কালো চশমা : পর্ব: ১
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ মুজিবুল হক ১৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:০৩:৫২ রাত
আমাদের নানার বাড়ী চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার (বর্তমানে লোহাগাড়া) আধুনগরে, আমরা ৩ ভাই ও দুই বোন (পরে আরো দুই ভাই জন্মগ্রহণ করে) নানা নানী মামা খালা ও অন্যান্য আত্মীয়দের আদর স্নেহ ও পরম মমতায় বেশ উপভোগ করেছি আমাদের শৈশবকাল. আমাদের বাড়ী চট্টগ্রাম শহরে, বছরে একবার অথবা দুইবার নানার বাড়ী আসা হয়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার গামী কাঠ বডি বাস থেকে পড়ন্ত বিকালে যখন নানার বাড়ীর স্টেশন হাজীর রাস্তার মাথায় নামতাম তখন আমাদের কার আগে কে কোলে নেবে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত আমরা ১৫/২০ দিন নানার বাড়ী থাকতাম. আদরের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলত. এ সময় এবাড়ি ওবাড়ি দাওয়াতের পাশাপাশি বিয়ে শাদীর মত সামাজিক অনুষ্ঠান গুলিও বাদ যেতনা. এক সময় দেখতাম নানার বাড়ীর সবাই এখানে ওখানে চুপিসারে কাঁদছে বুঝতে পারতাম আমাদের চলে আসার সময় ঘনিয়ে আসছে এমনই মধূর ছিল আমাদের শৈশবকালের নানার বাড়ীর সময় যা এখন স্বপ্নের মত. তেমনি ১৯৭৬ সালের শীতকালে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে নানার বাড়ী বেড়াতে গিয়েছি, আমরা নানার বাড়ী পৌঁছার পর ওখানে বেশ সাজ সাজ রব রব অবস্হা অর্থাৎ উৎসবের একটা আভাসপাচ্ছিলাম, পরে জানলাম পরের দিন আমার মায়ের দূর সম্পর্কের চাচাতো বোনের বিয়ে. তার মানে খুশীর উপর খুশী মনে নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে গেল মাইকে পুরুষের খালি কন্ঠে গান ভেসে আসছে "কিসের খোয়াশ আজ সবার মনে, বাগানেতে ফুল আনন্দে আকুল" (অনেক চেষ্টা করেও গানটির রচয়িতা কে খুঁজে পাইনি, আমার হয়ত গানের বাক্য গঠন ও শ্রবনে ভূল হতে পারে ) এ গানটি ঐ সময় বিয়েতে গাওয়া অনেকটা নিয়মের মত ছিল ঐ সময় এখানে বাজনা সমৃদ্ধ রেকর্ড/ক্যাসেট কিংবা নারী কন্ঠে মাইকে গান প্রচার অলিখিত নিষিদ্ধ ছিল সকাল ৯টার মধ্যেই বর যাত্রী আসা শুরু হলো তবে বর আসেনি মাটিতে চাটাই বিছিয়ে তার উপর শুরু হলো খাওয়া দাওয়ার পালা কে বর পক্ষ কে কনে পক্ষ তার কোন হিসাব নাই এক পক্ষ খেয়ে উঠছে তো আরেক পক্ষ খেতে বসছে দুপুর একটার দিকে বর এলো কিন্তু একি ব্যাপার ! এক বিয়েতে দুইজন বর কেন ? তা দেখে আমিসহ আমার ভাইদেরও চোখ ছানাবড়া পরে জানলাম মায়ের দুই চাচাতো বোনের বিয়ে এক সাথে হচ্ছে তবে বরেরা আপন ভাই না হলেও আত্মীয় বলে মনে হলো, বরেরা শেরোয়ানী মাথায় সুসজ্জিত পাগড়ী গলায় জরির মালা পরে মুখে রুমাল দিয়ে বসে আছেন কিন্তু এক জায়গায় একটু বেমানান লাগছে তা হলো একজনের চোখে ঐতিহাসিক রেভন সান গ্লাস আছে আরেকজনের নেই আমি মনযোগ দিয়ে তাদের দেখতে লাগলাম কিছুক্ষণ পর আমাকে অবাক করে দিয়ে চশমা পরা বর চশমা হীন বরকে পরতে দিলেন এবং তারা যতক্ষণ বিয়ের আসরে ছিলেন প্রতি ১৫/২০ মিনিট পরপর ভাগাভাগি করে পরে সময়টা পার করলেন. বিষয়টা আমার কাছে খুবই উপভোগ্য মনে হলো. শিশুকালে ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে কালো চশমা আমার অনুসন্ধানের খোরাক হয়ে উঠে এরপর থেকে নানার বাড়ী ও আশে পাশের এলাকায় যতগুলি বিয়ে দেখেছি সব বিয়েতেই বরের চোখে ঐতিহাসিক রেভন কালো চশমা দেখেছি এবং আজ পর্যন্ত চালু আছে. কালো চশমার পিছনে আমি এমন ভাবে লেগে পড়ি যে কিছু কিছু তথ্যে আমি অবাক না হয়ে পারিনি যেমন এখানে বর সাজলে যাদুর মত কোথা হতে কালো চশমা যোগাড় হয়ে যায় আর যাদের বন্ধু নেটওয়ার্ক দূর্বল তাদেরও নো টেনশন যেখানে শেরোয়ানী পাগড়ী ভাড়া দেয়া হয় সেই দোকানে ভাড়াতে কালো চশমাও পাওয়া যায় ১৯৮৮ সালে আমার বড় মামার বিয়ে হয়. আমার সমবয়সী ছোট মামা ও অন্যান্য বন্ধুরা আলাপ করছিলাম আর যাই হোক আমার উচ্চ শিক্ষিত মামা বোধহয় বরবেশে কালো চশমা পরা থেকে বিরত থাকবেন আমরা বিয়ের দিন ওনার সাজসজ্জা নজর রাখছিলাম কনে বাড়ীর উদ্দেশ্য গাড়ীতে উঠার আগেও একবার দেখে নিলাম যার বাঁচা গেল একটা রেকর্ড ভাঙ্গলো এই প্রথম এই এলাকায় কালো চশমা বিহীন কোন বিয়ে হচ্ছে মামার বরবাহী গাড়ী আমাদের আগে ছিল কনে বাড়ীতে পৌঁছার পর দেখি আমাদের গম্ভীর মামা কালো চশমা পরে গাড়ীতে বসে আছেন কখন কিভাবে এটা যোগাড় হলো তা অবশ্য ভাবনার বিষয় না. এরপর আমার সমবয়সী মামা ১৯৯০ সালে আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট খালতো ভাইকে ২০০২ সালে এমনকি সাম্প্রতিক কালে অনেক অনুজকে বিবাহ আসরে বাধ্যতামূলক কালো চশমা পরতে দেখেছি. এখনতো সালমান খানের দাবাং স্টাইল কালো চশমার জনপ্রিয়তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে.. একটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয় দুই বছর আগে আমার এক খালাতো ভাইয়ের বিয়েতে আমাদের পরিবারের সবাই গেলেও অন্য এক কাজের চাপ থাকায় আমি যেতে পারিনি বিয়ের দিন সন্ধ্যায় আমার ছোট ভাইকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করি বিয়ের কাজ ঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়েছে কিনা উত্তরে সে বলল সব কাজ শেষ বৃষ্টির কারনে বিদ্যুত চলে যাওয়ায় অন্ধকারে বসে আছে .আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করি বর কোথায় ? তার সোজা উত্তর কালো চশমা পরে স্টেজে বসে আছে. . . শুনে আমার হেসে গড়াগড়ি অবস্হা.তবে যাই হোক আমার মতে এটা এই এলাকার ঐতিহ্যের প্রতীক. প্রতিটি বাঙ্গালি মেয়ে যেমন বিয়ের দিন লাল বেনারসি পরার স্বপ্ন লালন করে তেমনি একজন পুরুষ তার বিয়ের দিন শেরোয়ানী পাগড়ীর সাথে কালো চশমা পরার স্বপ্ন দেখলে দোষের কিছু নাই . শুধূ নতুন বরেরা কালো চশমার প্রেমে মজেছে তা নয়, আমিতো মজেই আছি সেই শৈশব থেকে আর কারা কারা কালো চশমার সাচ্চা আশিক কিবা আশিকি তা লিখব পরের পর্বে. . . একটি অনুরোধ আমার এই লেখা কোন ব্যাক্তি গোষ্টি বা কাউকে হেয় করার জন্য নয় কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ অথবা হেয় করার জন্য নয়, আমি আমার আশৈশব অভিজ্ঞতা টুকু তুলে ধরেছি মাত্র তবু কেউ মনে আঘাত পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমা প্রার্থী. ধন্যবাদ.
বিষয়: বিবিধ
১৬১৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিয়ের সময় বর হিসেবে ছেলেদের খুব গম্ভীর একটা লুক আনতে হয় । কালো চশমা এতে দারুন ফল দেয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন