তাবুকের যুদ্ধ এবং আবদুল্লাহ যুলবাজাদাইন(রাঃ)এর শাহাদাতের তামান্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহার আজকের চিন্তা চেতনা

লিখেছেন লিখেছেন কুয়েত থেকে ২৭ জুলাই, ২০১৭, ০৫:০৫:০৩ বিকাল

তখন ঐ সময়ে তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে কোন মুসলমানের পক্ষে ঘরে বসে থাকার সুযোগ ছিল না। পরাশক্তির বিরুদ্ধে মোকাবেলায় বের হয়ে যাবার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলমানদের উপর নির্দেশ জারী করেন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করে নবী করিম (সাঃ) যাত্রা শুরু করেন।

পবিত্র মদীনা থেকে যাত্রা শুরু করে ১৫ দিনে নবী করিম (সাঃ) তাবুক এসে পৌঁছেন। যাত্রাপথে খাদ্যের অভাবে গাছের পাতা খেয়ে মঞ্জিলের পর মঞ্জিল অতিক্রম করে মুসলিম সৈন্যগণ রোমান বাহিনীর সাথে লড়াই করতে তাবুকে পৌঁছেন। পাহাড় পর্বত ডিঙ্গিয়ে, মরুভূমির দুর্গম পথের সফরের ক্লান্তি, খাদ্য সংকট, পানি সংকটসহ নানা সমস্যার মধ্যে রাসূল (সাঃ)-এর নেতৃত্বাধীন সৈনিকগণ তাবুকে সামরিক অবস্থান গ্রহণ করেন।

সেখানে রাসূলের (সাঃ) নেতৃত্বাধীন সৈনিকরা তাবু স্থাপন করে। নবী করিম (সাঃ) সাহাবাদের উদ্দেশ্যে উদ্দীপনাময় ভাষায় ভাষণ দেন। সে ভাষণে তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য সাহাবাদের অনুপ্রাণিত করেন, সুসংবাদ দেন। এই ভাষণে সৈন্যদের মনোবল বেড়ে যায়। কোন কিছুর অভাবই তাদের মুখ্য মনে হলো না।

অন্যদিকে রোম এবং তাদের বাহিনীর অবস্থা এমন হলো যে, তারা বিশাল মুসলিম বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে ভীত হয়ে পড়লো। তারা সামনে এগিয়ে মোকাবেলা করার সাহস করতে পারল না। ইতিপূর্বে মুতার যুদ্ধে তিন হাজার সৈনিকের মোকাবেলায় তাদের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠলো।

এবার খোদ নবীজির নেতৃত্বে ত্রিশ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনীর প্রস্তুতি তাদেরকে ভীষণভাবে সন্ত্রস্ত করে তুললো। তারা নিজেদের শহরে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লো। বিনা যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করলো। আরব এবং আরবের বাইরে মুসলমানদের সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের আলোচনা হতে লাগলো। এ অভিযানে মুসলমানরা যে রাজনৈতিক সাফল্য লাভ করেছিল তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো।

রোমানদের ময়দান ত্যাগ করার পর নবী করিম (সাঃ) সেখানে বিশ দিন অবস্থান করেন। ত্রিশ হাজার সৈন্যের অবস্থানের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক জায়গা লেগেছিল। আশপাশের পাহাড় পর্বত, সমতল ভূমি, সর্বত্রই মুসলিম বাহিনীর অবস্থান ছিল। আজও সে পাহাড়, সে ভূমি বিদ্যমান।

পানি নেই, খাদ্য নেই, শোয়ার জায়গা নেই অথচ: সেই মুসলমানরা এসেছিল রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে। নিজেদের বাড়িঘর, স্ত্রী, সন্তান ও দুনিয়ার আকর্ষণ পেছনে ফেলে তারা এসেছিলেন আল্লাহর নির্দেশে বৃহৎ শক্তির মোকাবেলায়। মহান রব ভয় সৃষ্টি করে রোমানদের পরাজয় ঘটিয়ে দিলেন।

বিশাল রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে নবী করিম (সাঃ) তাবুকে যে স্থানটিতে অবস্থান নিয়েছিলেন সেখানে বর্তমানে নির্মিত হয়েছে একটি দুর্গ। বর্তমানে আশেপাশে কিছু পুরাতন স্থাপনা রয়েছে। দুর্গের পাশেই রয়েছে পানির ফোয়ারা। এখানেই রাসূল (সাঃ) সৈন্যদের জন্য পানির ব্যবস্থা করেছিলেন।

সামান্য নিচেই দেয়াল ঘেরা কিছু পুরাতন ভবনের ভগ্নাবশেষ। ভাঙ্গাছাদ বিশিষ্ট কয়েকটি ছোট ছোট ঘর। কয়েকটি খেজুর গাছ অতীতের স্মৃতি বহন করে চলছে। স্থানীয় লোকেরা জানালেন কিছুদিন আগেও এখানে দলবেধে আসর বসতো। সৌদি সরকার সে আড্ডার আসর বন্ধ করে দেয়। নিকটেই একটি মসজিদ। পাশেই কবরস্থান। রাসূল (সাঃ)-এর অবস্থানের স্মৃতিকে ধারণ করে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি।

৯ম হিজরীতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট মানুষগুলো সর্বকালের শ্রেষ্ট সেনাপতির নেতৃত্বে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। সৈনিকদের থাকা, খাওয়া মহান আল্লাহর শানে এবাদত বন্দেগী সবকিছুই চলছে নিয়মিত। রাসূলের (সাঃ) নেতৃত্বে সেই দৃশ্য ছিল মোহনীয়। এ সেনা ক্যাম্পের সাথে পৃথিবীর কোন সেনা ক্যাম্পের তুলনা হয়না। সেই স্মৃতিময় স্থান আজও দাঁড়িয়ে আছে।

এখানেই কোন এক স্থানে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ যুলবাজাদাইন (রাঃ) এর কবর। যিনি তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি ও যাত্রার সময় রাসূল (সাঃ)-এর নিকট নিজেকে পেশ করে বলেছিলেন ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি দোয়া করুন, আমি যেন শহীদ হতে পারি।’

রাসূল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ‘তুমি কোন একটা গাছের ছাল নিয়ে আসো।’ আব্দুল্লাহ খুশি মনে একটা গাছের ছাল তুলে আনলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তখন গাছের ছালটুকু আব্দুল্লাহর বাহুতে বেঁধে দিয়ে বললেন হায় আল্লাহ, আব্দুল্লাহর রক্ত কাফেরদের জন্য হারাম করে দাও। আব্দুল্লাহ রাসুলুল্লাহর (সাঃ) এ কথা শুনে স্তম্ভিত হলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! ‘আমিতো শহীদ হতে চাই। রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘যখন তুমি আল্লাহর পথে বের হয়েছ, তখন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মরলেও তুমি শহীদ হবে।

বর্তমান তাবুকের মসজিদ ও নিকটে কবরস্থানের পাশে হযরত আব্দুল্লাহর শাহাদাতের তীব্র আকাংক্ষার কথাগুলো মনে পড়ে। শহীদ হওয়ার তামান্না ছিল তার রাসূলের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী যখন তাবুক প্রান্তরে উপনীত হলো, তখন সত্য সত্যই আব্দুল্লাহ জ্বরে আক্রান্ত হলেন।

এ জ্বরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নবী করিম (সাঃ) এর নিকট এ খবর পৌঁছলো। তিনি বিশিষ্ট সাহাবীদের সঙ্গে নিয়ে আব্দুল্লাহর নিকট উপস্থিত হলেন।হযরত ইবনে হারেস মোযানী বর্ণনা করেন, তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল। হযরত বেলাল (রাঃ) আলোর মশাল ধরে রেখেছিলেন। হযরত আবু বকর ও হযরত উমর (রাঃ) আব্দুল্লাহ যুল বাজাদাইনের পবিত্র লাশ কবরে নামাচ্ছিলেন। স্বয়ং রাসূলে করিম (সাঃ) কবরের ভিতর দাঁড়িয়ে আব্দুল্লাহর লাশ গ্রহণ করতেছিলেন এবং বলতেছিলেনঃ ‘তোমাদের এ ভাইকে সম্মানের সাথে কবরে প্রবেশ করাও।’

লাশ কবরে রাখার পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) নিজ হাতে মাটি দিলেন। কবরে মাটি দেয়ার কাজ শেষ হলে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করতে লাগলেন, ‘হে আল্লাহ আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি আব্দুল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি ছিলাম। তুমিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও।’

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ দৃশ্য দেখে বলতে লাগলেন, ‘আফসোস! এ কবরে যদি আজ আমি শায়িত হতাম। এ ঘটনার পর শত শত বছর অতিবাহিত হচ্ছে। কত মানুষের আগমন ঘটছে এ তাবুকের ময়দানে। তারা আসছেন ঘুরা ফেরা করছেন, কেউবা ছবি তুলছেন কেউবা আবেগ আপ্লুত হচ্ছেন। কোথায় সেই মহান সাহাবীর কবর। যে কবরে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহর লাশ নামিয়ে ছিলেন। পৃথিবীর মানুষ অবাক বিস্ময়ে সেদিনের সে দৃশ্য অবলোকন করেছিল।

জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যে মহান সাহাবীর লাশ বিশ্ব নবীর (সাঃ) হাতে তুলে দিয়েছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ) যার লাশটি কবরে নামিয়েছিলেন তার কত সৌভাগ্য। সে মরনের নছিব যদি আমাদের হতো! কতযে সৌভাগ্যবান সে সব সাহাবায়ে কেরাম যারা স্বয়ং নবীজির সাক্ষাত পেয়েছেন।

আজ নবীজি নেই তার রেখে যাওয়া দীন তথা আল ইসলাম এবং কুরআন সুন্নাহ আমাদের মাঝেই রয়েছে আমাদের উচিত কুরআন সুন্নাহর অনুস্বরণ করা আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

২৭৪০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383668
৩০ জুলাই ২০১৭ রাত ১২:১৬
আকবার১ লিখেছেন :
চমৎকার
০১ আগস্ট ২০১৭ রাত ০১:০৪
316654
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ
383673
৩০ জুলাই ২০১৭ দুপুর ১২:৫৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : অসাধারণ হৃদয় জুড়ানো লিখা। জাজাকাল্লাহ প্রিয় ভাই।
০১ আগস্ট ২০১৭ রাত ০১:০৫
316655
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দিয়ে ধন্যকরুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File