকের দশম বর্ষ পূর্তি উদযাপিত হচ্ছে। সম্ভবত তারই অংশ হিসেবে ক’দিন ধরে দেখছি সবাই নিজের নিজের ফেসবুক মুভি পোস্ট করছে। আমি একটু গাধা টাইপের। প্রথমে ভাবলাম মুভিটা বুঝি ওদের নিজেদের তৈরী। পরে বুঝলাম এটা ফেসবুক তৈরী করছে। ভাবলাম দেখি ওরা আমার কি কাহিনী বানালো। দেখলাম মিনিট খানেকের মত মুভিটাতে আমার ফেসবুক যাত্রার সমস্ত হাইলাইটস উঠে এসেছে- আমি কবে ফেসবুকে যোগ দিলাম, আমার প্রথম পোস্টগুলো, গত কয়েক বছরে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোন কোন ঘটনা আমি ছবি বা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে শেয়ার করেছি, আমার বিগত কয়েক বছরের প্রোফাইল এবং টাইমলাইন ছবির কোলাজ এবং সবশেষে একটি লাইক চিহ্ন। সহজ কথায় আমার ফেসবুক যাত্রার একটি সংক্ষিপ্ত রি-ক্যাপ, অনেকটা মুভির ট্রেলারের মত।
মুভিটা দেখার পর থেকে আরেকটি মুভির কথা ভাবছি যা তৈরী হচ্ছে অনেক বছর যাবত এবং হয়ত আরো কয়েক বছর পর্যন্ত নির্মান হতে থাকবে। দেখানো হবে এমন এক প্রেক্ষাগৃহে যেখানে উপস্থিত থাকবে পৃথিবীর আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ। এটি এমন এক মুভি যেখানে কিছুই বাদ পড়বেনাঃ ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদের ভীত সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে, হায় আফসোস! এ কেমন আমলনামা? এ যে ছোটবড় কিছুই বাদ দেয়নি! সবই রয়েছে এতে! তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে’ (সূরা কাহফঃ আয়াত ৪৯)। এক জাকারবার্গ যদি গুটিকয় লোকজন নিয়ে কয়েকদিনের ভেতর হাজার হাজার মুভির জন্ম দিতে পারে তবে এটা তাঁর জন্য কোন ব্যাপার যিনি ‘যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়’ (সূরা ইয়াসীনঃ আয়াত ৮২)? আমার এই ফেসবুক মুভি ক’জনই বা দেখবে, হয়ত দশজন, বেশিতে বেশি বিশজন! কিন্তু সেদিনের সেই প্রেক্ষাগৃহে আমার সমস্ত অপকর্ম উন্মোচিত হবে আদম (আ) থেকে শুরু করে সেই জন্ম না হওয়া শিশুটির সামনে যে কিয়ামতের মূহূর্তে তার ভীতসন্ত্রস্ত মায়ের গর্ভ থেকে আপনিই খসে পড়ে! এই লজ্জা রাখব কোথায়? মৃত্যুও তো সেদিন এসে স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিতে পারবেনা, সে দরজা যে আগেই পার হয়ে এসেছি! আমার কোন এক্সকিউজেও সেদিন কাজ হবেনা যেহেতু তিনি বলবেন, ‘হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? (সূরা ইয়াসীনঃ আয়াত ৬০)। সবচেয়ে ভয়ের কথা হোল আমার প্রভু বলবেন, ‘আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে (সূরা ইয়াসীনঃ আয়াত ৫৪)। এখানেই তো সমস্যা, এক জীবনে এমন একটি কাজের কথাও যে মনে করতে পারিনা যেটাকে পাটকাঠির মাথায় সস্তা কাগজের প্ল্যাকার্ডের মত তুলে ধরে বলতে পারি, ‘এটুকু ভাল কাজ করেছি, এটারই সূত্র ধরে আমার প্রতি দয়া কর হে দয়াময়!’ ফেসবুক মুভির শেষে একখানা লাইক চিহ্ন দিয়ে সমাপ্ত করা হয়েছে। আমার আসল মুভির শেষে লাইক মিলবে কি মিলবেনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
বিষয়: বিবিধ
২৪৯০ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম মন্তব্যকারী হবার জন্য ধন্যবাদ
কষ্ট করে পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
এত সহজ উদাহরন থাকলেও তারা বিশ্বাস করবেনা কারন তাদের অন্তর শিলমোহর কৃত হয়ে গেছে। যারা নিজেদের মুক্তমনা দাবি করে তারাই দেখা যায় অন্তরকে সবচেয়ে বেশি ঢেকে রেখেছে।
তবে এই মূহূর্তে নিজেকে নিয়েই চিন্তিত, ওদের ভাল ওরাই বোঝে ভাল।
(সুরা আম্বিয়া-৯৪)
হে আল্লাহ্! তোমার নিকট রক্ষিত আমাদের চুড়ান্ত মুভিতে যেন লাইক প্রাপ্ত হই, সে আদলে চলার তাওফিক দান কর আমাদেরকে।
আমরা সবাই বিভিন্নভাবে এটাতে আক্রান্ত
এটাকে ছেড়ে
আমরা এক পা সামনে গেলে দশ পা পিছিয়ে যাই। তারপরও মহান প্রভুর অশেষ রাহমাতের আশায় আছি। তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর দয়ার চাদরে ঢেকে আমাদের সব কিছুকে ক্ষমা করে দিয়ে সর্বশেষ লাইক দিয়ে আমাদের পার করে দেবেন।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য
আল কাইয়্যিসু মান দানা নাফসাহু ওয়া আ'মিলা লিমা বা'দাল মাউত,
বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে আত্মপর্যালোচনা করে এবং নফসের খাহেশাতকে দমন করে রাখে,
ওয়াল আযিযু মান আতবাআ নাফসাহু হাওয়াহা, ওয়া তামান্না আলাল্লাহ ।
আর দূর্বল অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে তার নফসের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে আশা করে বসে থাকে ।
( তিরমিযি, রিয়াদুস সালেহীনে হাদীস বন্মর ৬৬)
....."ওয়া নুখরিজু লাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি কিতাবাই ইয়ালাকাহু মানশুরা "-
-কিয়ামতের দিনের প্রত্যেকের আমলনামা তার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ।
(সুরা ১৭ বনি ইসরাঈল, আয়াত ১৩)
(তারপর বলা হবে), "ইকরা কিতাবাকা, কাফা বিনাফসিকাল ইয়াওমা আলাইলকা হাসিবা"
--তুমি তোমার আমলনামা পড়ে দেখ । আজ তোমার হিসাব নেবার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট ।
(সুরা ১৭ বনি ইসরাঈল, আয়াত ১৪)
ওয়া ওদিয়াল কিতাবু, ফাতারাল মুজরিমিনা মুশফিকিনা মিম্মা ফিহি ওয়া ইয়াকুলুনা ইয়া-ওয়ালাইতানা মালি হাযাল কিতাবি লাা ইউগাদিরু ছগিরাতান ওলা কাবিরাতান ইল্লাাা আহছাহা......
যখন আমলনামা তাদের সামনে রাখা হবে, তখন তুমি দেখবে, ওতে যা আছে তা দেখে অপরাধীরা অত্যন্ত আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং বলবে, হায় কী দূর্ভাগ্য আমাদের ! এ কেমন আমলনামা ! ছোট-বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি, বরং তা সবকিছুই হিসাব করে রেখেছে ।
(সুরা ১৮ কাহাফ, আয়াত নম্বর ৪৯)
ফেসবুকে অতীত দিনের ছবি দেখে যারা এ ভাবনায় পড়ে যায়, আল্লাহ তাদের জান্নাত নসীব করুন ।
কারণ আমি এই দলের অন্তর্ভুক্ত 'আর দূর্বল অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে তার নফসের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে আশা করে বসে থাকে ।'
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান, আপু এমনি করে তোমার হাত থেকে মূল্যবান সব মণিমুক্তো ঝরতে থাকুক অনাদি কাল পর্যন্ত, আর আমরা গুনাহগারদের পথ দেখাতে থাকুক, যে পথে চলে গেছেন আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষগুলো....
http://www.youtube.com/watch?v=CDmVF_ku7vE&feature=share
কখনও কি ভুলিতে পারিবো গভীর রাতে মায়ের জন্য খাবার কিনে নিয়ে এসে মাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাবার দিলাম তিনি পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়ার পর এ অধমের জন্য যে দোয়াটা করেছিলেন? না কখনও ভুলার নয়।
আসলেই চোখের পলকে সময় চলে যাচ্ছে।
প্রতিটি মুহুর্তগুলো রেকর্ড হচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মিনিট প্রতিটা ঘন্টা, দিন, মাস, বছরের হিসাব সহ আমার রব যখন আমালনামাটা আমাকে দিবেন তখন আমার কি হবে? ও আমার আল্লাহ লজ্জিত করোনা ও আমার রব লজ্জিত করোনা সেইদিন। এ অধমদিগকে তাকাওয়া দান করো ও আল্লাহ।
সময় চলে যাচ্ছে জীবনের আয়ু তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক অনেক ফেসবুক ব্যাবহারকারি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু তাদের প্রতিটা অক্ষর প্রতিটা লাইক প্রতিটা কমেন্ট ফেসবুকের ডায়রিতে জমা আছে। আর মহান রবের ডায়রিতো এমন যেখানে বিন্দু পরিমান কিছু বাকি থাকিবেনা। ফেসবুকের ডিলিট করা কমেন্টগুলোও সেই আমলনামায় থাকবে। আল্লাহ ক্ষমা করে দিও লজ্জিত করোনা।
সমস্ত মানুষই চলে যাবে এ দুনিয়া থেকে কেউ দুনিয়ার জন্য থাকতে পারবেনা দুনিয়াও কারো জন্য বাকি থাকবেনা।
সবার জীবনই আমালনামার ফ্রেমে বন্ধি থাকবে।
আর আমাদের গন্তব্যতো সেই একটাই...........
মন্তব্য করতে লগইন করুন