"অলি-আল্লাহর দুশমনেরা, হুঁশিয়ার !সাবধান!!"

লিখেছেন লিখেছেন সামসুল আলম দোয়েল ০৮ মে, ২০১৬, ০১:৪৬:৩১ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

মিটিং, মিছিল, তাজিয়া, জছনে-জুলুস, ওয়ায মাহফিলে একই আওয়াজ- "অলি-আল্লাহর দুশমনেরা, হুঁশিয়ার !সাবধান!!" অলি-আল্লাহর মজলিস বা অলিদের দরবার-নেক সোহবতের দরবার। দুনিয়ার সবখানে পাগলামী চলে, অলীদের দরবারে চলে না।

কারা আল্লাহর অলী? আসুন কুরআনের আলোকে চিনে নিই!!

মুত্তাকি মুমিনরাই আল্লাহর আউলিয়া:



মহান আল্লাহ বলেন:

أَلا إِنَّ أَولِياءَ اللَّـهِ لا خَوفٌ عَلَيهِم وَلا هُم يَحزَنونَ ﴿﴾الَّذينَ آمَنوا وَكانوا يَتَّقونَ

মনে রেখো যে, আল্লাহর অলীদের (বন্ধুদের) না কোন আশংকা আছে আর না তারা বিষণ্ণ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং মুত্তাকী (সাবধানতা অবলম্বন করে থাকে)। (সূরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৩)


এই আয়াতের মাধ‌্যমে স্পষ্ট যে, সকল মুত্তাকী মু’মিনই হচ্ছে আল্লাহর অলী/ওলী (বন্ধু)। পক্ষান্তরে কিছু মানুষের ধারণা যে, ওলী হতে হলে কারামত দেখানো জরুরী। অতঃপর তারা মনগড়া ওলীদের জন্য সত্য-মিথ্যা কিছু কারামতের কথা প্রচার করে থাকে। এ ধারণা ও কর্ম নেহাতই ভ্রান্ত। ওলী হওয়ার সাথে কারামতের না কোন সম্পর্ক আছে, আর না কারামত ওলী হওয়ার জন্য শর্ত। এটা স্বতন্ত্র ব্যাপার যে, যদি কোন ওলী দ্বারা কোন কারামত প্রকাশ হয়ে যায়, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছা, তাতে সেই বুযুর্গের ইচ্ছা প্রবিষ্ট থাকে না। কিন্তু কোন মুত্তাকী মু’মিন এবং সুন্নতের অনুসারী দ্বারা কোন কারামত প্রকাশ হোক বা না হোক, তাঁর বিলায়াতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না।

কোনো বিদ'আতি, শরীয়াতের হুকুম তরককারী কি কখনো অলী হতে পারে? হে মুসলমান বিবেককে জিগ্যেস করুন।

অলী/ওলী হতে কি কারো হাতে বায়'আত হতে হয় এবং খেলাফত প্রাপ্ত হতে হয়?

সমাজে প্রচলিত পীর-মুরিদীর সিলসিলায় লাগলেও কুরআন ও হাদীসে বা সাহাবী/তাবেয়ীদের কাছ থেকে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।

এখন আমাদের মাঝে নবী নেই আর ওহীর দরজা বন্ধ। সুতরাং কে আল্লাহর কাছে অলী হিসেবে গণ্য বা কারা আল্লাহর নৈকটত্বপ্রাপ্ত বান্দাহ তা একমাত্র আল্লাহই জানেন এবং মৃত্যুর পরবর্তীতে সে ব্যক্তি জানতে পারবে (পরকালে সবার সামনে উন্মোচিত হবে।) কারো স্বপ্ন শরীয়াতের দলীল হতে পারে না। ইলহাম বা কাশফে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো তাহলে আক্বীদা ও ফিকহে এতো মতভেদ থাকতো না।

তাই-

অনর্থক কারো ধোঁকায় পড়ে, আজগুবি কল্পগাথায়, নানা বুজরুকিতে বা তেলেসমাতি দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। শরীয়াতের মাপকাঠি হলো দলীল (কুরআন ও সুন্নাহ)।

আল্লাহর মুমিনদের অলী:

আল্লাহ বলেন:

اللَّـهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অলী (অভিভাবক)। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।
(সূরা ২ বাকারা: ২৫৭)

এই আয়াতে স্পষ্ট যে, মুমিনদের অলী/অভিভাবক হলেন আল্লাহ আর কাফিরদের অভিভাবক হলো শয়তান!

সুতরাং কে আল্লাহর অলী বা কে শয়তানের অলী তা গভীরভাবে ভাবা দরকার!!

মনে রাখা দরকার-

কোনো বিদআ'তী, পেটপুজারী, মাজার-পুজারী, দুনিয়ামুখি কখনোই আল্লাহর অলি হতে পারে না, আল্লাহও তাদের অলি নয়!

ভন্ড অলী ও তাদের ভক্তদের দাবি-



অলীরা গায়েব জানেন!

দুনিয়ার ভালো-মন্দ বা মুরীদের জন্য অনেক কাজ করে দিতে পারেন।

তারা মরার পর কবরে জীবিত ও রিযিকপ্রাপ্ত

মরার পর সব ধরণের ক্ষমতা বাড়ে

তারা মুরিদদের জন্য শাফায়েত করবেন। (শায়ায়েত তো হবে আল্লাহর ইচ্ছায় ও তার অনুমতিপ্রাপ্ত বান্দাদের দ্বারা)

তারা প্রতিনিয়ত ইলহামপ্রাপ্ত হন

কাশফে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত চলে যান।



উপরের সবকটিই কুফুরী! নাউযুবিল্লাহ!!

আল্লাহ বলেন:

(হে রাসূল)আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য। (সূরা ৭ আরাফ: ১৮৮)



এই আয়াত এ বিষয়টিকে কত স্পষ্ট করে যে, নবী (সাঃ) গায়বের খবর জানতেন না। ভালো-মন্দের মালিক নন, ইচ্ছে করলেই কাউকে উপকার করতে পারেন না। গায়েবের জ্ঞান কেবল মহান আল্লাহর আছে। কিন্তু অন্যায় ও অজ্ঞতা এমন সীমা ছাড়িয়ে গেছে যে, এ সত্ত্বেও বিদআতীরা নবী (সাঃ)-কে গায়বের খবর জানতেন বলে মনে করে! যাতে তাদের এটা বলতে সুবিধা হয় যে, তারা বা অলীরাও গায়েব জানেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুক। আমীন!

বিষয়: বিবিধ

১২৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368361
০৮ মে ২০১৬ সকাল ০৫:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন। ধন্যবাদ।৷
368367
০৮ মে ২০১৬ সকাল ০৭:০৭
চেতনাবিলাস লিখেছেন : সুন্দর দলিল ভিত্তিক লেখা | অনেক ধন্যবাদ আপনাকে |
368376
০৮ মে ২০১৬ সকাল ১০:৪২
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে ..... ভালো থাকুন
368377
০৮ মে ২০১৬ সকাল ১০:৫৭
রাশেদ বিন জাফর লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম, প্রিয় ব্লগার (সামসুল আলম দোয়েল ) ভাই - আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লেগেছে । তাই লেখাটি কপি করে আমার ব্যক্তিগত ব্লগ সাইটে শেয়ার করেছি। কোন ভুল হলে জানাবেন.........
368378
০৮ মে ২০১৬ সকাল ১১:০০
368482
০৯ মে ২০১৬ সকাল ১১:২৯
সানজিদ হোসেন ইরাজ লিখেছেন : আমিন।

ধন্যবাদ আপনাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File