ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (একুশতম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ৩১ মে, ২০১৫, ০৮:৫৮:১২ রাত

ধারাবাহিক গল্পঃ সরকারী খরচে বিয়ে!! (একুশতম পর্ব)

পূর্ব সূত্রঃ - আহারে, বেচারিকে না জানি কত কষ্টই না দিয়েছ। তা রাঁধুনির কোন ফটো ঠটো আননি?

- হ্যা এনেছি, তাও এনেছি।


- ===========২১

- এই দেখ, কত মিষ্টি চেহারা। তোমার ছেলের সাথে বেশ মানাবে।

- হ্যা এত দেখছি ডানা কাটা এক পরি, মাশা’আল্লাহ! দ্যাখ দ্যাখ কেমন সুন্দর চেহারা?

ওয়াকিল পাশে বসে খাচ্ছিল আর বাবা মায়ের কথা শুনছিল। ছবির দিকে এক পলক তাকিয়ে ও তাদের কথা শুনে ওয়াকিল সড়যন্তের গন্ধ পাচ্ছিল। অবশ্য তার বাবা যখন পকেট থেকে ছবিটা বের করে টেবিলের উপর রেখেছিল, তখনই বিষয়টা ওয়াকিলের কাছে একেবারে দিবালোকের মতই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার বুঝতে বাকী রইলনা তার বাবা আর সাদী কি এত পরামর্শ্ব করেছে? প্লেটের বাকী খাবারটুকু ঝটপট মুখে দিয়ে হাত ধুয়ে উঠে ওয়াকিল নিজের রুমে চলে গেল ।

ছবিটার দিকে এক পলক যা তাকিয়েছে তাতে সাদিয়াকে ছবির মতই মনে হয়েছে! নিজের মধ্যেই গুণ গুনিয়ে উঠল, ‘চোখ দুটি টানা টানা, ঠোঁট দুটি লাল, লজ্জ্বায় রাঙা হয়ে আছে তার গাল, মনে হয় সাজেনি, কাজলও পড়ে নই, তবু রূপেরই বাহার’। ‘রূপ দেখে বলব কি ভাষা খুজে পাইনা...”!

সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ওয়াকিল আর সাদিয়ার শুভ বিবাহের কার্য সম্পন্ন হল। সাদিয়া বিহিন সাদীদের বাড়িটা যেন বিরান মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। সাদী যতক্ষন বাড়িতে থাকত ততক্ষণ দু’ভাইবোনের মধ্যে খন্সুটি লেগেই থাকত। আজ সাদিয়া নাই, বাড়িটাই কেমন যেন শূন্য হয়ে গেছে। সদী, সাদিয়া বিহিন বাড়ির কথা ভাবতেই পারছে না। কতক্ষণ যে বালিশে মুখ গুজে কেঁদেছে তা নিজেও বলতে পারবে না।

- কিরে বাপ, সন্ধা হয়ে গেল এখনও ঘুমাচ্ছিস? মাগরিবের আজান হয়েছে যা মসজিদে গিয়ে নামায পড়ে আয়।

- যাচ্ছি মা।

- কিরে চোখ ফোলা যে, কেঁদেছিস বুঝি?

- হ্যারে মা কেঁদেছি, খুব করে কেঁদেছি। বুড়িটাকে নিজ হাতে বিদায় দিয়ে এখন বুকটাই যে শূন্য হয়ে গেছে মা। আমি এভাবে একা থাকলে পাগল হয়ে যাব মা।

- নারে বাছা অমন কথা বলতে নাই। এটাই মেয়েদের জীবন। তাদের কোন স্থায়ী ঠিকানা নাই। আজ বাবার ঘরে, কাল স্বামীর ঘরে, পরশু ছেলের ঘরে আর তার পর একদিন সবাইকে ফাকি দিয়ে কবর ঘরে!

- মা, অমন করে বল না মা! আমি যে আর সহ্য করতে পারছিনা।

- সাদিয়াতো চলে গেল। তুই ছেলে মানুষ, দুইদিন পরে ভুলে যাবি। কাজে কামে সারাদিন ব্যাস্ত থাকবি, কিন্তু আমি কাকে নিয়ে থাকব? তোর শেখ চাচা বলছিল সে শীঘ্রই তোরও একটা হিল্লা করে দিবে। আপাতত তোর মামলা গুলো প্রত্যাহারের চেষ্টা করবে। আশা করি সে করতে পারবে ইনশা’আল্লাহ। অনেক উপরে তার হাত আছে, আর সে তোর বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধুও, নাহলে এমন করে কি কেউ কারো জন্য কিছু করে? নিজের ছেলেকে হারিয়েছে কিন্তু মনোবল হারায় নি। খুব শক্ত মনের মানুষ।

- না মা, আমি ওসব বিষয় নিয়ে এখনও মাথা ঘামাচ্ছিনা। তাছাড়া আমাকে যে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

- তা হবে, সে আমরা দেখব। তোর কোন ব্যক্তিগত পছন্দ থাকলে বলতে পারিস। না হলে শেখ সাহেব কারো সাথে কথা দিয়ে ফেল্লে তা কিন্তু বদলানো যাবেনা বুঝেছিস।

- না মা, আমার সেরকম কোন পছন্দ নাই, তবে তাকে এমন পাগলামো করতে নিষেধ করে দিও। আমি দেশের সেরা উকিল হতে চাই মা। সামান্য ফিসের অভাবে অনেক মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আমি তাদের দোর গোড়ায় ন্যায় বিচার পৌছে দিতে চাই। আর একাজে সহায়তার জন্য এমন মেয়ে চাই যে কিনা আমাকে সার্বিক ভাবে সহায়তা করতে পারবে।

- সে ক্ষেত্র তো শায়লাই উপযুক্ত তাইনা?

- কি যে বল মা? শায়লা কি এখন মানুষিক ভাবে প্রস্তুত, তাছাড়া ওর বাবাতো আমাকে পছন্দই করেনা।

- কি যে বলিস। শায়লার বাবাতো সারক্ষন তোর প্রশংসায়ই পঞ্চ মুখ, আর শায়লার মায়ের কথা নাহয় নাই বললাম। মেয়েটাও বেশ মায়াবী।

- মায়াবী না ছাই। ওর মত দস্যি মেয়ে আমি আর একটাও দেখি নাই।

- তা যখন ছোট্ট ছিল হয়ত তখন দস্যিপনা করেছে কিন্তু এখন বদলে গেছে। নম্র ভদ্র নামাজি এক অমাইক মেয়ে শায়লা। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।

- নামাজী? শায়লা তাহলে নামায ধরেছে! ছয় বছর পড়িয়েছি শায়লাকে, নামাযের জন্য কত তাগাদা দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। নামায তো দূরের কথা ওজুও করাতে পারিনি।

- হ্যা সেই মেয়েই এখন নাময ধরেছে। এখন বলছি কেন, শায়লার মা তো বলল মেয়েটাকে যখন থেকে তুই পড়ান বাদ দিয়েছিস তখন থেকেই সে নামায ধরেছে। তোর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যই নাকি শায়লা সেদিন থেকে নামায ধরেছে।

- হ্যা, মা তুমি ঠিকই বলেছ, এখন আমি ঠিক মনে করতে পারছি, একদিন রাগ করে বলেছিলাম যেদিন থেকে আমি আর আসবনা, তোমার বাবার পুলিশি দাপট থাকবেনা, চারপার্শ্বে আপন বলতে কাউকে পাবেনা তখন নিশ্চয়ই তোমার রবকে কাছে পাবে, ভাগ্যে হেদায়েত থাকলে সেদিন হয়ত নামায ধরবে অথবা গোমরাহির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে।

- তাই হয়েছেরে বাপ, সে হারিয়ে যায়নি বরং তার রবকে একান্ত আপন করে নিয়েছে।

- যাই বল মা, আমাকে সময় দিতে হবে। এতদিন আমাদের তিনজনের সংসার কোনভাবে চলে গেছে। নতুন কাউকে এনেতো আর সেভাবে চলতে পারব, না তাইনা? তাছাড়া শায়লাই হোক বা অন্য কেহ তাকে তো আর এই পাড়া গায়ে রেখে যাওয়া যাবেনা। তাহলে আমি যে চ্যালেঞ্জ নিতে চাচ্ছি তা নিব কিভাবে? সেজন্য প্রথমে তোমাকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে নিজে সেট হয়ে তার পরে ওসব ভেবে দেখব।

- হ্যারে বাপ তা তুই যা ভালো মনে করিস। তবে শেখ সাহেব কিন্তু ইতিমধ্যেই শায়লার বাবা মায়ের সাথে কথা পাকাপাকি করে ফেলেছে, আমিও মত দিয়েছি। আর সাদিয়াতো এক পায়ে খাড়া। শায়লার কথা তোর না জানলেও হবে।

- ভিতরে ভিতরে তাহলে তোমরা অনেক গভীরে পৌছে গেছ? সেজন্যই বুঝি সাদিয়া বলেছিল শেখ আঙ্কেল তার বন্ধুর ছেলের জন্য শায়লার বিয়ে ঠিক করেছে। ফাজিল কোথাকার। ওকে পেয়ে নেই তার পর দেখ কেমন মজা দেখাই।

- সে কিন্তু এখন অন্যের বৌ, সেদিকে খেয়াল থাকে যেন। আগের মত খুন্সুটি করার তোমার আর সেই অধিকার নাই।

- বললেই হলনাকি? হোকনা সে অন্যের বৌ, কিন্তু আমার কাছে বুড়িটা আজীবন ছোট্টটাই থাকবে। ওর নাতিপুতির সামনে পেলেও আমি ওর কান না মলে ছাড়বনা।

- হয়েছে হয়েছে এবার নিজের চক্রায় তেল দাও গিয়ে।

(চলবে)

বিষয়: সাহিত্য

১৩৬৯ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323708
৩১ মে ২০১৫ রাত ০৯:১৬
মুজাহিদ হোসাইন সজিব লিখেছেন : জাজাকাল্লাহুল খাইরান, খুব সুন্দর হয়েছে, ধন্যবাদ।
৩১ মে ২০১৫ রাত ০৯:২১
265078
আবু জারীর লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
323726
৩১ মে ২০১৫ রাত ১০:১৬
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! ভালো লাগছে চালিয়ে যান নিয়মিত.......সাথেই আছি।
৩১ মে ২০১৫ রাত ১১:৩২
265138
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম’আসসালাম,
জ্বি আপু, চলবে ইনশা’আল্লাহ।
সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আন্তরিক মুবারকবাদ।
323748
০১ জুন ২০১৫ রাত ১২:৪৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম !

মনে হচ্ছিলো অনুভূতিগুলো নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি! চমৎকার ধারাবাহিকতায় লিখেছেন! একজনের তো কবুল হলো , গল্পের মূল নায়কের কবুল পড়া বলা শোনার অপেক্ষায় জাতী.. Day Dreaming
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৩৩
265430
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম’আসসালাম। বাহ! আপনি যে আমার গল্পের প্রথম নায়িকা তাতো এত দিন খেয়ালই করিনি। আজ যখন খেয়াল করলাম তখন শুভ বিবাহের শুভেচ্ছা তো জানাতেই হয়। নিয়মিত সাথে থেকে উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আর দুলাভাইর পুর নামটা আগে জানালে ওয়াকিলের জায়গায় সেট করে দিতাম। অবশ্য এখনও সময় গড়িয়ে যায়নি মলাট বদ্ধ করলে ওয়াকিলের জায়গায় না হয় দুলাভাইর নামটা দিয়ে দিব, যদি অনুমতি পাই।
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০২:৩২
266273
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : লজ্জা পেলুম ভাইয়া;Winking ! আপনার গল্পের সাদিয়ার জন্য ওয়াকিল ই ঠিক আছেDon't Tell Anyone ! আমার জন্য আমার উনি! Love Struck
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০২:৩৪
266275
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : batting eyelashes ৩ নাম্বর ইমোটা হবে! Surprised
323759
০১ জুন ২০১৫ রাত ০১:৪২
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ভাইয়া, বড্ড দেরীতে দিলেন, অনেক অপেক্ষায় ছিলাম। সাদিয়াপুর সঙ্গে আমিও অপেক্ষায়, ধন্যবাদ
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৩৫
265434
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম’আসসালাম। হ্যারে ভাই, সময়ের অভাব আর নেটের স্থবিরতা দুই মিলিয়ে দেরী। এত কিছুর পরেও আপনাদের সাথে পেয়ে ভালো লাগছে। ধন্যবাদ।
323772
০১ জুন ২০১৫ রাত ০২:৩৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। লেখাটি ভালো লেগেছে....!

আপনি ধারাবাহিক গল্প লিখে চলছেন.... প্রতিযোগিতা বা অন্য কোন লেখা উপহার দিচ্ছেন না!! !

আশা করি প্রত্যাশা বুঝতে পেরেছেন।
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৩৭
265436
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম’আসসালাম। সম সাময়িক ২/১ লেখা অবশ্য দিয়েছি। প্রতিযোগিতায় আমি সাধারণত অংশ গ্রহণ করিনা। ওগুলো যারা খুব ভালো লিখে তাদের কাজ। ধন্যবাদ।
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৫৪
265453
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : নিজের উপর ভরসা আরো একট ভাড়ানো উচিত।
323774
০১ জুন ২০১৫ রাত ০২:৩৯
আফরা লিখেছেন : বিয়ে হয়ে গেল দাওয়াতই তো পেলাম না ।সাদী আর শায়লার বিয়েতে অবশ্যই দাওয়াত দিতে হবে ভাইয়া ------।
০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৩৮
265438
আবু জারীর লিখেছেন : ওয়ালাইকুম’আসসালাম। আমরাও আসল দাওয়াত খাওয়ার অপেক্ষায় আছি। দেখি ভাগ্যে কবে শিকে ছিরে।
323832
০১ জুন ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
আবু নাইম লিখেছেন : অনেক অপেক্ষার
ধৈর্য পেড়িয়ে
একুশতম পর্ব
তোমার দেখা পেয়েছি.
জানিনা বাইশতম
তুমি আবার কবে আসবে.

ততদিনে আমি থাকব কিনা
জানিনা..
যদি চলে যাই না ফেরার
দেশে...
থেকে যাবে মনে
না পড়ার তৃষ্ণা


০১ জুন ২০১৫ রাত ০৯:৪১
265443
আবু জারীর লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আপনায় দীর্ঘ্যায়ূ করুন
থাকুন সাথীর সাথে
সুখ দুঃখের গল্প করুন
দুজন দিনে রাতে।

একুশের পরে বাইশ আসবে
তেইশ চব্বিশ বাকী
পচিশ ছাব্বিশ পড়ার আগে
দিবেন না কেউ ফাকি।
324611
০৪ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : কবির ভাই, সুন্দর সাজালেন। দারুন!
১০ জুন ২০১৫ রাত ১০:৫৯
267118
আবু জারীর লিখেছেন : ধন্যবাদ দাদা।
335898
১৫ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৫:১৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : হা, আমিও এবার নিজের নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। বাকি পর্বগুলো পরে পড়বো নে।
১৬ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:৩৩
277957
আবু জারীর লিখেছেন : হুম! ঘুমান।
আবার দেখা হবে ইনশা'আল্লাহ।
ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File