চলুন মনকে বুঝার চেষ্টা করি-৪
লিখেছেন লিখেছেন মিশু ০৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০৫:০২:৪৪ বিকাল
আসসালামু’আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আজ নাফসে লাওয়ামা ও আম্মারার পরিচয় তুলে ধরছি।
নাফসে লাওয়ামাহ
তালাওউম শব্দ থেকে নির্গত যার অর্থ খুব বেশী ইতস্তত করা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
কারো মতে লাউম(সালামত) ধাতু থেকে নির্গত। যার অর্থ ধিক্কার দেয়া।
কাফির ও মুমিন উভয়ের নাফস এই লাওয়ামার অন্তর্ভূক্ত।
এটা মুমিনকে গুনাহে লিপ্ত করে, কিন্তু ধীক্কার দেয় আবার ।
কাফিরদিগকে কামনা-বাসনা চরিতার্থ না করার কারনে ধীক্কার দেয়।
আল্লাহ বলেছেন-
আমি আরও শপথ করছি নাফসে লাওয়ামার। মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারবো না ? বস্তত আমি তার অংগুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
সূরা কিয়ামাহ:২-৪
নাফসে আম্মারাহ
খারাপ ও ধীকৃত নাফস। এই নাফসই মানুষকে যাবতীয় অসৎকর্মের দিকে প্ররোচিত করে।
সে(ইউসুফ) বললো, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দপ্রবন (আম্মারা বিস সূ) কিন্তু সে নয় যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন।
সূরা ইউসুফ: ৫৩
তাই আলাহ’তায়ালা যাকে সাহায্য করেন একমাত্র সেই নাফসের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে পারে।
হে বিশ্বাসীগন, তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরন করোনা। কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরন করলে শয়তানতো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখন পবিত্র হতে পারতনা, তবে আলাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করে থাকেন এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
সূরা নূরঃ২১
আল্লাহতা’আলা এই দু প্রকার নাফস আম্মারা ও লাওয়ামাহ দ্বারা মানুষকে পরীক্ষা করেন।
আম্মারাহ>>লাওয়ামাহ>> মুতমায়িন্নাহ
ইতমিনান ও প্রশান্তিই হল নাফসের পরিপূর্ণতা ও পরিপক্কতা।
আল্লাহতা’আলা তাঁর বাহিনী দ্বারা মুতমায়ীন্ন কে সহায়তা দান করেন। সে ঈমান-ইয়াকীন দ্বারা আম্মারার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
মুতমায়ীন নফস উদ্বুদ্ধ করে-
আল্লাহমুখী হওয়া
আল্লাহর উপর ভরসা করা
সত্যপরায়নতা
বিশুদ্ধচিত্ততা ও বিশ্বস্ততা
তাওবা ও নিজের নফসের হিসেব নেয়া।
নফসে আম্মারা ঐগুলোর বিপরীত কাজের দিকে নিয়ে যেতে চায়---সংশয়, নিফাক, শিরক,গায়রুল্লাহ প্রীতি ও ভীতি।
প্রবৃত্তি ও কুপ্রবৃত্তির মাঝে পরিষ্কার রেখা একে নিতে হবে যেন একটা আরেকটার সাথে মিশে না যায়, আবার একেবারে সবটুকুই নিশ্চিহ্ন না হয়ে যায়।
মানুষের কোন জিনিষের প্রতি মহব্বত,ভালো লাগা,আকর্ষন ও অন্তরে এর প্রভাব বিস্তারকেই প্রবৃত্তি বলে।
শাবী রহ.বলেন,আরবীতে প্রবৃত্তিকে বলে হাওয়া যার অর্থ পতিত হওয়া বা নিচে নেমে যাওয়া। এই প্রবৃত্তি একজনকে গহীন গহবরে নিয়ে যেতে পারে।
লাগামহীন ঘোড়া যা আরোহীকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মহান আল্লাহ যেমন প্রবৃত্তির বিভিন্ন রুপ দিয়েছেন আবার পাশাপাশি এইগুলোর সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের উপায় ও নির্দিষ্ট সীমারেখা দিয়ে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
অতঃপর হে নবী, আমি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাকে একটি সুস্পষ্ট বিশেষ (শরীয়তের) ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছি। সুতরাং তুমি তার ওপরেই চলো এবং যারা জানে না তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না।
সূরা জাসিয়া:১৮
মানুষের জীবনে প্রবৃত্তির প্রয়োজন আছে বলেই মহান আল্লাহ এটা দান করেছেন।
একদিন কলেজের এক শিক্ষিকা প্রশ্ন করলেন যে,এই প্রেম ভালোবাসাটা না থাকলেইতো ছেলে মেয়েদের নিয়ে এতো চিন্তা করতে হতো না,কার সাথে কখন অবৈধ সম্পর্ক করে ফেলে কি না? তখন মনে করিয়ে দিলাম যে, আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে, এই প্রেম ভালোবাসা আছে বলেই সেই সন্তান আপনাকে ভালোবাসে। তবে প্রবৃত্তির এই চাওয়া যখন কুপ্রবৃত্তিতে পরিণত হয় তখন সেটা পরিত্যাজ্য। আর এই কুপ্রবৃত্তির বশবর্তি হয়েই সমাজে অনৈতিকতা ও অবৈধ আচার আচরনের মাঝে ব্যক্তি নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং পরিবার ও সমাজকেও কলুসিত করছে।
নফসে আম্মারা সম্পর্কে চলুন পরিচিত হই আরেকটু গভীরভাবে। কারন শয়তানকে চেনা জানাও জরুরী যেন সে ভালরুপ ধরে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
হযরত আদম আ. ও বিবি হাওয়া আ. দুজনকেই শয়তান ধীরে ধীরে শুভাকাঙ্খী সেজে এসে প্রবঞ্ছিত করেছিল।
নফসে আম্মারাকে আমরা কুপ্রবৃত্তি বলে থাকি যা একজন ব্যক্তির প্রবৃত্তি তথা তার খেয়াল খুশি, যে কোন প্রকার চাওয়া পাওয়া, কামনা বাসনা, রিপু ও কোন জিনিষের প্রতি আকর্ষন বা টানকে পেতে ভালো মন্দ যাচাই করতে চায় না, নিয়ম নীতির ধারে ঘেঁসতে চায় না, কারো লাভ ক্ষতির হিসেব করে না,যেভাবে হোক মনের চাহিদাকে পূরণ করতেই হবে।
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম র.বলেছেন, স্বভাব ও মেজাজের অনুকূলের চাওয়াকেই কুপ্রবৃত্তি বলে।
মহান আল্লাহ মুমিনদের আহবান করে বলেছে,
হে ঈমানদারগণ! ইনসাফের পতাকাবাহী ও আল্লাহর সাক্ষী হয়ে যাও, তোমাদের ইনসাফ ও সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের ব্যক্তিসত্তার অথবা তোমাদের বাপ-মা ও আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধে গেলেও। উভয় পক্ষ ধনী বা অভাবী যাই হোক না কেন আল্লাহ তাদের চাইতে অনেক বেশী কল্যাণকামী। কাজেই নিজেদের প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে ইনসাফ থেকে বিরত থেকো না। আর যদি তোমরা পেঁচালো কথা বলো অথবা সত্যতাকে পাশ কাটিয়ে চলো, তাহলে জেনে রাখো, তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ তার খবর রাখেন।
সূরা আন নিসা:১৩৫
বিষয়: বিবিধ
৯৯৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন