ভারপ্রাপ্ত কান্ডারীর আহ্বান.. ..
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৩৪:৩৭ রাত
(এই আহ্বানটি বেশ কিছুদিন পূর্বের। গুরুত্ব বিবেচনায় পোস্ট করা হল সর্ব সাধারণের জন্য। কারণ ষড়যন্ত্রের গভীরতা বুঝতে হলে সবাইকে জানতে হবে, পড়তে হবে..)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সম্মাণিত দীনি ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামুৃ আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ বিরোধী ও ইসলাম বিদ্বেষী সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং তাদের প্রচার মাধ্যমসমূহ পাশ্ববর্তী একটি দেশের মদদে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাতের চক্রান্তের অংশ হিসেবে এদেশ থেকে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী নেতৃত্ব, ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নির্মূলের জন্য প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নাস্তিক ব্লগারদের দিয়ে শাহবাগের নাটক মঞ্চস্থ করে যাচ্ছে। এ অপশক্তি ধরে নিয়েছিল শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে পুরে, নেতা-কর্মীদের উপর অমানবিক জুলুম-নির্যাতন, নিষ্পেষণ চালিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে দূর্বল করতে সক্ষম হয়েছে এবং দীর্ঘদিনের বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে তারা দেশের তৌহিদী জনতার ঈমানী চেতনাকে ধ্বংস করতে পেরেছে। এ কারণেই তারা জেনে শুনে নাস্তিক ব্লগারদেরকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। অথচ তারা জানত দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন রাসূল (স.) ও ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল এবং এই সব নাস্তিক ব্লগারেরা তাদের চাইতেও আল্লাহ ও রাসূল (স.) সম্পর্কে হাজার গুণ জঘন্য কথা বলেছে।
সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
বিশ্বব্যাপী ইসলামী জাগরণের পাশাপাশি এদেশেও ইসলামী শক্তি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে দেশ, ইসলাম ও মানবতাবিরোধী অপশক্তি প্রমাদ গুনছে। তাই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে মরণ কামড় দিয়েছে। আজ একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, এই অপশক্তি যদি সফল হয় তাহলে দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতা এ দেশে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হবে এবং আমাদের দীন-ধর্ম, ইজ্জত-আব্র“, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ী কিছুই নিরাপদ থাকবে না। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সবকিছুই হবে বিপন্ন। এদেশ হবে আরেক সিকিম, ভুটান অথবা কাশ্মীর। আমাদের জীবন থাকতে ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না ইনশাল্লাহ। ইতোমধ্যে তার লক্ষণ ষ্পষ্ট হয়েছে। গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের প্রিয় নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরে গোটা দেশ যেভাবে ফুঁেস উঠেছে তাতে ইসলাম বিদ্বেষী, দেশ বিরোধী, জালেম সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। শুধু প্রয়োজন আল্লাহর সাহায্য আর আমাদের যথাযথ ভূমিকা।
আজকের এই পরিস্থিতিতে সকলকে কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী ময়দানে ভূমিকা রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো, যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হলো, অমনি তোমরা মাটি আঁকড়ে ধরে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে বেছে নিয়েছ। যদি তাই হয়, তাহলে মনে রেখ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় খুবই সামান্য।” (সূরা তওবা:৩৮)
সচেতন ভাই ও বোনেরা,
জনবিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী বেসামাল আওয়ামী সরকার জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশে আজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা পরিচালনা করে চলেছে। কিন্তু বীর জনতা মাথানত করেনি। সাধারণ জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছে, শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করছে। এ পর্যন্ত দুইশত ভাই-বোন শহীদ হয়েছেন, হাজারের অধিক ভাই-বোন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, হাজার হাজার ভাই-বোন আহত হয়েছেন, লক্ষাধিক ভাই-বোন জেল খেটেছেন এবং এখনও প্রায় দশ হাজার ভাই-বোন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেক নিরপরাধ মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, ঘর-বাড়ি ছেড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গ্রেফতারকৃতদের উপর রিমান্ডের নাম নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা যারা সুস্থ আছি, বাইরে আছি তাদের গভীরভাবে আতœপর্যালোচনা করতে হবে যে, আমরা যথাযথভাবে আমাদের উপর অর্পিত দীনি দায়িত্ব পালন করতে পারছি কি না?
মনে রাখতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে তার দীনের জন্য বাছাই করেছেন।
“আল্লাহর পথে জিহাদ কর, যেমনভাবে করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন। দীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংর্কীণতা চাপাননি।” (সূরা হাজ্জ:৭৮)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সবচেয়ে বড় মেহেরবাণী যে তিনি আমাদেরকে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বুঝার এবং তাতে শরীক হওয়ার তওফিক দিয়েছেন। আমরা শপথ নিয়েছি, “নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার সকল সুকৃতি, আমার জীবন ও আমার মরণ, বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহর জন্য।” (সূরা আনআ’ম: ১৬২)
তাই সাধারণ মানুষের চেয়ে আমাদের দায়িত্ব আরো অনেক বেশী। আমরা যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। মনে রাখতে হবে ইজ্জতের সাথে মৃত্যুবরণ করা জিল্লতির সাথে হাজার বছর বেঁচে থাকার চেয়ে উত্তম।
মহান আল্লাহ বলেন, “যদি তোমরা বের না হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের জায়গায় অন্য একটি দলকে উঠাবেন, আর তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব জিনিসের উপর শক্তিশালী।” (সূরা তওবা:৩৯)
আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তকদিরে যা আছে তার বাইরে কিছু হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের উপর যে সব বিপদ আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। ” (সূরা হাদীদ:২২)
“কোন প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫)
হাদীসে এসেছেÑপৃথিবীর সকল শক্তি মিলেও কারও কোন ক্ষতি করতে পারবে না যদি আল্লাহ না চান, আর আল্লাহ যদি কারও উপকার করতে চান সকল শক্তি মিলেও তা ঠেকাতে পারবে না।
তাহলে ধৈর্য্য, সাহসিকতা, দৃঢ়তার সাথে ময়দানে আরো যথাযথ ভূমিকা রাখতে আমাদের বাধা কোথায়?
শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণেই আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম, নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলী, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডাঃ শফিকুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, অধ্যাপক তাসনীম আলম, অধ্যাপক আতাউর রহমান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ সকল বয়ঃবৃদ্ধ নেতা দীর্ঘদিন যাবত কারারুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন পরিচালনা ছাড়া তাদের আর কোন অপরাধ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, “ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্র“তার কারণ এছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল যিনি মহাপরাক্রমশালী এবং নিজের সত্তায় নিজেই প্রশংসিত।” (সূরা বুরুজ: ৮) আজ আমরা কি সেই বিপদ-মুসিবত, জুলুম-নির্যাতন আর কারাগারকেই ভয় পাচ্ছি?
ইসলামী আন্দোলন করলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো, ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-অনাহার, তোমাদের জান-মাল ও ফসলাদির ক্ষতিসাধন করে; তুমি ধৈর্য্যশীলদের সুসংবাদ দান কর।” (সূরা বাকারা:১৫৫)
মহান রাব্বুল আলামীন আরো বলেন, “তোমরা কি মনে করেছো, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখে নেননি, তোমাদের মধ্যে কে তার পথে জিহাদ করতে প্রস্তুত এবং কে তার জন্য সবরকারী।” (সূরা আলে ইমরান:১৪২)
আজকে সেই পরীক্ষা আমাদের সামনে উপস্থিত, আমরা কি সেই পরীক্ষা থেকে পালাতে চাচ্ছি? আমরা কি ভুলে গেছি তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার কারণে বিখ্যাত সাহাবীদের বয়কট করা হয়েছিল? তওবা করার পর তাদেরকে ক্ষমা করা হয়।
আল্ কোরআনের এই সকল ঘোষণা কি আমাদের স্মরণে নেই? মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আতœীয়-স্বজন, তোমাদের উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ মনে করÑএসব যদি আল্লাহ, আল্লাহর রসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফয়সালা তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। আল্লাহ ফাসেকদের কখনো হেদায়েত দান না।” (সূরা তওবা:২৪)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন, “এমন অনেক নবী চলে গেছেন যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহওয়ালা লড়াই করেছে। আল্লাহর পথে তাদের উপর যেসব মুসিবত এসেছে তাতে তারা মনমরা ও হতাশ হয়নি, তারা দুর্বলতা দেখায়নি এবং বাতিলের সামনে মাথা নত করে দেয় নি। এ ধরনের সবরকারীদের আল্লাহ ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান:১৪৬) তাই আমাদেরকে সকল বাধা, পিছুটান উপেক্ষা করে শাহাদাতের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনের সকল কর্মসূচীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মরণ তো একদিন হবেই, শাহাদাতের মৃত্যুই মু’মিন জীবনের শ্রেষ্ঠ মৃত্যু, শাহাদাত লাভই মু’মিন জীবনের পরম আকাঙ্খা।
রাসূল (স.) বলেন-“যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, আমার নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় বিষয় হচ্ছে, আমি আল্লাহর পথে নিহত হয়ে যাই অতঃপর জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই অতঃপর আবার জীবন লাভ করি, আবার নিহত হই পুনরায় জীবন লাভ করি,পুনরায় নিহত হই।” (সহীহ বুখারী)
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
দেশ পরিচালনায় সার্বিক ব্যর্থতা, শেয়ার বাজার লুট, হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেংকারী, সাংবাদিক সাগর-রুনী হত্যা, কুইক রেন্টাল দুর্নীতি, পদ্মা সেতু কেলেংকারীসহ সীমাহীন দু:শাসন ও লুটপাট আড়াল করতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসন এবং শাহবাগী নাটক সাজিয়েছে। সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে এবং বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার নীলনক্সার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতৃত্ব ধবংস করতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসন করে ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার করছে। সকল অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গণবিস্ফোরণ ঠেকানোর জন্য গণতান্ত্রিক কর্মসূচীতে সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অতি উৎসাহী সদস্য হায়েনার মত হামলে পড়ছে, নির্বিচারে গুলিও গ্রেনেড মেরে আমাদের ভাইদের হত্যা করছে, রাস্তায় ধরে থানায় নিয়ে বন্দী অবস্থায় নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে পঙ্গু করে দিচ্ছে, চোখ উপড়িয়ে ফেলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এসব মানবতা বিরোধী নৃশংস কর্মকান্ড আড়াল করতে একশ্রেণীর মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী উল্টো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জামায়াত-শিবিরের হামলার তথাকথিত সহিংসতার গল্প তৈরি করে বিভ্রান্তির বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস পরিচালনা করে, দমন পীড়ন চালিয়ে, গণহত্যা করে কোন জালেম স্বৈরশাসকেরই শেষ রক্ষা হয়নি, এ সরকারেরও হবে না ইনশাআল্লাহ।
একান্ত প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীই দায়িত্বশীল। আমাদেরকে দেশপ্রেমিক জনতাকে সংগঠিত করে সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দায়িত্বশীল কোন কারণে অনুপস্থিত হয়ে গেলে সকল ক্ষেত্রে নিজেদেরকেই দায়িত্বশীলের ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে কোন অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সংঘাত-সংঘর্ষে জড়ানো যাবে না। রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে জনমতকে ব্যাপকতর ও কার্যকর করার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশেষ করে বিশিষ্ট সুধীজন, আলেম-উলামা, ইমাম-মুসল্লি, আতœীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে বেশী বেশী করে যোগাযোগ রাখতে হবে। আদর্শিক সৌন্দর্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত পরিকল্পিত অপপ্রচার অপনোদন করতে হবে।
এই জালেম সরকারের হাতে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, অসুস্থ ও চিকিৎসাধীন আছেন তাদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে হবে। যারা জেলে আছেন তাদের পর্যাপ্ত আইনী সহযোগিতা দিতে হবে এবং তাদের পরিবারের সার্বিক খোঁজ-খবর রাখতে হবে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নাগরিক ও তাদের সহায়-সম্পদ মুসলমানদের নিকট আমানত। তাই এদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিজেদের সময় ও জীবনের কোরবানের পাশাপাশি সর্বোচ্চ আর্থিক কোরবানী করতে হবে এবং সুধীমহলকেও আর্থিক সহযোগিতার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
তারা চেয়েছিল প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করে নিষিদ্ধ করবে, নিবন্ধন বাতিল করবে, সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করবে, অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের গণবিচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু আল্লাহর খাস রহমত এবং আপনাদের ত্যাগের বিনিময়ে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে চলেছে।
আল্লাহ বলেন, “আর এভাবে প্রতিটি জনপদে আমি ভয়ঙ্কর অপরাধীদের লাগিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা নিজেদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে পারে। আসলে নিজেদের প্রতারণার জালে তারা নিজেরাই ফেঁসে যায়, কিন্তু এর চেতনা তাদের নেই।”(সূরা আন’আম:১২৩) আজকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে প্রহসন এবং শাহবাগী নাটক সরকারের গলার ফাঁস হয়েছে। পক্ষান্তরে দেশে-বিদেশে জামায়াতের সমর্থন ও ভাব-মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আল্হামদুলিল্লাহ। দেশের সকল আলেম-উলামা, বুদ্ধিজীবিসহ আম-জনতা এই ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন একটি প্রচণ্ড ধাক্কা। তাহলেই আর এই ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্মদ্রোহী ও দেশ বিরোধী শক্তি পালানোরও পথ খুঁজে পাবে না ইনশাল্লাহ। ইতোমধ্যে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে, এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেছেন, “তোমরা মনমরা হয়ো না, হতাশ হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (সূরা আলে ইমরান:৮১) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন, “ সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার পতন অবশ্যম্ভাবী।” (সূরা বনী ইসরাইল:৮১)
বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকে মৌলিক ইবাদতের পাশাপাশি বেশী বেশী নফল নামাজ পড়া, নফল রোজা রাখা, গভীর রাতে আল্লাহর নিকট ধর্না দেওয়া এবং আল্ কোরআন বিশেষ করে সূরা আলে ইমরান, সূরা আত-তওবা, আল্ হাদীস (ঈমান, জিহাদ অধ্যায়), সাহাবীদের বিপ্লবী জীবন অধ্যয়নের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে মু’মিন-মুজাহিদ হিসেবে তার দীনের জন্য কবুল করুন, আমাদেরকে নিফাকী থেকে রক্ষা করুন, আমাদের কদমকে মজবুত করুন, আমাদেরকে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে ঈমানী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দিন। আমীন।
আপনাদেরই ভাই,
ভারপ্রাপ্ত আমীর
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৩ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর জালিমদেরকে অবশ্ব্যই হেদায়েত নবুবা ঢংশ করুন
স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,
জাযাকাল্লাহ . .
আল্লাহ আমাদের সকলকে মু’মিন-মুজাহিদ হিসেবে তার দীনের জন্য কবুল করুন, আমাদেরকে নিফাকী থেকে রক্ষা করুন, আমাদের কদমকে মজবুত করুন, আমাদেরকে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সাথে ঈমানী দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দিন। আমীন।
সরকারের কাছে আরজি জানাবো যে , এদেরকে এদের পছন্দের দেশ পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হোক।
আমি অবাক হলাম এই জন্য যে, যেখানে ভদ্রলোক তার বক্তব্য শুরু করেছেন এই বলে যে,
'প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আজ এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশ বিরোধী ও ইসলাম বিদ্বেষী সকল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং তাদের প্রচার মাধ্যমসমূহ পাশ্ববর্তী একটি দেশের মদদে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নস্যাতের চক্রান্তের অংশ হিসেবে এদেশ থেকে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী নেতৃত্ব, ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নির্মূলের জন্য প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।'
সেখানে আপনি কোথা হতে পেলেন তাদের পছন্দের দেশ পাকিস্থান?
আমার তো মনে হয় - আমরা সাধারন মানুষরা 'মুসলমানদের' টিজিং না করেও বক্তব্য দিতে পারি এবং যা কিছু পড়ালিখা করেছি তাতে আর একটু র্যাশানালী চিন্তা-ভাবনা করে যথাযথ বিচার করতে পারি - এবং অবিচার করা এ্যাভয়েড করতে পারি।
আল্লাহ আমাদের ধৈর্য বাড়িয়ে দিক এবং আমাদের চোখ খুলে দিক।
আমি বক্তব্যের সাথে এবং এর বিষয়বস্তুর সাথে সহমত পোষন করছি। এবং আশা করবো বক্তা ও পাঠক কেউই কোরানের এই সমস্ত আয়াতকে তথাকথিত গনতান্ত্রিক স্ট্রাগলের নামে মিছিল মিটিং, বিক্ষোভ, মানববন্ধন বলে বিবেচনা করবেন না।
নানা কারণে অনিয়মিত ছিলাম বলে দুঃখিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন