খতমে নবুওয়্যাত ও মোহরে নবুওয়্যাত

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৩:৫১:২৬ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

খতমে নবুওয়্যাত ও মোহরে নবুওয়্যাত

[/b

[b]রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শেষ নবী:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَثَلِي وَمَثَلُ الأَنْبِيَاءِ كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بُنْيَانًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ فَجَعَلَ النَّاسُ يُطِيفُونَ بِهِ يَقُولُونَ مَا رَأَيْنَا بُنْيَانًا أَحْسَنَ مِنْ هَذَا إِلاَّ هَذِهِ اللَّبِنَةَ ‏.‏ فَكُنْتُ أَنَا تِلْكَ اللَّبِنَةَ ‏"‏

আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উপমা এবং অন্য নবীগণের উপমা সে ব্যক্তির অবস্থার সাথে তুলনীয়, যে একটি প্রসাদ নির্মাণ করল এবং সে তা সুন্দর ও সুদৃশ্য করল। পরে (তা দর্শনে আগত) লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে দেখতে লাগল (এবং) বলতে লাগল যে, এর চাইতে সুন্দর কোনো প্রাসাদ আমরা দেখি নি। তবে এ একটি ইটের স্থান অসমাপ্ত রয়েছে। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ) আমি হলাম সে ইটখানি।

(সূত্র: সহীহ মুসলিম: ২২৮৬(৪২৩৭), মুসনাদে আহমাদ:৭৪৩৬, ২৭৩৩২)

অপর বর্ণনায়-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَثَلِي وَمَثَلُ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِي كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بُنْيَانًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ مِنْ زَوَايَاهُ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلاَّ وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ - قَالَ - فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার দৃষ্টান্ত এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণের দৃষ্টান্ত সে ব্যক্তির দৃষ্টান্তের ন্যায়, যে একটি আট্টালিকা বানাল এবং তা সুন্দর ও সুদৃশ্য করল। তবে তার কোণগুলোর কেন এক কোণে একটি ইটের জায়গা ছাড়া। লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আর তা দেখে বিস্মিত হতে লাগল এবং পরস্পর বলতে লাগল, ঐ ইটখানি স্থাপন করা হল না কেন? (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ আমি-ই সে ইটখানি আর আমি নাবীগণের মোহর (ও শেষ নবী)। (সূত্র: সহীহ বুখারী: ৩৩৪২, মুসলিম:২২৮৬ (৪২৩৯), মু'জামুল আওসাত:৩২৯৮, মুসনাদে আহমাদ:৮৯১৭)

আল্লাহ বলেন-

مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَٰكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

"মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রসূল ও শেষ নবী।আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।" (সূরা ৩৩ আহযাব:৪০)



خَاتَمٌ (খতম) মোহরকে বলা হয়। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা হয়। (যেমন পত্রের শেষে মোহর মারা হয়।) খতামান-নাবীয়্যীন বলতে "সর্বশেষ নবী" বুঝানো হয়েছে। দ্রষ্টব্য: (উক্ত আয়াতের তাফসীর) তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর,কুরতুবী)

অর্থাৎ নবী (সাঃ) থেকে নবুঅত ও রিসালাতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পর যে কেউ নবী হওয়ার দাবী করবে, সে নবী নয়; বরং মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলে পরিগণিত হবে।

নবু্ওয়্যাতের ধারা সমাপ্ত:



আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রিসালাত ও নাবুওয়াতের ধারাবাহিকতা অবশ্যই সমাপ্ত হয়ে গেছে। অতএব, আমার পরে আর কোন রাসূলও প্রেরিত হবে না এবং নাবীও আসবে না। বর্ণনাকারী বলেন, বিষয়টি জনগণের নিকট কঠিন মনে হলো। তারপর তিনি বললেনঃ তবে মুবাশশিরাত অব্যাহত থাকবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মুবাশশিরাত কি? তিনি বললেন, মুসলমানের স্বপ্ন। আর তা নাবুওয়াতের অংশসমূহের একটি অংশ। (তিরমিযী: ২২৭২, মুসতাদরাক: ৮২৩৯)

বি.দ্র: হাদীসে এসেছে- মুমিনের ভালো স্বপ্ন নবুয়াতের পঁয়তাল্লিশ (কোনো বর্ণনায় ছেচল্লিশ, বা সত্তর) ভাগের এক ভাগ।

আর স্বপ্ন তিন (প্রকার), ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ (বাহক)। আর (এক প্রকার) স্বপ্ন শয়তানের থেকে দুর্ভাবনা সৃষ্টি করে। আর (এক প্রকার) স্বপ্ন যা মানুষ তার মনের সাথে কথা বলে (এবং চিন্তা-ভাবনা করে), তা থেকে (উদ্ভূত)। ( মুসলিম:২২৬৩-৬৫) সুতরাং স্বপ্ন দেখা ও তাতে কিছু পাওয়া মানুষদের জন্য সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ হতে পারে কিন্তু এর মাধ্যমে শরীয়াতকে বাড়ানো বা কমানো যাবে না। স্বপ্নের মাধ্যমে কেউ নবী হতে পারে না।



রাসূলের এক নাম "আক্বিব" (চুড়ান্ত পরিণতি বা সর্বশেষ):

জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহমাদ (অত্যধিক প্রশংসাকারী), আমি আল-মাহী (বিলুপ্তকারী), এমন ব্যক্তি যে, আমার মাধ্যমে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি আল-হাশির (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকদের সমবেত করা হবে। আমি আল-আকিব (সর্বশেষ), আর আল-আকীব ঐ ব্যক্তি, যার পর কোনো নাবী নেই। (সহীহ মুসলিম: ২৩৫৪, তিরমিযী: ২৮৪০, মু'জামুল কাবীর:১৫২২,সুনানে দারেমী:২৭৭৫, মুসনাদে আহমাদ:১৬২৯২, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৪৬৬২, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক: ১৯৬৫৭)

খতামে নবু্ওয়্যাত বা নবীদের মোহর বা সীল:

عَنْ سِمَاكٍ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ، قَالَ رَأَيْتُ خَاتِمًا فِي ظَهْرِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَأَنَّهُ بَيْضَةُ حَمَامٍ

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিঠে মোহরে নুবুওয়াত দেখেছি, আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড।। (সহীহ মুসলিম: ২৩৪৪, আল মুসতাদরাক: ৪২৫৩, শামায়েলে তিরমিযী)

عَنِ الْجَعْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ سَمِعْتُ السَّائِبَ بْنَ يَزِيدَ، يَقُولُ ذَهَبَتْ بِي خَالَتِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ ابْنَ أُخْتِي وَجِعٌ ‏.‏ فَمَسَحَ رَأْسِي وَدَعَا لِي بِالْبَرَكَةِ ثُمَّ تَوَضَّأَ فَشَرِبْتُ مِنْ وَضُوئِهِ ثُمَّ قُمْتُ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَنَظَرْتُ إِلَى خَاتِمِهِ بَيْنَ كَتِفَيْهِ مِثْلَ زِرِّ الْحَجَلَةِ

সায়িব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দু’আ করলেন। তারপর তিনি ওযু করলেন। আমি তাঁর ওযুর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সহসা তাঁর দু’কাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখতে পাখির (কবুতরের) ডিমের মতো। (বুখারী:১৮৭, মুসলিম:২৩৪৪, মু'জামুল কাবীর:৬৬৮০, তিরমিযী:৩৬৪৩)



বি.দ্র.: আমাদের নবী (স.)ই সর্বশেষ ও চুড়ান্ত নবী। তার দু কাঁধের মাঝখানে ছিল নবুওয়াতের বিশেষ নির্দশন যা মোহরে নবুওয়্যাত নামে পরিচিত। সুতরাং কোনো ভন্ড নবী দাবীদার বা তার শিষ্যরা কি তাদের নবুওয়্যাতের এই ধরণের বিশেষ কোনো নিদর্শন দেখাতে পারবে?

সংকলন ও সম্পাদনায়: সামসুল আলম

#ওসওয়াতুনহাসানাহ

বিষয়: সাহিত্য

৬৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File