দ্যা ইনোসেন্স অব মুসলিমস ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ।

লিখেছেন লিখেছেন প্রখ্যাপন ১৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০১:৪২:৫৮ দুপুর

অনেক অনেক বছর , শতাব্দী ধরে ক্রমাগত পাশ্চাত্য প্রাচ্যের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে । সে হামলা কলমের হোক অথবা অস্ত্রের । আর সে হামলার প্রধান লক্ষ্য যে ইসলাম ও মুসলীম একথা দিনের আলোর মত স্পষ্ট ।

সে ইসলামী জীবনব্যবস্হা , তার ইতিহাস ঐতিহ্যের ও মুসলিম জনপদের উপর কলম বা অস্ত্রের আঘাত দিয়ে খোঁচাখুঁচি না করে কখনো থাকতে পারেনা ।

ইতিহাস সচেতন মানুষ তা বুঝতে পারেন । তার হৃদয়হীনতার নজির ইতিহাসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে । আর এই বিষয়ে জন্তুর মত বিবেকবোধের বালাই নেই তার । পশুর মত যখন তখন সে হামলে পড়ে ।

সেই ইরাক আফগানিস্তানের উপর হামলার খবর এখনো পুরনো হয়ে যায়নি । সেই ক্ষত এখনো শুকিয়ে যায়নি । আমরা দেখেছি কিভাবে সে বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়ে লক্ষ কোটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার জগৎ । স্বপ্ন সাধনার জগৎকে ছিনিয়ে নিয়ে তার চারপাশে ছড়িয়ে দিয়েছিল বোমা বারুদের বিষ বাষ্প । লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষ তাদের অকাল মৃত্যুর সময় মোটেই বুঝতে পারেনি কী তাদের অপরাধ ছিল ? সে লোমহর্ষক দৃশ্যের বর্ণনা পেশ করা আমার আজকের উদ্দেশ্য নয় ।

বলছি পাশ্চাত্যের সেই প্ররোচনামূলক চলচ্চিত্র ``ইনোসেন্স অব মুসলিমস `` সম্পর্কে । কী আছে চলচ্চিত্রে ? এই ছবিতে দেখানো হয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ সাঃ নাকি ক্ষমতালোলুপ , নারীলোলুপ ,এমনকি শিশু সঙ্গ লোলুপও ।

পাশ্চাত্যের এই প্ররোচনায় ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা উন্মত্ত হয়ে উঠল । মুসলিমদের এই উন্মাদনায় পৈশাচিক আনন্দে পাশ্চাত্যও উন্মাদ হল ।

মুসলিমদের এই আন্দোলনকে ব্যঙ্গ করে এরপর সে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট মার্টিন রোশনকে নিয়ে কার্টুন আঁকালো । যথারীতি তা বিখ্যাত ব্রিটিশ সংবাদপত্রের পাতায় ছাপা হল । এতে পৈশাচিক আনন্দের হল্লা আবারো তীব্রতর হয়ে ছড়িয়ে পড়ল পাশ্চাত্যের আঙিনায় ।

কী ছিল এই কার্টুনে? দাউ দাউ করে জ্বলছে কমলারঙের আগুন । সেই আগুনের পাশে রয়েছে একটি পেট্রোল ক্যান । তাতে ছোট্ট করে লেখা , "ইনোসেন্স অব মুসলিমস" । তার সে আগুন কথা বলছে "ঘদমট ! ঘদর্ট্র ` দণধর ঠফণণঢধভ' রেমঠফণব !"

এরপরে মুসলমানরা উন্মাদনায় কিছু করে বসলে তারা হয়ে ওঠে ভয়ানক সন্ত্রাসী । মানে একজনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কষ্ট দিয়ে মারলে সে যন্ত্রণায় কাতরে উঠলে বা যন্ত্রণায় হাত-পা ছুঁড়লে সে হয়ে যায় সন্ত্রাসী । ভয়ানক সন্ত্রাসী । কারণ সে কেন এই ভয়ানক মৃত্যুকে মুখ বুঁজে স্বীকার করে নেবে না । কেন সে কাতরে উঠবে ? কেন সে হাত-পা ছুঁড়বে ?

সে অন্য প্রসঙ্গ ।

পাশ্চাত্য ও তার সহযোগী হিন্দুরা তাদের সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্পকলার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য জীবনবোধের ওপর ক্রমাগত হামলা করে চলেছে । এর প্রতিবাদে আমরা কী শুধু হৈ চৈ করব । মহরমের তাজিয়া বের করে হল্লা করব , বুক চাপড়ে "হায় হোসেন" "হায় হোসেন" বলে শোক প্রকাশ করব ? আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের নায়ক হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর এই বিষয়ে কী দিকনির্দেশনা ছিল?

তিনি ইসলামী জীবন ব্যবস্হা প্রতিষ্ঠার জন্য যখন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছিলেন তখনো এরকম সমস্যা দেখা গেছিল । প্রতিপক্ষরা অনবরত তাদের সাহিত্য সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে এরকম হামলা অব্যাহত রেখেছিল ।

হযরত মুহাম্মদ সাঃ তার অনুসারীদের সাহিত্য সংস্কৃতির মধ্যদিয়ে সে হামলাকে রুখে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন । প্রতিপক্ষের আগুনের বিরুদ্ধে তার সাথীরা আলো দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন । তিনি এ কাজকে জিহাদ বলেই মনে করতেন । এই কাজের জন্য তিনি তার সাথীদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন । পুরস্কৃত করেছেন , সম্মান সংবর্ধনা জানিয়েছেন ,তাদের জন্য জীবরাঈলের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন । এছাড়া আরো বিবিধ পণ্হায় তার সাথীদের এ কাজে উৎসাহিত করতে এগিয়ে এসেছিলেন । যা মানুষের ইতিহাসে বিরল ঘটনা ।

আজকে আমরা যখন তার রেখে যাওয়া জীবন ব্যবস্হাকে নিজেদের পারিবারিক , সামাজিক , রাষ্ট্রিয় জীবনে কায়েম করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি তখন কেন তার দিকনির্দেশনাকে অনুসরণ করে সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিষয়ে অগ্রসর হতে পারব না ?

দিনের পর দিন সাহিত্য সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা প্রশাখার মধ্যদিয়ে পাশ্চাত্য ও তার অনুসারী বন্ধুরা আমাদের হামলা করছে । দিনের পর দিন বিকৃত তথ্য পেশ করে অন্যদের আমাদের উপর হামলা করার জন্য প্ররোচিত করছে । আমাদের শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা তথা মুসলিম মানস বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে ।

অথচ আমরা প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরে একে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের কবি , সাহিত্যিক ,শিল্পিদের এগিয়ে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করছি না । আল্লাহর রাসুলের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছি না । ফলে এই বিষয়ে কেউ এগিয়ে আসে না । কেউ এগিয়ে এলেও নিরুৎসাহিত হতে হতে একসময় তাদের এই বিষয়ে পথচলা থেমে যায় ।

আমরা মহররমের শোক বিলাপ থেকে বিরত হয়ে এই বিষয়ে অগ্রসর না হলে আমাদের ওপর এই হামলা আরো তীব্রতর হবে । আর আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য , জীবন ব্যবস্হা কোনদিন বিজয়ের পতাকাকে তুলে ধরতে পারবে না ।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১২৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File