সুযোগ সন্ধানী

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ আনু ০৩ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪১:২১ রাত

১৯৪৭ ভারতবর্ষ যখন ভাগ হয় তখন একটি বৃহত্তম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় যার নাম পাকিস্তান। এর দুটি অংশ একটি পূর্ব পাকিস্তান অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান। ঐ সময় পশ্চিম পাকিস্তানী সুবিধাবাদী গোষ্ঠি ১৫০০ কিলোঃ দূরে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করতে থাকে যা ছিল এ অঞ্চলের লোকদের জন্য বড়ই যাতনার বিষয় কেননা এ প্রান্তে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানে কোন কিছু একটা করতে হলে পশ্চিম পাকিস্তানের অনুমতির ব্যাপার ছিল। আর পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাংলাদেশ ছিল অবহেলিত। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ছিল উর্দু আর পূর্ব পাকিস্তানে প্রধান ভাষা ছিল বাংলা। পশ্চিম পাকিস্তানিরা কখনও পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বাঙ্গালী মুসলমানকে খাঁটি মুসলমান মনে করত না। কারন সে সময় ওদের ওখানে ইতিমধ্যে এক সংগঠিত দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে (১৯৪১খ্রী) – যার নাম জামায়াতে ইসলামী। অল্পদিনে সুসংগঠিত হওয়ার কারণ সৌদি ওহাবী গোষ্ঠীর সমর্থন। যাই হোক আজকে ওদিকে যাব না। পাকিস্তানের অধিকাংশ নেতারাই ছিল ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসী যার কারণে বাংলাদেশর সূফী-অলী-আওলিয়াদের তারা পছন্দ করত না। তারা মনে করত একমাত্র তারাই মুসলমান।এই মতবাদ বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে প্রচার চালিয়ে সংগঠিত হতে থাকে। পাকিস্তানিরা অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক এমনকি ভাষার দিক দিয়েও অত্যাচার, নিপীড়ন চালিয়েছিল পাকিস্তানিরা। ফলশ্রুতিতে বাংলার তরুণ দামাল ছেলেরা জাগতে শরু করল এবং ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে করে নিজের ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারলেও স্বাধীকার আন্দোলনের বীজ সবে মাত্র বুনা শুরু করল। পাকিস্তানিরা ৬ দফা,৭০ এর নির্বাচনকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখল। শুধু তাই নয় ভয়াবহ সাইক্লোন যেখানে বাংলার ৫ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের সহানুভূতিটুকুও মিলল না। জনগনের ক্ষোভ ভেতরে ভেতরে এক ধরনের মুক্তির দানা বাঁধতে থাকল। এমনই সময় বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ডাকে জনগণকে একত্রিত করে ফেললেন ঠিক সে সময় জামায়াতের কর্মকাণ্ড ছিল -পূর্ব পাকিস্তানের তথা আমার বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলার ভেতরে মেধাবী ও দেশপ্রেমী লোকদের তালিকা তৈরি করে ফেলে যে তালিকায় ছিল শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরী সহ আরও অসংখ্য বুদ্ধিজীবীর নাম। এ কাজটা সেদিন তারা করেছিল। জেনারেল নিয়াজী ও টিক্কা খান তাদের আত্মজীবনীতে লিখে যে,পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে এক এক পাও এগুতে পারত না- যদি গোলাম আযম, নিজাম, মুজাহিদের নেতৃত্বে এলিট ফোর্স-রাজাকার আল বদর বাহিনী গঠন না হতো। তাদের নিজস্ব মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে দুইশত এর বেশী প্রমাণ পাওয়া যাবে এ বিষয়ে। এই জামায়াতের আলেমরাই কবি নজরুলকে কাফের বলে ডাকত যাই হোক সেদিকে যাব না। দীর্ঘ নয় মাস রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হল। কিন্তু রয়ে গেল সেই রাক্ষুসেরা যারা জ্বালাও পোড়াও করে হায়েনাদের পথ দেখিয়েছিল সেই জামাত। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় লাভের পর নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সময়কালটা স্থায়ী ছিলনা। যতদিনই ক্ষমতায় ছিল তেমন দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়নি জনগনের। জামায়াতের অপপ্রচার থেকে কখনও পরিত্রাণ পায়নি তারা।শেখ মুজিবের বাকশাল পদ্ধতির ধুয়া তুলে সুযোগ কাজে লাগায় জামাত। সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ তখনও ছিল জামায়াতের আদর্শের অনুসারী। সেই পথভ্রষ্ট এবং কিছু সুবিধাবাদী বাহিনী ঘটিয়ে ফেলে আরেক কলঙ্কময় অধ্যায়। এরপর জাতীয় চার নেতা হত্যা, সিপাহী বিদ্রোহ ঘটে যায় অনেক কিছু। জামায়াত এই সুযোগ কাজে লগিয়ে পুরোপুরি শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে ফেলে। শুরু করে মাথা ক্রয়। মেধাবী তরুণদের স্লো পয়োজনে ব্রেন ওয়াশ করে জামায়াতি বানিয়ে বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে প্রবেশ করিয়ে ফেলেছে যার ফল আজকে দেখতে পাচ্ছেন। আওয়ামীলীগ, বিএনপি সহ বাকী দলগুলো যদি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জামাতকে বয়কট করত তবে আজকে তারা মানুষ পোড়ানোর ঘটনা ঘটাতে পারত না। সময়ের কালক্রমে জনগণ সেই দেশবিরোধী রাজাকারের ক্ষোভ লালন করেছে সেই প্রজস্ম পারেনি এই দাবীতে সোচ্চার হতে তবে চেষ্টা করেছিল সেই লালন করা প্রতিবাদ যখন আমাদের হাতে চলে এসেছে তখন আমরা আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। এক অপরাধী যখন ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন পায় বিক্ষোভে ফেটে পরে শাহবাগ, প্রজস্ম চত্বরে। জাগরণ মঞ্চ থেকে শপথ আসে এই ধর্ষক, রাজাকার, বিশৃঙ্খলাকারীদের বয়কট করার। এখনও সেই আন্দোলন চলছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আপনিও আসুন তাদের বয়কটে একাত্মতা প্রকাশ করতে। এবার যদি না পারি আমরা আর পারব কিনা জানিনা। জনতার সংগ্রাম চলবেই।

বিষয়: বিবিধ

৯৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File