প্রেম যেন এমনই হয়-৩০
লিখেছেন লিখেছেন প্রগতিশীল ০৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪২:৩৩ রাত
বিকেলে ধুমধাম করে লিটন সাহেবের পুরো পরিবার কনের বাড়ির দিকে রওয়ানা হল। বিয়ের উৎসবটা বাঙালি পরিবারের অনন্যতা প্রকাশ করে। অনবদ্য ও অনাবিল আনন্দের খোরাকের যোগান দেয়। রতনের সঞ্চিতা লাভ এমনই এক মধুর প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হচ্ছে।
প্রাপ্তির মাঝেও একটা অপ্রাপ্তি আছে হালকা বেদনাবোধ আছে সে পর্বটা এই পর্বটায় কিছুটা হলেও ভাবিয়ে তুলেছে রতনকে। যে আপনজনেরা তাদের জন্য সবকিছু উজাড় করে দেয়, তাদেরকেই ছেড়ে যেতে হবে তাদের। জুড়িবদ্ধ হয়েই পারি জমাতে হবে প্রবাসে। এজন্য বিষন্ন ছিল সে। তবে বিষয়টা নজর এড়ায়নি লিটন সাহেব আর সানজিদার। অভিভাবকদের ভাবনার গহীনে পড়ে থাকতে নেই। ভাবনাগুলোর বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিষন্ন হলেও থেমে যাওয়ার উপায় তাদের থাকেনা।
কাজের ফাঁকেই লিটন সাহেব ডাক দিলেন লিটু মামাকে। মামা এদিকে এসো। মামা এলেন কিছু শুনলেন আর চলেও গেলেন বরের কাছে।
আসলে কনের বাড়িতে আসার তাদের বেশ কিছুটা সময় কেটে গেছে। বর তার আসনে বসেছে। আর কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। রতন মোবাইল নাড়াচাড়া করছিল।
তার লিটু নানু গিয়ে সোজা মোবাইলটি ছিনিয়ে নিল। নিয়ে নিজেই একপাশে বসে টিপতে শুরু করলেন। রতন ভীষণ বিপদে পড়ে গেল।
এসময় রিদিতা এল রতনের কাছে। রতন তাকে কাছে ডেকে কানে কানে কিছু বলে লিটু নানুর দিকে ইঙ্গিত করলো।
রিদিতা জিহ্বায় কাঁমড় দিয়ে লিটু নানুর দিকে ছুটলো। লিটু সাহেব ততক্ষণে মনযোগ দিয়ে রতনের মোবাইল টিপছেন। এদিকে কাজী সাহেব এসে গেছেন।
রিদিতা গিয়ে তাকে ফিসফিসিয়ে বললো, নানু মোবাইলটা দিয়ে দাও।
লিটু নানু তাকে কাছে ডেকে দেখালো, ঘটনায় রিদিতা রীতিমত লজ্জা পেল। তারপর রাগত কণ্ঠে বললো। বুড়োমি রাখতো নানু মোবাইল দাও।
বড়রা বুড়ো হলে কি পরিমাণ রসিকতা আর বাঁদরামি করতে পারে তার কোন ধারণা আধুনিকা রিদিতার ছিলনা।
এরপর লিটু সাহেব রীতিমত চিৎকার করে বলতে শুরু করলেন, এ বিয়ে বন্ধ কর। এই মেয়ে বিয়ের আগে পরপুরুষের সঙ্গে আপত্তিকর কথা বলে...
তার এই বুড়োমির শব্দ দূষণে সবাই তার কাছে জড়ো হতে শুরু করেছে।
রিদিতা একপাশে সরে গিয়ে হাসতে শুরু করে দিল মিটমিটিয়ে। রতনতো রুমাল আরো জোরে মুখে চেপে হাসতে শুরু করলো।
ততক্ষণে বরের মূল্য কমে গেছে। সবাই লিটু সাহেবকে ঘিরে ধরেছে।
ছুটে এলো রতনের বাবা-মা; লিটন-সানজিদা ও সঞ্চিতার বাবা-মা; জাফর-সাদিয়া দম্পতিরা।
পরিস্থিতির গাঢ়ত্ব দেখে রিদিতা তড়িঘড়ি বাবাকে গিয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে বললো।
লিটন সাহেবও হাসতে শুরু করলেন।
তবে জাফর-সাদিয়া দম্পতি একমাত্র মেয়ের বিয়েতে এমন বিঘ্নতায় উদ্বিগ্ন।
আর বিষয়টা কানাকানি ফিসফিসানিতে সীমাবদ্ধ থাকলো না।
লিটন সাহেব লিটু মামাকে বললেন, ‘রাখতো মামা কি শুরু করলে।’
লিটু মামা এবার উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে মোবাইল দেখিয়ে বললেন, ‘হাজিরান মজলিশ এ দেখুন কি কাণ্ড যুগ যে কোন দিকে গেছে তা আর কে বলবে। এই যে বর কনে কবুল পড়ার আগেও ফেসবুকে চ্যাট করছে। এখানে যে বরের স্থলে আমি ঢুকে পড়েছি তার দিকে তার কোন খেয়ালই নেই।’
উপস্থিত সবাই উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। বর-কনের বাবা-মারাও বিয়ের মজলিশে উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করেছে।
এদিকে সঞ্চিতাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো তার দাদী।
এই আসরেই এসে বললেন, তবে বরের নানা বোধহয় খেয়াল করেননি শেষকালে ফেসবুকের ওপ্রান্তে আমিই ছিলাম।
লিটু সাহেবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। উপস্থিত সবার হাসির মাত্রা আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল।
মান বাঁচাতে লিটন সাহেব কাজীর দ্বারস্থ হলেন।
জোরেসোরে বললেন, কাজীসাব একটা বিয়ে পড়াতে এত সময় নিয়েননা ভাই। বলেই এই জনসমাগমস্থল ত্যাগ করলেন।
অবরোধ চললেও চলবে...(কথা দিয়েছিলাম)
বিষয়: সাহিত্য
৯৫০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন