রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তি গঠনের সম্ভাব্য পথ
লিখেছেন লিখেছেন অন্যনয়ন ১৩ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১৪:৪৬ সকাল
এর আগে একটি নোটে জানিয়েছিলাম যে কিভাবে মাইনাস টু এবং তৃতীয় শক্তির উত্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । ঐ লেখাটির পরিপ্রেক্ষিতে স্বভাবতই প্রশ্ন এসেছে যে ভারত কেন বাম পন্থিদেরকে এগিয়ে নিতে চাইবে? আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে ভারত কেন বাম পন্থিদের ক্ষমতায় বসাবে? আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে চলে আসে, সেটা হল মাইনাস টু বাস্তবায়নের ফলে বিএনপি ও আওয়ামীলীগে সম্ভাব্য ভাঙ্গন যদি বিশদ আকারে হয় এবং এর সুযোগে বামপন্থিরা সামনে চলে আসলে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ নিজেদের স্বার্থে এক হয়ে গিয়ে বাম পন্থিদের ঠেকিয়ে দিতে পারে।
প্রথমেই চিন্তা করে রাখা দরকার যে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রভাবশালী শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। উভয়দলে এদের প্রভাব বেশ প্রকট। খোজ নিয়ে দেখুন, এক গাদা গরম গরম এবং রিয়েল ইস্যু পাওয়ার পরেও বিএনপির মাঠে না নামার পেছনে এই দলের বাম লবির প্রচ্ছন্ন অবদান ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণে চলে এসেছে। এদিকে আওয়ামীলীগের হঠাৎ করেই তার নিজস্ব স্বৈরাচারী রেকর্ড ভঙ্গ করে চরম পর্যায় থেকে চরম তম পর্যায়কে ছাড়িয়ে যাওয়ার পেছনে বাম পন্থিদেরই অবদান পরিষ্কার। আওয়ামীলীগ নেত্রীকে সংবাদ সম্মেলনে কি বলতে হবে তা শিখিয়ে পড়িয়ে দেন জাসদের হাসানুল হক ইনু। এটা থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।
এবার বিএনপির ডান ব্লকের নেতৃত্ব ও আওয়ামীলীগের ডান ব্লকের নেতৃত্বের দিকে আলাদা আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। দেখবে দুই দলেরই ডান ঘেঁষা নেতারা ইতিমধ্যে সংস্কারবাদী তকমা খেয়ে নিজ নিজ নেত্রীর চক্ষুশূল হয়ে গেছেন। এবং দুই দলেরই ডান ঘেঁষা নেতারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন, কেউ নতুন দল গড়েছেন কেউ নিজ দলে আগাছা হয়ে গেছেন। এর মানে হল, বড় দুই দল ভেঙ্গে গেলে এই ডানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে একেকজন একেক দিকে চলে যাবে কিন্তু দু দলেরই বাম পন্থিরা থাকবেন well connected and well orginized. সে ক্ষেত্রে তারা তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি তিন ভাবেই গঠন করতে পারেন। এক. বিএনপি ও আওয়ামীলীগকে নামে এক করে আদতে বাম নেতারাই নেতৃত্বে চলে আসবেন যেটা এক কথায় বাম দলই হবে। দুই. দুই দলের বাম নেতারা বাইরে এসে আরও কিছু প্রভাবশালী বাম নেতাকে নিয়ে একটি বাম দল গঠন করতে পারেন। তিন. সকল সমমনা বাম দলের একটা বৃহৎ জোটও হতে পারে।
আন্তর্জাতিক ভাবে কূটনৈতিক লবিং শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সে মেজর ইস্যুগুলোর জন্য কোনও ধর্তব্য বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মোড়ল দেশগুলোর এক্সিকিউটিং প্ল্যান আমেরিকা, চীন, রাশিয়া ও ভারতের চলমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না। অর্থাৎ বাংলাদেশকে কে নিজ লবিতে ভেড়াতে পারলো তাতে আসলে কিছু যায় আসে না। কারণ বাংলাদেশ কোনও না কোনও দিক দিয়ে প্রায় সব মোড়ল দেশের কাছে এমনকি মধ্য আয়ের দেশের কাছেও ধরা। কোনওনাকোন ভাবে সব গুলো মোড়ল দেশ ও মধ্য আয়ের দেশের উপর বাংলাদেশের মেজর ইকোনোমিক ইস্যু সিগনিফিকেন্টলি নির্ভর করে। সুতরাং বাংলাদেশ যখন যেই আন্তর্জাতিক লবির পাল্লা ভারি করার দরকার তখন সেটাই করবে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইন্টেলিজেন্স এতটাই দুর্বল যে তাকে আন্তর্জাতিক মহলে ভাসমান হিসেবেই থাকতে হবে। এর প্রমাণ মিলে যায় সহজেই, গন-বর্জিত আওয়ামী সরকারের পক্ষে ভারতের কূটনৈতিক মহলের স্বপ্রনোদিত হয়ে লড়ার সিধ্যান্ত গ্রহণের মোরাল অফ দ্যা স্টোরি এটাই।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে একক ভাবে আমেরিকা, চিন ও রাশিয়া কেউই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলিয়ে মাছি মেরে হাত কালা করতে যাবে না। একথা সব পাগলেই জানে বাংলাদেশকে খাইতে হলে ভারতকে তার অংশ কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়ে তবেই খেতে হবে। চেতনাবাদিরা সগর্বে তাদের চেতনা দণ্ডে যতই তা দেন না কেন, ঐ গর্ব কথার বুলির সিমানাতেই আটকে থাকবে। মূলত বাংলাদেশ সেই রমণীর মতো যার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিবেশীরা তাকে পালাক্রমে ভোগ করে চলে। এক্ষেত্রে ঐ রমণী নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে গর্ব করতেই পারে। তার পরেও আন্তর্যাতিক সম্পর্কের বিষয়টা মাথায় আনলে এটা পরিশকারই বুঝা যাচ্ছে যে দেবযানি ইস্যুতে ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের চরম টানাপোড়েনের ফলে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত রাশিয়ার দিকেই ঝুকবে। সেক্ষেত্রে রাশান পন্থি বাম দল গুলোর পোয়া বারো হবে এটাই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যেই বিডিনিউজ24 জানিয়েছে যে এই গন-বর্জিত সুরকারের পক্ষে প্রকাশ্য মত দিয়েছে রাশিয়া।
লিংক দেখুন http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article727756.bdnews
এদিকে আপনি যদি চিন্তা করেন ভারত আদর্শ তাড়িত হয়ে বাংলাদেশে পছন্দের সরকার বসাবে তাহলে বেশ ভুল করবেন আপনি। দালাল, ট্রেইটর ও মীরজাফরদেরকে আদর্শ দেখে নিয়োগ দেয়া হয় না। মীরজাফরদেরকে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের লোভের তীব্রতা দেখে, হীনতার গভীরত্ব দেখে। সুতরাং যারা ভারতকে ভালো সার্ভ করার প্রতিশ্রুতি দেবে তারাই তৃতিয়শক্তি হিসেবে আবির্ভাব হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন