আমাদের নিয়ে বিদেশী সংস্থার কেন এত উদ্বেগ?
লিখেছেন লিখেছেন ইগলের চোখ ২১ মে, ২০১৭, ০৪:৫২:০৪ বিকাল
১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিনির্মিত বাংলাদেশের ইতিহাস উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদেরও সেই নৈতিকতাই বড় মানদণ্ড। আজ সেই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে এ্যামনেস্টি যেসব প্রশ্ন তুলে ধরেছে তা আমাদের জন্য সত্যিই অস্বস্তিকর। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, দুই লাখ বাঙালী নারীর সম্ভ্রমহানি করেছে। সেই সময় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলার গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর হানাদার বাহিনী আর তাদের দোসরদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়নি। এটাই সত্য। এ্যামনেস্টির শঙ্কা মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন ২০১৬-এ যুদ্ধ নিয়ে জনমানুষের আলোচনা এবং বিতর্কের ক্ষেত্রকে ‘নিয়ন্ত্রণ ও বাধাগ্রস্ত’ করবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল। কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা বা বিতর্কের পরিসর নিয়ন্ত্রণ করা এই আইনের লক্ষ্য নয়। এই মহান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতের অংশ হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করেছি সেই ইতিহাসের বিকৃতি রোধই এই আইনের মূল লক্ষ্য। এ্যামনেস্টি যদি না জেনে থাকে তবে তাদের জেনে নেয়া উচিত কীভাবে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসকে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা শাসকচক্র ভূ-লুণ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশের বিষয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অস্বস্তি এখনও রয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বা কোন জাতির বিভিন্ন ইস্যুতে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন কোন উদ্বেগের কথা বলে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা যথাযথ হয়। এভাবে যখন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আমাদের উদ্বিগ্ন করে এমন বিষয় নিয়ে ভীতি বা উদ্বেগ প্রকাশ করে আমরা তা নিয়ে কোন অভিযোগ করি না। তবে এখন এ্যামনেস্টির সঙ্গে আমাদের মতান্তর হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন ২০১৬-এর খসড়া নিয়ে তাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যের জন্য। আমরা অবশ্যই উগ্র জাতীয়তাবাদী হব না। আমরা এ নিয়ে বিতণ্ডায় জড়াব না। তবে যে বিষয়টি আমরা একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে এ্যামনেস্টিকে বলতে চাই তাহলো, আমরা যেভাবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে চাইছি এ্যামনেস্টির পর্যবেক্ষণে তা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত সম্পর্কে তাদের বোঝার ব্যর্থতা রয়ে গেছে। আজ বাংলাদেশে যে দলটি সরকারে রয়েছে ঘটনাক্রমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সেই দলটিই নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ্যামনেস্টি সরকারের এই আচরণে হতাশ যে, সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দিতে রাজি নয়। সরকারের এই অবস্থানে সমস্যা কোথায়, যেখানে দেশের সাধারণ মানুষও এর পক্ষে। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষেত্র আছে, আছে কিছু অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। যেসব নিয়ে আমরা কথা বলি না কেননা এর সঙ্গে নৈতিকতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। দেশের কোন ঘটনা নিয়ে প্রকৃত অর্থে এ্যামনেস্টি যদি উদ্বেগ জানায় তবে তা আমরা আনন্দচিত্তে গ্রহণ করব। কিন্তু ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নির্মিত আমাদের মাতৃভূমির ইতিহাস সংরক্ষণের প্রচেষ্টা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে তবে কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা বিদেশীকে ছাড় দেয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সুমহান ও সংগঠিত অভিজ্ঞতার অংশ। এ নিয়ে প্রশ্নকে ছাড় নয় কখনই।
বিষয়: বিবিধ
৮৭৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন