৪৪তম বিজয় দিবসঃআমাদের কেবলা কোনদিকে-২ -মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৭:০২ সকাল
##৪৪তম বিজয় দিবসঃআমাদের কেবলা কোনদিকে-২ -মাহবুব সুয়েদ
(গত পর্বের পর)
গত পর্বে শেষের দিকে পিন্ডীতে আমাদের রাজধানী স্থানান্তরের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে 'আলাদা আলাদা স্ট্যটস' গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।বৃটিশ বেনিয়ারা সুকৌশলে এবং কংগ্রেস নেতা জওহার লাল নেহেরুর কুটচালের কাছে নতিস্বীকার করে বাংলাকে দুভাগে ভাগ করে আসামের কিছু অংশকে সাথে নিয়ে পুর্বপাকিস্থান নামক অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে স্বভাব আর কৃষ্টিগত দিকদিয়ে অনেকটা মরু অঞ্চলের লোকদের স্বভাব সম্পন্নদের অর্থাত বর্তমান পাকিস্তানের সাথে আমাদের একিভুত করে দেয়।সংখ্যাগরিষ্ট বাঙ্গালীদের হাতে কাছে রাজধানী না দিয়ে পিন্ডীতে রাজধানী দিয়ে যায়।বৃহত্তর স্বার্থে বাঙ্গালী মুসলিম নেতারা তা মেনে নিলেও সদ্য জন্ম নেয়া দেশে শুরুতে ই এটি একটি ভেদাভেদ রেখার টান দিয়ে যায়।৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্টার পর মাত্র দু/তিন বছর যেতে না যেতে ই পাকিস্তানের দু-অংশের জনসাধারন আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে দন্ধ-হিংসা আর ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু হয়ে যায়।কায়েদে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ যেখানে হওয়য়ার কথা জাতীর পিতা আর রাজনীতির উর্দ্বে সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারি সেই জায়গায় কু-চক্রি মহল তাকে দিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ঢাকা ঘোষনার মাধ্যমে পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে 'বিসমিল্লায় গলদ' শুরু করে দেয়।সেই থেকে শুরু।ঢাকায় আন্দোলন হত আর রাওয়াল পিন্ডীতে বৈটক হত।ঢাকায় হরতাল হত আর করাচীতে রাজনীতিবিদরা তার সমাধানে রাউন্ড টেবিল বসত।শোষন-নির্যাতন আর নিপীড়নের স্টিম রোলার চলতে থাকল।একে একে লিয়াকত আলী খান, মোহাম্মাদ আলী বগুড়া , খাজা নাজিম উদ্দীন আর আইয়ুব খানেরা এলেন।বাঙ্গালী প্রধানমন্ত্রি ও হল কয়েকজন।গনতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহিদ সোরাওয়ার্দি ও হলেন।কিন্তু সবি পাওয়া যায় বাংলা অঞ্চলে শুধু সম অধিকার আর উন্নয়ন ছাড়া।পশ্চিম পাকিস্তানের এক কলোনির মত দেখা হত সংখ্যাগরিষ্ট পুর্বপাকিস্থানিদের।জেল জুলুম হামলা মামলা আর উন্নয়ন বঞ্চিত বাঙ্গালী আন্দোলন শুরু করল টানা ৯ বছর ক্ষমতায় প্রতাপশালি ব্যক্তিত্ব আইয়ুবের বিরুদ্বে।মুলত আইয়ুব বিরুধী আন্দোলনকে ই বলা যায় স্বাধিনতার মুল চেতনাস্তম্ভ।৬৯ র তীব্র গন অভ্যুথ্বানের ফলে আইয়ুব পদত্যাগে বাধ্য হয়।পাকিস্তানের ইতিহাসে এত প্রতাপশালি শাসক আর কেউ হয়ত আসেনি।নতুন নতুন গনতান্ত্রিক নিয়ম (বেসিক ডেমোক্রেসি) চালু আর উন্নয়ন ভারতের সাথে যুদ্ব ইত্যাদির পরেও পুর্ব পাকিস্তানে মাওলানা ভাসানি-শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আইয়ুব বিরুধী আন্দোলন তুঙ্গে উটে আর বেচারা পদত্যাগ করে নিজ জান হেফাজত করে।একদিকে আইয়ুব বিরুধী সফল আন্দোলনে বাঙ্গালির বিজয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় অন্যদিকে এ আন্দোলন পশ্চিম পাকিস্তানীদের মনে বাঙ্গালিদের নিয়ে সন্দেহ আর বৈষম্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।৫২ র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া আগুনে আইয়ুব বিরুধী ৬৯র গন অভ্যুথ্বান যেন দিনে দিনে ঘি ঢেলে ই চলছিল।নানা নাটকিয়তার পর ৬দফা আন্দোলন আর ৭০র নির্বাচন।বিজয়ী আওয়ামীলিগের হাতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতা না দিতে নানা টাল বাহনা শুরু করে দেয়।ফলাফল অনিবার্য ছিল।ভারতের সহযোগিতায় গঠিত হয় মুক্তি বাহিনী।দ্বীর্ঘ নয়মাসের রক্তক্ষয়ি সংগ্রামের ফসল হল ৫৬হাজার বর্গমাইলের স্বাধিন শ্যমল বাংলা।পাকিস্তান যেহেতু স্বাধিন রাষ্ট্র ছিল আর পুর্ব পাকিস্তান সেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধিন বাংলাদেশ নামে আত্ম প্রকাশ করে তাই স্বাভাবিক ভাবে ই একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যারা নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্বান্ত অথবা কেন্দের প্রতি আনুগত্য দেখায়ে গিয়ে নতুবা ভারতীয় আধিপত্যবাদের ভয়ে দুই পাকিস্তানের এ দুই ভাগ হওয়াকে সমর্থন করেনি।এদের অনেকে শুধু রাজনৈতিক সিদ্বান্ত নিয়েছিল কেউ কেউ আবার ময়দানে আর্মির সাথে কাজ শুরু করে দেয় মুক্তিকামি বাঙ্গালীর বিরুদ্বে।অনেকে আবার অস্ত্র তুলে নেয় হাতে।লড়াই আর সংগ্রাম, ত্যাগ আর তিতিক্ষা, শহিদ আর পঙ্গুদের দ্বীর্ঘ সাধনার পরে অবশেষে বাংলা স্বাধিন হয়।বাংলার একাংশ আগে ই ভারতের সাথে চলে যায় আর আরেকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানি জানোয়ারদের হাত থেকে মুক্তি পায়।৭১র ১৬ ই ডিসেম্বর ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনির প্রধান জেনারেল জগজীত সিং আরোরার হাতে সারেন্ডার করে পশ্চিম পাকিস্তানি বাহীনি প্রধান জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধিন সামরিক বাহিনি।মুক্তি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বা উপাধিনায়ক কাউকে সেদিন সেই আত্মসমর্পন অনুষ্টানে দেখা যায়নি।(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
১১০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন