হায়রে স্বদেশ! নববর্ষের দিনটিতে সম্রাট আকবরের ইসলাম বিদ্বেষী অপকর্মের খতিয়ানগুলো একবার দেখে নাও----
লিখেছেন লিখেছেন হককথা ১৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:০৯:৫০ সন্ধ্যা
জাতি মহাসমারোহে বাংলা নববর্ষ পালন করছে। ঢাকার রাজপথে ঢাক ঢোল পিটিয়ে, হনুমান, গণেশের মুর্তি কাঁধে বয়ে, কপালে টিপ, হাতে-পায়ে আলতা মেখে, ধুতি পরে নেচে গেয়ে মহাসমারোহেই উদযাপিত হচ্ছে কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী সম্রাট আকবরের চেতনাদ্ভূত ‘বাংলা নববর্ষ‘। নববর্ষের উদযাপনের নামে দেশে যে অনৈসলামিক সংষ্কৃতি নির্ভর প্রথাগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রাতষ্ঠিানিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে 'বাংলাদেশী সংস্কৃতি'র অবিচ্ছেদ্দ অংশ হয়ে উঠল, তা প্রকৃতার্থেই সচেতন মুসলমানদের জন্য এক মহশংকার বিষয়ই বটে।
নববর্ষের দিনটিতে সম্রাট আকবরের ইসলাম বিদ্বেষী মহা অপকর্মের খতিয়ানগুলো একবার দয়া করে দেখুন;
১. ইসলামের প্রথম ও মৌলিক কালেমা তাইয়্যেবা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ‘র পরিবর্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলিফাতুল্লাহ‘ মর্মে এক অদ্ভূত কলেমা প্রবর্তন।
২. মদ প্রস্তুত করা, সংরক্ষণ ও ব্যবসা করা, পান করা ও করানো সব বৈধ বলে ঘোষণা করার পাশাপাশি ও সুদ লেন-দেনকেও বৈধতা প্রদান।
৩. জুয়া খেলাকে কেবল বৈধতাই দেন নি তিনি, বরং রাজ খরচে জুয়া খেলার জন্য বিশেষ অট্টালিকা তৈরী করে দেবার পাশাপাশি জুয়া খেলার জন্য জুয়াড়ীদের রাজকোষ থেকে ঋণ সরবরাহ হরা হতো।
৪. মুসলমান পুরুষদের দাঁড়ি রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি। এ ধারা উন্মোচনের জন্য আকবারের মা হামিদা বানু‘র মৃত্যুর দিনে তিনি নিজে শোক পালনার্থে নিজ দাঁড়ি মুন্ডন করে ফেলেন। তার দেখাদেখি রাজদরবারের সকল আমীর ওমরাহ দাঁড়ি মুন্ডন করে। আর আকবরও ফরমান জারি করে মুসলমান পুরুষদের দাঁড়ি রাখা নিষিদ্ধ করেন।
৫. ফরজ গোছল প্রথা নিষিদ্ধ করেন তিনি। স্ত্রী গমণের পরে নয়, বরং পূর্বে গোছলের নির্দেশ দেন তিনি।
৬. ইসলামে নিষিদ্ধ মুত‘আ বিয়ে মহাসমারোহে চালু করেন তিনি।
৭. পর্দাপ্রথা নিষিদ্ধ করেন তিনি। এর ফলে মুসলিম মহিলাদের সামনে এক অবর্ণনীয় সমস্যার দুয়ার খুলে যায়।
৮. খাতনা বা মুসলমানি নিষিদ্ধ করেন তিনি। অবশ্য দয়াপরবশ হয়ে তিনি একটু সবিধা দিয়েছিলেন এই বলে যে; কেউ যদি খাতনা করাতে চায়, তবে তা বারো বছরের উপরে বয়স হলে তারপরই কেবল সে করতে পারবে, যদি সে তেমনটা ইচ্ছা করে।
৯. ভারতবর্ষে মুসলমান মরদেহ কবরস্থ করার সময় মৃতের পা মক্কামুখী যেন না হয়, সে ব্যপারে মুসলমানরা বিশেষ যত্নবান হয়ে থাকেন। মহামতি মুসলমানদের এই আবেগকে আঘাত করতে নির্দেশ জারি করলেন; মৃতকে এমনভাবে দাফন করতে হবে, যেন, তার পা কেবলার দিকে, অর্থা’ মক্কার দিকে থাকে।
১০. পুরুষদের জন্য রেশমী পোষাক পরিধান ও সোনা ব্যববহার ইসলামে নিষিদ্ধ, মহামতি তা রদ করে উভয় বস্তু ব্যবহার করাটা পুরুষদের জন্য বৈধ বলে ঘোষণা করলেন।
১১. মহামতি তার রাজ্য হতে হজ্জে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
১২. ইসলাম ধর্মে কুকুর ও শুকর; দুটোই ঘৃণিত ও অপবিত্র হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচিত। মহামতি এই দুটোকেই ‘আল্লাহর কুদরত‘ বলে ঘোষণা করে প্রাণী দুটোকে সম্মানার্হ ঘোষণা করেছিলেন।
১৩. মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান ইসলামি মৌলিক আক্বিদা। মহামতি তার নতুন ধর্ম বিশ্বাসে এ বিশ্বাসটাকে অমুলক ঘোষণা করলেন।
১৪. মুসলমানদের সোস্যাল গ্রিটিংস, পারষ্পরিক কল্যাণমুলক দোওয়া ‘আসসালামু আলাইকুম‘ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পরস্পর দেখা স্বাক্ষাতে ‘আল্লাহু আকবর‘ অর্থ্যা ‘আকবরই আল্লাহ‘ এ ঘোষণাটি দেবার নির্দেশ জারি করলেন। কিন্তু এই ‘আল্লাহ‘ শব্দটি নিয়েও হিন্দু সভাষদরা আপত্তি উত্থাপন করলে আকবর ‘আল্লাহু আকবর‘ এর পরিবর্তে ‘আদাব‘ শব্দটি চালুর নির্শে দেন।
১৫. মহামতির দ্বীন-ই-ইলাহি‘র বিধানে গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও উট জবেহ করা নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি ঈদুল আজহাতেও এসব জন্তু কোরবানী করা যেতো না।
১৬. মহামতি তার আমলে মুসলমানদের মসজিদগুলোকে গুদামে রুপান্তর করেছিলেন। কোনো কোনো মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানো হয়েছিল তার দরাবরের হিন্দু আমির ওমরাহদের বদান্যতায়। আকবরের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার তো পাওয়াই যায় নি, বরং তিনি উল্টো তার সেইসব হিন্দু কর্মচারীদের পক্ষালম্বন করে মসজিদের স্থলে নব্য প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলোকে রাজকীয় পৃষ্টপোষকতা প্রদান করেন।
১৭. মহামতি কুরআন ও হাদিসের চর্চাকে নিষিদ্ধ করে মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেবার যে বিধান ছিল, তা বাতিল করেন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন।
১৮. আকবর নিজেকে দেবতা মনে করতেন। তিনি ভাবতেন, তিনি দেবতা হয়েও মানুষের আকারে পৃথিবীতে এসেছেন। এ জন্য তিনি তার প্রজাবর্গের জন্য ‘ঝরোকা দর্শন‘ নামে দেব দর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন। ব্যবস্থাটি ছিল এরকম; প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সম্রাট রাজদরবারে হাজির হবেন, আর তার সভাষদরা দরবারে উপস্থিত থেকে তাকে দর্শন করে সৌভাগ্যের অধিকারী হবে! তিনি ইশ্বরের ‘ছায়া‘। তাকে না মানলে দোজখে যেতে হবে; এমন শাহী ফরমানে তার সভাষদদের সাক্ষর করতে বাধ্য করেন। মোট ১৭ জন মুসলমান! ও এক জন হিন্দু উক্ত ফরমানে স্বাক্ষর করেছিল)।
১৯. কোনো মুসলমান কখনো এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবে না। সেজদাহ করবে না। এটাই ইসলামের অক্যাট্য নির্দেশ। এ নির্দেশকে কটাক্ষ করতেই আকবর তার দরবারে সেজদাহ প্রথা চালু করেছিলেন।
২০. আকবর তার রাজ্যে কুরআনকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।
২১. আকবরের সময়ই ভারতে পতিতালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং পতিতাদের আয়ের উপরে কর ধার্য হয়। নিজেও হাজার হাজার নারীকে তার রক্ষিতা হিসেবে বেছে নেন।
২২. আকবর রুদ্রাক্ষের মালা (এ ধরনের পৈতা) গলায় দিয়ে, চন্দন মেখে সন্নাসীর পোষাক পরতেন মাঝে মাঝে। ঐ পোষাকে দরবারে এসে আগুনের সামনে পারসিকদের মত অগ্নী পুজো করতেন।
২৩. এই তথাকথিত মহামতিই পারস্যের পথভ্রষ্ট ‘মোলহেদ‘ ফকির গোষ্ঠীকে ভারতবর্ষে টেনে আনেন। মারেফাতি ত্বরিকার নামের আড়ালে আজও এইসব ফকিরদের যত্রতত্রই দেখা যায়।
২৪. প্রজাদের মধ্যে থেকে যারা হিন্দু দেব-দেবীর ন্যায় তাকে পুজো করতে ইচ্ছুক, তিনি তাদের অনুমতি দেন তাকে পুজা করতে। 'জগদীশ্বর' উপাধী দিয়ে বহু মুর্খ হিন্দু নরনারী তার পুজো শুরু করে।
২৫. এই ভন্ড মহামতি হিজরী সালের পরিবর্তে হিন্দু সভাসদদের অনুরোধে পৃথক একটি সাল প্রবর্তন করেন। এই সালকে ‘ইলাহি‘ সাল বলা হতো।
(সুত্র: তথ্যগুলো পেতে প্রফেসর গোলাম আহমেদ মুর্তজা'র 'চেপে রাখা ইতিহাস' বইটির সহায়তা নেয়া হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই)
এত কিছু দেখে দেখে দারুণ অন্তর্দাহে ভুগছিলেন আকবরের খুব কাছের একজন মানুষ; ফতেউল্লাহ খান সিরাজী। তিনিই আকবরকে পরামর্শ দিয়ে ১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে আকবরের সিংহাসনারোহনের দিনকে কেন্দ্র করে নতুন সাল গণনার প্রস্তাব দেন। আর সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমলে ১৬০০ খৃষ্টাব্দের পরে এসে সুবা বাংলার সুবাদার ইসলাম খান কৃষকের কাছ থেকে খাজনা আদায় সুবিধাজনক হবে, এমন এক যুক্তির ভিত্তিতেই ১লা বৈশাখ থেকে শুরু করেছিলেন খাজনা আদায়ে সুবিধার্থে নতুন বছর। এভাবেই তিনি প্রবর্তন করিয়েছিলেন ‘বাংলা সাল‘।
হিজরী সাল থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে রাখতেই আকবরের মাধ্যমে এতদ্বাঞ্চলে পৃথক সাল প্রবর্তনের শুরু। আর সে ধারবাহিকতার একটি পর্যায়েই বাংলা বর্ষের উদ্ভব।
আশ্চর্যের বিষয়, বর্ষবরণের নামে মুসলমান প্রধান বাংলাদেশ আকবরের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করে চলেছে। হিজরী সালের খবরও কেউ রাখে না, যদিও বাংলা নববর্ষে এরাই গণেশকে কাঁধে তুলে নাচানাচি করে হাজার টাকায় পান্তা ইলিশ খেয়ে! আদিখ্যেতা আর কাকে বলে?
অথচ ফতেউল্লাহ সিরাজী কিংবা সুবাদার ইসলাম খানের নামটিও কেউ একবার উচ্চারণ করে না! করে না কারণ, ফতেউল্লাহ সিরাজী বা ইসলাম খানরা যে চেতনায় ইলাহি সাল ঠেকিয়ে বাংলা সালটা প্রচলন করেছিলেন বা করিয়েছিলেন, সেই চেতনার বিপরিতে আকবর যে চেতনা বশবর্তি হয়ে ইসলাম নির্মূলে উপরের পচিশটি প্রথা চালু করেছিলেন, সেই চেতনাটাই প্রবল এবং প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। হায়রে স্বদেশ! হায়রে ইতিহাস বিস্মৃত আত্বভোলা জাতি!!
বিষয়: বিবিধ
১৭২১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন