বাংলাদেশে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে এমন অলীক স্বপ্ন আমি দেখি না।

লিখেছেন লিখেছেন আবূসামীহা ১২ মে, ২০১৬, ০৯:০৩:১৯ রাত

বাংলবাংলাদেশে ইসলাম বিজয়ী হয়েছে এমন অলীক স্বপ্ন আমি দেখি না; যদিও ইসলামের বিজয় দেখা আমার চুড়ান্ত আকাঙ্খাগুলোর অন্যতম। ইসলামের বিজয়ের জন্য নিরলস কাজ করে যেতেও আমি তৈরি এবং নিজের সাধ্যমত তা করছিও। তারপরও আমি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ইসলামের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখি না। আমাকে মাফ করবেন, আমি আসলে নৈরাশ্যবাদী নই, শুধু বাস্তবতার কথা উল্লেখ করলাম।

কথা হল, এত শহীদের রক্ত কি তাহলে বৃথা যাবে? না শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। শহীদরা আল্লাহ - তাবারাকা ওয়া তা'আলা -এর কাছে তাদের যথার্থ মর্যাদা পাবেনই। সমস্যা হচ্ছে শত শহীদের রক্ত আমাদের ঈমানকে কথা বলায় কিনা। মল্লিক ভাই (রহিমাহুল্লাহু তা'আলা) প্রশ্ন রেখেছিলেন, "এত শহীদ রক্ত ঢালে, তবু কেন তোমার ঈমান কথা বলে না, হায় কথা বলে না?" না, উম্মাহ হিসাবে আমাদের সামস্টিক ঈমান বাংলাদেশে কথা বলে না। আমরা অসংখ্য ফিরক্বায় বিভক্ত। আমরা ফিক্বহী মতভেদের কারণে বা কারো কর্মপদ্ধতির কারণে আমাদের ভাইদেরকে দীন থেকে খারিজ ঘোষণা করে দেই। সবাই আমরা নিজেদেরকে নাজাতপ্রাপ্ত ফিরক্বা মনে করে বাক্বীদেরকে বাতিল ঘোষণা করে দিচ্ছি। অন্যদিকে ইসলাম বিরোধিতায় বাতিল ঐক্যবদ্ধ।

একটা মতভেদে লিপ্ত বিভক্ত উম্মাহ কখনো বিজয়ী হয় না। ইসলামের বিজয় কোন একটা ইসলামপন্থী দলের বিজয় না। আর কোন একটা দলের হাতেই আল্লাহ তা'আলা বিজয় দেবেন না। বিভক্তি যে দূর্বলতা সে কথা আল্লাহ তা'আলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

وَلاَ تَنٓازَعُوا فَتٓفْشَلُوْا وَتَذْهَبَ رِيْحُكُمْ

"নিজেদের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ ত্যাগ করো। অন্যথায় তোমরা সাহস হারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি নষ্ট হয়ে যাবে।" (আনফাল: ৪৬)

স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও নিজেদের ফিরক্বার মুরুব্বীদের কথা শুনে শুনে অন্যদেরকে গোমরাহ ফতোয়া দিয়ে দিয়ে তাদেরকে পরিত্যাগ আমরা নিজেদেরকে দূর্বল করে ফেলছি প্রতিনিয়ত। আর শুধু নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকছি এবং তাকেই একমাত্র দীন মনে করছি। আর আল্লাহ এই বিষয়টাকে কত সুন্দর করে বলেছেন:

فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿المؤمنون: ٥٣﴾

কিন্ত তারা নিজেদের মধ্যে তাদের অনুশাসন টুকরো-টুকরো ক’রে কেটে ফেলল। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যেসব রয়েছে তাতেই সন্তষ্ট।(আল-মু'মিনূন: ৫৩)

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ ﴿الروم: ٣٢﴾

যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত। (আর-রূম:৩২)

আমরা নিজেদেরকে সহীহ মনে করে করে আনন্দে ডুবে থাকবো; আর বাতিল এক এক করে ইসলামের সব কিছুকে গিলে খাবে। তারপর বাংলা একসময় আন্দালুসিয়া হয়ে যাবে। মনে রাখা উচিৎ ঢাকায় বসেই কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদীরা গোটা হিন্দুস্তানে মুসলমানদেরকে আন্দালুসিয়ায় পরিণতি ভোগ করার হুমকি দিয়েছিল প্রায় ৭০ বছর আগে।

প্রকৃত মুসলিমদের অবস্থা হল, তারা তাদের ভাইদের অনেক কাজের সমালোচনা করে ও অনেক কাজের নিন্দা করে, কিন্তু কখনোই সেই ভাইদের ত্যাজ্য করে না। রসূলুল্লাহ। কত সুন্দর করেই না বলেছিলেন:

" الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ مَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ " .

"মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করেনা এবং তাকে অন্যদের কাছে সোপর্দ করে দেয় না বা তাকে ত্যাগ করে না। যে তার ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করে আল্লাহ তার প্রয়োজন পুরণ করেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন কষ্ট দূর করতে সাহায্য করে আল্লাহ তা'আলা তার ক্বিয়ামতের দিনের কষ্টগুলোর কোনটা দূর করবেন। আর যে কোন মুসলিমের দোষত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহও ক্বিয়ামতের দিন তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮০)

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজ আমরা মুসলিমদেরকে বাতিলের হাতে সোপর্দ করে তামাশা দেখছি আবার ইসলামের বিজয়ের স্বপ্নও দেখছি। কিন্তু আমি এখানে বিজয়ের স্বপ্ন দেখিনা। আমি কল্পনায় দেখতে পায় অনাগত দূর্যোগ আর আরো অগুণতি শহীদের খুনধারা।

আল্লাহুল মুস্তা'আন।

মে ১২, ২০১৬

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368898
১২ মে ২০১৬ রাত ০৯:৩২
আল মাসুদ লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত। কোন আশা দেখিনা। আমরা এখনও নিজেদের পরিবারই ঠিক করতে পারিনি। অন্যদের দাওয়াত দেওয়া কেমনে সাজে। শহীদদের পরিবারেই কোন অনুভূতি নেই। সবাই স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া পাবলিক। আল্লাহ আমাদের সুমতি দান করুক।
368902
১২ মে ২০১৬ রাত ১০:৫৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সে অবস্থা তো সারা বিশ্বের ই!
368908
১৩ মে ২০১৬ রাত ১২:০৩
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : এক্সচেলেনট
368910
১৩ মে ২০১৬ রাত ১২:৩৭
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : বেশ যথার্থই বলেছেন-প্রিয়; সহমত সহ ধন্যবাদ ।
369003
১৪ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৩১
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আমাদের অনেকের কাছে ইসলাম থেকে মাসলাক ও মাশরাফ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷ তাকফীর, তাফসীক,তাদলীল, ও তাবদীইর হুকূম লাগাতে কারপন্য করি না৷ আমার বিরোধী মত হলেই গোমরাহ৷ আমিই হক অন্যবাতিল৷ হক আমরাই৷ আমি যা বলি ও ভাবি সেটাই সঠিক, সহীহ৷
শ্লোগান আমাদের, কাফের কাফের, শিয়া কাফের৷
বেরলবী বেদাতি ও মুশরিক৷
তাদের চোখে দেওবন্দীরা গুসতাখে রাসূল৷
গাইরে মুকাল্লিদরা ইহুদীদের এজেন্ট৷ আহলে হাদীসরা ইংরেজদের এজেন্ট৷ তারা আবার কিতাব লিখে "আদদেওবন্দিয়া"৷ সেখানে উলামায়ে কেরামকে কাফের বানানোর কসরত করে তথাকথিত মাদানীরা৷
ওদিকে পাশ্চাত্যের লাদিনিয়াত ও সেক্যুলারের আগ্রাসনের কোনো খোঁজ নেই৷ পশ্চিমাদের নয়া ক্রসেডের আঘাত নিয়ে কোনো ভাবনা নেই৷ তানসীর ও ইস্তিমারের আগ্রাসনের কোনো চিন্তা নেই৷
মিডিয়ার বহুমুখী তথ্যসন্ত্রাসের কোনো প্রতিরোধ নেই৷
শরীয়াহ আইনের বিরুদ্ধে ওরিয়ান্টালিস্টদের মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেওয়ার কোনো প্রস্তুতি নেই৷
আমরাই হক তাই মসজিদ ভেঙ্গে মসজিদ বানাই৷
মাদরাসা থেকে মাদরাসা৷
ঈদগাহ সাত টুকরো করি৷
ইসলামী রাজনীতির দলগুলো অনু পরমানুতে রুপান্তর করি৷
সাম্রাজ্যবাদীরা আমাদের দেশের মানচিত্র নিয়ে শকুনের আচরন করে৷ আমরা ঝগড়া করি হাত কোথায় রাখতে হবে নামাযে তা নিয়ে৷
জীবনের মিশন মনে হয় মাসলাক ও মাশরাবসনিয়ে ঝগড়া করা৷
আমার ঘরানাই ঠিক৷ ই দিয়ে তাকীদ দর তাকীদ করে বলি আমরাই হক ও হক্কানিয়েতের নিশানবরদার৷
আসলেই কি তা?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File