অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব নায়ক আবুল কাশেম মিঠুন ; কিছু স্মৃুতি, কিছু ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার শঙ্খচিল ২৫ মে, ২০১৫, ০১:৩০:১৩ দুপুর
একদিন মাটি হয়ে যেতে হবে তাই এখনই মাটির মতো হও । আল্লামা শেখ সাদির এই উক্তিটি শেখ আবুল কাসেম মিঠুন ভাইয়ের প্রিয় উক্তি । তিনি আজ ইন্তেকাল করেছেন । বেশ কিছুদিন শুনছিলাম তাঁর অসুস্থতার খবর । খুলনায় মায়ের সাথে দেখা করতে গিয়ে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে ভারতে নেয়া হয়েছিল ।
প্রায় ষাট সত্তরটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই ইসলামপন্থী চলচ্চিত্র নায়ক
শেখ আবুল কাশেম মিঠুন ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে খুলনা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে লেখালেখির মধ্যদিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন
মিঠুন ১৯৮০-এর দশকে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ববিতাসহ সে সময়ের বেশ কয়েকজন নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। তবে প্রধান নায়কের চরিত্রে অল্প কিছু চলচ্চিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্য নিয়েও কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভেজা চোখ’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ও ‘বাবা কেন চাকর’।
তার নামের সাথে ইসলাম পন্থি শব্দটা ব্যবহার করা হয় । ৯০ দশকের পর্দা কাঁপানো মিঠুন কিভাবে ইসলামের ছায়াতলে আসলেন । আসুন একটু জেনে নেই ।
(তার সোনালী দিনের কিছু স্মৃতি , বাংলাদেশের নাম করা অভিনেতা/নেত্রিদের সাথে )
বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন তাদের নিয়মিত দাওয়াতি দশক চলছিল সে সেময় । এরশাদ বিরোধী উত্তাল বাংলাদেশের পরবর্তী মুহুর্ত । ঢাকার প্রতিটি ওলি ,গলি, দোকান রেস্তরাকে টার্গেট করে উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদের হাকিকত সিরিজের বই বিলি চলছে ।
ফজরের পরবর্তি সময় । (সম্ভবত) রমনা পার্কের কোন এক গেটে ছিলেন নায়ক মিঠুন তার গাড়িতে । দাওয়াতি দশকের এক দল দায়ী তার গাড়ির জানালা দিয়ে অনুরোধ করলেন একটা বই নিয়ে পড়ার জন্য । প্রথমে না করলেন । দ্বিতীয় বার অনুরোধ ফেলতে পারলেন না । বললেন , "ঠিক আছে রেখে যান সময় হলে পড়ে নিব "
সেই শুরু । একটা বই তাকে নিয়ে আসলো আলোর কাছে । খুঁজতে লাগলেন হাকিকত সিরিজের অন্যান্য বই গুলো । বই বিলি কারি সেই মানুষ গুলো কেও পেয়ে গেলেন , আস্তে আস্তে তাদের সান্নিধ্য পেয়ে চলচিত্র থেকে নিজেকে গুটিয়ে আনলেন । তার বিশাল বাজার মন্দা হয়ে গেলে । ইনকাম সোর্স অচল হয়ে পড়লো ।
তখন মরহুম কবি "গানের পাখি" মল্লিক ভাই তাকে নিয়ে এলেন "প্রত্যশায়" শুরু হল তার নতুন চলচিত্র ।
নিজেই ছিলেন অনেক চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্য পরিচালক । কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সাথে পরিচয়ের সুবাদে কোরআন হাদিস ও ইসলামী সাহিত্যের ব্যপক অধ্যয়ন করেন । তারপর শুরু করেন নতুন ধারার চলচ্চিত্র ও ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা । মল্লিক ভাইয়ের ইন্তেকালের পর তিনিই ছিলেন বংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের (প্রত্যাশা প্রাঙ্গন ) নির্বাহী পরিচালক
আমার বা আমাদের যারা তাকে খুব কম দেখেছি কাছ থেকে তাদের কথা পড়ে বলছি । ব্যক্তি হিসেবে তার দীর্ঘ দিনের সহকর্মিরা তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন । অমিত হাসান বাংলা সিনেমার আরেক সূর্য তিনি বলেন, মিঠুন অনেক শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন । এক সময় তিনি আমাদের শিল্পী সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। এত শান্তি প্রিয় মানুষ তিনি, যে কেউ শ্রদ্ধা করতে বাধ্য।
আমি অমিত হাসানের শেষ কথাটা কোড করলাম "এত শান্তি প্রিয় মানুষ যে কেউ শ্রদ্ধা করতে বাধ্য" সত্যিই তাই ।
রুপালি পর্দা ছেড়ে আসার পর ইসলাম নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন । গবেষেণা করেছেন কিভাবে ইসলামী সংস্কৃতিকে এদেশে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া যায় । খুব ভাল ভাল পরিকল্পনা নিতেন । কিন্তু একটা জায়গায় তার পরিক্ল্পনা ব্যার্থ হয়ে যেত.................. অর্থের যোগান দিতে গিয়ে ।
একটা সময় হয়তো অর্থ আসবে , যোগান আসবে , কিন্তু একজন মিঠুন কে অনেক অনেক মিস কিরবে এ জাতি । তার সেই নতুন নতুন পরিকল্পনা আর আসবেনা ।
অপ্রিয় একটি সত্য কথা হল যতটুকু ছিল তা দিয়ে ্ও আমরা এই মানুষটিকে খুব কি সম্মান দিতে পেরেছি !? তার মেধা আমরা কতটা কাজে লাগিয়েছি ??
একটি অনলাইন পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে মিঠুন ভাইয়ের কয়েকটি প্রবন্ধ সেখানে প্রকাশ করেছিলাম । ফেসবুকে আমি মাঝেমাঝে যে দুয়েকটি লেখা লিখেছি তিনি তা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তেন । মন্তব্য করতেন এবং এরকম আরও কিছু লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন ।
বিপরীত উচ্চারণ সাহিত্য সভায় যাতায়াতের সুবাদে মিঠুন ভাইকে বহুবার দেখেছি , আলোচনা ও বক্তৃতা শুনেছি । বাংলাদেশে ইসলামী ধারার নাটক এবং বিশেষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণে তিনি যে সুচনা করে গেছেন তার পরিপূর্ণ বিকাশ একদিন ঘটবেই । আল্লাহ পাক তাঁর সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন
এক সময়য়ের দেশ সেরা নায়ক আবুল কাশেম মিঠুন ভাই , তার জাহেলী জীবনের স্বপ্ন নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন । গানটিতে শুর দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামি কন্ঠশিল্পী মশিউর রহমান । শুনতে পারেন......
ইএম/ইএস
বিষয়: Contest_priyo
৩৩৫৯৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মন্তব্য টাও সুন্দর ।
একবিংশ শতাব্দির আমরা অনেকেই বাংলার নায়ক মিঠুন কে চিনি না ।
আর তিনি এদেশে ইসলাম দিয়েও যে পর্দা কাঁপানো যায় সেই প্রচেস্টা চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু । আশা নয় আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাঁর উত্তরসুরিরা খুব শিঘ্রই এদেশে ইসলাম দিয়েও পর্দা কাঁপাবেন , ইনশাআল্লাহ
এ বিষয়ে ব্লগার ফুয়াদ পাশার একটি যথার্ত পোষ্ট এখানে দেখুন- Click this link
আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে এ জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন