ভালবাসা এতটা বাস্তব হয় কি করে!!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ২৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:২২:০৩ সকাল
আমি আরব-আমিরাতের আবুধাবিতে একটা ট্রাভেল এজেন্সিততে "ডুকুমেন্টস কন্ট্রোলার এন্ড মেসেঞ্জার" হিসেবে কর্মরত আছি। কাজের সুবিধার্থে আমার কোম্পানি আমাকে মোটর সাইকেল দিয়েছে। সময়টা ছিল ২৯শে জুলাই'২০১২, দুপুর ১২টা। আমি আমাদের ক্লাইন্ট ২ টা কোম্পানি থেকে চেক কালেকশন করলাম, তারপর অন্য একটা কোম্পানিতে ইনভয়েছ সাবমিট করার জন্য যাচ্ছি যেটা আমার অফিস থেকে ৮কি.মি দুরে।
তিন লেন বিশিষ্ট খলিফা স্ট্রিটে ড্রাইভ করতেছি, সামনের গ্রীন সিগনালটা ধরার জন্য স্পিড তুললাম ৯০+, হটাৎ পার্শ্বের লেন থেকে একটা টেক্সি কোন ইন্ডিকেটর না দিয়েই আমার সামনে চলে আসলো! মোটরসাইকেল কন্ট্রোল করার মত অতটুকু ডিস্টেন্স ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই টেক্সির পিছনে মেরে দিলাম। মোটরসাইকেল টেক্সির পেচনেই রয়ে গেল আর আমি টেক্সির উপর দিয়ে ১৫হাত দুরে গিয়ে পার্শ্বের লেনে পডলাম!!! ভাগ্য ভাল, ঐ লেনে কোন গাড়ি ছিলনা।
আরব-আমিরাতের এক্সিডেন্ট হলে গাড়িকে এবং গাড়ির লোকজন কে ঐ অবস্থায় রেখেই পুলিশের কাছে ফোন করতে হয়, কোন প্রকার নড়াচড়া করা যায়না। অবস্থা গুরুতর হলে পুলিশ আসার সময় এম্বুলেন্স নিয়ে আসে, ১০মিনিটের মধ্যেই পুলিশ এসে রিপোর্ট তৈরি করে।
এক্সিডেন্টের পর অন্য লোকজন এসে আমাকে কোনরকম তুলে বসালো এবং আমি পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঠিক ঐ মুহুর্ত্বে দেশ থেকে ফোন আসতে লাগলো। অনেক কষ্টে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি, সে আর কেউ না..... আমার গর্ভধারিণী মা!!! মনের অজান্তে চোখের পানি বের হয়ে গেল। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই মা বলল, "তুই ভাল আসিস তো, আমার কাছে হঠাৎ এমন লাগতেছে কেন??? তোর কিছু হয়নিতো???
জানিনা মুহুর্ত্বের মধ্যে আমার মা কি করে জেনে গেল! এটাইকি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা??? মায়ের ভালবাসা এতটা বাস্তব হয়!!
খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে সেইদিন মায়ের প্রশ্নের জবাব দিলেও আজো সেই দিনের কথা গুলো আমার কানের মাঝে যেন বার বার বাজতেছে! জীবনে কোনদিন মায়ের কাছ থেকে আমার কোন কথা গোপন করতে পারিনাই, জানিনা আমার মা কিভাবে জেনে যান!!! এখনো একটু সামান্য অসুখ হলেও মা দেশ থেকে ফোনে জিজ্ঞাস করে, তুই ভাল আছছ তো! আমার কাছে খারাপ লাগতেছে কেন?
মা ছাড়া এমন কাজ অন্য কেউ করতে পারেকি?
মা দিবস, বাবা দিবস...এগুলো হচ্ছে ঐ সমস্ত সন্তানদের জন্য, যারা সারা বছর মা বাবার খোঁজ নেয় না, বৃদ্ধ বয়সে পশ্চিমাদের মত নিজের গর্ভধারিণী মা কে বৃদ্ধাশ্রমেও রেখে আসতে দ্বিধাবোধ করেনা, শুধু বছরে একটা দিন তাদের নিয়ে দরদ দেখায়। বছরের ৩৬৫ দিনই আমার জন্য মা দিবস, কারন আমি আমার মাকে ৩৬৫ দিনই ভালবাসি।
সন্মানীত ভাই ও বন্ধুরা, পরিশেষে একটাই অনুরোধ করবো, একান্ত কঠিন মুহূর্ত্বেও কেউ মায়ের মনে কষ্ট দিয়েন না। মায়ের পদতলেই সন্তানের জান্নাত। মা তোমাকে শত-কোটি সালাম, প্রবাসে আছি বলে তোমাকে ভুলিনি মা, প্রতিটা মুহুর্ত্বে তুমি আমার হূদয়ের গভীরে আছো, আমার মা আমার জান্নাত।
দিল মোহাম্মদ মামুন
আবুধাবি, আরব-আমিরাত।
বিষয়: বিবিধ
৩৬৪৪ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ ভাল কথাই বলেছেন এবং এটাই হওয়া উচিত ।
তবে জীবনের একটা বিশেষ স্টেজে এসে এটা পালন করা পৃথিবীর সেরা অন্যায় কাজ বলে বিবেচিত হয় বেটার হাফ/অর্ধাঙ্গীনির কাছে , যার কাছে উত্তম বলে বিবেচিত না হলে আপনাকে উত্তম/ভাল বলা যাবে না।
কিছুক্ষণের মধ্যে মেঝেটার ফোন, ছোট ভাইয়ের ফোন আম্মার সাথে কেউই যোগাযোগ করতে পারছে না।
মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
গত সপ্তাহের চট্রলা ট্যুর শেষ করে আমি ঢাকা ব্যাক করলেও ছোটবোন আর ছোট ভাই মেঝ বোনের বাসায় রয়ে গেছে। এ কয়দিন বড় বোন আম্মার কাছে ছিল, আজকে সেও চলে গেছে। আম্মা একা বাড়ীতে।
অন্যদিকে আমাদের একলা বাড়ী হওয়ায় কাউকে ফোন করে জানতেও পারছি না আম্মার কি অবস্থা! পাশের বাড়ীর কাজিনরা সবাই কক্সবাজার ট্যুরে। পরে বেশ দূরের এক কাজিনকে ফোন করে বললাম আম্মার মোবাইল বন্ধ কেন, তুই একটু অামাদের বাড়ীতে গিয়ে আমাকে আপডেট দে।
এর মধ্যে আমি ল্যাফটপ বন্ধ করে সোজা বাসে উঠার সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তখনই আম্মার ফোন। হালকা অভিমান করে বললাম, তোমার সাথে কথা নাই। মোবাইল বন্ধ রাখছ কেন?
অনেক কথার পর শান্তনা দিয়ে বলে, কবরে গেলে কি আর কথা বলতে পারবি!
যাও তোমার সাথে কথাই বলবো না। দিলাম লাইন কেটে।
কিছুক্ষণ পর আবার কথা হলো।
এই একটি জায়গাই স্বার্থহীন ভালবাসায় ভরপুর।
আর কোথাও এত ভালবাসা নেই।
সব খানে স্বার্থের ছড়াছড়ি। ক্যালকুলেশনের মারপ্যাঁচ।
"স্বার্থবিহীন এতো ভালবাসা দেবে কে মায়ের মতন,
স্বার্থের আঘাতেই সব কিছু ভাংগে তবুও মা-ই তো আপন!!"
মাকে নিয়ে চমৎকার এই ইসলামী গান টা বেজে উঠল আপনার উপস্হাপনা পড়ে!
অনেক ধন্যবাদ ও শুভ কামনা 'মা'দের জন্যে!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন