সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফর ও রামমন্দির মূলো
লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ১২ জুলাই, ২০১৪, ০৪:১৫:৫৬ বিকাল

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হবার পর শেখ হাসিনা যখন ভারত সফর করেন তখন সুষমা স্বরাজ ছিল বাজপেয়ী সরকারের তথ্যমন্ত্রী। সুষমা স্বরাজ তখন নিজে প্রটোকল ভেঙ্গে শেখ হাসিনাকে উনার বাসভবনে নিয়ে যান। এমনকি সুষমা স্বরাজ নিজে শেখ হাসিনার জন্য বাজার থেকে কেনাকেটাও করেছিলেন। তাই সুষমা স্বরাজের সাথে শেখ হাসিনার যে অনেক আগে থেকেই দহরম মহরম ছিল তা তো বুঝাই যাচ্ছে। আর আমাদের বাঙ্গালীদের ভয়টা এখানেই যে পূর্ব থেকেই শেখ হাসিনার সাথে সুষমা স্বরাজের এই দহরম মহরমের কারনে শেখ হাসিনা নিজে থেকেই তো ভারত কে করিডোর ও বাংলাদেশ কে ভারতের ২৯ তম প্রদেশ হবার জন্য যা যা করার দরকার তাই করবে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপীর সেই কথা গুলি কি আপনাদের মনে আছে ? বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভারত কে ছেড়ে দিতে হবে, বাংলাদেশ কে ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, একাত্তরের পর আসা সব বাংলাদেশীদের বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে, বাংলাদেশীদের কাথা বালিশ গুছিয়ে তৈরী থাকতে হবে এরকম কত বড় বড় কথা। আর এখন নির্লজ্জের মত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের কাছে করিডোর আর ট্রানজিট ভিক্ষা চাইতে আসছে। ছি !বিজেপী পারলে দেখিয়ে দিক লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপীর নেতাদের সেই কথাগুলি তারা বাস্তবায়ন করে। তাইলে তো আর সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশে আসতে হয় না সেই দিল্লীতে বসে থেকেই উনারা যেমন ত্রিপুরা, আসাম নিয়ন্ত্রন করছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশ কেও নিয়ন্ত্রন করবে। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। যেই রামমন্দিরের ধুয়া তুলে বিজেপী এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল বিজেপী ঠিকই জানে এখন সেই রামমন্দিরের কথা উঠালে সারা দেশে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে। আপনারা একটা জিনিস লক্ষ্য করেন নরসীমা রাও ক্ষমতায় থাকার সময় বিজেপী যে তোড়জোড় করে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গল সেই তোড়জোড় কিন্তু বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হবার পর আর বিজেপীর থাকল না। কিন্তু সমগ্র ভারত বাসী কিন্তু ভেবেছিল বিজেপী ২০০১ সালেই বাবরী মসজিদের জায়গায় রামমন্দির বানাবে। ঠিক তেমনি এইবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপীর সে কত কথা রাম লক্ষন আর সীতা কে নিয়ে কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে বিজেপী আবার ২য় বারের মতন বনবাসী রাম লক্ষন আর সীতাকে ভুলে গেল। আফসোস আমাদের ধর্মপ্রাণ হিন্দু ভাইবোনদের জন্য। বিজেপী বারবার এই রাম মন্দিরের মুলা ছুলিয়ে আমাদের ভারতীয় ধর্মপ্রাণ হিন্দু ভাইবোনদের ভোট নিয়ে দিল্লীতে যায় কিন্তু মাগার ক্ষমতায় বসেই তারা কংগ্রেসের মত সেক্যুলার দল হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। এই রামমন্দির করে করেই বিজেপী ২ বার ক্ষমতায় আসল। মাগার রামমন্দিরের কাজ আর শুরু হয় না। ক্ষমতায় জেতে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধ আর bjp রাম মন্দির ইস্যু ব্যবহার করে। জিন্নাহও এরকম ৪৭ সালে পাকিস্তান হবার পর বলছিল এখন আর কোন হিন্দু মুসলমান নাই এখন আপনারা সব পাকিস্তানী। দেশ বিভাগের আগে মুসলিম লীগের কত বড় বড় কথা আল কোরআন ই হবে পাকিস্তানের সংবিধান কিন্তু পরে তারা বলে গণতান্ত্রিক রীতিতেই আমরা পাকিস্তান চালাবো। সবই একই গোয়ালের গরু। সবাইকেই চিনা আছে আমার।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য নরেন্দ্র মোদী/গু মোদীর একটা বড় ধরনের মুসলিম নিধন দরকার ছিল যেটা নরেন্দ্র মোদী/গু মোদী ২০০২ সালে করে দেখিয়েছেও। আমি ক্ষমতায় গেলে আরো বেশী মুসলিম হত্যা করব ঠিক এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই কিন্তু নরেন্দ্র মোদী/গু মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী এটা ভাল করেই জানে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় উনি যা করতে পেরেছেন এবং যা ইচ্ছা বলতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী হবার পর তা উনি করতেও পারবেন না আর বলতেও পারবেন না। একজন প্রধানমন্ত্রী কে পদে পদে প্রোটকল মেনে চলতে হয়। কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সব কিছু বলতে পারে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা মিলানো ঠিক হবে না। ভারত অনেক বড় দেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাজ কারবার আন্তর্জাতিক পত্রিকার শিরোনাম হয় যেটা কখনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে হয় না। তাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে অনেক বুঝে শুনে চলতে হয়।
ভারত থেকে বলা হচ্ছে আমরা তাদের কে করিডোট দিলে তারা আমাদের সাথে স্থল চুক্তি ও তিস্তার পানি চুক্তি করবে। কিন্তু করিডোরের সাথে স্থল চুক্তি ও তিস্তার পানি চুক্তির সম্পর্ক কি ? দুইটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। স্থল চুক্তি হয়েছিলো বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরার মাঝে। সেই সময় ভারতের পার্লামেন্টে আইন পাশ করেই বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরার সেই স্থল চুক্তিকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। আর তিস্তার পানি নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন আছে। আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুসারে নদী কোন দেশের না। তাই তিস্তার পানির উপর বাংলাদেশের মানুষের ঠিকই অধিকার আছে।
স্থল চুক্তি ও তিস্তার পানি আমাদের অধিকার। অন্যদিকে করিডোর ভারতের অধিকার নয়, সেটা বাংলাদেশ তাদের অতিরিক্ত সুবিধা ভারত কে দেবে। যদি আমরা প্রয়োজন বোধ করি ভারত কে করিডোর দিবো, অন্যথায় দিবো না। কিন্তু ভারত তাদের অতিরিক্ত সুবিধার জন্য আমাদের প্রাপ্য আটকে রাখবে আবার সেটা দিয়ে আমাদের কে টোপ দিবে এটা আমাদের জন্য মেনে নেয়া কখনই মর্যাদাসম্পন্ন কাজ হবে না। বাংলাদেশ ভারতের কাছে কোন বিষয়ে ঠেকা নাই যে ভারত না দিলে বাংলাদেশের চলবে না। বরং 7 sisters অঙ্গরাজ্য বাচাতে ভারতই বাংলাদেশের কাছে মুখাপেক্ষী। বাংলাদেশ যদি সামান্য নেতিবাচক মনোভাব পোষন করে ভারতের প্রতি এবং ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের সামান্য সহযোগীতা করে তাহলেই ভারত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। তাই ভারতের কাছে কোন মতেই বাংলাদেশের মাথা নিচু করা ঠিক হবে না। আর তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করে কি হবে? কারণ ভারত তো কথা দিয়ে কথা রাখে না। ফারাক্কা নিয়ে তো অনেক চুক্তিই হয়েছে কিন্তু একটাও কি রেখেছে ভারত ? না রাখেনি। আর বিজেপির কথা যদি বলেন, তবে বলতে হয় বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যেই কাজ গুলি সমাধান করতে পারে নি, আজ মোদি তা সমাধান করবে তার প্রমাণ কি ?
মমতা ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি মানেন না এবং পশ্চিম বাংলার এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না সেটা মমতা অনেক আগেই বলে দিয়েছেন। [তথ্যসূত্র]
ছিটমহল বিনিময়সংক্রান্ত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি ভারতের রাজ্যসভার অধিবেশনে পেশ করায় এর কড়া সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি তিনি মানেন না উল্লেখ করে বলেছেন, “রাজ্যের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।” ইন্দিরা-মুজিব স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল সংসদে পেশ করাকে সরকারের ‘নির্লজ্জ কার্যকলাপ’ আখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতা করে মমতা বলেছিলেন, বাংলাদেশকে ১৭ হাজার একর জমি ছেড়ে দিয়ে সাত হাজার একর জমি পাওয়াটা কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না। বুধবার ফেসবুকেও তিনি বলেন, “এই চুক্তি আমরা মানছি না, মানছি না, মানছি না।” আর মমতা না চাইলে বাংলাদেশের সাথে ভারতের কোন চুক্তিই হতে পারবে না। মোদীর কোন ঠ্যাকা পরে নাই মমতা কে চটাইয়া বাংলাদেশের স্বার্থ উদ্ধার করে দিবে ভারত কে করিডোর দেবার মতন রাস্তাঘাট বাংলাদেশের নাই। বাংলাদেশের যে রাস্তা তাতে ভারতের এত বড় বড় ট্রাক আসলে তা ২ দিনেই শেষ হয়ে যাবে। আর বিজেপি ক্ষমতায় আসার জন্য অনেকগুলো বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে, যার সবগুলিই আমাদের জন্য অপমানজনক কিন্তু এরজন্য এখনও বিজেপী আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি। বিজেপি যদি তার ঐ বক্তব্যসমূহের জন্য ক্ষমা না চায় তবে বাংলাদেশের সাথে ভারতের কোন চুক্তি হতে পারবে না। আগে বিজেপী আমাদের কাছে ক্ষমা চাক তারপর এইসব চুক্তিটুক্তি। ভারত যে নিজেদের কে এত বড় ভাবে কিন্তু খোদ বাংলাদেশেই ৫ লাখ ভারতীয় চাকুরি করে। ভারতের বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাওয়ার মাঝে বাংলাদেশ হল ৩য় দেশ। কিন্তু এরপরেও আমাদের প্রতি ভারতের কোন কৃতজ্ঞতা নাই। কোন দেশই তার দেশে অনুপ্রবেশকারীদের কে গুলি করে হত্যা করে না। যেটা ভারত সবসময়ই সীমান্তে আমাদের সাথে করে থাকে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
ভারতে যে সরকারই থাকুক তারা কখনওই বাংলাদেশের বন্ধু নয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন