বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্হান নিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দের ও জনমনের ভাবনা।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ২৩ এপ্রিল, ২০১৩, ০৩:০০:৫৫ দুপুর
আমাদের বর্তমান সময়ের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্হান বিরাজ করছে তা গনমনকে ধূমায়িত করছে ও একটা অসহনীয় পরিস্থিতিতে আবদ্ধ করছে।চারিদিকে আন্দোলন আর আন্দোলন।এর শেষ কোথায় ও কি হবে আমাদের আগামি ভবিষ্যৎ তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা।দেশে যাকেই জিজ্গেস করুন সে-ই বলে আমরা দেশের ভাল চাই।যদি ভালই চাই তাহলে একে অন্যকে কেন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিছ্ছি।আসলে আমরা জন গন যেটা বুঝি সেটা হলো , দেশ মাতৃকার উন্নয়নের জন্য কারো স্বপ্ন নেই।স্বপ্নটা হলো সংসদে যাওয়া ও টাকার কুমির বনে যাওয়া।গত দুই তিন দশক থেকে দেখেছি টাকার কুমির হওয়ার জন্য সংসদেও যেতে হয় না।সাংসদদের সাহচর্যে থাকলে তা হতে সময় লাগেনা।যদি পরিবারের সদস্য হয় তাহলে তো সহজে হয়ে যায়।কোন কোম্পানি রেজিষ্ট্রেশন করে তার মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে,লোকজনকে চাকুরি দিয়ে,কোর্টে আসামীর পক্ষে দাঁড়িয়ে,অযথা বিদেশ ভ্রমন করে,ঘুষ ও অন্যান্য দূর্নীতিকে আশ্রয় করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়।আর এই কাজগুলোতে পার্টির লোকজনই প্রাধান্য পায় কারন বিরোধীদলে থাকাকালে তারা যেহেতু দলকে সচল রাখে সেই হেতু তাদের এটা প্রাপ্য বলে তারা মনে করে।আর একটি কারন হলো যারা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করেন।এখানে খুব কম সাংসদই আছেন যারা জন গনের কল্যানে কাজ করার জন্য এই টাকা খরচ করে আসেন।আর যখনই নির্বাচিত হয়ে আসেন তখন প্রথম পদক্ষেপই হলো নিজের খরচ করা টাকাটা উঠানো।তার পর দলের কর্মিদের বাঁচিয়ে রাখা।উন্নয়নের জন্য যে বরাদ্ধ আসে তার কত অংশ প্রকৃত উন্নয়নে কাজে লাগে তা পাঠকগন অনুমান করতে পারেন।একটা উদাহরন দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে।আমরা উন্নতদেশে নিজের চোখে দেখেছি যখন কোন রাস্তা মেরামত করা হয় অন্তত ৫ বছরের মধ্যে তাতে পুননির্মান করতে হয় না।কারন হলো তারা যে মেটেরিয়াল প্রয়োগ করে তাতে কোন খাদ থাকে না।আমাদের দেশে কোন রা্স্তা মেরামত হলে পরের বছর তার ৪০ বা ৫০ পার্সেন্ট মাল মশলা রাস্তায় থাকেনা।এটা আমার নিজের চোখে দেখা এবং আমার পরিচিতজনরা যারা কন্ট্রাক্ট নেন তারা বলেন আমাদের কাছে বকরা দেয়ার পর যে টাকা আসে তা যদি উন্নয়নে দিয়ে দেই তাহলে আমাদের খালি হাতে ঘরে ফিরতে হবে।তাহলে এই যে সাইকল তৈরি হয়েছে তা দূষিত করছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।আমরা মানুষের মুক্তির যে কথাগুলো শুনি তা সমাজে প্রতিফলিত নয় সামাজিক এই ব্যাধির কারনে।
এসব প্রশ্ন এখন শুধু সাধারণ মানুষের নয়, এখন মূলধারার রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের মধ্যে জেগেছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে কথিত শাহবাগের আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই ইসলাম ও মহানবী (সা.)’র বিরুদ্ধে নাস্তিক ব্লগারদের অপপ্রচার থেকে সৃষ্ট ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম সমাজের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিরসনে সরকারের দমননীতি দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। একদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দায় থেকে কলঙ্কমুক্তির ঘোষণা, অন্যদিকে ইসলাম ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র নামে ঘৃণ্য কুৎসা রটনা করে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম সমাজের হৃদয়ে আঘাত প্রদানকারী নাস্তিকদের বিচারের দাবিকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। এমনকি জামায়াত-শিবিরও যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে তাদের ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানদ বজায় রেখে বিচারের দাবি জানাচ্ছে। আর নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও আলেম সমাজ বিশেষ করে আল্লামা সফির নেতৃত্বে যে আন্দোলন অব্যাহত আছে তার শেষ কোথায় তা আমাদের অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে।
সমস্যা হচ্ছে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিভিন্ন পক্ষ যার যার অবস্থান থেকে জনগণের চেতনাকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়ার পেছনে অভিযুক্ত পক্ষের চেয়ে সরকার পক্ষের কৌঁসুলিদের অদক্ষতাকেই বেশি দায়ী করা হয়। আবার শাহবাগের আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ধর্মদ্রোহিতার ইস্যুটিকে যথাযথ গুরুত্ব ও পক্ষপাতহীনভাবে হ্যান্ডেল করতে ব্যর্থতার দায়ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উপরই বর্তায়। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ধারণা, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান সংঘাত-সহিংসতা ও কাদা ছোঁড়াছুড়ি ও প্রচারণার পেছনে যে দু'টি ইস্যু সক্রিয় রয়েছে তা মূলত এই মুহূর্তে আমাদের জাতীয় রাজনীতির প্রধান ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গণদাবিকে আড়াল করার প্রয়াসমাত্র। সরকার ও বিরোধীদলের অনমনীয় অবস্থানের কারণে পরোক্ষভাবে এই ইস্যুটিকে ঘিরে দেশে যে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে তাতে দেশের গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এক চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। কেউই এখন দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদি হতে পারছেন না। দেশের সচেতন জনগণ এখন চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। একটি উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে শুধুমাত্র ক্ষমতার পালাবদলের প্রশ্নে এভাবে অস্থির উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখার মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে আমাদের শাসকশ্রেণীর উদাসিনতা লক্ষ্যনীয়।শাসকশ্রেনীকে হতে হয় উদার ও জন গনের বন্ধু।তারা তা না হয়ে যদি জন গনের উপর চড়াও হয় তাতে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার তারই প্রমান করেন।এর কারন হিসেবে বলা যায় অপরিপক্ক রাজনীতিবিদদের হাতে দা্যিত্ব হস্তান্তর।যারা সরকারকে সঠিক বুদ্ধি পরামর্শ দিতে ব্যার্থ। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ একমত, তবে অধিকাংশের দাবি বিচার হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে, সচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে। কিন্তু একজন বিচারকের স্কাইপ সংলাপের তথ্য প্রকাশ এবং বিচারের মাঝখানে আইন সংশোধনের মধ্যদিয়ে তাদের দাবির স্বপক্ষে ইতোমধ্যে অনেক যুক্তিও তৈরি হয়েছে। একদিকে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা অভিযুক্ত সকলের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে অভিযুক্তদের সকলকে মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করছে দেশের একটি রাজনৈতিক দল। এ দু'টি দাবিই আইনের শাসনের পরিপন্থী। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেমন একটি জনাকাংখ্যা তেমনি এ বিচারকে রাজনীতি নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারার মধ্য দিয়েই কেবল ইতিহাসের কলঙ্ক মোচন সম্ভব। রাজনীতির প্রতিহিংসার জন্য পক্ষপাতদুষ্ট বিচারের কারণে কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যদি সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত হন, তাহলে স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধের ইমিউনিটির কারণে জাতি যে কলঙ্ক বহন করছিল সে রকম কলঙ্কময় অধ্যায়ও জাতির ইতিহাসে নতুন করে তৈরি হতে পারে।
একবিংশ শতকে আমাদের নতুন প্রজন্ম একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চায়। তাদের এই প্রত্যাশা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার মাত্র। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের সরকারের এবং প্রতিটি সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির। এ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কোন সুযোগ নেই। এ মুহূর্তে সরকার এবং বিরোধীদলের মধ্যে মূল ইস্যু হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি মানা না মানার প্রশ্ন। গত কিছুদিনে দেশের রাজনীতি সহিংসতা এবং শতাধিক মানুষ নিহত, হাজার হাজার মানুষ আহত, গ্রেফতার এবং পুলিশি নির্যাতনের পেছনে বিরোধী জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি সামনে ছিল না। এই মুহূর্তে সরকার যখন বিরোধীদল দমনে হার্ডলাইনে তখন ১৮ দলীয় জোটও সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে মাঠে নেমেছে। সাম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বগুড়ায় সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে দেয়া বক্তৃতায় সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন, ঠিক তখন ঢাকায় পুলিশের দায়ের করা রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির ১৪৮ জন নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে যদিও দলের তিনজন নেতাকে মুক্তি দিয়েছে। গত কিছু দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিক নজিরবিহীন নেতিবাচক উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের গুলিতে শত শত মানুষ হতাহত হওয়ার ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আগেই ১১ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-সমাবেশে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের অফিসের দরজা ভেঙে দেড়শতাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতে আনা-নেয়ার পথে এসব রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে দাগী অপরাধীদের মতো ডান্বেডাড়ি পরানো হয়। ৮ দিনের রিমান্ড দেয়া হয় এবং রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এগুলো নজিরবিহীন ঘটনা।একজন মানুষ হিসেবে মানুষকে মুল্যায়িত করতে হবে।আজকে যাদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে আগামিতে যদি তারা ক্ষমতায় আসে সে কজাটি তারা অবশ্যই করবে।তাহলে আমাদের রাজনৈতিক যে স্হিতিশীলতা তা আর থাকছে কোথায়? স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও যখন আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তখন আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে গর্ব করার বাস্তবে সুযোগ কতটা আছে, তাও ভেবে দেখা দরকার। ’৭১-এ এদেশের মানুষ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তেমনি এর দুই দশকের মধ্যে জাতি আবারো গণতন্ত্রের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ’৯০-এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জয়ী হওয়ার পর তিনটি প্রধান রাজনৈতিক জোটের সম্মিলিত রূপরেখার আওতায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে এক ধরনের জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের সচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষভাবে প্রশংসিত হওয়ার পরও তৎকালীন বিএনপি সরকার তাদের অধীনে নির্বাচন করে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার স্বপ দেখতে থাকেন। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় নির্বাচনের দাবিতে প্রধান বিরোধীদল আওয়ামী লীগ লাগাতার হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির পাশাপাশি সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেছিল। বিরোধীদলের সংসদবর্জন ও পদত্যাগের পর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে বিএনপি সরকারকে একটি একতরফা সংসদ নির্বাচন করতে হয়েছিল এবং স্বল্পস্থায়ী সে সংসদেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সে অনুসারে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতাসীন হয়। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার মধ্যদিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ধারণা জন্মায় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোন দলের পুনঃনির্বাচিত হওয়া অসম্ভব। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজপথে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দু'বছরের সেনাসমর্থিত সরকারের বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকেও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা নেয়নি।
এতকিছুর পরও বর্তমান মহাজোট সরকার আদালতের একটি রায়ের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন সুযোগ নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই নির্বাচন হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে গণতন্ত্র যেভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে, আইনের শাসনে, আদালতে, পুলিশ ও গণপ্রশাসনে প্রতিফলিত ও বিকশিত হয়েছে বাংলাদেশে তা হয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমনকি বর্তমান সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছে। প্রতিষ্ঠিত ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বাতিল করে বর্তমান আইনে এটিকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে নিজেদের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের অনড় অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে এখন চরম অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। যেখানে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে বিচারের মধ্যপথে ট্রাইবুনালের আইন সংশোধন করেছেন আমাদের জাতীয় সংসদ, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ইস্যুকে একতরফাভাবে বাতিল করে দেশকে একটি জটিল সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া চেষ্টা যে কোন সচেতন মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাখ্যান করবে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের মতো একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল এই বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, দেশ ও জনগণের জন্যই সংবিধান, এই বাস্তবতার নিরিখেই উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে আরো দু'টি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মত দেয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে স্থায়ী সাংবিধানিক রূপ দেয়া যেতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও হানাহানির মূল ঘটনাগুলো সংঘটিত হচ্ছে ট্রানজিশন অব পাওয়ার বা ক্ষমতার পালাবদল ও নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে। এ কারণে দেশে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি সম্প্রতি গ্রীস এবং পাকিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডের সংবিধানে শত বছর ধরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ফেডারেল সরকারের শুরু ১৯০১ সাল থেকেই সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়েছিল যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।যে কোন জাতির উন্নয়ন অগ্রগতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার পথে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।এজন্য আমাদের ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলকে অতিদ্রুত সংলাপে বসতে হবে।সরকার ও বিরোধীদলের নেতাগনকে সংযত হয়ে সুন্দর ভাষায় কথা বলতে হবে। আর দেশ পরিচালনায় থাকায় ক্ষমতাসীনদেরকেই এই উদ্যোগ নিতে হবে।রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে আন্তরিকতার সাথে , কাউকে হার্ট করে কথা বললে সহিংসতা বাড়বে বই কমবেনা। প্রতিহিংসার সংস্কৃতি পরিহার করে আমাদের সরকার, রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজ যত তাড়াতাড়ি এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে দেশ ও জনগণের ততই মঙ্গল।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন