প্রসঙ্গ: নারী-পুরুষের নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্য
লিখেছেন লিখেছেন ফাহিম বদরুল হাসান ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪৭:০৭ রাত
●মুসলিম উম্মাহর ক্রান্তিলগ্নে কথা বলা উচিত ছিল, ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। অথচ অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আজ কথা বলতে হচ্ছে, কোর'আন সুন্নাহর ইখতিলাফী বিষয় নিয়ে। মতানৈক্য নিয়ে! মিসাইলের জবাব দেয়ার বদলে আলেমগণকে মাসাঈলের জবাবে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে!
যাইহোক; রক্তে ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পড়লে কয়েলের আলোচনাও খুবই জরুরি হয়ে পড়ে।
মহিলাদেরকে পুরুষদের মতো নামায পড়ানোর জন্য আজকাল উঠেপড়ে লেগেছেন, কেউ কেউ। তাদের কথায় মনে হয়, বিগত 13’শ বছর ধরে মহিলাদের নামাযই হয় নি। পুরুষ এবং মহিলার নামাযের পার্থক্যের পক্ষে ইসলামের কোনোই দলীল নেই! যেন শয়তান এসে নারী-পুরুষের নামাযে পার্থক্য করে দিয়েছে।
কোর'আনুল কারীমে এব্যাপারে পরিষ্কার কোনো বিধি না থাকলেও বিভিন্ন হাদিস, আসার এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী থেকে কিছু পার্থক্য অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে ফোটে উঠে।
●●পুরুষ ও মহিলার নামাযের পদ্ধতিগত পার্থক্য●●
(i) নামাযে হাত তোলায় পুরুষ কান পর্যন্ত এবং মহিলা কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলেন।
(ii) পুরুষ নাভীর নীচে এবং মহিলা বুকের উপর হাত বাঁধেন।
(iii) পুরুষ মাথা সটান করে ঝুঁকিয়ে হাত দ্বারা হাঁটু চেপে ধরে রুকু করেন, আর মহিলা মাথা কিছুটা ঝুঁকিয়ে হাত হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছিয়ে রুকু করেন।
(iv) পুরুষ কনুই, পাছা ইত্যাদি জমিন থেকে আলাদা এবং পেট উরু থেকে পৃথক রেখে সিজদা করেন, অপরদিকে মহিলা কনুইসহ হাত বিছিয়ে পাছাসহ শরীর মাটির সাথে মিশিয়ে এবং পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে জড়সড় হয়ে সিজদা করেন।
(v)বৈঠকে পুরুষ ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের ওপর বসেন এবং মহিলা উভয় পা ডানদিক দিয়ে বের করে এবং ডান উরুকে বাম উরুর উপর রেখে জমিনের উপর বসেন।
■■■■■হাদিসের আলোকে দলিল■■■■■
[1] “তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব (রহ.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে বললেন, “যখন সিজদা করবে, তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা, মহিলারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়।” (কিতাবুল মারাসিল, ইমাম আবু দাউদ – ৫৫, হাদীস নং ৮০) প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আওনুল বারী’তে লিখেছেন, “উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য।” (আওনুল বারী, ১ম খ-, ৫২০ পৃষ্ঠা)
[2] হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে, তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সিজদা করবে, তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখে। যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেখে বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থেকো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” (সুনানে কুবরা – বাইহাকী, ২য় খ-, ২২৩ পৃষ্ঠা) এটি হাসান হাদীস।
[3] হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে হাজির হলাম। তিনি আমাকে (অনেক কথার মাঝে একথাও) বললেন, “হে ওয়াইল ইবনে হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে, তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলারা হাত উঠাবে বুক বরাবর (হাতের মাথা কাঁধ বরাবর থাকবে)।” (আল-মু‘জামুল কাবীর – তাবরানী ২২/২৭২) এ হাদীসটিও হাসান।
[4] সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্যের আলোকে তাবেয়ী হারেস (রহ.) হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আলী (রা.) বলেন, “মহিলা যখন সিজদা করবে, তখন সে যেন খুব জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং উভয় উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।” (মুসান্নাফ – আবদুর রাযযাক, ৩য় খ-, ১৩৮ পৃষ্ঠা/ সুনানে কুবরা – বাইহাকী, ২য় খ-, ২২২ পৃষ্ঠা)
[5] হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, মহিলা কিভাবে নামায আদায় করবে? তিনি বললেন, “খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামায আদায় করবে।” (মুসান্নাফ – ইবনে আবী শাইবা, ১ম খ-, ৩০২ পৃষ্ঠা)
•এখানে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রা.) ও ফকীহুল উম্মাহ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
(রা.) -এর কওল বর্ণনা করা হলো। এ দু’জন সাহাবী মহিলাদের নামাযের যে পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, কোনো হাদীসের কিতাবে একজন সাহাবী থেকেও এর বিপরীত কিছু বিদ্যমান নেই।
☆আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন
বিষয়: বিবিধ
১১৪১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন