আজ রানা প্লাজা গণ হত্যা দিবস । রাষ্ট্র বেমালুম ভুলে যাচ্ছে , নাকি জনগনকে ভুলানোর চেষ্টা করছে ?

লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ২৪ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৫:০৪ দুপুর



২০১৩সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসে প্রান হারিয়েছিল প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক।

নিখোজ হয়েছিল প্রায় ৯০০ জন শ্রমিক।

রানা প্লাজার ঘটনার পর অ্যাকশন এইডের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে শ্রমিকদের ৫৫ ভাগ এখনো বেকার৷ তারা কোনো কাজ পাননি ।

ইতিহাসের অন্যতম মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্বজনহারাদের আহাজারি।

খুন-হত্যা-জখম করে ক্ষমতাসীনরা যখন টাকার জোরে পার পেয়ে যায়, তখন অসহায় শ্রমিকদের পাশে কে দাঁড়াবে?

রানা প্লাজা কেন ধসে পড়েছিল? সোজা উত্তর – আওয়ামীলীগের সরকারি দলের মদদপুষ্ট এক অসৎ ব্যক্তির লাগামছাড়া এবং অমানবিক অর্থলোভের কারণে৷

রানা প্লাজা ধসে আহতদের একটি অংশ এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি৷ কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে গেছেন৷ অন্তত ৫০ ভাগ এখনো গুরুতর ট্রমায় আক্রান্ত।

‘‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট রানা প্লাজা ধসের পর ৬ মাস পর বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ওপর একটি জরিপ চালায়৷ জরিপে দেখা যায়, ৯০ ভাগ শ্রমিকই প্রাথমিক ট্রমায় আক্রান্ত৷ পরে আরেকটি জরিপে দেখা যায়, কমপক্ষে ৪০ ভাগ শ্রমিক ‘গুরুতর ট্রমায়' আক্রান্ত৷''

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এতে ভবনের ভেতরে থাকা পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকসহ ১১৩৭ জন মারা যান বলে সরকারি হিসেবে জানানো হয়। আর আহত হন আড়াই হাজারের বেশি শ্রমিক।সরেজমিন তদন্তে এবং নিখোজ শ্রমিকদের স্বজনদের দাবি অনুযায়ী - নিহতদের সংখ্যা অনেক বেশি।



রাষ্ট্রীয় ব্যাংক , শেয়ার বাজার লুটপাটের ঘটনার মত রানা প্লাজার হতাহতের বিষয়টি রাষ্ট্র বেমালুম ভুলে যাচ্ছে , নাকি জনগনকে ভুলানোর চেষ্টা করছে ?

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজায় ‘ডোনার’স ট্রাস্ট ফান্ডে ক্রেতা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া প্রধানম ন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রদানের পরিমাণ প্রায় ২৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার। প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার (প্রায় ১২৭ কোটি টাকা)। এর মধ্যে অব্যবহৃত প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার (১০৮ কোটি টাকা)।

প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, যাঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাঁদের তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। পরিমাণ নির্ধারণে ও বণ্টনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া বণ্টনে দীর্ঘসূত্রতা আছে। ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনা ব্যয়-সম্পর্কিত তথ্যও প্রকাশিত হয়নি।

দেশের গার্মেন্টস খাতের ইতিহাসের সব থেকে বড় দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর একে একে ৩টি বছর পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ শ্রমিক, আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা, পুনঃকর্মসংস্থান, আর্থিক সহায়তা বা ক্ষতিপূরণ ও আইনি প্রক্রিয়া; এ ৫টি বিষয় এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এখনও ছবি নিয়ে রানা প্লাজার স্বজনরা ছবি ও পরিচয়-পত্র নিয়ে ঘুরছেন















মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মণ্ডপ গ্রামে থাকতেন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। তার বাবার নাম আবদুল খালেক। ওই এলাকার লোকজন রানার বাবাকে ‘কলু খালেক’ হিসেবে চিনতেন। তিনি একসময় ফেরি করে তেল বিক্রি করতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে তিনি সাভারে এসে ভাড়া বাসায় থেকে তেলের ব্যবসা করেন। একসময় তেলের ঘানি দেন। সেখান থেকে শুরু করেন খৈলের ব্যবসা। একপর্যায়ে সাভার নামাবাজারে তেলের মিল গড়ে তোলেন। এভাবেই সোহেল রানার পরিবারে অর্থনৈতিক উত্থান শুরু।



রানা প্লাজার মালিক যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে আওয়ামীলীগের কেউ নয় বলে সেই ২৫শে এপ্রিল সংসদে দিনই শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাবি করেছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন যারা হতাহত হয়েছে , তারা নিজের জিনিস পত্র আনতে গিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর সেদিনকার দু’টি বক্তব্যই জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বক্তব্য দু’টি ‘টক অব দ্য নেশনে’ পরিনত হয়। সেই প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করেই বংশবদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তড়িঘড়ি বিবিসি’তে নিজেই এই মর্মে এক বক্তব্য দেন যে – “দুর্ঘটনার আগে কিছু মৌলবাদী ও বিএনপির ভাড়াটে লোক সাভারের ভবনটির গেট ও বিভিন্ন স্তম্ভ ধরে ‘নাড়াচাড়া’ করেছিল। ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে এটিকেও ‘একটি কারণ’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।“ এমন একটা উল্টা-পাল্টা বক্তব্য দিয়ে তিনি জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস নেন। যে কারণে তিনি তাই ঘরে বাইরে এত সমালোচিত ও ধিকৃত হওয়ার পরও নিজের বক্তব্যটি প্রত্যাহার করেননি বা ক্ষমাও চাননি।



দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস -



[b] নিখোঁজের তালিকায় আজও অনেকেই খুঁজে ফেরেন হারানো সহকর্মীর মুখ৷




প্রতি বছর ২৪ এপ্রিল এলেই এ নিয়ে আলোচনা হয়। তারপরও আর কেউ খবর নেয় না ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের।



৪০৮ ঘণ্টা পরে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার হলেন রেশমা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেশমা উদ্ধারের কাহিনী ছিল একটি সাজানো নাটক। কিন্তু রেশমাকে নিয়ে কেন সাজানো হলো এই নাটক?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই সময়ে হেফাজতের ওপর গণহত্যা, বিরোধীদল দমন-পীড়ন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নিন্দা, উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতাসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন ইস্যু চাপা দিতেই এ নাটক সাজানো হয়।

বিনিময়ে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন দিন আনে দিন খাওয়া রেশমাকে তার হতাশাপূর্ণ জীবনের অধ্যায় শেষ করে আমেরিকা যাওয়া অথবা দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পছন্দের একটিতে ৬০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছে এবং এরই মধ্যে তাকে লোভনীয় বেতনে একটি পাঁচতারা হোটেলে চাকরি দেয়া হয়েছে।

বেজমেন্টে কোনো দোকান ছিল না : রেশমার ‘নতুন’ ড্রেস পরার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সেনা কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেখানে সে পড়েছিল সেখানে কয়েকটি কাপড় ও খাবারের দোকান ছিল। ১৭ দিন ধ্বংসস্তূপে থাকার কারণে তার গায়ের কাপড় ছিঁড়ে যাওয়ায় উদ্ধারের আগে সে ওইসব দোকানের একটি থেকে কাপড়গুলো সংগ্রহ করে রেশমা নিজেই গায়ে দেয়।’ কিন্তু রানা পল্গাজার গার্ড রবিউল, আবদুল মজিদ, সাততলার সিকিউরিটি গার্ড মীর দেব, ক্যান্টিন মালিক আলম, স্টোর শ্রমিক সরোয়ার,এবং ভবনে কাজ করা অন্য জীবিত শ্রমিকরা জানান, বেজমেন্টে কোনো দোকান ছিল না।





বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হাজার কোটি টাকা চুরির ঘটনা যেমন কয়েকমাস গোপন রাখার পর জাতি জেনে যায়। তেমনি রানা প্লাজার রেশমা কাহিনী ও এক সময় জাতি জানতে পারে।



বিয়ের ৬ মাসের মধ্যেই মা হলেন রানা প্লাজার রেশমা।

তিন বছর পার হলেও আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র না পাওয়ায় এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়নি। এ মামলায় কারাগারে রয়েছে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৬ জন। এখনও অধরা হত্যা মামলার ১২ আসামি। আর ৪১ আসামির ২৩ জনই আছে জামিনে।

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366946
২৪ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:৪৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন :
এই ভবন ধসকে বিশ্বের ইতিহাসের ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে ধরা হয়। জাতির সর্ব বৃহত্তম দুর্ঘটনাটি হলো অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংস করা। যা রানা প্লাজার চেয়ে শত হাজার গুন বেশী ক্ষতি কর। ভালো লাগলো লেখাটি ধন্যবাদ আপনাকে



366991
২৪ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১০:১৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : তিন বছরেও বিচার হয়নি। কারন যুবলিগ নেতা।
367121
২৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:১৫
কাঁচের বালি লিখেছেন : অপরাধী ঘুরছে প্রকাশ্যে এতো প্রমানাদি থাকা সত্ত্বেও পার পেয়ে যায় , কি আজব দেশ আমাদের !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File